somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৩ মাস নয়, চাই ২ বছরের তত্ত্বাবধায়ক (আমার মনের মত একটি লেখা)

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কুড়িগ্রামে পাটে আগুন দিয়েছে কৃষক। শরিয়তপুর থেকেও এমন খবর এসেছে। কয়েকটি পত্রিকায় ভেতরের পাতায় অনাদরে ছাপা খবরগুলোর জাম্পে দেখা গেল সাদাকালো ছবি দেয়া হয়েছে। সাদা-কালো ছবিতেও দেখা যাচ্ছে পুড়ছে কৃষকের সাধের পাট। সাদা-কালোতেও আগুনের তেজ এতটুকু কমেনি। কিন্তু ওই আগুন কি রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছাবে কোনোদিন? কারণ এতে কিছুই যায় আসে না আমাদের মূলধারার রাজনীতির দুই জোটের। কৃষকের পাটের চাইতে, দেশের কৃষকের আনন্দ বেদনার চাইতে তাদের কাছে অনেক জরুরি তত্ত্বাবধায়ক বাতিল অথবা বহালের যুদ্ধে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া। আমার সোনার বাংলাদেশ-আমার সোনার দেশের মূল ধারার এই হলো রাজনীতি। উপরন্তু পাটের জিনোম সিকোয়েন্স করে সাফল্য পকেটে তোলার শেষ মূহুর্তের চেষ্টা।

২. ঐশীকে কি মনে আছে আপনাদের? নাকি এরমধ্যেই আপনারা ভুলে গেছেন এই ইস্যুর দেশের শতশত ইস্যুর স্রোতে। হ্যাঁ, 'পিতৃ-মাতৃঘাতী অপয়া' ঐশীর কথাই বলছি। ইয়াবা যাকে অন্ধকারের অতলে নিয়ে গেছে। যে অন্ধকারের ঘুপচি গলিপথে সে তার আলোকিত পথ হারিয়ে ফেলে নিজের রক্তকে চিনতে পারেনি, খুন করেছে প্রিয় বাবা-মাকে। কিন্তু কার এতো বড় বুকের পাটা অভিযোগের আঙুল তোলে সেই ঐশীর দিকেই? লজ্জা করে না তাদের! রাষ্ট্র জানে না, কোথা থেকে, কোন্‌ কোন্ রুটে মাদক আসে, ইয়াবা আসে? দেশ পরিচালকরা কি জানেন না তাদের কোন্ কোন্ মন্ত্রী, এমপি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত, পুলিশ আর র‍্যাবের সেই কর্তারা জানেন না, কারা কারা দেশে মাদকের বড় হোতা, কমিশনগ্রহীতা সাংবাদিক কি জানেন না কার কার কতো পারসেন্টেজ! সেলফিস, সেন্টিমেন্টাল বাঙালি। শুধু শুধু হুজুগে মাতো। দোষ দাও শিকার কে, যারা শিকার বানায় তাদেরকে চেনো না। টকশোতে গলা ফাটাও বুদ্ধিজীবী সেজে, বডি শো করতে, আসল কথা বলতে পারো না, পাবলিকের সময় অপচয় করো। ত্যানা পেচিয়ে পাবলিকের ২৫-৩০ মিনিট মূল্যবান সময় নষ্ট করো। ঘটনার, সমস্যার শানে নুযুল নেই, তর্জমা নেই, অপরাধীদের নামোচ্চারণ করতে পারো না, রাতের মূল্যবান সময় নষ্ট করো বিনোদনপিয়াসীদের।

