somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই শহর সেই শহর

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিজ শহরের কথা মনে পড়ে গেল । হঠাৎ করেই। অনেকদিন যাওয়া হয়না।এইমুহূর্তে খুব মিস করছি। মস্তিষ্কে নাড়া দিচ্ছে সেই দিনগুলো। আহ কতো বাদরামিই না করতাম। ক্রিকেট ব্যাট বল নিয়ে মাঠে পড়ে থাকা ছিলো বাধ্যতামূলক রুটিন।একদিন ক্রিকেট না খেললে ঘুম হতোনা।সবচেয়ে আনন্দময় ছিলো ২০১০-১১ র দিনগুলো

দুপুর আর বিকেল মানেই ক্রিকেটের ময়দান।মাঝে মাঝে অবশ্য ফুটবলও খেলা হতো ।সেটা বর্ষাকালে।মাঠ যখন কর্দমাক্ত।তখনকার ফুটবল মানেই একরাশ উদ্দীপনা ।তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও আমাদের খেলা থালতোনা। তবে ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেটটাই বেশি চলতো।শহরজুড়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টও চলতো।মোটাদাগে বলতে গেলে ক্রিকেটটাই ছিলো আমাদের ধ্যানজ্ঞান। বাংলাদেশের একটা ম্যাচেও মিস হতোনা। প্রায়শই কারেন্ট চলে যেতো।তখন আমাদের ভরসা ছিলো শহরের বিখ্যাত ওয়ালটন শো রুম।বন্ধুরা যে যেভাবে পারতো চলে আসতো। কেউ বসে কেউবা দাঁড়িয়ে খেলা দেখতো। খেলা দেখতে পারাটাই আমাদের একান্ত কাম্য ছিলো। কে আর ক্রিকেটার্স নামে একটা ক্রিকেট টিম গঠন করেছিলাম। দুইটা টুর্নামেন্টও আয়োজন করেছিলাম।শহরের কাচারীরোড এলাকার বন্ধু,বড়ভাই,ছোটভাইদের নিয়ে সেই টিম গঠিত হয়েছিলো।দলে ছিলো সনি ভাই, শুভ্র,সায়েম,নাইম ,লিমন,ইমরান,সোহেল এবং আমি ।আমরা একসাথে কতো কি যে করেছি তা লিখে শেষ করা যাবেনা। এখন সবাই পরস্পর থেকে অনেক দূরে।অবশ্য মনের দিক থেকে সবাই খুব কাছে। সবাইকে খুব মিস করি।

সে সময়ে একটা সাহিত্য পত্রিকা বের করতাম।নাম ছিলো আলোকবর্তিকা। এটি সবার মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছিলো।একটা টিম করেছিলাম।নাম ছিলো কবিয়াল।এই কবিয়াল পরিবারের উদ্যোগে প্রকাশিত হয়েছিলো আলোকবর্তিকা। কবি লোকান্ত শাওন,সারোয়ার ভাই ছিলেন উপদেষ্টা।মশাল দা ছিলেন শিল্প এবং অলংকরণের কারিগর।আর জামাল ভাই অত্যন্ত যত্ন করে তার প্রেস থেকে প্রিন্ট করে দিতেন। আর সবথেকে বেশি কাজ করেছে আমার বন্ধুরা।সোহেল,আরিফ খান,লিটন,শফিক এরা না থাকলে অনেক কিছুই অসম্পূর্ণ থেকে যেতো।

খুব মনে পড়ে তালতলার আড্ডাগুলো।প্রতিদিন সন্ধ্যার পর চলে যেতাম।চায়ের কাপে কথা ঝড় উঠতো।মাঝে মাঝে শাহিন ভাইয়ের বাগান বাড়িতে চলতো খাবারদাবারের তুমুল আয়োজন। আহ কি অপরূপ দিনগুলোই না ছিলো।আমাদের আড্ডার অন্যতম কেন্দ্রস্থল ছিলো আমাদের কথা পত্রিকার কার্যালয়।বলে রাখা ভালো আমার জীবনের প্রথম রিপোর্ট এই আমাদের কথা পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়। কতো আড্ডা দিয়েছি কতো লিখা লিখেছি তা বলে শেষ করা যাবেনা।আমাদের কথা ছিলো আমার প্রথম বিষ্ময়। লিখতে ভালো লাগতো।একবার আমি আর ওয়ালী হাসান ভাই ময়মনসিংহে গেলাম পত্রিকা প্রিন্ট করতে ।পত্রিকার পেজ মেকাপ কিভাবে হয় প্রথম দেখলাম।পত্রিকা প্রিন্ট করে আনার পর কোন এক কারণে সম্পাদকের ঝাড়ি খেতে হলো।তবে পত্রিকা দেখার পর সবার অনেক প্রসংশা পেলাম। জানিনা আমাদের কথা আবার কবে প্রকাশিত হবে।তবে আমার অনেক চেষ্টা ছিলো পত্রিকাটি এতো বিরতির পর দ্রুতই যেন প্রকাশিত হয়।

