somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমকামি বিবাহ বৈধ আইন নিয়ে এত মারামারি কাটাকাটির কিছুই নেই

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুক ভর্তি এখন সাত রঙ্গা প্রফাইল ছবি। এখন এর মূল কারন সবার জানা। এই নিয়ে মারামারি কাটাকাটিও চলছে খুব। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, এরা সবাই বাঙালি। আমার অফিসের বা বিশ্ববিদ্যালয়ের যত অ্যামেরিকান বন্ধু বান্ধবী আছে, তাঁদের কাউকেই আমি প্রফাইল ছবি রাঙাতে দেখিনি। এমনকি একটা স্ট্যাটাস নিয়ে তর্ক করতেও নয়। এ যেন যার বিয়ে তার খোঁজ নেই, পাড়া পড়শীর ঘুম হারাম অবস্থা! বিষয়টা মজার না?
কিছু বাঙালি হুজুগের বশে কিছু না বুঝেই প্রফাইল পিকচার রাঙিয়ে ফেলেছিল। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে না চললে আবার স্মার্ট হওয়া যায় না কিনা।
বুঝতে পারার সাথে সাথেই আবার ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে গেছে। এদের নিয়ে কিছু বলার নেই।
আরেকদল জেনে বুঝেই রং পাল্টেছেন। তাঁরা অ্যামেরিকান সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছেন। বিরোধী দলকে তুলোধুনো করে ফেলেছেন। ধরে নেয়া যেতে পারে তাঁদের ছেলেমেয়েরা যদি কখনও সমলিঙ্গের কাউকে বিয়ে করতে চায়, তাঁরা নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে আপত্তি করবেন না।
আমাদের উপমহাদেশীয়দের মধ্যে হিপোক্রেসী স্বভাবটা চরম কিনা!
এবং আরেকদল একদম কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন। তাঁরা পারলে আজকেই সবক'টা সমকামীদের ধরে ধরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেন। তাঁদের সাপোর্টারদের সাথে তর্ক করে এখন শুধু একে অপরকে কাটাকাটিই বাকি রেখেছেন। আমার ভয়, তাঁদের অতি আপনজনও যদি কখনো সমকামী হয়ে যায়, তবে এরা না জানি তাঁর সাথে কী করে বসেন!
আমার ব্যক্তিগত অবস্থান?
সত্যি বলতে এই রায়ের ফলে আমার কিছুই যায় আসে না। না আমি সমকামী, না USA'র 'বৈধ' আইন আমাকে 'বাধ্য' করছে অপর ছেলেকে বিয়ে করতে। কাজেই আমার বাপের কী?
নিজ অবস্থানের পক্ষ্যে যুক্তি টানার সময় এসে গেছে। সেটাই দেয়া যাক।
ইসলামের ইতিহাসের প্রথম হিজরতের কথা মনে আছে? যখন নবীজি(সঃ) তাঁর সাহাবীদের বলেছিলেন মক্কা ছেড়ে পারলে অবিসিনায় চলে যেতে?
