somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আব্দুল মান্নান মল্লিক
ইং ১৯৬২ সনের ১১ই সেপ্টেম্বর মুর্শিদাবাদ জেলার মরাদিঘী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করি। মাধ্যমিক পাশ করে সংসার জীবনে জড়িয়ে পড়ি। কর্মরত ব্যস্ততম জীবনের অবসর সময়ে ২০১৪ সালের শেষের দিকে মানব সমাজ ও প্রকৃতির হাত ধিরে লিখতে থাকি গল্প ও কবিতা।

আমার বর্ষাকাল

২৬ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বর্ষাকাল

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বেশ কয়েকদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে তো ঝরছেই। কখনো কখনো বেশ জোর, বাকি সময় সর্ষে চালুনে।
বাড়ির সম্মুখেই একটি আম গাছ। এই আম গাছে থাকে আমার খুব পরিচিত এক ঝাঁক শালিক পাখি। আজকেও সারারাত বৃষ্টির জলে ভিজেছে এরা। ভোরের বেলায় ওরা যখন আমার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে, আমি তখন শীতেল পরিবেশে ঘুমিয়ে বিভোর।
আমার ঘুম ভাঙতে দেরি হলে এমনিতেই ওদের তর সয় না। ওরা কিচিরমিচির শুরু করে আমার ঘুম ভাঙাই। তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে বারান্দায় মুড়ি ও ভাত ছড়িয়ে দিই। সঙ্গে-সঙ্গে গাছের যত শালিক নেমে আসে আমার বারান্দায়, কেউ-কেউ খোলা দরজা পেয়ে ঘরেও ঢুকে পড়ে। খুঁটে-খুঁটে ওদের যেমন ইচ্ছে খেয়ে আবার গাছে ফিরে যায়। সারাদিন গাছ, আর আমার বারান্দা, এই হচ্ছে এদের কর্মস্থল। যখনই খিদে পায় চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। এখন আমরাও সেটা বুঝে গেছি। যতক্ষণ খিদে না মেটে, চেঁচামেচি করতেই থাকে। খিদে মিটে গেলেই শান্ত।
বর্ষার শুরু থেকে প্রতিদিনের এই নির্ধারিত নিয়ম যেন বিক্ষিপ্তে বয়ে চলেছে।
আজ ভাঙতেই ততক্ষণে বৃষ্টির সাথে ধোঁয়াটে আবছা আলো পৃথিবীতে পৌঁছে গেছে। অদূরে মেঘের ঘোরাফেরা। গাছের ডালে-ডালে সিক্ত দেহে শালিকগুলো আমার উপর অভিমান করে বসে আছে। সারা রাত্রি ভিজেছে কিনা, তাই শীতের প্রকোপে আজ ওদের মন চাইছে না চেঁচামেচি করে আমার ঘুম ভাঙাতে। পালকের মধ্যে চঞ্চু গুঁজে সব বসে আছে।
প্রতিদিনের মতো আজও বারান্দায় মুড়ি ছড়িয়ে দিলাম, দু-চারটে পাখি বিরাগে খেয়ে ফিরে গেল। বাকিরা সব বসেই রইল।
এ-তো গেল আমার শালিক বন্ধুদের কথা।
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, চল যায় এবার আমার বর্ষাকালের পুকুর ও আশপাশের পরিবেশে। বাড়ির চারিপাশে বিভিন্ন প্রকার গাছ-গাছালিই ভরা। এখানে জানা-অজানা নানান জাতি পাখিদের বসবাস।
বাড়ির সামনে আম গাছের নীচেই আমাদের একটি বড় পুকুর। পুকুরটির এক তৃতীয়াংশ পানাই ভরা। বৃষ্টি-বাদলের দিন, জল ভরে গেছে কানাই-কানাই। পুকুরের বড়-বড় পানাগুলি এখন ডাঙা ছাড়িয়ে উপছে উঠেছে।
