somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইস বাকেট নিয়ে ফূর্তি হয়েছে, এখন রাইস বাকেট নিয়ে না ফূর্তি হয়!

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন ফেসবুকে "ALS আইস বাকেট চ্যালেঞ্জের" নামে চলল মাথায় হিমশীতল পানি ঢালাঢালি।
যেহেতু সেলিব্রেটিরা করছেন, সেহেতু একদল খুব মজা পেলেন। তারাও মাথায় পানি ঢেলে তিনজনকে নমিনেট করে দেন। সেই তিনজন আরও নয়জনকে করেন। ঐ নয়জন আরও সাতাশজনকে। চেইন রিয়েকশন!
'বেসরকারী হিসাব' মতে একশো মিলিয়নের বেশি মানুষ ইতিমধ্যে বরফস্নান সেরেছেন। সংখ্যা থেকেই বুঝা যাচ্ছে কত মানুষের কাছে কত দ্রুত বার্তা পৌছে গেছে। এবং আরেকবার প্রমাণিত হলো, জনসচেতনতায় ফেসবুক কতটা শক্তিশালী মাধ্যম।
সেই হিসেবে টাকা উঠলো কিন্তু খুবই কম। মাথায় পানি ঢালা মানুষদের প্রত্যেকে এক ডলার করে দিলেও এরচেয়ে বেশি টাকা উঠার কথা ছিল।
ব্যপারটা অবশ্য এখনও পুরোপুরি থেমে যায়নি, গতি জড়তার সূত্র মেনে এখনও অতি ধীরে হলেও গড়াচ্ছে ঠিকই। এখনও দুই একজন নতুন নতুন পোলাপানকে দেখা যাচ্ছে ক্যামেরার লেন্সের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে, "Hello, my name is Omuk, & I have been nominated by Tomuk for the ice bucket challenge."
উল্লেখ্য, "ice bucket challenge"র আগে এখন অনেকেই ALS শব্দটা ব্যবহার করছেন না। যে প্রকল্পটির যাত্রা একটি মহৎ উদ্যোগে শুরু হয়েছিল, তা এখন কেবলই হাসিতামাশার বিষয় হয়ে গেছে।
মাথায় পানি ঢালা অনেককেই যদি জিজ্ঞেস করা হয়, "ALS কি?"
বলবে, "জানিনা।"
রোগটি সম্পর্কে সচেতন করার পর যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, "কত টাকা ডোনেট করেছো?"
তার আমতা আমতা করা দেখে আপনাকে বুঝে নিতে হবে ডোনেশনের অ্যামাউন্ট শুন্য।
তাহলে শুধু শুধু মাথায় পানি ঢাললে কেন?
এবারে উত্তরটা আপনাকে ইংরেজিতে শুনতে হবে।
"It was fun!"
আহা! কি দারুন!
একটি মহিলা একটি ভিডিও শেয়ার করতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, "যার ALS হয়, সেই বুঝে তার কেমন লাগে! তোমরা মাথায় পানি ঢেলেই সারা! সেটা দেখে তাঁর অনুভূতির কথা একটুও কি চিন্তা করো?"
আরেক মহিলা বলেছিলেন, "তুমি চ্যালেঞ্জ চাইছো? ঠিক আছে। তাহলে সকালে এক বাটি সিরিয়াল চামচ দিয়ে না তুলে শুধু মুখ দিয়ে বাটি থেকে তুলে খাবার চেষ্টা করো। এবং সিরিয়াল না চিবিয়ে গিলে খেয়ে দেখাও। ALS হলে exactly এটাই হয় তোমার সাথে। শরীরের কোন মাসলের উপর তোমার কোন নিয়ন্ত্রন থাকে না!"
অনেক অনেক বঙ্গ সন্তান বলতে পারেন, "ভাই! তাই বলে কি আমরা একটু ফুর্তিও করতে পারবো না?"
করেন। অবশ্যই করেন। কোনই সমস্যা নাই। আমরা ভীষণ ফূর্তিবাজ জাতি। ফূর্তির জোয়ারে আমরা অনেক মহৎ উদ্যোগকে ভাসাতে ভাসাতে ডুবিয়ে দেই।
যেমন পহেলা বৈশাখে একদিনের বাঙ্গালি সাজতে পান্তা ইলিশ খাই।
রোজার মাসে ইফতার পার্টিতে মণে মণে খাবার নষ্ট করি।
ঈদের দিনে লাখ টাকার কাপড় কিনে সেলফি তুলে পারলে ট্যাগ সহই ফেসবুকে ছবি আপলোড করি।
ALS নিয়ে ফূর্তিতো আমাদেরকেই মানায়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকেই এই ভয়াবহ রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখুন।