"সেখানকার নাজ্জাশী (আসহামা) একজন ন্যায়পরায়ণ সম্রাট। সে অন্যের ধর্মপালনে হস্তক্ষেপ করেনা।"
উল্লেখ্য, নবীজি (সঃ) একজন খ্রিষ্টান সম্রাটকে ন্যায় পরায়ণ বলছেন। কেন? কারন তিনি অন্যের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি রোমান বা পারস্য সাম্রাজ্যে যাবার নির্দেশ দিতে পারতেন। কেন দেননি? কারন ওরা মক্কার জাহেলদের মতই মানুষের ধর্মবিশ্বাসে হ্স্তক্ষেপ করতো।
তারচেয়ে বড় কথা, নবীজি(সঃ) কিন্তু বলেননি, আবিসিনিয়ায় গিয়ে "শরিয়া আইন" জারি করতে। যতক্ষণ পর্যন্ত নিজ নিজ ধর্ম পালনে সরকার বাঁধা দিবেনা, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই দেশের প্রতি সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত থাকার নির্দেশ আমাদের নেতাই আমাদের দিয়েছেন। এবং তিনি এও বলেছেন, যদি বাঁধা দেয়া শুরু করে, তবে এমন এক দেশে গিয়ে বাস করতে, যেখানে দেয় না।
এত সহজ সরল নির্দেশনামা মানুষের মাথায় কিভাবে ঢুকে না, আমি বুঝিনা।
একটা কথা কেউই বুঝতে চাইছেন না, এই দেশটির নাম ISA (Islamic States of America) না, USA, United States. এই দেশের সংবিধানে লেখা আছে, "All men are created equal....." কেউ মুসলিম, কেউ খ্রিষ্টান, কেউ ইহুদি - এইসব নিয়ে কোন উক্তি সেখানে নেই।
এখানে আমরা (মুসলিমরা) মাইনোরিটি, তারপরেও আমরা যখন কেউ নামাজ পড়তে চাই, কেউ বাঁধা দিতে আসেনা। কেউ হিজাব পড়তে চাই, কেউ বাঁধা দেয়না। এমনকি রোজা রাখার সময়েও কেউ জোর করে পানি খাইয়ে দেয়না। যদি কোন ফাজিল ফাজলামি করতে আসে, এই দেশের সাদা চামড়ার খ্রিষ্টান বা নাস্তিক পুলিশই আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। অথচ ইন্টারনেট ঘেটে দেখুন, চীন, মায়ানমার থেকে শুরু করে ফ্রান্স পর্যন্ত - কোথায় কী হচ্ছে। কাজেই এই দেশটির প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। নাহলে আমরা নবীজির(সঃ) নির্দেশেরই অবাধ্য হবো।
এবং একই সাথে আমাদের এও মাথায় রাখতে হবে, দেশটি যেমন আমাদের মতন মাইনরিটিদের অধিকার দিয়েছে, সেই একই যুক্তিতে গে-লেসবিয়ানদেরও অধিকার দিতেই পারে। আমাদের "জাত গেল জাত গেল" রব তুলার কিছু নাই। ওরাও মানুষ, ওদেরও বাঁচার অধিকার আছে। আমাদের নবীজি(সঃ) আসহামার শাসন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলার নির্দেশ দেননি।
তারচেয়ে বড় কথা, আল্লাহর নবী (সঃ) বলেননি USA'র আইন অনুযায়ী জীবন চালাতে। আমাদের জন্য আল্লাহর আইন আছে। সেটা মেনে চললে ইউএসএর আইনও লঙ্ঘিত হবেনা। যতক্ষণ না কোন ইসলামী নেতা কোন ইসলামী রাষ্ট্রে এই আইন জারি করছেন, আমাদের উত্তেজিত না হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
মদিনার সংবিধান লেখার সময়ের ঘটনা মনে আছে?
"মুসলিমরা এক জাতি, এবং ইহুদিরা ভিন্ন জাতি হিসেবে গন্য হবে। মুসলিমদের শাসন করা হবে ইসলামী আইন অনুযায়ী, ইহুদিরা শাসিত হবে ইহুদি আইন অনুযায়ী। কেউ কারও ব্যপারে হস্তক্ষেপ করবেনা।"
মানে বুঝতে পারছেন?
ইউ.এস.সুপ্রিম কোর্ট কী বৈধতা দিল, সেটা নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নেই। এটি হচ্ছে সেই দেশ যেখানে অ্যালকহল বৈধ, পর্ণগ্রাফি নির্মান ও প্রদর্শন বৈধ, লিভিং টুগেদার বৈধ। তবে বৈধ মানেই আপনি "বাধ্য" নন। আপনি এসব এড়িয়ে চলতে চাইলে কেউ আপনাকে কিছু বলবেনা। বরং কেয়ামতের দিন আপনি বড় গলায় বলতে পারবেন, "ইয়া আল্লাহ, আমার হাতের কাছে সবকিছু থাকার পরেও শুধু তোমার ভয়েই আমি ওসবে জড়াইনি। তুমি কী আমাকে ক্ষমা করবে না?"
