somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যদি আমাদের রাজনীতিবিদরা এমন হতেন !!!

২৭ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোগবাদের এই সময়েও তিনি ব্যতিক্রম। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে জয়ী হয়েছেন পরপর চারবার। অথচ আশ্চার্যজনক হলেও সত্য তার কোন বাড়ি নেই, গাড়ি নেই। নিজে দলের গাড়ি ব্যবহার করলেও তার স্ত্রী চলাচল করেন রিকশায়। এমনকি তার কোন ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনও নেই। এই ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদের নাম মানিক সরকার। ৬৪ বছর বয়সী এই মুখ্যমন্ত্রীকে ভারতের সবচেয়ে গরিব মুখ্যমন্ত্রী মনে করা হয়। যত দিন যাচ্ছে তার সম্পদের পরিমাণ আরও কমছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মাসে বেতন পান ৬৫০০ রুপি। পুরোটাই দিয়ে দেন নিজ দল সিপিআইএম-এর তহবিলে। দল তাকে মাসিক বেতন দেয় ৫০০০ রুপি। দল থেকে পাওয়া বেতন আর স্ত্রীর পেনশনের টাকায় টেনেটুনে চালিয়ে নেন নিজের সংসার। দর্জির ছেলে মানিক সরকার এখনও নিজের কাপড় নিজেই পরিষ্কার
করেন। চলনে-বলনে একেবারেই সাদা-সিধে। নিয়মিত পরেন পায়জামা-পাঞ্জাবি। ২০০৮ সালে তার কাছে নগদ এবং ব্যাংক ব্যালেন্স মিলে অর্থ ছিল ১৬ হাজার ১২০ রুপি। পরবর্তী পাঁচ বছরে তা কমে হয়েছে ১০ হাজার ৮০০ রুপি। তার স্ত্রী পাঞ্চালী ভট্টাচার্য্য একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মজীবী। নির্বাচনের সময় মানিক সরকারের দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ২২ হাজার ১৫ রুপি। পাঁচ বছর আগে তার সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি ছিল। স্বামী মানিক সরকার যখন দলীয় গাড়িতে করে অফিসে যাচ্ছেন তখন তার স্ত্রী চলাচল করছেন রিকশায়। এ দৃশ্য আগরতলার রাজপথে নিয়মিতই দেখা যায়। মানিক সরকারের কোন ই-মেইল একাউন্ট নেই। মোবাইল ফোন না থাকায় অফিস অথবা বাসার ল্যান্ড ফোনই তার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা। বোনের সঙ্গে মিলে উত্তরাধিকারসূত্রে দশমিক শূন্য এক একর জমি পেয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে তার মায়ের মৃত্যুর পর পাওয়া এ জমি পরে তিনি তার বোনকে দিয়ে দেন। মানিক সরকারের পিতা অমুল্য সরকার ছিলেন দর্জি। মা অঞ্জলি কাজ করতেন রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগে। মানিক সরকার ১৯৬৭ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। এ সময় তিনি সিপিআইএমের ত্রিপুরা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৯৮ সালে সর্বপ্রথম মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন। আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে ১৯৭১ সালে স্নাতক ডিগ্রি নেন তিনি। মানিক সরকার ও পাঞ্চালী ভট্টাচার্য্য দম্পতির কোন সন্তান নেই। পাঞ্চালী টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, এখনও প্রতিদিন তার স্বামী ঘুম থেকে উঠে নিজের কাপড় ধোয়ার কাজ করেন। মানিক সরকার বলেন, তার স্ত্রীর পেনশন পাওয়ার সুবাদেই তারা টিকে আছেন। একটি সিগারেটে দিন কেটে যাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। এই মুহূর্তে ভারতের একমাত্র বাম শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের মধ্যে অনেকেই জ্যোতি বসুর ছায়া দেখে থাকেন। সর্বশেষ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তার ওপর পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত বাম নেতার প্রভাব নিয়ে কথা বলেছিলেন মানিক সরকার। সে সময় তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ত্রিপুরায় নৃপেন চক্রবর্তী, দশরথ দেবরাই বামফ্রন্ট সরকারে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারাই ইট বিছিয়ে রাস্তা তৈরি করেছেন। আমরা এখন শুধুমাত্র তাকে আরেকটু মসৃণ করার চেষ্টা করছি। প্রথম যখন পার্টি আমাকে ১৯৯৮ সালে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দিলো তখন কমরেড জ্যোতি বসু এখানে এসেছিলেন। আস্তাবল মাঠে বিজয় সমাবেশ করে ফেরার পর পার্টি সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকেও ছিলেন। পার্টি অফিসে ঢুকতে ঢুকতে আমাকে বললেন, ‘এটা খুব সম্মানের দায়িত্ব। খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করবে।’ তিনি তো কম কথা বলতেন। এটুকুই বললেন। আমি বললাম, আমি তো ভোটে দাঁড়াতে চাইনি। পার্টির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলাম। আপনাদের তো কাজের অভিজ্ঞতা আছে, আমাকে পরামর্শ দিন। তখন তিনি বলেছিলেন, সবার কথা শুনবে। তারপর তোমার কথা বলবে। তোমার যে রাজনীতি, মতাদর্শ তা মাথায় রেখে মানুষের জন্য কিভাবে কাজ করতে পারো সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে। তবে সবার কথা শুনতে হবে। সে কথা মাথায় রেখেই এখনও কাজ করার চেষ্টা করি।
শেষ কথা: রাজনীতি অথবা রাষ্ট্র ব্যবস্থার তখনও উদ্ভব হয়নি। গোত্র প্রথার সেই সময়েও মানুষ অনুসরণ করতো নেতার। সাধারণের বিপদে যিনি ছুটে আসতেন তারই নাম দেয়া হয়েছিল রাজনীতিবিদ। কিন্তু দিনে দিনে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। নষ্টদের অধিকারে চলে যেতে থাকে সবকিছু। পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশের চেয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে তা আরও বেশি পরিমাণে সত্য। যদিও এটা অস্বীকার করার যো নেই, আমাদের এই ভূমিতেও অনেক আদর্শ রাজনীতিবিদ জন্ম নিয়েছেন। সততা আর মানব সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা। আর এটাও সত্য আমাদেরই এক প্রেসিডেন্টকে বিশ্ব মিডিয়া অভিহিত করতো, পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশের সবচেয়ে ধনী প্রেসিডেন্ট হিসেবে। ভারতের রাজনীতিতেও দুর্নীতি এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। সেখানে মানিক সরকাররা ব্যতিক্রম। যেমন ব্যতিক্রম আহমাদিনেজাদরাও। এই যখন অবস্থা আমাদের আক্ষেপ, আমাদের রাজনীতিবিদেরাও যদি মানিক সরকারের মতো হতেন।

সুত্র
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×