somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখন আর বিড়িতে পোষায় না ভাই, গাঞ্জা লাগবো

০৩ রা মে, ২০১৬ রাত ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ছুটি কাটাতে যখন দীর্ঘ দিনের জন্য ঢাকা শহরে আসি, তখন আমার বয়সী কিছু ছেলেপিলেকে সিগারেট খেতে দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম। আমাদের শহরে তখনও স্কুল পড়ুয়া কারও সিগারেট খাওয়া বিরাট অপরাধ। প্রিন্সিপাল টিচার একবার ক্লাস নাইন পড়ুয়া এক বড় ভাইকে একটা মেয়েদের স্কুলের সামনে খুব স্টাইল করে সিগারেট খেতে খেতে টাংকিবাজি করতে দেখে ফেলেছিলেন। পরেরদিন এসেম্বলিতে সেই ছেলেটিকে ডেকে এনে দুই গালে ননস্টপ থাপ্রে নিজেরই স্কুলের মেয়েদের সামনে একদম নাঙ্গা করে দেন। ইশ! কী বেইজ্জতি! বড় ভাইটা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই সকালটির কথা ভুলবেনা নিশ্চিত। একই সাথে এই ঘটনায় পুরো স্কুলের প্রায় তিন হাজার ছেলে জন্মের মতন সিধা হয়ে গেল। রীতিমতন কসম খেল, "যতদিন এই মহিলা আমাদের হেড মিস্ট্রেস থাকবেন, ততদিন বিড়ি-সিগারেটে হাতও ছোয়াব না।"
আহ, রাবেয়া খান আহমেদ টিচার! একই সাথে আমরা যাঁকে বাঘের মতন ভয় পেতাম, এবং তারচেয়েও বেশি মায়ের মতই ভালবাসতাম। প্রতি বিকেলে এই ভদ্রমহিলা শহরে টহল দিতে বেরুতেন। স্কুলের পাঁচ-ছয় হাজার ছাত্র ছাত্রীর চেহারা তাঁর মুখস্ত ছিল। কোথাও কাউকে ফাজলামি করতে দেখলেই খবর করে দিতেন। স্কুলের দায়িত্ব কেবল পড়ালেখা শিখিয়ে জাবর কাটার জন্য ছেড়ে দেয়া না - মানুষের মতন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। নিজের ইস্পাত দৃঢ় ব্যক্তিত্বের গুনে যিনি একটি সাধারন স্কুলকে সিলেট বিভাগের সেরা বিদ্যালয়ে বদলে দিয়েছিলেন। এমন টিচারকে হেডমিস্ট্রেস হিসেবে পাওয়া আমার জীবনের অসংখ্য সৌভাগ্যের একটি ছিলতো বটেই।
তা ঢাকার সেইসব বিড়িখোর ছেলেরা আমার মতন সৌভাগ্যবান ছিল না। আমাকে আরও অবাক করে দিতেই দাঁত কেলিয়ে বলতো, "আমিতো ক্লাস ফাইভ থেকে সিগারেট খাই।"
পাশেরজন বলে, "আমি ক্লাস থ্রি থেকে।"
আরেকটা ছেলে, যে তখনও ক্লাস টেনে পড়ে, বলল, "এখন আর বিড়িতে পোষায় না ভাই, গাঞ্জা লাগবো।"
নিউ ইয়ারের দিন আরও অবাক হয়ে গেলাম।