৩. মহাব্যস্ত ফার্মগেট, যানজটে স্থবির সার্কফোয়ারা এলাকা, রাজধানীর টার্নিং পয়েন্ট শাহবাগ। এসব স্থানে ফ্লাইওভার হলো না। হাজার কোটি টাকা খরচে এগুলো নির্মান করা হলো কুড়িলে। ভাল কথা। এরমধ্যে ফ্লাইওভারের একটি বড় অংশ গিয়ে পড়েছে এমন জায়গায়, যেখানে এই সেদিনও গরুছাগল চড়ে বেড়াতো এমন একটি নির্মানাধীন রাস্তায়। কেন? সেই জায়গায় বছর কয়েক আগেও শেয়াল ডাকতো, জমির দাম ছিল ৪-৫ লাখ টাকা কাঠা। এখন সে জমির দাম বেড়ে কোটি টাকা। কার স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত। পরিকল্পনায় কে বা কারা ছিলেন? কারা লাভবান হলেন?

৪. ‘খবরে প্রকাশ, রাষ্ট্রের খরচ বাঁচাতে সিঙ্গাপুরে দৈনিক ৭০০০ ডলারের হোটেল স্যুটের বদলে কম দামি হোটেলে ৬০০ ডলারের স্যুটে থেকেছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। হোটেলের খাবারের দাম বেশি, তাই বাইরে থেকে কম দামে আনিয়েছেন বাঙালি খাবার। বিদেশে খরচ বাঁচাতে সামরিক সচিব, সচিব ও ব্যক্তিগত সচিবকে চড়িয়েছেন একই গাড়িতে।‘ এসব কথা লেখা হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। সদা হাস্যোজ্জ্বল আমাদের মহামাণ্য রাষ্ট্রপতিকে আমার ভীষন পছন্দ। ওনার কথাবার্তাও আমাকে ভীষনভাবে মুগ্ধ করে।

কিন্তু তিনি যে রাষ্ট্রের খরচ বাঁচালেন তাতে কি আমরা আশান্বিত হবো? আমি অন্তত এই খবরে পুলকিত হওয়ার কিছু দেখি না। সবচেয়ে ভাল হতো যদি মহামাণ্য রাষ্ট্রপতি তার চিকিৎসা দেশের কোন হাসপাতালে করাতেন। দেশে করলে সমস্যা কি? চিকিৎসাব্যবস্থা খারাপ? তো সে রকম চিকিৎসা ব্যবস্থার বন্দোবস্তই যদি স্বাধীনতার ৪৩ বছরে আমরা করতে না পারি, কোথায় আমাদের সাফল্য? এটাতো সেই হোটেল ম্যানেজারের গল্পের মতো হলো, খদ্দের অভিযোগ দিতে গেছেন খাবারে দুর্গন্ধ পেয়ে। ম্যানেজারকে খুঁজছেন। হোটেলবয় জানালো, ম্যানেজার সাব পাশের হোটেলে গেছেন খেতে। এ রকম আমাদের নেতা-মন্ত্রী-রাজনীতিকরা হরহামেশাই চিকিৎসা নিতে থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুর-ভারত করে বেড়ান। আমরা, এই যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, জনগণ, ভোটার-আমাদের যাওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের দেশে চিকিৎসা করাতে হয়, ভুল চিকিৎসায় প্রাণটি দিতে হয়।

আমরা যারা সাধারণ মানুষ, আসলেই তারা সাধারণ। অন্যায়-অবিচার শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি। করার কিছু নেই। আর নেতা-নেত্রীরা হলেন অসাধারণ। এই অসাধারণ নেতা-নেত্রীরা তাদের চিকিৎসার পাশাপাশি বউ-সন্তানদেরও কিন্তু বিদেশে আরাম আয়েশে রাখেন। সেখানেই অসাধারণ এই বাচ্চারা সযত্নে লেখাপড়া করে। দেশ থেকে দুর্নীতি করে কামানো অর্থ পাঠানো হয়। সেই টাকায় সেখানে অসাধারণ এই সন্তানরা আরামে জীবন কাটায়। আর আমাদের সন্তানদের, মানে সাধারণ সন্তানদের কেউ ক্যাম্পাসে জিম্মি থাকে দেশ দরদী পার্টি কিংবা জনদরদী পার্টির কিছুসংখ্যক টেন্ডারবাজ-চাঁদাবাজ ছাত্রনেতাদের হাতে। তাদের আধিপত্যের দাপটে হলে-ছাত্রাবাসে সাধারণ শিক্ষার্থী আমাদের সন্তানেরা থাকে তটস্থ। মহান স্বাধীনতা লাভের ৪৩ বছর গেছে, এই চিত্রের এতটুকুন পরিবর্তন হয়নি। কারণ, কেউ কথা রাখেনি।

