somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

***টিপসঃ ইসলাম বিষয়ক প্রশ্ন বা ইসলামকে হেয় করে কোন লেখা দেখলে যা করণীয়***

০৮ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম

ইন্টারনেটে ব্লগ সংস্কৃতির কল্যাণে আমরা প্রায়ই ইসলাম বিষয়ক অনেক ধরণের প্রশ্ন এবং ইসলামকে হেয় করে অনেক পোস্ট বা লেখা দেখে থাকি। এই দুইটি ক্ষেত্রেই আমরা সমস্যায় পড়ে যাই আর কিছু ভাই আবেগের তাড়নায় এমন সব কথা বলতে শুরু করেন যা মোটেও উচিত নয়। তাই আসুন কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জেনে নিই এই রকম পরিস্থিতিতে আমাদের মুসলিম ভাইদের কি করণীয়।

প্রথমত, ইসলাম বিষয়ক কোন প্রশ্ন দেখলে প্রথমেই খেয়াল করুন আপনি সে বিষয়টা সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জানেন কি না। যদি জানেন তাহলে চমৎকারভাবে কুরআন-সুন্নাহর দলিল সহ তার উত্তর দিয়ে দিন আর যদি পরিপূর্ণভাবে জানা না থাকে একটু-আধটু জানেন তাহলে উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
“অধিকাংশ মানুষ সুষ্ঠু জ্ঞান ছাড়াই নিজেদের খেয়াল খুশিমতো (মানুষকে) বিপথে চালিত করে; নিসন্দেহে তোমার মালিক সীমালংঘনকারীদের ভালো করেই জানেন” (সূরা আনআমঃ ১১৯)
রাসূল ﷺ বলেছেনঃ “যে কেউ আমার বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলবে সে যেন জাহান্নামে তার নিজের জন্যে একটি ঘর বানিয়ে নিল” (বুখারী)

দ্বিতীয়ত, অনেকেই ইসলাম বিষয়ক প্রশ্ন করে থাকেন জানার উদ্দেশ্যে নয় বরং ইসলামকে হেয় করার উদ্দেশ্যে আর এই ধরণের প্রশ্নগুলো দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন এই প্রশ্নগুলো করার আসল উদ্দেশ্য কি। যেমনঃ শয়তান কি? বেহেশত কি? হুর কি? রাসূল ﷺ ঐ কাজটি কেন করেছিলেন? আল্লাহ অমুক জিনিস কেন এমন বানালেন? আল্লাহ কেন এটা করলেন না? প্রভৃতি। এই ধরণের প্রশ্ন দেখলে উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
রাসূল ﷺ বলেছেনঃ “কোন বান্দাহর কাছে শয়তান এসে বলে অমুক জিনিস কে সৃষ্টি করেছে? এটা কে সৃষ্টি করেছে? অবশেষে এ কথাও জিজ্ঞেস করে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে? ব্যাপার যখন এ পর্যায়ে পৌছায় তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করো এবং আলোচনা পরিহার করো”। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, কেউ যদি মনের মধ্যে এরুপ অনুভব করে, তবে অবশ্যই বলবে, আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। (মুসলিম)

তৃতীয়ত, ইসলামের প্রতিষ্ঠিত বিধান বা আইন নিয়ে প্রশ্ন বা তা পরিবর্তন করার উদ্দেশ্যে কোন লেখা দেখলে সবচেয়ে ভাল হবে কোন উত্তর না দেওয়া। আর যদি আপনার বিষয়টি সম্পর্কে একদম পরিপূর্ণভাবে জানা থাকে তাহলে কুরআন-সুন্নাহর দলিল দিয়ে উত্তর দিয়ে দিন। এই ধরণের প্রশ্নের ক্ষেত্রেও ইসলামকে হেয় করার উদ্দেশ্য থাকে এক্ষেত্রে যিনি এই ধরণের প্রশ্ন করেছেন তার পূর্বোক্ত লেখাগুলো একটু দেখে নিন, যদি দেখেন এই ধরণের প্রশ্ন সে প্রায়ই করে আর স্পষ্ট দলিল দেখানো সত্যেও নিজের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে তাহলে তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

