somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা একদিন কাটাকাটি করে বিলুপ্ত হয়ে যাব

০৫ ই মার্চ, ২০১৫ ভোর ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিতে একটা চিঠি দেখা যাচ্ছে, যার ভাষা আরবি। ক্যাপশনে লেখা "রাসূল মুহাম্মদের (সঃ) নিজ হাতে লেখা চিঠি। লাইক ও শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন।"
সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ মন্তব্যের পাশাপাশি একজন "দুশমন-এ-রাসূলদের" উদ্দেশ্যে লিখলেন, "অমুক ভন্ড পীরের মুরিদের চোখ খুলে দেখে নিক, যাদের পীর তার তমুক বইয়ের একাদশ পৃষ্ঠায় লিখেছেন আমাদের নবী নিরক্ষর ছিলেন। নাউজুবিল্লাহ!"
ব্যস, লেগে গেল দুই পীরের মুরিদের দ্বন্দ।
অথচ ইসলাম সম্পর্কে সরিষার দানার পরিমাণও যার জ্ঞান আছে, সেও জানে আমাদের নবীজি নিরক্ষর ছিলেন।
সেজন্যই কোরানের প্রথম আয়াত নাজিল হবার সময়ে জিব্রাইল (আঃ) যখন বললেন, "পড়," তখন নবীজি জবাবে বলেছিলেন "আমি পড়তে পারিনা।"
এই সাধারণ জ্ঞানটাও যাদের নেই, তাদেরকে ধর্মের মূলা ঝুলিয়ে ভুল পথে চালিত করা কত সহজ বুঝতে পারছেন?
ফারাবী নামের যে লোকটাকে অভিজিত খুনের সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হলো, তার সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টে (লাভ জিহাদ) সে লিখেছে "নিজের ঘরের স্ত্রীকে পরপুরুষের বেডরুমে পাঠানোর সংস্কৃতি এখনো ....রা (একটি ধর্মের নাম উল্লেখ করে) ত্যাগ করতে পারি নাই। বর্তমানে তা এক ভয়াবহ শিল্পের আকারে রুপ নিয়েছে। প্রত্যেকটা .... ছেলেই তার স্ত্রীকে বাধ্য করছে তার অফিসের বস বা কারখানার মালিকের বেডরুমে যেতে।"
লেখাটা পড়ে আমার ইবলিসের কথা মনে পড়ে গেল। যে সত্য বলে, তবে অবশ্যই মিথ্যার সাথে মিলিয়ে।
এইটা হলফ করে বলা যায়না যে এমন কুকর্ম সমাজে ঘটছে না, তবে ও বলছে "প্রত্যকটা ছেলে" যা বাস্তবে ঘটা অবশ্যই অসম্ভব।
লেখাটিতে আরও অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলা হয়েছে। অনেক কুৎসিত কথাবার্তাও বলা হয়েছে।
একজন "মুসলিমের" জন্য কুৎসিত কিছু লেখা ও বলা নিষেধ। মিথ্যা বলাতো মহাপাপ!
কিন্তু এই ছেলে মিথ্যা কথা লিখে সমাজে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করছে, উষ্কানিমূলক লেখা লিখে দাঙ্গা লাগাচ্ছে। এ খুন করুক কি না করুক, একেতো এমনিতেও বেঁধে রেখে ভাল মানসিক ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করানো উচিৎ।
তার সেই লেখাটি দুই হাজার আটশ আটাত্তুরজন মানুষ পছন্দ করেছে, একশ চুরানব্বইজন শেয়ারও করেছে। লেখাটির সত্যতা যাচাইয়ের ব্যপারে কেউ একটুও চিন্তা করার প্রয়োজনটুকুও বোধ করছে না!
বাংলাদেশের মানুষের শিক্ষার মান বুঝতে এই স্ট্যাটিসটিক্সইতো যথেষ্ট।
একই কথা নাস্তিকদের ব্যপারেও সত্য। যেমন, একজন লিখে দিল "হযরত মুহাম্মদ (সঃ) একটি ইহুদি গোত্রের সব পুরুষদের হত্যা করেছিলেন।"
অমনি সবাই ছিঃ ছিঃ করে লাফিয়ে উঠলো।
যে লোকটা মক্কায় নিজের চিরশত্রুদের হাতের মুঠোয় পেয়েও নিঃশর্তে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, তিনি কেন এমন কাজ করেছিলেন, সেটা কেউ জানতে আগ্রহী পর্যন্ত হলো না। কী অদ্ভূত লজিক জ্ঞান আমাদের!
