সংঘাতময় হরতাল-অবরোধে আমরা দেখেছি মৃত্যুর মিছিল। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটগুলো যেন হাবিয়া দোযখ। এমন অস্থিতিশীল সময়ের মধ্য দিয়েই আমাদের শিক্ষার্থীরা পার করল এসএসসি পরীক্ষা ২০১৫। এরই মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। এভাবে আর কতদিন। সবুজ-শ্যামল বাংলাকে পাকিস্তান, আফগান, সিরিয়া, ইরাক বানানোর অপচেষ্টা কার বা কাদের স্বার্থে। শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় মাস গিয়ে চতুর্থ মাসে অবস্থান করছে। অথচ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় বিদ্যাপিঠে যেতে পারছে না।
যারা হরতাল-অবরোধ করছেন তাদের হাতে ক্ষমতা চলে গেলেই কি দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে? দেশের কল্যাণ হবে? দেশের সর্বত্র শান্তি বিরাজ করবে? ইতিহাস কিন্তু সেই সাক্ষ্য দেয় না। তাই সরকার এবং সরকারবিরোধীদের নৈতিক জায়গা আরো স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন। আমাদের রাজনীতিতে যে নতুন অপসংস্কৃতির আগ্রাসন শুরু হয়েছে সেখানে নিত্যপণ্য, শিশুখাদ্য, হাসপাতাল, সংবাদমাধ্যম ইত্যাদির পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও হরতাল-অবরোধমুক্ত হওয়া দরকার।
কারণ, আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের জাতির কর্ণধার। আমাদের রাজনীতিবিদরা দেশের স্বার্থে, মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেন। তাই তাদের কর্তব্য শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা।
বর্তমান সরকার সাংবিধানিকভাবেই দেশ শাসন করার অধিকার রাখে। সেই সাথে তারা বিশ্ব রাজনীতির সমর্থনও আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধীরা চাইলেই রাজনৈতিক পট পরিবর্তন করে ফেলতে পারবেন এমনটা নয়। বিগত প্রায় তিন মাসের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তার প্রমাণ। তাই বিরোধী দল নিজেদের অবস্থান বুঝে আন্দোলন সংগ্রাম করবেন এটাই কাম্য। একই সাথে তাদের আন্দোলন সংগ্রাম যেন রাষ্ট্রের এবং জনগণের জন্য পজেটিভ হয় তাও মাথায় রাখতে হবে।
অনুরূপভাবে সরকারের কাছ থেকেও এমন পদক্ষেপ বা আচরণ আশা করছি যা দেশের জন্য কল্যাণকর। এক্ষেত্রে উভয়েরই যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা হলোÑ আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন তাদের শিক্ষাজীবন নির্বিঘেœ পার করতে পারে।
একটি দেশের বা জাতির শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়া মানে ওই জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়া। ইতিহাস অন্তত তাই বলে।
তাই আমাদের জাতীয় স্বার্থে আমাদের শিক্ষা খাত হরতাল-অবরোধমুক্ত হোক এ প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের, সচেতন অভিভাবকদের, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবার এবং দেশের সচেতন প্রতিটি মানুষের।