দেশের সামনে একেবারে দুয়ারে এসে পড়েছে দশম জাতীয় নির্বাচন। দেশে এই প্রথম নির্বাচনপূর্ব এমন একটি বিরল পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে, এর আগে কখনো দেখা যায়নি। আমাদের দেশের নির্বাচন মানেই জাতীয় একটি উৎসবের মতো। সেই উৎসবের অনুসঙ্গ হলো ভোট প্রার্থনার জন্য জনসভা, প্রচার-প্রচারণা, ব্যানার-ফেস্টুন, মিছিল-শ্লোগান। নির্বাচনের সময় আছে সামাণ্যই, অথচ এর কোনো ছিটেফোটাও দেখা যাচ্ছে না। যাক সে কথা, প্রচার-প্রচারণা নির্বাচনী দলের কাজ, আমার নয়। ও নিয়ে মাথা ঘামানোর সময়ও নেই আমার।

সংবিধান মতে নির্বাচন করতে হবে আগামি মাস তিনেকের মধ্যে। এই দিন যতই ঘনিয়ে আসছে দেশের প্রধান দুই দল দুই মেরুর দিকে হাঁটা দিচ্ছে। একদল যদি উত্তরে যায়, তো আরেক দল দক্ষিণ মেরু বেছে নেয়। একজন কেয়ারটেকার চায়, অন্যদল কেয়ারটেকারকে কেয়ার করতে নারাজ। অথচ ক্ষমতাসীন আজকের আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল এই কেয়ারটেকার। এখন এর ফল ভোগ করার পর তারাই বলছে এটি টক!

অতিসম্প্রতি আমাদের সিংহভাগ বুদ্ধিজীবী তথা চিন্তকমহল একটি বিষয় নিয়ে হাহাকার রব তুলেছেন। সংলাপের বিকল্প নাই। সমঝোতার বিকল্প নেই। দুটি দলকে সংলাপে বসাতে হবেই। যে করেই হোক। নইলে দেশ-জাতিকে রক্ষা করা যাবে না। তাদের হাহুতাশ দেখলে আপনি নিজেও তাদের প্রতি সহমর্মী হবেন। দেশ বিক্রি করে হলেও তাদের সংলাপে বসানোর জন্য ছুটে যাবেন। বিদেশী ‘বন্ধুরাও’ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন আমাদের সংলাপ হচ্ছে না দেখে। জাতিসংঘের প্রধান মিস্টার বানকি মুন নিজে টেলিফোন করেও সংলাপের উপযোগিতা কাকে বলে, কত প্রকার এবং কি কি-তা দুই নেত্রীকে বুঝিয়েছেনও। শোনা কথা, দুই নেত্রী নাকি তাকে পাত্তা দেননি। পাত্তা দেয়া না দেয়াও এখানে বিষয় নয়। বিষয় অন্যখানে। সরাসরি এবার সেই প্রসঙ্গে আসি। সংলাপ হলে কি হবে? আমি আশাবাদি মানুষ। ধরে নিলাম আবদুল জলিল-মান্নান ভূঁইয়ার মতো সংলাপ না হয়ে এই সংলাপ সুমিষ্ট ফল প্রসব করল। দেশবাসীর চোখ ভাসিয়ে ঘুম নামল। আমাদের মুরব্বি আমেরিকার মাথা ঠাণ্ডা হলো, মুন সাহেব আস্বস্ত হয়ে চন্দ্রালোক দেখতে সাগরে ইয়ট ভাসালেন। দেশে অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল।

তারপর?

