(সতর্কতা: নরনারীর যৌনাচার নিয়ে এই প্রবন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কামসম্পর্কিত নানাবিধ টার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে প্রবন্ধে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যেও তাই অশালীনতার গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। কাম সম্পর্কে যাদের শুচিবাই আছে, এই প্রবন্ধ পাঠে আহত হতে পারেন তারা। এই শ্রেনীর পাঠকদের তাই প্রবন্ধটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধে করা যাচ্ছে। পুর্ব সতর্কতা সত্বেও যদি কেউ এটি পাঠ করে আহত বোধ করেন, সেজন্যে কোনভাবেই লেখককে দায়ী করা চলবে না।)
প্রথম কলি
ভুমিকা:- ইসলামী সমাজে কাম বা সেক্স বিষয়টি একেবারেই অপ্রকাশ্য। সাধারণ মুসলিম সমাজে সেক্স শব্দটি কদাচিত উচ্চারিত বা আলোচিত হয়ে থাকে। হলেও হয় গোপনে, ভয়ে ভয়ে। (দৈব দুর্বিপাকে কোন সমস্যা দেখা দিলে কিংবা কাফেরদের দেশে নারীসম্ভোগের জন্যে গমন করা ছাড়া অন্য সময়ে যৌনবিষয়ক আলাপ আলোচনা ইসলামী সমাজে নিষিদ্ধই বলা যায়)। ইসলাম ভান করে যেন পুরুষ বা নারীর দেহে যৌনাঙ্গ বলতে কোনকিছুর অস্তিত্ব নাই। একজন মুসলিম রমনীকে তার মাথা হতে পা পর্য্যন্ত ঢেকে রাখতে হয় আজীবন, তার "আওরাকে" সে এভাবেই আবরণ দিয়ে রক্ষা করে। ইসলামী পরিভাষায় আওরা বলতে নারীর সেই অঙ্গকে বুঝায় যা দেখলে পুরুষ কামোত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং যা নারীর জন্যে লজ্জাস্বরূপ। অর্থাৎ সেক্সুয়াল অর্গান বা যৌনাঙ্গ হচ্ছে নারীদেহের একটি লজ্জাজনক অংশ ! 'তার সমস্ত দেহটিই একটি লজ্জাজনক বস্তু' - এই অনুভুতি নিশ্চয়ই নারীদের জন্যে সম্মানের বিষয় নয়।
পুরুষের জন্যেও সিষ্টেমটি চরম অবমাননাকর। কারণ এতে এই প্রমাণ হয় যে পুরুষজাতি রাস্তায় বিচরণরত বেওয়ারিশ ষাড়ের চেয়ে বেশী কিছু নয়, সামনে মেয়ে দেখলেই তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে অপরিসীম যৌনক্ষুধা মিটিয়ে নেয়ার জন্যে সর্বক্ষন মুখিয়ে আছে সে। একেবারেই অর্থহীন বাজে একটি ধারণা। এই কাফেরদের দেশে যুগের পর যুগ বাস করছি আমি, নানা বর্ণের নানা বয়েসের লাখ লাখ মেয়ে অহোরাত্র প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে। তাদের কারও বেশভুষা শালীন, কারও বেশভুষা প্রচলিত ভাষায় যাকে বলে চরম 'সেক্সি'। কিন্তু কখনও দেখিনি যে কোন পুরুষ কামতাড়িত হয়ে এমনকি চরম সেক্সি মেয়েটির উপর ঝাপিয়ে পড়লো এবং পাশবিক ক্ষুধা মিটিয়ে নিল। সেক্স সম্পর্কে ইসলামের ধারনা মুলতঃ বেদুঈন আরব কালচারের উপর প্রতিষ্ঠিত। আধুনিক সভ্য সমাজের মানদন্ডে এই কালচার একেবারেই সেকেলে, বর্বর আর অসভ্য বললেও কম বলা হয়। কেন ইসলামেী সমাজে সেক্স শব্দটি চরম নোংড়া শব্দ বলে বিবেচিত হয়, কেনই বা এসম্পর্কিত আলোচনা সেখানে একেবারেই নিষিদ্ধ -এই বিষয়টি আমাকে দারূনভাবে কৌতুহলী করে তুলে। ইসলামের মৌলিক ধর্মীয় রচনাগুলিতে সেক্স সম্পর্কে লিখিত কোন বিধিবিধান আছে কিনা তা খুজে বার করতে প্রবৃত্ত হই আমি। আশ্চর্য্য হয়ে লক্ষ্য করলাম- তফসির, হাদিস, শরিয়া, ফিক্হ্ এইসব বিভিনড়ব ইসলামী বিষয়ের উপর টন টন রচনা আছে, অথচ সেক্সের উপর যেটুকু তথ্য আছে তা অতীব সামান্য। সুতরাং এ সম্পর্কে কলম চালনা করতে আমাকে ভাসা ভাসা সুত্রের উপর নির্ভর করতে হলো। আরও একটি বড় ধরণের সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল আমার জন্যে। আমি বিস্ময়ের সাথে আবিস্কার করলাম- কামচর্চার নিষেধাজ্ঞাটি পুরুষদের উপর মোটেও কার্য্যকরী নয় ইসলামে ! আপাতঃ নিষেধ বলে যা প্রতীয়মান হয়, তা নেহায়েতই লোকদেখানো মাত্র !