আমাদের আরেক আড্ডাস্থল সুসঙ্গ বার্তা কার্যালয়।জামাল ভাই,লোকান্ত শাওন আর আমি কতো যে আড্ডা দিয়েছি তা মনে পড়লে খুব নষ্টাজলজিক হয়ে যাই।সুসঙ্গ বার্তা যেদিন রেজিষ্ট্রেশন পায় সেদিন যে কতো খুশি হয়েছিলাম তা বলে বোঝানো যাবেনা।আর ভাবতে ভালো লাগে আমার হাত ধরেই এই পত্রিকা অনলাইন ভার্সন চালু করে।

সুসঙ্গ দূর্গাপুর শহরের আরেক সৃষ্টির নাম জলসিড়ি পাঠাগার।দীপক সরকারের উদ্যোগে এই পাঠাগার যাত্রা শুরু করে। এই পাঠাগারে গেলেই অন্যরকম এক প্রশান্তি পাই।সামাজিক,সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে এই পাঠাগারের জুড়ি নেই।

এই শহরের অন্যতম এক প্রতিষ্ঠান দূর্গাপুর সাহিত্য সমাজ।নাজমুল হুদা সারোয়ার এর প্রতিষ্ঠাতা। এই প্রতিষ্ঠানের চমৎকার এক আয়োজনের নাম কবিতা উৎসব ।প্রতি বছর এটি উদযাপিত হয়।আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে ২০১০ সালের উৎসবটি ।কবি আশিষ সান্যাল এসেছিলেন সুদূর কলকাতা থেকে। ভাবতে ভালো লাগে তাকে দেয়া মানপত্রটি মঞ্চে আমি পাঠ করেছিলাম। আর একুশ শতকের স্রোত নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা বের করা হয় সাহিত্য সমাজ থেকে।

এই দূর্গাপুর থেকেই প্রকাশিত হয় অনলাইন সাহিত্য ম্যাগাজিন সৃজন।সকাল রয় এটির সম্পাদক।হয়তো অনেকেই জানেনা বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য যতগুলো সাহিত্য পত্রিকা কিংবা ম্যাগাজিন আছে তার মধ্যে সৃজন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।শুরুতে আমি এটির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরে নানা ব্যস্ততার কারণে এটিতে কাজ করা হয়নি। একদিন জলসিড়ি পাঠাগার থেকে আমি,সকাল রয় আর শাওন হাসান ফিরছি।সকাল দা সৃজন করার কথা বললেন।আমি একমুহূর্তেই সায় দিলাম।শাওন ভাই একই কাজ করলেন । তবে সকাল দা কে দেওয়া কথা আমি রাখতে পারিনি।কারণ সৃজনে পরবর্তীতে আর কাজ করা হয়নি। তবে অনলাইনে যখন সৃজনের নতুন সংখ্যা দেখি তখন মনটা আনন্দে ভরে ওঠে ।

দূর্গাপুর থেকে যারা দূরে থাকে তাদের কথা ভেবে ২০১৩র ডিসেম্বরে চালু করেছিলাম অনলাইন পোর্টাল সুসং নিউজ।দু বছর চালানোর পর নানা সমস্যায় এটি আর রান করতে পারিনি।তবে ভাবতে ভালো লাগে দূর্গাপুরের প্রথম অনলাইন আমিই করেছিলাম।আর তখন অনলাইন করাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিলো।কারণ তখন এতো কিছু বুঝতাম না।

জীবনের প্রয়োজনে এক শহর ছেড়ে আরেক শহরে বসতি গড়েছি। কিন্তু যখন একা একা হাঁটি তখন মনটা চলে যায় ঐ শহরে যে শহরের নাম সুসঙ্গ দূর্গাপুর।আমার ভালোবাসার শহর।

মামুন রণবীর
২৪/০১/১৭
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:১০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×