somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভবিষ্যত প্রজন্ম - যারা অমরত্ব লাভ করবে।

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সময়ে ডাইরিয়া ছিল মরণব্যাধি। খুব বেশিদিন আগের কথা না, এই কয়েক দশক আগেই আমাদের দেশে এই রোগে হাজার হাজার মানুষ মারা যেতেন। টেলিভিশনে বড় বড় তারকারা খাবার স্যালাইন বানাবার ফর্মূলা প্রচার করে বেড়াতেন।
"আধা সের ঠান্ডা পানিতে এক মুঠ গুর এবং তিন আঙ্গুলের এক চিমটি লবন দিয়ে দিলাম ঘুটা......"
সুজা খন্দকার অমর হয়ে আছেন তাঁর এই বিজ্ঞাপনের জন্য।
আমরা ডাইরিয়াকে জয় করতে পেরেছি। এখন আমাদের দেশে খুব কম মানুষ এই রোগে মারা যান। যারা মরেন, তাঁরা শুধুই নিজেদের গাফিলতির জন্যই মরেন। তাঁদের মৃত্যুতে এই বিশ্রী রোগটিকে খুব বেশি কৃতিত্ব দেয়ার কিছু নেই।
দেশে যক্ষায় মৃত্যুর সংখ্যাও কমে গেছে। কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েড ইত্যাদি প্রাণঘাতী রোগকে এখন কেউ খুব একটা ভয় পায় না। বসন্ত রোগের কুখ্যাত ওলা বিবি? সেতো কবেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
এখন ক্যানসার এবং এইডস নিয়ে গবেষণা চলছে।
সুস্থ্য জীবন যাপন করলে এইডস প্রতিরোধ সম্ভব, কিন্তু ক্যানসার বড়ই বেয়ারা একটি রোগ। মদ, সিগারেট, তামাক না খেয়েও মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ছাড়তে বাধ্য হন। বিজ্ঞানীরা দিন রাত গবেষণা করে যাচ্ছেন এই রোগের ওষুধ বের করতে। অনেকদূর এগিয়েও গিয়েছেন। বোঝা যাচ্ছে, খুব বেশিদিন বাকি নেই, ক্যানসারও মানুষের পায়ের নিচে নত মস্তকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে।
তখন মানুষের মৃত্যুর কারন হবে বার্ধক্য। জরা।
সেটাকেও জয় করার চেষ্টা চলছে খুব। আপাতত ইদুরের উপর দিয়ে চলছে গবেষণা। জানা গেছে ইদুরদের বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। তার মানে মানুষেরও জরা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। মানে মানুষ কয়েকশো বছরের জন্য নিজের যৌবন ধরে রাখতে পারবে!
বাহ! কে বলেছে মানুষ কখনই অমর হতে পারবে না? অবশ্যই অমর হওয়া সম্ভব! টাকা থাকলেই ভবিষ্যত পৃথিবীর মানুষ অমর হতে পারবে!
কেমন হবে সেই মৃত্যুহীন জীবন?
আজকে সকালে ঘুম ভাঙ্গলো একটি চরম দুঃসংবাদ শুনে। বউর মামাতো ভাই নাকি অ্যাক্সিডেণ্টে মারা গেছেন। এই ভাইটিকে আমার শাশুড়ি নিজের ছেলের মত আদর করতেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি খুবই ভেঙ্গে পড়েছেন।
বউ সারা সকাল বিরবির করছিল, "এতটুকু এতটুকু সব ছেলেমেয়ে, তাদের কি হবে!"
কারও জন্যই পৃথিবী থেমে থাকেনা। এই পৃথিবীর যিনি মূল সূত্রধর, তিনি একটি চরিত্রকে সরিয়ে নেয়ার আগেই বাকিদের সব ব্যবস্থা করে রাখেন।
শোকের দিনে ফিলোসফি চলে না। কাজেই তাকে কিছু না বলে অফিসে চলে এলাম।
পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশে ট্রেনের ধাক্কায় এগারোজন মারা গেছেন। পানিতে ডুবে তিনটি শিশুও নিহত হয়েছে। এ ছাড়াও এখানে ওখানে নানান দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর সংবাদে পত্রিকা ঠাসা। এটা কেবল বাংলাদেশের।