শান্তি কি এলো? একটু অতীত চর্চা করে আসি তাহলে। যে ধারার সরকারের অধীনেই নির্বাচন আসুক, বৈতরনী পার হলেই কিন্তু সেই অরাজক অবস্থায় ডুবে যায় দেশ, বরাবরের মতো। সেই চাঁদাবাজি, দখলদারি, সন্ত্রাস, ছিনতাই-টেন্ডারবাজি- কোনো কিছু থেমে থাকে না। জনগণ মুক্তি পায় না। কারণ, এই ২৩ বছরে সকল দলই জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। কোনো দল কি বলেছে এ পর্যন্ত, আমাদের দল ক্ষমতায় গেলে অকর্মন্য ছাত্র রাজনীতি, যে রাজনীতি টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ফুটপাতবাজি, দখল, বন্ধ করবে? বলেনি। এখন যেই দল আসুক, এসব চলতেই থাকবে। রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তনের কথা (আমরা ভাল হবো) এখনো কেউ বলেনি। এই যুগে ছাত্র রাজনীতির কি উপযোগিতা আছে? ভার্সিটির হলগুলোতে জরিপ চালিয়ে দেখুন কতজন সাধারণ শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতি চায়। ৫% হবে না। এই ৫ % এর হাতে গোটা ক্যাম্পাস জিম্মি। ক্ষমতার পালা বদল হয়, এই ছাত্রনেতাদের সিংহভাগই জার্সি বদলে নতুন ক্ষমতাসীন দলে ভিড়ে যায়। এখন একটা প্রবণতা দাঁড়িয়েছে, এই প্রজন্মকে ক্রমাগত খুঁচিয়ে একটি মহল উগ্র করে তুলছে। কেউ ধর্মের নামে, কেউ প্রগতির নামে। আর এটা করছে রাজনীতিকরা, তাদের কথিত মূর্খ অন্ধ সাইবার যোদ্ধারা। এটাও তাদের হীন স্বার্থেই।

এই পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার কি কোনো ভুল করেনি বা ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি? কোনো দিন তো দেখলাম না ছাত্রলীগ বা যুবলীগ একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করেছে সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। যদি হতো আমি সেই মিছিলে যোগ দিতাম। ফেলানী হত্যাকাণ্ড মামলার রায় হলো, কই ছাত্রলীগ? যুবলীগ? ভারত সীমান্তে ড্রোন মোতায়েন করতে চায়। কই ছাত্রলীগ-যুবলীগ? তারা মিছিল বের করতো প্রতিবাদে। লোক দেখানো হলেও ধরে নিতাম রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসছে।

হে সাধারণ আর অসাধারণ জনগণ, কেউ কি জোর গলায় দাবি করতে পারবেন বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সাবেক ক্ষমতাসীন (বর্তমানে আসীন হওয়ার জন্য মরিয়া) দল বিএনপির মধ্যে নাম ছাড়া চরিত্রগত কোনো পার্থক্য আছে? যারা পার্থক্য দেখতে পান ধরে নিতে হবে তারা উচুমানের ‘দেশদরদী বা জনদরদী’| আর আমার মত সাধারণ যারা, তারা মানবেন, উভয়ের আদর্শগত বিরোধ সামান্যই। মূল বিরোধ আসলে ক্ষমতা ‘দখল’ নিয়ে। বিরোধটা তারা জিইয়ে রাখেন নিজেদের পোষা বিরাট নেতা-কর্মী বাহিনীর মাধ্যমে। কিছু হলেই দেখা যায় দাত-নখ বের করে প্রতিপক্ষের ওপর নেকড়ের মতো ঝাপিয়ে পড়ছেন। চর্চাটা জারি রাখতে মাঝে মাঝে তো এরা নিজের দলের লোকের ওপরেই হামলে পড়েন। বিবেক বিসর্জন দেওয়া এসব সুবিধাভোগী নেতাকর্মীরাও দুই নেত্রীর মতোই কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেন না। অথচ দুটি দলই বলে, তারা গণতন্ত্র চর্চা করে। কোথায় গণতন্ত্র চর্চা। যেখানে দলের নেতা নির্বাচনেই গণতন্ত্রের ধার ধারা হয় না, সেখানে এর চর্চা কিভাবে সম্ভব? আর এই অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের কারণেই দুর্নীতিগ্রস্ত একটি সামাজিক কাঠামোও দীর্ঘদিনে দাঁড়িয়ে গেছে। সেই ঘুণে ধরা কাঠামোর কাঠামোর কারণেই রানাপ্লাজা ধসে পড়ে; আমাদের অর্থনীতির চাকা সচলকারী শ্রমিক ভাই-বোন-বাবা-মায়েরা সেই বিধ্বস্ত দেয়ালের নিচে চাপা পড়েন।

শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির পর একটা তদন্ত কমিটি হয়েছিলো। মনে আছে তো আপনাদের? ওই যে ইব্রাহিম খালেদ নামের একজন ভদ্রলোক সেই কমিটির প্রধান ছিলেন। তদন্ত কমিটিতে অপরাধীদের সনাক্ত করা হলো। ওই সময় সরকার কি করলো? সেই তদন্তটা পুরো ধামাচাপা দিলো। নিশ্চিতভাবে এরা সরকারের খুব প্রভাবশালী লোকজন। দেশের উপর আধিপত্য এবং সরকারি সহায়তা পাওয়ার কারণেই তারা শেয়ারবাজারের এই সর্বনাশ করেছে। শেয়ারবাজারের লাখ লাখ মানুষ সর্বহারা হয়ে গেলো, লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর আয়-সঞ্চয় লুট করা হলো, কেউ কেউ মানসিক ভারসাম্য হারালেন, যারা মানসিক ভারসাম্য হারানোর ‘সৌভাগ্য’ পেলেন না, তাদের কেউ কেউ আত্মহত্যা করলেন।

পুঁজিবাজার লুটের পুরো ঘটনাই অতিব পরিকল্পিতভাবে ঘটানো। সেটার পেছনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ছিলো। তদন্তে যে কয়েকজনের নাম এসেছিলো, তাতে আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির লোকও আছে। এ ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে যে বিস্ময়কর ঐক্য দেখা গেলো, সেটার ব্যাপারে সরকার কিন্তু খুবই নমনীয় এবং সরকার তাদেরকে ধরতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

সাধারণ লোকজন বলে থাকেন, লুটপাটে দুটি দল ভাগাভাগিতে সমঝোতা করে চলে। ভেতরে ভেতরে নেতারা আত্মীয়তার সম্পর্ক করেন, ব্যবসায়ীক অংশীদার বানান। সুতরাং নির্বাচন ইস্যুতে তারা যে সমঝোতা করবে, এটা হলফ করে বলে দেয়া যায়। টিভি টকশোতে বিশেষজ্ঞ বক্তারা এখন নিয়মিত বলে চলেছেন, সমঝোতা চাই, সমঝোতা চাই। ‘নিরেট মূর্খ’ বলেই কিনা এমন সমঝোতা আমি চাই না। তাদের এমন সমঝোতা হলেও আমি উৎফুল্লও হবো না। কারণ, ওই যে বললাম, মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠই তো।