ইংরেজি নতুন বর্ষকে স্বাগত জানালো বিয়ারের ক্যান খুলে। তখন বয়স কতই বা? সার্টিফিকেট বাদ দেই, আসল বয়সটাইতো কোনমতে ষোল-সতের পার করবে না। সুপার আধুনিক অ্যামেরিকায় মদ খাওয়ার লিগাল বয়স একুশ। সিগারেট খাওয়ার বয়স আঠারো। এর নিচে কেউ মদ-সিগারেট কিনলে জেল খাটতে হয়। বিক্রি করলেও জেল হয়ে যায়। অথচ বাংলাদেশে একটা দশ বছরের শিশুও অনায়াসে পান বিড়ি সিগারেটের দোকানের সোল প্রোপাইটার হয়ে যায়! মদের লাইসেন্সওয়ালা বার থেকে কেউ মদ কিনতে গেলে মদ বিক্রেতা কখনও কী ক্রেতার বয়স যাচাই করেন? সিগারেট খাওয়ার অভ্যাসওয়ালা বাপ নিজের সাত-আট বছর বয়সী ছেলেকে টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দেন দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে আসতে। এই ছেলে যদি স্কুল পেরোবার আগে "বিড়িতে পোষায় না, গাঞ্জা লাগবো" - না বলে, তাহলেইতো চোখ কপালে উঠে যাবার কথা।
এমনিতে আমার অভ্যাস নাই কারোর পার্সোনাল অভ্যাস বদভ্যাসে নাক গলানোর। কেউ নিজের পয়সায় মদ খেল, না গাঞ্জা, আমার কিছুই যায় আসেনা।
তবে একটাই শর্ত। সে যেন নিজের কন্ট্রোলে থাকে। আমার কোন বন্ধু বেঢপ মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালাতে চাইলে আমি অবশ্যই বাঁধা দেই। ৯০% সুযোগ থাকে হয় ও কাউকে ঠুকে দিবে, নাহলে নিজে মরে যাবে।
কিংবা যদি কাউকে দেখি মদ খেয়ে মাতলামি শুরু করে দিয়েছে, নিজের বৌকে ফেলে অন্যের বৌয়ের সাথে ঢলাঢলির চেষ্টা করছে - তখন খুবই বিরক্ত হই। বাংলাদেশের কর্পোরেট পার্টিগুলোতে এইসব অতি সাধারণ ঘটনা। অফিস থেকে ফ্রী মদ দেয়া হয়, হাভাইত্যা পোলাপান মাগনা মদ পেয়ে কাঙ্গালের মতন খায়। তারপর মাতলামি করে পরিবেশ নোংরা করে।
বাই দ্য ওয়ে, বিদেশীরা মদ খেলেও মাতালদের যথেষ্ট ঘৃনা করে। এইদেশে "ড্রাংক" একটি গালি। ওদের হাতে ধরা গ্লাসে মদ না রুহআফজা ভরা আছে, আপনি বুঝতেও পারবেন না।
যাই হোক, আজকে মদ গাঁজার সুফল-কুফল নিয়ে আলোচনা করতে আসিনি। আরও ব্যাপক একটি ব্যপারে নিজের উপলব্ধি বা অনুভূতি প্রকাশ করতে এসেছি। পড়ে দেখুন - আপনারাও ব্যপারটা লক্ষ্য করেছেন কিনা!
যেকারনে উপরের ঘটনা বললাম, একটা ব্যপার কী লক্ষ্য করেছেন, দেশের "বড়" শহরের ছেলেরা "ছোট" শহরের ছেলেগুলোর আগে "নষ্ট" হচ্ছে?
মিলিয়ে দেখুন, আমদের সিলেটে যেখানে স্কুল পাশ করার আগে ছেলেরা সিগারেট ধরতে ভয় পেত, সেখানে আরামসে ঢাকার ছেলেদের কেউ কেউ ক্লাস থ্রি ফোর থেকেই নাক দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ার কায়দা রপ্ত করে ফেলে।
ছোট শহরের ছেলেরা কলেজে উঠে রাজনীতি ধরার আগে জীবনেও অস্ত্র ধরেনা, বড় শহরে স্কুল পড়ুয়া ছেলেরাই ছিনতাই করে বেড়ায়।
আরও অনেক অপরাধ আছে যেগুলোতে বড় শহরের জুনিয়ররাই ছোট শহরের সিনিয়রদের সিনিয়র।
একটু ভাবুনতো পেছনের কারনটা কী হতে পারে?