চতুর্থত, কোনআনের কোন আয়াত, কোন বিধান বা আইন, আল্লাহ সম্পর্কিত কোন অশালীন কথা বার্তা, রাসূল ﷺ এর কোন সহীহ সুন্নাহ বা রাসূল ﷺ কে উদ্দেশ্য করে অশালীন লেখা থাকলে তাদের সাথে আলোচনা করা থেকে বিরত থাকুন। সেই লেখা থেকে যথা সম্ভব তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসুন।
“আল্লাহ তাআলা এ কিতাবের মাধ্যমে তোমাদের উপর আদেশ নাযিল করেছিলেন যে, তোমরা যখন দেখবে আল্লাহ তাআলার নাযিল করা কোন আয়াত অস্বীকার করা হচ্ছে এবং তার সাথে ঠাট্রা-বিদ্রুপ করা হচ্ছে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসো না, যতক্ষণ না তারা অন্য কোন আলোচনায় লিপ্ত হয়, (এমনটি করলে) অবশ্যই তোমরা তাদের মতো হয়ে যাবে (জেনে রেখো), আল্লাহ তাআলা অবশ্যই সব কাফের ও মোনাফেকদের জাহান্নামে একত্রিত করে ছাড়বেন” (সূরা নিসাঃ ১৪০)
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে শালীন ভাষায় অবহিত করুন, তাদের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন কারণ অশালীন ভাষা ব্যবহার করা রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ নয়।

পঞ্চমত, ইসলামের কোন আইন বা বিধান নিয়ে ইচ্ছামত মতামত ব্যক্ত করে বা ইচ্ছামত ব্যাখ্যা করে লেখা গুলোকে গুরত্ব দিবেন না। যদি কোন লেখায় এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলে সেই লেখা আর দ্বিতীয়বার না পড়াটাই উত্তম। কারণ, এই ধরণের কাজ অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট জাতিদের কাজ। এদের সাথে বেশিক্ষণ থাকলে আপনি নিজেই কিছুক্ষণ পরে কনফিউসড বা দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়বেন। সূরা ফাতিহার শেষ আয়াতে আমরা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টদের পথে পরিচালিত না করার জন্যে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করি।
“তাদের (পথ) নয় যাদের উপর অভিশাপ দেওয়া হয়েছে এবং (তাদেরও পথ নয়) যারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে” (সূরা ফাতিহাঃ ০৬)
এখানে অভিশপ্ত জাতি হচ্ছে ইহুদী জাতি আর পথভ্রষ্ট হচ্ছে খ্রিস্টান জাতি। ইহুদী জাতি সত্য ভালোভাবে জানার পরও তা নিজেদের ইচ্ছামত পরিবর্তন করতো, যার কারণে তারা অভিশপ্ত হয়েছে। আর খ্রিস্টান জাতি সত্য না জেনেই নিজেদের ইচ্ছামত কথা ব্যক্ত করে বলতো এটা আল্লাহর বানী যার ফলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। কাজেই যারা সত্য জানার পরও তা পরিবর্তন করার জন্যে মতামত ব্যক্ত করে বা সত্য না জেনে ইচ্ছা মতো বিধান বানানোর প্রয়াস চালায় তাদের নিকট থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক মুসলিমদের কর্তব্য। কারণ, এরা নিজেরা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট আর তাদের সাথে যে বেশীক্ষণ থাকবে তারাও দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়বে।
“ধ্বংস হোক, যারা শুধু অনুমানের উপর ভিত্তি করে (কথা বলে)” (সূরা যারিয়াতঃ১০)