সমঝোতা বা সংলাপ বলতে আমি বুঝি দুটি জোটের মধ্যে প্রিয়দেশটির মানচিত্র ভাগাভাগি। কে চেয়েছে সমঝোতা? কার স্বার্থে? দুটি দল লুটপাট করবে, সেটা নিয়ে যখন লাঠালাঠির উপক্রম, তখন একশ্রেনীর চিন্তকগোষ্ঠী যারা কিনা পদলেহন করে চলেন, তারাই এই জিগির তোলেন, সমঝোতা চাই সমঝোতা চাই। সমঝোতা হলে সেই চিন্তকগোষ্ঠী আর তার প্রভূ, সে ব্যবসায়ী হোক আর রাজনীতিক হোক, তাদের লাভ। জনগণের কি লাভ তাতে? সমঝোতা হলে বড় জোর একটা লাভ, আন্দোলনের কারণে কিংবা সেটা ঠেকানোর কারণে অনাহুত মৃত্যুর হার অবশ্য কমবে, এই যা। আর কোনো উপকার আছে কি? একেবারেই নেই। কারণ, সমঝোতায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, নির্বাচনের পর একটি দলের পাঁচবছরের নামে দেশ ইজারা; আবারো সেই রাজনীতির অন্ধকার অতল গহ্বর, আবারো সেই লুটপাট, খুন, গুম, ধর্ষন, রাহাজানি, ব্যাংক লুট, সেতু লুট, জালিয়াতি। ছাত্র আর যুবনেতাদের চাঁদাবাজি, খুন, লাঠালাঠি। কোনো পরিবর্তন কি আসবে? সেই পরিবর্তনের গ্যারান্টি দিন আগে, তারপর আসুন সংলাপ কিংবা সমঝোতার আলাপে।

আর তা না হলে আমি চাইব, পাঁচ বছরের নির্বাচিত সরকারের মাঝে দুই বছরের বিশেষ সরকার। যারা জনগণের পক্ষ থেকে নির্বাচিত সরকারগুলোর কড়ায় গণ্ডায় হিসাব বুঝে নেবে। দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রী-এমপিকে টাইট দেবে। দেখব তখন, কার কার সাধ জাগে ক্ষমতায় যাবার, জনসেবা করার। আশা করি তখন মনোনয়পত্র কিনতে তিন-চার শো কোটি টাকার ডাক উঠবে না। বুকে যাদের সততার বল আছে তারাই তখন দলগঠন কিংবা নির্বাচন করতে আসবে। এই মরার দেশে গুণ্ডা রাজনীতিকদের টাইট দিতে ষণ্ডা সরকারের বিকল্প নেই।

পাদটিকা
তৃতীয় শক্তি হিসেবে কেউ কেউ মাঠে হাঁক ছাড়ছেন। তারাও আদর্শ বিকল্প নয়। কারণ তাদের সম্পর্কেও সবিশেষ জানি আমরা। সুযোগের অভাবে সৎ।

যবনিকা
মৃত্যুশয্যায় মহাবীর আলেকজান্ডার তার সেনাপতিদের ডেকে বলেছিলেন, 'আমার মৃত্যুর পর আমার তিনটা ইচ্ছে তোমরা পূরণ করবে। এরমধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিপ্রায় হচ্ছে, শুধু আমার চিকিৎসকরাই আমার কফিন বহন করবে।' তার সেনাপতি তখন তাঁকে এই বিচিত্র অভিপ্রায় কেন ব্যক্ত করছেন-প্রশ্ন করলেন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আলেকজান্ডার বললেন, 'আমি দুনিয়ার সামনে এই শিক্ষা রেখে যেতে চাই যে, চিকিৎসকদের কফিন বহন করতে বলেছি, পৃথিবীবাসীকে এ কথা জানিয়ে দিতে, তারা আসলে মানুষকে সারিয়ে তুলতে পারে না। তারা ক্ষমাহীন মৃত্যুর হাত থেকে কাউকে রক্ষা করতে অক্ষম।'

আমিও মহাবীর আলেকজান্ডারের কথার সুর ধরে নির্দ্বিধায় বলতে চাই, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকরা জনসেবা কিংবা দেশসেবা দিতে অক্ষম। তাদের দিয়ে এ কাজ কখনো হবার নয়

সুত্র: পরিবর্তন.কম
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×