অবশ্য বাংলাদেশের পয়েন্ট অফ ভিউতে ALS রোগ কোন বিষয়ই না।
গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে হিমশীতল পানিতে স্নান করতে কোন চ্যালেঞ্জ দেয়া লাগেনা। সেটা মানুষ এমনিতেই করতে চায় এবং বেশির ভাগই করে। বেকুবেরা এক বালতি পানি মাথায় ঢেলে এমন ভাব নিয়ে ভিডিও আপলোড করে যেন এই মাত্রই মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন করে ফিরেছে।
আমার ভাই তারেক এই বিষয়ে কিছুদিন আগে একটি লেখা লিখেছিল। বেচারা পক্ষে বিপক্ষে নানান কথা শুনে চুপ মেরে গেছে।
আমি তাকে অভয় দিতে বলেছিলাম, সত্যি কথা লিখলে এই একটা সমস্যা তোমাকে ফেস করতেই হবে। চুপসে গেলে চলবে না।
আশা করি অদূর ভবিষ্যতে সে আবারও লেখালেখিতে ফিরে আসবে।
যাই হোক, অবশেষে বাংলাদেশে একটি ভাল উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। "রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জ।"
এক বাকেট চাল একজন গরীব অসহায় মানুষকে দিয়ে দেয়া হয়। তারপর কয়েকজনকে নমিনেট করা হয়। তারাও চাল বিতরণ করতে করতে আরও কয়েকজনকে নমিনেট করেন। শুরু হয়ে যায় আরেকটি চেইন রিয়েকশন। বাংলাদেশের মত দরিদ্রতম দেশে, যেখানে সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম ক্ষুধা, সেখানে এই উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা অনেকদিন ধরেই ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সেই ছাত্রটিকে অনেক ধন্যবাদ, যিনি চমৎকার এই যাত্রাটি শুরু করেছেন।
মানুষ যেন আবার ভেবে না বসেন, "আমাকেতো কেউ নমিনেট করেনি, আমার চাল না দিলেও চলবে।"
আবার এও যেন কেউ মনে না করেন যে "আমিতো একবার দিয়েছিই, আমার আর না দিলেও চলবে।"
আপনি একটি ভাল কাজ করবেন নিজ উদ্যোগে। কাউকে দেখাতে নয়, কারও কথা শুনেও নয়।
এখন আসি জরুরী কথায়।
বাংলাদেশে ক্ষুধা যেমন প্রধাণতম সমস্যা, তেমনি মাদকও একটি। আর মাদক জগৎ নিয়ন্ত্রিত হয় বস্তি এলাকাগুলো থেকে। যা কিনা আপনারা যাদেরকে বাকেট ভর্তি রাইস দান করছেন, তাদেরই বাসস্থান!
আপনার দান করা এক বাকেট চাল বিক্রি করে হয়তো বা সে একফাইল ইয়াবা সেবন করছে। অথবা গাঁজার ধোঁয়ায় সুখ খুঁজছে।
নিঃসন্দেহে আপনার উদ্দেশ্য ছিল অতি মহৎ। কিন্তু সে তার মান রাখলো কোথায়?
বরং চাল বিতরনের সময়ে একটু সাবধানী হওয়া উচিৎ। আপনি কেবলই আপনার পরিচিত কোন দরিদ্রকে দান করুন। যাকে চিনেন, জানেন যে তার কোন বদভ্যাস নেই।
খুবই ভাল হবে যদি সে একজন মহিলা হয়। কারন একজন বাঙ্গালি নারী সবার আগে নিজের স্বামী সন্তানদের পেটের কথা চিন্তা করে। পুরুষ হলে হয়তো প্রথমেই চাল বিক্রি করে খারাপ পাড়ায় গিয়ে ফূর্তি করে নিজেকে ক্ষণিকের বাদশাহ মনে করে বাড়ি ফিরে আসবে।
আপনার রাইস বাকেট তার ফূর্তির মিডিয়া হয়ে দাঁড়াবে। আমরা যে ভীষণ ফূর্তিবাজ জাতি!

কেন এই লেখাটি লিখলাম সেটা বলার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করছি।
সেদিন রেডিও শো করতে ষ্টুডিও যাচ্ছি। সিগনালে এক হোমলেসের দেখা পেয়ে গেলাম। এক মহিলা ময়লা জামাকাপড় পড়ে হাতে "hungry" লেখা কাগজ নিয়ে সিগনালে আটকে পড়া যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। এরাই অ্যামেরিকান ফকির। দান খয়রাত করতে চাইলে এদেরকেই করতে হয়।
পকেটে খুচরা টাকা ছিল, জানালা খুলে তাকে এগিয়ে দিতেই মহিলা খুবই খুশি গলায় বলল, "Thank you! God Bless!"
পরের সিগনালে দেখি আরও কিছু হোমলেস। তবে এবারের দৃশ্যটা একটু ইন্টারেস্টিং। একটি ছেলে একটি মেয়েকে নিয়ে দেয়ালের চিপা থেকে কাগজের একটি ছোট প্যাকেট বের করে দিল। মেয়েটি সেটা থেকে কিছু একটা খুলে জিভে ঠেকিয়ে উৎফুল্ল নয়নে চোখের আড়ালে সরে গেল।
প্রচলিত আছে যে হোমলেসদের বেশির ভাগই নাকি ড্রাগ এডিক্ট হয়ে থাকে। ধরে নেয়া যেতেই পারে এই মহিলাটিও ড্রাগস নিল। কে জানে, আমি যাকে এই কিছুক্ষণ আগে ক্ষুধার্ত ভেবে সাহায্য করেছিলাম, তারও এই বদভ্যাস আছে কিনা!
আমার টাকায় হয়তো সেও ফূর্তি করে বেড়াচ্ছে!
https://www.facebook.com/groups/canvasbd/
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×