ইসলামী আইনসমুহে অগনিত ছিদ্র রয়েছে। এত ছিদ্র আছে যে ইচ্ছে করলে যে কোন মুসলমান পুরুষ, তা সে বিবাহিত বা অবিবাহিত যাই হোক না কেন, আইনের কানাগলির সুযোগ নিয়ে অপরিমিত যৌনসম্ভোগ করতে পারে। তাকে যা করতে হবে, তা হলো খেলাটি ভালভাবে রপ্ত করা। না জেনে খেলতে গেলে সমুহ বিপদের সম্ভাবনা। সেক্স করার জন্যে ইসলামে এত গুপ্ত উপায়, না বলা এতসব আইনকানুন আছে যে মোল্লারা কখনও সে সম্পর্কে মুখ খুলবে না।
পাঠক। শীতকালে গরম লেপের উষ্ণতা কতোই না আরামদায়ক - তাই না? শেক্সপীয়ারের সনেট, রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান, অজন্তার গুহাচিত্র কিংবা প্রাচীন গ্রীসের ভাস্কর্য্য- সর্বযুগের সংস্কৃতিপ্রেমী মানবসন্তানের মনে সন্তোষের জন্ম দেয়। কিন্তু আপনি কি ভেবে দেখেছেন যে কিছু বিরল উপাদান আছে যার মাঝে মানুষ তার শারিরিক ও মানসিক তৃপ্তি এক সাথে খুজে পায়? সেক্স। হ্যা, সেক্স হচ্ছে সেই বিরল উপাদানগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান যা মানবজাতির (বিশেষ করে পুরুষ প্রজাতির) ড্রাইভিং ফোর্স হিসেবে পরিগনিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। এই শক্তিশালী উপাদানটিকে কোন্ সমাজ কীভাবে হ্যান্ডল করে, তার উপরেই সেই সমাজের প্রাগ্রসরতা কিংবা পরিপক্কতার পরিচয় নির্ভর করে।
এই নিরীখে ইসলাম কীভাবে সেক্সকে হ্যান্ডল করেছে তার পর্য্যালোচনা করা যাক এবার। ইসলাম মানব-প্রজাতির যৌনাচারকে স্ত্রীজাতির মর্য্যাদার সাথে গুলিয়ে ফেলেছে। অথচ মানুষের স্বাভাবিক যৌন ্ি#956;য়াকলাপ আর নারীর মর্য্যাদা সম্পুর্ণ আলাদা দু'টি বিষয়। পৃথিবীতে প্রচলিত আর সব ধর্ম-সামাজিক সিষ্টেমগুলির সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে ইসলাম সেক্স এবং সেক্সুয়াল পিউরিটির উপর অতিমাত্রায় গুরুত্ব আরোপ করে, অথচ এর মাঝে এত বেশী স্ববিরোধীতা রয়েছে যা দেখে মনে হয় নরনারীর স্বাভাবিক যৌনাচার সম্পর্কে ইসলাম বড় বেশী স্পর্শকাতর, বড় বেশী উৎকন্ঠিত। সেক্স সম্পর্কে ইসলামের কপটতা, দ্বিমুখী ও পক্ষপাতদুষ্ট নীতি এবং উদ্ভট ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধের স্বরূপ উন্মোচন করাই বক্ষমান প্রবন্ধের মুল উদ্ধেশ্য। সেই সাথে এটাও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো যে যৌথ সম্মতির ভিত্তিতে নরনারীর যৌনতৃপ্তি মেটানোর প্রাকৃতিক অধিকারের উপর কিছু অন্যায় ও অযৌক্তিক বাধানিষেধ আরোপ করে মানুষের উপর অপরিসীম নির্য্যাতন চালানোর বিধান দেয়া হয়েছে ইসলামে। নরনারীর যৌন সম্পর্ক মানবজীবনের পরম গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। ধরাপৃষ্ঠে জীবকুলের বিকাশ যৌনপ্রক্রিয়ারই অবধারিত ফসল। এটি ছাড়া ডারউইনের বিবর্তন বহু আগেই বন্ধ হয়ে যেতো।