দু-চার ফোটা বৃষ্টি পড়লেই মাছেদের আনন্দ নৃত্য আর ধরে না।
ঈশাণ কোণের উত্তর পাড়ে কলা, কাঁঠাল, লেবু আতা, বেল, আমলকী সেগুন ছাড়াও আরও কতকি। নীচে জলের উপর জানা-অজানা লতাপাতায় ভরে গেছে । এর মাঝে-মাঝে পানাগুলো ও বেশ বড় হয়ে উঠেছে। এক কথায় বলতে হয় জল-জঙ্গল।
এখানে চেনা অচেনা হরেক রকম জলজ পাখির বসবাস। মাঝে-মাঝে দু-চারটে যাযাবর পাখি ও দেখা যায়। কায়েম নামে একপ্রকার পাখি ও ডাহুক পাখি বর্ষাকালে সঙ্গে বাচ্চা নিয়ে পানার ফাঁকে-ফাঁকে চরে বেড়াই। মানুষের সাড়া পেলেই লতা-পাতাই লুকিয়ে পড়ে।
জলজ পাখির বাচ্চা সাধারণত বর্ষাকালেই আমরা দেখতে পাই।
ডাহুক পাখিদের মতো কায়েম পাখিদের এখানে বারোমাস দেখা যায়না। কায়েম পাখি একমাত্র বর্ষাকালেই এখানে দেখা যায়। হয়তোবা ডিম ফোটানোর উপযুক্ত পরিবেশ, নইতো বাচ্চা বড় করে তোলার নিরাপদ জায়গা বলে মনে করে , তাই এরা এই সময় এখানেই আসে।
এরা কোথায় থেকে আসে আর বর্ষার শেষে কোথায় যে যায়, আজও কেউ বলতে পারেনা। পাখিটি দেখতে বেশ বড়-সড়। দেহের তুলনায় ঠ্যাঙ দুটো আরও বড়। এদের ডাকের ও বেশ বৈশিষ্ট্য আছে। বর্ষার শুরুতে যখন আসে, তখন মুখে ডুগ-ডুগ শব্দ তোলে। অবিকল মনে হয় কোথাও বাঁদর নাচ এসেছে, তাই ডুগ-ডুগি বাজছে।
এই পুকুরে বর্ষাকালে আরও এক ধরণে পাখি দেখা যায়। এই পাখিটি দেখতে অবিকল হাঁসের মতো। এর নাম না জানাই, আমরা বুনো হাঁস বলেই চিহ্নিত করেছি। বাকি সময় কোথায় থাকে, কে জানে!
এরা মাঝ পুকুরে ফাঁকা জলের উপর খেলে বেড়াই। কেউ কেউ সঙ্গে বাচ্চা নিয়ে চরে বেড়াই। বাচ্চাগুলো দেখতে অবিকল হাঁসের বাচ্চার মতো । একবিন্দু ও চেনার উপায় নাই। এরা মানুষের নাগালের অনেক দূরে থাকে। একটু বিরক্তিকর শব্দ পেলেই উড়ে পালাই , সঙ্গে-সঙ্গে বাচ্চাগুলো ছুটে গিয়ে পানার ভিতরে লুকিয়ে পড়ে।
তাছাড়া বারোমেসে পানকৌড়ি তো আছেই। তবে বর্ষাকালের মতো, এত মনোহর দৃশ্য অন্য সময় দেখা যায়না।
পুকুরের জলে কেউ-কেউ ডুবছে-উঠছে, আবার কেউ-কেউ জল ছেড়ে উড়ে যাচ্ছে। কেউবা পুকুরের উপর চক্র মারছে। বৃষ্টি বীরামের মাঝে কেউ পুকুর পাড়ে ঢিবির উপর, কেউবা পাড়ের গাছে মগডালে ছাতার মতো ডানা মেলে গা শুকাচ্ছে।
গাছে-গাছে মাছরাঙা পুকুরের উপর দৃষ্টি দিয়ে বসে-বসে বৃষ্টির জলে ভিজছে। সুযোগ বুঝে ঝপাং করে জলে ঝাঁপ দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে সোজা গাছে গিয়ে বসছে।
এই মনোহর পরিবেশের সাথে বন্ধুত্ব রেখে নিজেকে ধরা দিতেই আমি ব্যস্ত, তাই লিখালিখি আমার আর ভালো লাগে না।
দেখতে দেখতে সারাদিন-টা কিভাবে পার হয়ে যায়, কিছুই যেন বুঝতে পারিনি।
কবিতা লিখব? ভাবতে পারিনা, গল্প লিখব? মনে আসেনা।
বাড়িতে বসে বর্ষার চিত্তহারী উপভোগ করা ছাড়া কিছুই আর ভালো লাগেনা।


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×