somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি সাদি'র গুলিস্তান অবলম্বনে

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনুবাদ
নাসির মাহমূদ
অনেক.অনে...ক দিন আগের কথা। এক বাদশার ছিল দুই মন্ত্রী। এক মন্ত্রীর মন ছিল খুবই ভালো। মানুষের ব্যাপারে খুবই দয়া ছিল তার। কখনো সে কারো ভালো ছাড়া মন্দ চাইতো না। পারলে মানুষের উপকার করতো, না পারলে ক্ষতি করতো না। কিন্তু অপর মন্ত্রীর মনটা ছিল খুবই হিংসুটে, আরেকজনের ভালো সে দেখতেই পারতো না, অপরের সুখ তার সহ্য হতো না। তার মুখটাও ছিল বেজায় খারাপ।
খ) দুই মন্ত্রীর অবস্থা একেবারে রাত-দিন মানে অনেকটা সাদা-কালোর মতো তাই না..
ক) হ্যাঁ..ঠিক তাই..একজনের মন ছিল সাদা অর্থাৎ পবিত্র আর আরেকজনের মন এবং মুখ দুটোই ছিল কালো মানে অপবিত্র...
গ) আচ্ছা তারপর কী হলো...?
ক) বাদশা ভালো মন্ত্রীটাকে ভালোবাসতেন। এ কারণে হিংসুটে এবং মুখ-খারাপ মন্ত্রী ভালো মন্ত্রীটাকে একেবারেই সহ্য করতে পারতো না। দেখতেই পারতো না তাকে..দেখার সাথে সাথেই যেন তার চোখে কাঁটা ফুটতো।
খ) এরকম বাজে লোকের চোখে সত্যি সত্যিই কাঁটা ঢুকিয়ে.....
গ) আচ্ছা বলতে দাও না...তারপর...
ক) মুখ-খারাপ মন্ত্রী সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকতো..কীভাবে তার বিরুদ্ধে বাদশার কান ভারি করা যায়..
খ) যাতে বাদশা তাকে আর ভালো না জানে...তাই না...
ক) হ্যাঁ!...ভালো না জানে এবং বাদশা যাতে তাকে আর পছন্দ না করে....। ভালো মন্ত্রী কিন্তু মুখ-খারাপ মন্ত্রীর এইসব ষড়যন্ত্র আর কূটচাল সম্পর্কে জানতো..তারপরও কিচ্ছু বলতো না...
খ) চুপচাপ থাকতো.....
ক) হুম.....একদিন হলো কী....হাতবাঁধা এক লোককে বাদশার কাছে আনা হলো। বাদশা জানতে চাইলেনঃ
বাদশাঃ কী হয়েছে..একে তোমরা কেন এভাবে নিয়ে এসেছো...
সেপাইঃ বাদশা হুজুর...এই লোকটা অত্যন্ত খারাপ কাজ করেছে...
বাদশাঃ কী খারাপ কাজ করেছে..
সেপাইঃ রাস্তা-ঘাটে..হাঁটে-বাজারে..অলিতে-গলিতে এই লোকটা আপনার বদনাম করে বেড়ায়...আপনি নাকি জালেম বাদশা...জনগণের ওপর আপনি নাকি জুলুম করে বেড়াচ্ছেন...
ক) বা..দশা তো একথা শুনে একেবারে তেলে-বেগুনে গরম হয়ে গেল...কী..হ এত্তো বড়ো সাহস..আমার রাজ্যে থেকে আমার বদনামী....সাথে সাথে আদেশ দিলোঃ
বাদশাঃ (রেগেমেগে) ওকে গলা কেটে হত্যা করো...
ক) ভালো মন্ত্রী এবং মুখ-খারাপমন্ত্রী দু’জনেই হাতবাঁধা লোকটার পাশেই দাঁড়ানো ছিল..সেপাইদের একজন যখন জল্লাদকে ডেকে আনতে গেল...তখন অভিযুক্ত হাতবাঁধা লোকটি শুরু করে দিলো বাদশার বদনাম..। বাদশা একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল বলে শুনতে পাচ্ছিলো না। বাদশা ভালো মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ
বাদশাঃ লোকটা বিড়বিড় করে কী বলছে? আবারো আমাদের বদনাম করে বেড়াচ্ছে নাকি?
ক) সদয় ও পিবত্র মনের ভালো মন্ত্রী অভিযুক্ত লোকটার নিরীহ চেহারার দিকে তাকালো। এরপর বাদশার দিকে ফিরে বললোঃ
ভালোমন্ত্রীঃ হে ন্যায় পরায়ণ বাদশা! ঐ বেচারা আপনার জন্যে দোয়া করছে আর বিড়বিড় করে বলছেঃ যে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেয়, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন।
ক) একথা শুনে বাদশার মন ভালো হয়ে গেল। বাদশা খুশি হলেন। তার রাগ মিটে গেল। নিরীহ লোকটাকে সে ক্ষমা করে দিলো।
খ) ক্ষমা করে দিলো....!
