somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ম একটা খুবই ফালতু বিষয়। মানুষকে "মানুষ" হতে শিখায়।

৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধরুন আমি একটা রচনা লিখছি, যেটার মূল বিষয় মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভাল নয়।
আমি নজরুলের কবিতার দুটি চরণ লিখলাম, "গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান....."
পাঠক বাহ বাহ দিয়ে উঠবেন।
এরপর আমি লিখলাম সাইজি বলেছেন, "...আসবার কালে কি জাত ছিলে
এসে তুমি কি জাত নিলে
কি জাত হবা যাবার কালে
সে কথা ভেবে বলো না..." চারিদিকে ধন্য ধন্য পড়ে যাবে।
"সাধু! সাধু!!"
অথচ যেই আমি বলবো চৌদ্দশ বছর আগে মুহাম্মদ (সঃ) বলেছিলেন, "কোন আরবের উপর কোন অনারবের এবং কোন অনারবের উপর কোন আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কোন কালোর চেয়ে সাদা এবং কোন সাদার চেয়ে কোন কালো শ্রেষ্ঠ নয়। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তাঁর কর্মফলের উপর নির্ভর করবে।"
ঠিক তখনই হায় হায় রব উঠে যাবে।
"মৌলবাদী!"
"ছাগু!"
"কুসংস্কারি!"
"ঘেউ! ঘেউ!! ঘেউ!!!"
বিরোধিতাকারীদের আসলে সমস্যা কোথায়? লেখার মূল বিষয় ঠিকই আছে। লেখার কোথাও বলা হচ্ছেনা কলিমা পড়ে মুসলমান হও, নামাজ পড়ো, যাকাত দাও। কিচ্ছু না। উদাহরণ দেয়া হচ্ছে একজন "মানুষের" যিনি কোটি কোটি মানুষের কাছে অনুকরনীয় চরিত্র।
আমাদের কী "কী" বলা হচ্ছে সেটা নিয়েই মাথা ঘামানো উচিৎ না? "কে" বলছে, সেটা নিয়ে ফালতু কথাবার্তা শুরু করে দিয়ে মূল বিষয় থেকে বহুদূর ছিটকে আসার কী মানে হয়?
কথা প্রসঙ্গেই বলি। সেদিন এক পরিচিত ভদ্রলোক মুখ বাঁকিয়ে বললেন, "আমি কোন ধর্মকর্ম মানিনা। আমি আগে 'মানুষ' হতে চাই।"
কথাটা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মানে কী? আমি কী তবে "মানুষ" না?
"ধর্ম মানেন না, খুব ভাল কথা। সেটা আপনার নিজস্ব ব্যপার। তবে আগে দেখা যাক আমাদের মধ্যে কে কতখানি 'মানুষ' হতে পেরেছি।"
ভদ্রলোক খুবই তৃপ্তির হাসি হাসলেন। হরিণশাবক দেখে বাঘের ঠোঁটে যে অদৃশ্য হাসি ফুটে উঠে।
"এখন রমজান মাস চলছে, আপনিতো জানেনই আমরা কেন রোজা রাখি।"
"অবশ্যই। কতটা অস্বাস্থ্যকর একটা ব্যপার। সারাদিন না খেয়ে থাকা। তুমি জানো এতে শরীরের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়?"
"নিজের শরীরের ক্ষতির সাথে "মনুষ্যত্বের" সম্পর্ক কোথায়? আমরা রোজা রাখি যাতে আমরা ক্ষুধার্তের কষ্ট নিজে উপলব্ধি করতে পারি। যাতে কখনও কোন ক্ষুধার্ত আমার কাছে খাবার চাইলে আমি তাকে মাফ 'করো' বলে তাড়িয়ে না দেই। আপনি স্বাস্থের দোহাই দিয়ে নিজে ভরপেট খেলেন, কিন্তু মানুষের জন্য কী করলেন?"
"ইয়ে...আমি দান করিতো। যখনই আমার কাছে কেউ খাবার চায়, আমি তাকে ফেরাই না।"
"আমার পরিবারের এক সদস্য শারীরিক অসুস্থ্যতার কারনে রোজা রাখতে পারেনা। বিনিময়ে আমরা পুরো মাসের জন্য তিরিশজন নিরন্ন মানুষকে ভরপেট খাওয়াই। তুমি বছরে কয়জন ক্ষুধার্তের মুখে খাবার তুলে দাও?"