এবং পরম করুনাময়ের ক্ষমার উপর তখন ভরসা করাই যায়।
কাজেই, রিল্যাক্স মাই ব্রাদার। ক্লাস সেভেনের ষান্মাসিক পরীক্ষায় যে বন্ধুর দেখানো অঙ্ক নকল করে আপনি পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন, কিংবা যে বন্ধু আপনার পয়সা ছিল না বলে আপনাকে কলেজ জীবনে চা সিংগারা কিনে খাওয়াতো, এই সামান্য ইস্যু নিয়ে তাঁর সাথে ঝগড়াঝাটি করে বন্ধুত্ব নষ্ট করে ফেলার কোনই মানে হয়না। হয়তো বাস্তব জীবনে না আপনি, না আপনার সেই বন্ধুটি সমকামী।
কেউ কেউ জানতে চাইছেন ইসলামে কোথায় একে নিষিদ্ধ করা হয়েছে একটু ব্যাখ্যা করতে। সেটা এই ফাঁকে বলে ফেলা যাক।
কুরআন থেকে আমরা জানতে পারি, আল্লাহ সমকামিতার অপরাধে হজরত লূতের (আঃ) সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তাঁর সম্প্রদায়ের পুরুষেরা কেবল সমকামিই ছিল না, অন্যান্য পুরুষদেরও ধর্ষণ করতো। কেউ কেউ তাই বিতর্ক তোলার চেষ্টা করেন, "'ধর্ষনের' শাস্তি হিসেবে আল্লাহ ওদের শাস্তি দিয়েছেন। হাদিস বা কুরআনে সমকামিতা নিয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।"
তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি, সুরা আশ-শুয়ারায় হজরত লূতের (আঃ) জবানিতে আল্লাহ বলেন "সমস্ত বিশ্বের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরূষদের সাথে কুকর্ম কর? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে যে নারীদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।" (১৬৫-১৬৬)
এখন ওরা কী বলতে চায় হজরত লূত (আঃ) তাহলে পুরুষ ধর্ষণ বাদ দিয়ে নারী ধর্ষণের পরামর্শ দিয়েছিলেন? লজিক খাটান ভাইয়েরা। কুরআন সমকামিতার বিরুদ্ধেই কথা বলেছে।
তবে এর অর্থ এই না যে সবাইকে দলে দলে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়ার গুরু দায়িত্ব আপনার কাঁধে চাপানো হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, শিরক ছাড়া যেকোন অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দিবেন। তিনি সাহাবী হত্যাকারীদেরও অকাতরে ক্ষমা করেছেন। তাঁর দয়ার উপর আপনার আস্থা রাখা উচিৎ।
কে বেহেস্তে যাবে আর কে দোজখে যাবে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে আল্লাহ নিজেই নিষেধ করেছেন। আপনার কাজ নিজের জীবন নিয়ে চিন্তা করা, এবং অন্য কেউ যেন আপনার দ্বারা সামান্যতম আহত না হয় সেটা লক্ষ্য রাখা। আপনি মদ এড়িয়ে চলেননা? ঘুষ এড়িয়ে চলেননা? সামনে দাড়ানো নারীর আঁচল খসে ব্লাউজ বেরিয়ে এলে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেননা?
তেমনি আপনি সমকামিতা পছন্দ না করলে সেটা এড়িয়ে চললেই হয়। কে আপনাকে বাধ্য করছে সমলিঙ্গের কাউকে চুমু খেতে? আপনি যেমন রাস্তায় হেঁটে যাওয়া যেকোন মানুষকে দেখলেই প্রেমে পড়ে যাননা, ওরাও তেমনি যেকোন সমলিঙ্গের সংস্পর্শে এলেই উত্তেজিত হয়ে যায় না। কাজেই আতংকিত হবার কিছু নেই।
তাছাড়া যেখানে নবীজি(সঃ) বলে গেছেন, "কেয়ামতের আগে সমাজে সমকামিতা বৃদ্ধি পাবে" - আজকে যখন তাঁর কথা সত্য হতে চলেছে, আপনি ক্ষেপছেন কেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:১২
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×