ষষ্ঠত, যখনই আল্লাহ তাআলাকে উদ্দেশ্য করে অশালীন লেখা বা আল্লাহ তাআলার কোন গুণাবলীকে ভুল ব্যাখ্যা বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করার অপপ্রয়াস দেখবেন তখনই সেই লেখা বা ব্লগ থেকে বেড়িয়ে আসুন আর ভবিষ্যতে ঐসব লেখকদের ব্লগে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা স্বাভাবিক হয়।
“আল্লাহ তাআলা এ কিতাবের মাধ্যমে তোমাদের উপর আদেশ নাযিল করেছিলেন যে, তোমরা যখন দেখবে আল্লাহ তাআলার নাযিল করা কোন আয়াত অস্বীকার করা হচ্ছে এবং তার সাথে ঠাট্রা-বিদ্রুপ করা হচ্ছে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসো না, যতক্ষণ না তারা অন্য কোন আলোচনায় লিপ্ত হয়, (এমনটি করলে) অবশ্যই তোমরা তাদের মতো হয়ে যাবে (জেনে রেখো), আল্লাহ তাআলা অবশ্যই সব কাফের ও মোনাফেকদের জাহান্নামে একত্রিত করে ছাড়বেন” (সূরা নিসাঃ ১৪০)

সপ্তমত, কিছু লেখককে দেখা যায় আল্লাহ তাআলা, নবী-রাসূলদের, ফেরেশতাদের নিয়ে কল্পকাহিনী লিখতে। যেমনঃ অমুক নবী দুনিয়াতে এলেন, আল্লাহ অমুকের সাথে কথা বললেন বা তার সাথে দেখা করলেন প্রভৃতি। এধরণের লেখা মোটেই উচিত নয়, কারণ এখানে আল্লাহর গুণাবলী নিয়ে বা আল্লাহ তাআলার কাজ নিয়ে হাস্যরস করা হয়, নবী-রাসূলদের দায়িত্ব নিয়ে কৌতুক করা হয় যা একজন মুসলিমকে ইসলাম থেকে বের করে দিবে যেভাবে তীর ছোটার পর তা বের হয়ে যায়।
“তুমি যদি তাদের (কিছু) জিজ্ঞেস করো তারা বলবে, (না,) আমরা তো একটু অযথা কথাবার্তা ও হাসি কৌতুক করছিলাম মাত্র, তুমি (তাদের) বলো, তোমরা কি আল্লাহ তাআলা, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রুপ করছিলে? তোমরা দোষ ছাড়ানোর চেষ্টা করো না, একবার ঈমান আনার পর তোমরাই পুনরায় কাফের হয়ে গিয়েছিলে” (সূরা তাওবাঃ ৬৫-৬৬)

ইনশাল্লাহ, এই বিষয়গুলো আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা বুঝতে সক্ষম হবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের মুসলিম ভাইদের হিফাজত করুন। আমীন।

মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই এমনসব কাজ থেকে যা আল্লাহ তাআলাকে অসন্তুষ্ট করে দেয়। আল্লাহ তাআলার শান্তি ও রহমত রাসূল ﷺ ও তার পরিবার, সাহাবী এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদের যারা অনুসরণ করবে তাদের উপর অর্পিত হোক। আমীন।



৩৯টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৩৯

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৪১

ছবিঃ আমার তোলা।

আজকে সাত রোজা।
সময় আসলে অনেক দ্রুত যায়। গতকাল সুরভি আর ফারাজাকে নিয়ে গিয়েছিলাম শপিং করতে। কারন আমি জানি, ১৫ রোজার পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বাসীকে লজিকের কথা বলার দরকার কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১৭




হনুমান দেবতা এবং বোরাকে কি লজিক আছে? ধর্ম প্রচারক বলেছেন, বিশ্বাসী বিশ্বাস করেছেন ঘটনা এ পর্যন্ত। তাহলে সবাই অবিশ্বাসী হচ্ছে না কেন? কারণ অবিশ্বাসী বিশ্বাস করার মত কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×