কথা বলতে বলতে আপনি থেকে তুমিতে নেমে এলাম।
"ইয়ে, দিইতো। আমিও খাওয়াই। সুযোগ পেলেই খাওয়াই।"
"বছরে একবার আমরা নিজের সম্পদের আড়াই পার্সেন্ট বিনা শর্তে দান করে দেই। একশ টাকায় আড়াই টাকা শুনতে কম মনে হলেও যার সম্পত্তির পরিমান এক লাখ ডলার, তাকে আড়াই হাজার ডলার গরিব মানুষের কল্যানে স্রেফ দান করে দিতে হচ্ছে। বিনিময়ে সে কিছু চাইতে পারেনা। তুমি বছরে কতটাকা দান করো?"
"করি, আমিও দান করি। ইয়ে আমার তাড়া আছে, যেতে হবে।"
"আরে শুনেন ব্রাদার। আমাকে যখন 'অমানুষ' ডেকেই ফেলেছেন, তখন কিছু কথা না শুনিয়ে ছাড়ছি না। কুরবানির ঈদে আমরা আমাদের জবাই করা মাংসের তিনভাগের দুই ভাগই আত্মীয় স্বজন এবং গরিব মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেই।"
"ধর্মের নামে পশু হত্যা করো, আবার সেটাকে জাস্টিফাই করো?"
"তুমি এমনভাবে কথা বলছো যেন তুমি ভেজিটেরিয়ান? প্রতিদিন যে বিফ আর চিকেন খাও, তার জন্য কী প্রাণীগুলোকে 'হত্যা' করা হয়না? তার উপর তোমার হত্যা করা প্রাণীর পুরোটাই তুমি একা খাও। যেখানে আমরা অন্যদেরকে দিয়ে খাই। তাহলে 'মানুষ' কে হলো?"
"যাও যাও। আমার এখন এইসব ফালতু কথা শোনার সময় নাই।"
"তোমার পকেট থেকে অন্যের জন্য একটা পয়সা বেরুতে চায়না, তুমি "দান করি" বলে চাপাবাজি করো? তোমার বাড়িতে গেলে অতিথিকে একা বিস্কিট খাওয়াতেও তোমার কলিজা ছিড়ে যায়, তুমি বলছো তুমি ক্ষুধার্তের মুখে খাবার তুলে দাও? আমার সামনে অন্তত ফাপরবাজি কম করবা। তোমাকে আমি সেই ছোটবেলা থেকে চিনি।"
"তোমরা ধর্মের নামে মানুষ খুন করো। আইসিস, বকো হারাম, আল কায়েদা এইসব তার প্রমাণ!"
"অনেক নাস্তিকই ইনসেস্ট প্রথাকে(নিজের আপন মা-বোন-মেয়ের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন) সমর্থন করে। তুমিও কী তাই?"
"মুখ সামলে কথা বলো!"
"তুমিও মুখ সামলাও! পুরো পৃথিবী জুড়ে মুসলিম জঙ্গিবাদির মোট সংখ্যা কত হবে? এককোটি? দুই কোটি? পৃথিবীতে এক বিলিয়নের বেশি মুসলমানের বাস। তোমরা আইসিস নিয়েই বসে আছো। শোন, এইসব মানবতা ফানবতা থিওরি আমার সামনে কপচাতে এসো না। তোমাকে আমি ভাল করেই চিনি। ক্ষুধা সহ্য করতে পারোনা তাই রোজা রাখো না বললেই হয়। কিপটামির কারনে যাকাত দিতে চাওনা বললেই হয়। অন্যের সাথে 'অনৈতিক' সম্পর্ক করতে চাও বললেই হয় - শুধু শুধু 'মানবতার' মুখোশ পড়ার কোন মানে হয়না।"
ভাই তরিঘরি করে সরে গেলেন। তাঁকে আর মা বাবার অধিকার ব্যখ্যা করা হলোনা। পরিবারের প্রতিটা সদস্যের অধিকারের ব্যপারটাও ব্যাখ্যা করা হলো না। সমাজের অধিকারের কথা বলা হলো না। প্রতিবেশীর অধিকারের ব্যপারটা ব্যাখ্যা করা হলো না।
"অভুক্ত প্রতিবেশী রেখে নিজে ভরপেট খাওয়া যায়না।" এই নিয়ম যে মানেনা, তাকে "মানুষ" কিভাবে বলা যায় জানিনা।
বিদেশে অভুক্ত প্রতিবেশী পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু তাতেও কাজটা সহজ হয়ে যায়না। বাড়িতে লাউডস্পিকার ব্যবহার করতে পারবো না। এতে তাঁদের সমস্যা হতে পারে। নিজের বাড়ির আবর্জনা তাঁদের বাড়িতে ফেলতে পারবো না। তাঁদের যেকোন বিপদে আমাকে এগিয়ে যেতেই হবে। ধ্যাৎ! ধর্ম একটা খুবই ফালতু বিষয়। মানুষকে "মানুষ" হতে শিখায়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:২৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×