আমার ধারনা, পেছনের কারনটা হচ্ছে, ছোট ছোট শহরের ছেলেরা নানান কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকে। স্কুল থেকে ছুটি হলেই বাসায় এসে ভাত খাও। বিকালে কোচিং, নাহলে খেলতে বেরিয়ে যাও। সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে ফিরে বাড়ির কাজ শেষ কর। তারপর রাতের খাওয়া শেষে হালকা টিভি দেখে ঘুম। আবারও সকালে উঠে স্কুলে যাও। বিকালে কোচিং। নাহলে খেলা। এছাড়া সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকলেতো কথাই নেই।
বড় শহরের ছেলেরা স্কুল শেষে কোচিংয়ে যায় ঠিকই - কিন্তু কোচিং ছুটি থাকলেই সমস্যাটা বাঁধে। খেলার যে মাঠ নেই! কাজেই বিকেলের অখন্ড অবসর কাটে বারান্দায় বসা বিপরীত লিঙ্গের সাথে টাঙ্কিবাজি করে, অথবা সমলিঙ্গের ছেলেপিলের সাথে আড্ডাবাজি করে।
যার যার কাজে যে যে রোল মডেল জুটিয়ে ফেলে। যেই ছেলে খেলে, তার আদর্শ হয় শচীন টেন্ডুলকার - ওয়াসিম আকরাম। তাঁদের মতন ব্যাটিং করতে হবে, তাঁদের মতন বোলিং।
আড্ডাবাজ ছেলেদের রোল মডেল হয় পাড়ার বখাটে বড় ভাইরা। তাদের মতন পাছার নিচে প্যান্ট পড়তে হবে, কায়দা করে মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে হবে।
এক সময়ে সেই বড় ভাইদের সাথে পরিচিত হতে পেরে নিজের মানব জনমকে ধন্য মনে হবে। তাদের নানান এডভেঞ্চারের গল্প শুনে শরীরের লোম শিহরিত হবে।
"আমি শফিকরে সাফ কয়া দিছি, আমগো মহল্লায় আইসা তেরিবেরি করলে নলিমলি ভাইঙ্গা হাতে ধরায়া দিমু।"
"সানোয়াররে সেইদিন থাব্রায়া এক্কেবারে মুতায়া দিছি। হিহিহি। হালা বোক...দ একটা!"
"ঠোলায় (পুলিশ) সেইদিন কী দৌড়ানিটাই না দিছিল। আরেকটু হইলে সিধা জেলে হান্দায়া দিত।"
ওয়াও! ওয়াট আ শট! আমাকেও এরকম হতে হবে!
ব্যস। অধঃপতনের শুরু সেখানেই।
দুষ্টু ছেলেদের হাত থেকে বাঁচাতে এবং মাঠের খেলার আনন্দ পুষিয়ে দিতেই বাবা মা বাচ্চাদের হাতে ভিডিও গেমস ধরিয়ে দেন। একবারও কী লক্ষ্য করেন সেসব ভিডিও গেমস কী বিষয়ে খেলা হয়?
হিটম্যান কোড নেম ৪৭ নামের একটা গেম আমার খুব প্রিয় ছিল। গেমটির উদ্দেশ্য ছিল মানুষ খুন। আপনাকে একটা মিশন দেয়া হবে, আপনি একজন খুনি। আপনি নানান ফন্দি ফিকির করে আপনার মিশন একমপ্লিশ করবেন।
ম্যাক্সপেইন গেইমটিও ভয়াবহ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সেখানেও স্ত্রী হত্যার প্রতিশোধ নিতে ভিলেনদের খুন করতে হবে আপনাকে।
এছাড়া স্ট্রীট ফাইটার, মর্টাল কমব্যাট গেমগুলোতো নাম থেকেই বুঝতে পারছেন কেমন হবে।
"মোস্তফা" গেমটাও ভীষণ জনপ্রিয় ছিল। জ্বী না, রাসূল মোস্তফার (সঃ) বাণী প্রচার বিষয়ক কোন গেম নয় এটি, এই গেমের একটি নায়কের নাম ছিল মোস্তফা। মিশন, সেই মারামারি কাটাকাটি করে বসকে হত্যা।
কথা হচ্ছে, বিদেশে এইধরনের গেমের একটা নির্দিষ্ট বয়স থাকে। ষোল, আঠার ইত্যাদি বয়সের নিচের কেউ এইসব গেম কিনতে পারবেনা।
আমাদের দেশে যেমনটা বলছিলাম, দশ বছরের ছেলেই যেখানে প্রকাশ্যে বিড়ি সিগারেট বিক্রি করে (আড়ালে গাঁজা) সেখানে গেমতো অতি ইনোসেন্ট। এতে আর ক্ষতিটা কী হয়?