পাঠক, আসুন এবার আমরা ইসলামি সেক্সের উপর আলোচনা শুরু করি। ইসলামি সেক্সের প্রথম পাঠ- রঙ্গরস ও কামকেলির জন্যে কুমারি সর্বশ্রেষ্ঠ।
ইসলাম মনে করে- কুমারিত্ব স্ত্রীজাতির শ্রেষ্ঠ ভুষণ। বিয়ের আগে কুমারিত্ব খোয়ানোর সমতুল্য আর কোন পাপ নাই এই বিশ্বব্রম্মান্ডে! ইসলামি সমাজে যথেষ্ট সাবালিকা মেয়েরাও প্রাক-বৈবাহিক সেক্সের কথা চিন্তা করতে পারে না (পুরুষদের ক্ষেত্রে অবশ্য স্বতন্ত্র নিয়ম। পরবর্তীতে আমরা দেখাব -বিয়ের আগেই একজন মুসলমান পুরুষ ক্রীতদাসী অথবা যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে যথেচ্ছ যৌনবিহার করতে পারে। তবে মুক্ত নারীদের সাথে বিবাহ-বহির্ভুত সেক্স সম্পুর্ণরুপে নিষিদ্ধ)। পাঠক মনে রাখবেন, বিবাহ-বহির্ভুত সেক্স ইসলামে একটি গর্হিত অপরাধ বলে গন্য, অপরাধীকে এর জন্যে গুরুতর শাস্তি ভোগ করতে হয়। অপরাধী অবিবাহিত/অবিবাহিতা হলে শাস্তি এক শত দোররা বা বেত্রাঘাত। অপরাধী বিবাহিত (বিবাহিতা) হলে তার শাস্তি পাথর নিক্ষেপে মৃতু্যদন্ড। এই বিধান পবিত্র "হদুদ" আইন নামে পরিচিত; এর অর্থ- অপরাধ করে ফেললে এই বর্বর আইনের হাত এড়ানোর কোন উপায় নেই। একবার রায় হয়ে গেলে একে রদ করার ক্ষমতা কারও নেই, যে কোন ভাবে তা কার্য্যকর করতেই হবে। ইসলামি ক্ষমা আর সহিষ্ণুতার কি অপুর্ব নমুনা ! আমার বক্তব্য যদি কারও নিকট অতিরিক্ত বিদ্ধেষমুলক প্রতীয়মান হয়, তবে তাকে একটি বিষয় স্মরণ করতে বলি। ইসলামের বিধান অনুযায়ী অননুমোদিত সেক্স নরহত্যার চেয়েও বড় অপরাধ। কারণ- হত্যাকারী 'কিয়াস' (বদলা) বা 'দিয়া'র (রক্তপণ) বিনিময়ে অপরাধ থেকে ক্ষমা পেতে পারে। কিন্তু যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে এরুপ কোন ক্ষমার সুযোগ নেই ! ভালবাসা খুন করার চেয়েও জঘন্য অপরাধ ইসলামে (বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে) ! কতো বড় ঘৃন্য ও অদূরদর্শী আইন, ভাবা যায়!
চলবে---->
সূত্র: আবুল কাশেমের 6 খন্ডে প্রকাশিত প্রবন্ধ 'সেক্স এন্ড সেক্সুয়ালিটি ইন ইসলাম' এর বঙ্গানুবাদ, অনুবাদঃ খেলারাম পাঠক
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০০৬ সকাল ৭:১৫