সেই সাথে 'বাসি' খবর হিসেবে ইসরায়েলের আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিদের নিহত হবার ঘটনাতো আছেই। নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এবং তা শুধু বাড়ছেই।
স্কুল ফ্রেন্ড নিলয় পোস্ট করলো, একটি এম্বুলেন্সে রোগী ওঠাবার সময় কিভাবে বোমা বিষ্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল একটার পর একটা মানব দেহ! কি বিভৎস! আমার কলিজা ভীষণ শক্ত বলেই জানতাম। সহজে মর্মাহত হইনা। কিন্তু আমার পক্ষে এই দৃশ্য পুরোটা দেখা সম্ভব হলোনা।
গতকাল দেখলাম এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, "আমাদের সাহায্য করো! আমরা সিভিলিয়ান। কারও কোন অভিযোগ যদি থাকে, সেটা সরকারকে কর। গালি দিলে সরকারকে দাও। কিন্তু দয়া করে আমাদের মারা বন্ধ কর। আমরা ঘুমাতে পারিনা, জানিনা কবে কখন মারা যাই!"
আহারে! কতটা অনিশ্চিত এখন তাঁদের জীবন! বুড়ো হয়ে নিজের বাড়ির বিছানায় রোগগ্রস্ত হয়ে মরার সুখের জন্য তাঁরা কতটা লালায়িত!
পুরো পৃথিবী নিরবে বসে আছে। সবার কথা, আমার বাড়িতেতো আগুন লাগেনি, আমি কেন নেভাতে যাব?
কেউ বুঝতে পারছেনা, যারা এখন একবাড়িতে আগুন লাগিয়েছে, তারাই একদিন অন্য বাড়িতেও আগুন লাগাবে। তখন তাদের শক্তিও কয়েকগুন বেশি থাকবে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সবার থাকবেতো?
এখন নিজেদের থাকার জন্য জায়গা দরকার বলে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার জন্য উঠে পরে লেগেছে ইজরায়েল। তারপর যখন তাদের জনসংখ্যা আরও বাড়বে, তখন? জর্ডান, এবং ইজিপ্টের দিকে হাত বাড়াবে। তারপর আরও কোন দেশে। কেউ কিছুই বলবে না। কারন, "আমার বাড়িতেতো আগুন লাগেনি, আমি কেন শুধু শুধু নেভাতে গিয়ে নিজের হাত পোড়াবো?"
অন্যদিকে ইরাকে আরেক দল ফাজলামি শুরু করেছে। "এ শিয়া, আমি সুন্নি, ঐ বদটা কুর্দি - ওদের মেরে ফেলো! আল্লাহু আকবার!"
সিরিয়াতেও নাকি একই অবস্থা। আফ্রিকার বেশ কিছু দেশেও চলছে খুনাখুনি।
আধুনিক পৃথিবীতে রোগের চেয়েও মানুষের হাতেই মানুষ মরে বেশি। আমরা বিংশ শতাব্দীর আধুনিক মানবজাতি বলে কথা!

আমরা একটা সময়ে জরাকে জয় করবো। হাসতে হাসতে ক্যানসারকে মোকাবেলা করবো। প্যারাসিটামল খেয়ে জ্বর সারানোর মত সহজেই হয়তো অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট করে সুস্থ হবো। কিন্তু আমাদের কখনই অমর হওয়া হবেনা। আমরা যানবাহনের নিচে চাপা পরে মরবো। আমরা গোলাগুলি করে মরবো। আমরা একজন আরেকজনকে মারতে গিয়ে মরবো।
তখনকার মানুষেরা হয়তো কাঁদতে কাঁদতে বলবে, এরচেয়ে ক্যান্সারই ভাল ছিল। অন্তত টুকরা টুকরা হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে হতো না।
আহারে ভবিষ্যত প্রজন্ম! তোমাদের জন্য এখনই খুব মায়া লাগছে।
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিসের সনদের মান নির্ধারণ করা শয়তানী কাজ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪০



সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×