ক্ষতিটা যে কী হয় সেটাও নিজের জীবন থেকে একটা ঘটনা বললে বুঝতে পারবেন।
তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। ডব্লিউ ডব্লিউ এফ তখন মাত্রই দেখতে শুরু করেছি। প্রিয় রেসলার দি আন্ডারটেকার। চক স্ল্যাম দিয়ে দিয়ে শন মাইকেলস, অস্টিন, রকদের ভর্তা বানিয়ে দেয়। টুম্ব স্টোন দিলেতো কথাই নাই।
একদিন খেলার মাঠে একটা ছেলে ফাজলামি করছিল, আমিও ছেলেটাকে চক স্ল্যাম দিয়ে দিলাম। প্রোগ্রামের আগে যে ঘোষণা দেয় যে "Do not try this at home" - আমি বেমালুম ভুলে গেলাম। আসলে আমার নিয়ন্ত্রণে কিছুই ছিল না। আমার হাত আপনাতেই যেন তাকে আছার দিল।
চক স্ল্যাম যে কী ভয়াবহ মার, সেটা ইউ টিউব করলেই বুঝতে পারবেন।
যাই হোক, ছেলেটার যে কোন বড় ক্ষতি হয়নি সেটাই ভাগ্য।
কাজেই বাংলাদেশে যে বর্তমানে খুন-জখম এত বেড়ে গেছে, সেটার একটা প্রত্যক্ষ্য কারন কী সেটা বুঝতে পারছেন? এইচ.বি.এম ইকবালের টিন এজ ভাতিজা জোরে গাড়ি চালাতে গিয়ে মানুষ মেরে ফেলে। খোঁজ নিয়ে দেখেন, এই ফকিরনির বাসায় অবশ্যই আপনি নিড ফর স্পীড, গ্র্যান্ড প্রি বা এই জাতীয় কোন গেম পাবেন যেখানে স্পিডিংটাই খেলা। পুলিশ তোমাকে ধরতে চেষ্টা করছে, পুলিশের হাত থেকে পালাও। ধরা খেলেই গেম ওভার। দারুন রোমাঞ্চ! ছেলে বুঝতেও পারেনা, কখন ভিডিও গেমটা কনসোল থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবে স্থান করে নেয়।
আমি নিজের কানে শুনেছি এক "বড় ভাইকে" গর্ব করে বলতে "ধানমন্ডির রাস্তায় স্পিডিং করতেছিলাম। হঠাৎ কোত্থিকা একটা রিক্সা আয়া পড়ল একদম সামনে। বিরেক বুরুক চাপতে গ্যালে উল্টা আমি মরতাম। দিলাম এক্সেলেটরে পা বসায়া। রিক্সা উইরা গিয়া কই পড়ল সেটা একটা দ্যাখনের মতন সীন আছিল। হেহেহে।"
ড্রাগসের টাকা যোগার করতে না পেরে পয়সাওয়ালা বাপ মায়ের ছেলেরাই কিন্তু গাড়ি নিয়ে ছিনতাই করে। রিক্সা আরোহীযাত্রীর হাতে ধরা ব্যাগ টেনে নেয়। টানের চোটে মহিলা রাস্তায় আছড়ে পরেন। ছিনতাইকারী ব্যাগ নিয়ে হাওয়া। মহিলা হয় কোমায় চলে যান, নাহলে মৃত্যু। ছিনতাইকারীর সেদিকে কোনই ভ্রুক্ষেপ নেই। গেমের মানুষ আর বাস্তবের মানুষের পার্থক্য তার নেশাগ্রস্ত মস্তিস্ক ফিল্টার করতে পারেনা।
কতই বা থাকে ব্যাগে? খুব বেশি হলে এক হাজার টাকা। ঢাকা শহরের আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি যেখানে নিউইয়র্ক থেকে নিরাপদ (মন্ত্রীর ভাষ্য, আমার নয়) সেখানে এর বেশি ক্যাশ টাকা নিয়ে বেরুতে হলে বুকের পাটা থাকা লাগে। ছেলেগুলোর কাছে এগুলোই মহামূল্যবান পয়েন্টস! পরের স্টেজে যাওয়ার!