ক) হ্যাঁ! ক্ষমা করে দিলো..
খ) দেখলেন..ভালো মানুষ কীভাবে আরেকজনের উপকার করলো...মুখখারাপ মন্ত্রীটা অইলে নাজানি কী করতো.....
গ) বাদশা তারে জিগায় নাই...?
ক) না,জিজ্ঞেস করে নাই...
গ) হ্যায়ও কিছু কয় নাই?
ক) হ্যাঁ! বলেছে...
গ) কী কইলো....
ক) হিংসুক মন্ত্রীটা যখন দেখলো ভালোমন্ত্রীটা বাদশার কাছে সত্য কথাটা গোপন করেছে..তখন সে মনে মনে ভাবলো এটাই প্রতিশোধ নেয়ার মোক্ষম সুযোগ। তার মিথ্যাচার যদি বাদশার সামনে ধরিয়ে দেওয়া যায় তাহলে আর যাবে কোথায়, বাদশা নিশ্চয়ই তার ওপর অসন্তুষ্ট হবে এবং ...নির্ঘাৎ শাস্তি হবে তার...হ্যা.হা.হা..হা....। এই ভেবে বাদশার দিকে ফিরে বললোঃ
মুখখারাপ মন্ত্রীঃ বাদশা হুজুর! আপনার সামনে সত্য ছাড়া মিথ্যা বলাটা একদম অনুচিত। আমি সত্য গোপন করবো না, হাতবাঁধা লোকটা বিড়বিড় করে আপনাকে গালিগালাজ করছিল..আমি নিজ কানে শুনেছি..
ক) বাদশা একথা শুনে ভীষণ বিরক্ত হলো। মুখখারাপ মন্ত্রীর দিকে বিরক্তির সাথে তাকালো। সে ভেবেছিলো ভালোমন্ত্রীর মিথ্যাচার ধরা পড়ায় বাদশা রেগে গেছে। কিন্তু না..তার ধারণা ছিল একদম ভুল...
খ) ভালোই হইলো...
গ) কীরকম ভুল ছিল?
খ) বাদশা কী করলো..?
ক) বাদশা করলো কী....কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর মুখখারাপ মন্ত্রীর দিকে ফিরে বললোঃ
বাদশাঃ তুমি যা বলেছো তা সত্যি হলেও ওর কথাটা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। কারণ ও একটা সৎ উদ্দেশ্যে কথাটা ওভাবে আমাকে বলেছে...আর তুমি একটা অসৎ উদ্দেশ্যে খারাপ মন নিয়ে কথাটা বলেছো...তোমার উদ্দেশ্যটা ভালো ছিল না। মনীষীদের কথা শোনো নি... যেই সত্য ফেৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে তা প্রকাশ না করাটাই কল্যাণকর...
খ) দেখলে...ন বাদশা কীভাবে বুঝে ফেললো...
ক) শুধু কি তাই...বাদশা কী বললো জানো...
গ) কী বললো.. খ) কী বললো...
ক) বললো..

বাদশাঃ ঐ মন্ত্রী হাতবাঁধা নিরীহ লোকটার জান বাঁচানোর জন্যে দয়া দেখিয়ে এভাবে কথাটা বলেছে..তার উদ্দেশ্যটা ছিল লোকটাকে সাহায্য করা। এভাবে কথাটা বলে মন্ত্রী লোকটারও প্রাণ বাঁচিয়েছে, সেইসাথে আমারও মান-সম্মান রক্ষা করেছে। কিন্তু তোমার নিয়্যতটাই ছিল খারাপ। তুমি চেয়েছো ঐ লোকটাকে হত্যা করি..সেইসাথে আমার সম্মানটাও নষ্ট করেছো। লোকটা যেসব খারাপ কথা বলেছে সেগুলো আমাকে শুনিয়ে আমাকেই অসম্মান করেছো...
খ) বাদশা ঠি..ক বলেছে... গ) হ্যাঁ, ঠিক বলেছে...কিন্তু হাতবাঁধা লোকটার শেষ পর্যন্ত কী হলো....
ক) কী আর হবে...বাদশা তাকে ছেড়ে দিতে বললো আর লোকটা ছাড়া পেয়ে চলে গেল তার আপনন ঠিকানায়।
খ) মন্ত্রীগুলার কী হলো...
ক) মন্ত্রীগুলার কী হলো..দয়ালু মন্ত্রীটারে বাদশা পুরস্কার দিলো আর হিংসুক এবং খারাপ মনের মন্ত্রীটাকে বরখাস্ত করে দিলো...
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×