ওদের সাথে কথা বলার সময়ে আমি প্রশ্ন করি, "রাজাকারদের ফাঁসি চাও?"
জবাব আসে, "অবশ্যই।"
"কবে ফাঁসি হলে ভাল হতো?"
"একাত্তুরেই।"
"সব ক'টার?"
"অবশ্যই।"
"দেশে তখন প্রায় পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ ছোট বড় রাজাকার ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গ ছিল। এক লক্ষ মানুষকে ঝুলিয়ে দিতে চাও?"
"অবশ্যই, ওরা বিশ্বাস ঘাতক! ওদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড।"
"বনু ক্বুরায়দাও খন্দকের যুদ্ধের সময়ে রাজাকারী করেছিল। ওরা শুধু বিশ্বাস ঘাতকতাই করেনি, চুক্তিও ভেঙ্গে ছিল। তখনকার যুগে চুক্তি ভঙ্গের শাস্তি ছিল মৃত্যুদন্ড। ওরা সফল হলে মুসলিমরা সেইদিনই সবাই মারা পড়তেন। তোমরা একলাখ মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলাতে হইহই করছো, অথচ আটশজনের জন্য হায় হায়?"
তারপরেও ওদের কেউ কেউ তর্ক করতে থাকে। যেহেতু মুহাম্মদের (সঃ) নাম জড়িয়ে আছে, কাজেই এটাকে ইস্যু বানাতেই হবে। এটাই আজকাল ফ্যাশন।
মানুষকে মস্তিষ্ক দেয়া হয়েছে সেটা খাটিয়ে পড়াশোনা করার জন্য। চিন্তাভাবনা করার জন্য। সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। যে যাই বলল সেটাই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করার জন্য না। মানুষকে মানুষ বানানো হয়েছে, কুকুর নয় যে লেজ নাড়িয়ে মালিকের হুকুম তালিম করে যেতে হবে।
আফসোস, আমরা আমাদের পেছনে অদৃশ্য লেজ নিয়ে ঘুরি। কারও কোন লেখা পড়লেই আনন্দে সেই লেজ নাড়তে থাকি। মাথা খাটাবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করিনা।
আমার গুরু মুফতি ইসমাইল মেংকের একটি উক্তিকে এখানে একটু বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, আজকের প্রেক্ষাপটে এর প্রয়োজন আছে।
"কারও পোশাক, কারও লেখালেখি, কারও কথাবার্তা থেকে ঝট করে কোন মন্তব্য করোনা, অথবা অবিবেচকের মতন কোন সিদ্ধান্তে চলে এসো না। তুমি কখনই জানোনা, হয়তো ওর হৃদয় সোনার তৈরী এবং তোমার আমার হৃদয় কয়লার। সুখের কথা, কয়্লাকেও এক সময়ে হীরক খন্ডে বদলে ফেলা যায়। সেই চেষ্টা কী তুমি করছো?"
না, আমরা করছিনা। আমরা আমাদের হৃদয়কে কালোই রাখতে পছন্দ করি।
আমরা ফেসবুকে যাই দেখছি তাই বিশ্বাস করছি। সেটা নবীজির নিজের হাতে লেখা চিঠি হোক, সিনেমা থেকে নেয়া কাবা ঘরের একশো বছর পুরানো ছবি হোক, অথবা জঙ্গিবাদী ধার্মিক বা উগ্রবাদী নাস্তিকের উষ্কানিমূলক উক্তি - আমরা সব গিলে এ ওর সাথে মাথা কাটাকাটি করে মরছি।
কোন একদিন এক দেশে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মাটি খুড়তে গিয়ে বিলুপ্ত হওয়া এক জনপদের সন্ধান পাবেন। গবেষণায় বেরুবে বহুযুগ আগে এখানে বাস করতো বাঙ্গালি সম্প্রদায়। পারষ্পরিক মতবিরোধে কাটাকাটি করে মরতে মরতে এক সময়ে এরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৫ ভোর ৫:০৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×