ছেলেমেয়ের হাতে ভিডিও গেম তুলে দেয়ার আগে ভাল করে মাথায় ঢুকিয়ে নিন, এমন কোন গেম কিন্তু পৃথিবীতে নেই (অন্তত আমার জানা মতে) যেখানে স্পীড লিমিটের উপরে গাড়ি চালালে পয়েন্টস কাটা যাবে। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে পুলিশ টিকিট ধরিয়ে দিবে। রাশ আওয়ারে এক্সিডেন্ট করলে গেম ওভার।
কিংবা, একটা মুমূর্ষু রোগীকে নানান বাঁধা ডিঙ্গিয়ে হাসপাতালে পৌছে দিতে হবে। মানুষের প্রাণ নেয়াতে নয়, বরং প্রাণ বাঁচানোতে পয়েন্টস।
শুনতে খুবই বোরিং মনে হলেও ঠিক মতন ডিজাইন করতে পারলে এইসব গেমও অনেক জনপ্রিয়তা পেত।
মূল প্রসঙ্গে ফেরত আসা যাক।
শিশুর জীবনে ফিজিকাল খেলাধুলার বিকল্প কিচ্ছু নেই। শুধু দৈহিক গঠনই নই, আরও অনেক বদভ্যাস ছাড়িয়ে দেয় খেলাধুলা। আমরা সিগারেট ধরিনি প্রথমে ক্যান্সারের ভয়ে। তারপর মাথায় ঢুকে গেল সিগারেট খেলে স্ট্যামিনা কমে যায়। খেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটাই। কে কত দীর্ঘক্ষণ স্ট্যামিনা ধরে রাখতে পারে। কাজেই সিগারেট ধরিনি। এবং এরপর আর অভ্যাসই হয়নি।
এখন শহরের সব মাঠ দখল হয়ে গেছে। আউটডোর খেলার তেমন কোন সুযোগ নেই। পয়সাওয়ালার ছেলে মেয়েরা ক্লাবে গিয়ে খেলা এফোর্ড করতে পারে, মধ্যবিত্তের সেই সামর্থ্য নাই। তাহলে খেলাধুলার ক্ষতি কিভাবে পোষানো যায়?
বই! শিশুর হাতে "ভাল" বই ধরিয়ে দিন।
সে সারাদিন বইয়ের নেশায় বুদ থাকুক, বাঁধা দিবেন না। মনে রাখবেন, কোন জ্ঞানই ফেলনা নয়। আজকে কাজে না লাগলেও হয়তো তিরিশ বছর পর এই জ্ঞানই তাঁর জীবনকে পাল্টে দিবে।
নিজের সন্তানকে নিয়ে গর্বিত হতে চেষ্টা করুন। ছোটখাট ব্যর্থতায় তাঁকে দূরে ঠেলে দিবেন না।
"লজ্জা করেনা এমন রেজাল্ট নিয়ে আমার সামনে দাঁড়াতে? সব দোষ ঐ ফুটবলের। আজকেই ওটা আগুনে পুরাব।"
ব্যস। ছেলের শখের বলটা আগুনের পুড়িয়ে দিলেন। এখন সে আপনার প্রতি আক্রোশ থেকেই সিগারেট ধরবে। এবং কান টানলে এখানেও মাথা চলে আসবে। মদ, গাঁজা, ইয়াবা সব তখন সময়ের ব্যপার।
এমনটা না বলে আপনি সত্যি কথাটাই ওকে বলতে পারেন, "বাবারে, তুইতো জানিস তোর বাবা কত কষ্ট করে টাকা রোজগার করে। সেই টাকা দিয়েও নিজেদের শখ পূরণ না করে তোর ভাল রেজাল্টের জন্য মাস্টার রেখে দেই। তোর ভাল রেজাল্ট হলে আমাদের আর কিচ্ছু লাগবে না। তুই কী আরেকটু চেষ্টা করতে পারবি না?"
তাকে উপলব্ধি করান আপনারা কতটা তাকে ভালবাসেন। ওতো অন্তর্যামী নয়, ওকে না বললে, না বুঝালে ও জানবে কী করে?
আপনার বোঝানোর পর সেই ছেলে যদি নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে পড়ালেখায় মন না দেয়, তাহলে আমাকে ইনবক্সে দুইটা গালি দিয়ে দিয়েন।
সাথে এমন ফাজিল ছেলের কান বরাবর চটকানা।
ছেলের রেজাল্ট নয়, তাঁর প্রচেষ্টা দিয়ে তাঁকে বিচার করুন। রেজাল্ট দিয়ে বিচারের দায়িত্ব স্কুলের, আপনি পিতা, আপনি কেন আপনার ছেলের স্কুলের মাস্টার হবেন?
সবার ব্রেন সমান না - আমি যেমন জানি, আপনি আমার চেয়ে আরও বেশি জানেন।
বরং খুশি হন, আপনার ছেলে তুলনামূলক বাজে রেজাল্ট করলেও তার বন্ধুদের কাছে বলে বেড়ায় না, "এখন আর বিড়িতে পোষায় না ভাই, গাঞ্জা লাগবো।"
মানুষ হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ - সন্তান যদি মানুষই না হলো, তাহলে আর টাকা পয়সা দিয়ে কী হবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ রাত ১২:২১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×