somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামকে শুধুশুধু জটিল বানাবার চেষ্টা করবেন না।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকালকের লেখার কিছু কমেন্টের জের ধরে কিছু কথা বলা যাক।
১. আমি লিখেছিলাম হালাল হারাম ব্যাপারটা নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল। এক ভাই (ব্লগে) কমেন্ট করেছিলেন শূকরের মাংস হারাম। সেটা যতই ভাল নিয়্যত থাকুক না কেন, হালাল হবেনা।
কথাটা একদিক দিয়ে ঠিক। শুকরের মাংস, বা এলকোহল বা নখওয়ালা প্রাণীর মাংস হারাম। কিন্তু - সেটা সাধারণ অবস্থায়। এখন ধরা যাক আপনি সাহারা মরুভূমিতে হারিয়ে গেছেন। আপনার সাথে কোনই খাবার নেই, কেবল কিছু ক্যান ভর্তি পোর্ক সসেজ (শূকরের মাংস) আছে। এখন আপনি কী প্রাণ বাঁচাতে সেই মাংস খাবেন? হ্যা, খাবেন। কারন জান বাঁচানো ফরজ। আগে আপনাকে নিজের অমূল্য জীবন বাঁচাতে সম্ভাব্য সবকিছুই করতে হবে। যদি শূকরের মাংস খেতে হয়, তবে তাও খাবেন। যেমন নরহত্যা মহাপাপ। আল্লাহ বলেছেন "যে একজন নির্দোষ মানুষ হত্যা করলো, সে যেন পুরো মানবজাতি হত্যা করলো।" এই আয়াতটি আমাদের কুরআনে, ইহুদিদের তাওরাতেও আছে - বুঝেন কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন আল্লাহ। কিন্তু কেউ যদি আপনার বাড়িতে ঢুকে আপনাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়, তাহলে নিজের প্রাণ রক্ষার্থে সেই দুর্বৃত্তের হত্যা করলে আপনি কোন হারাম কাজ করবেন না। সেটা বরং হালাল হয়ে যাবে।
একই ব্যাপার ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে। আমি নিশ্চিত অনেক ডাক্তারই এই বিড়ম্বনার শিকার হন। রোগীরা বলেন এলকোহলমুক্ত ওষুধ দিন। এখন এলকোহলমুক্ত ওষুধ নেই বাজারে, কি করবেন আপনি? আপনার রোগ সারাতে অবশ্যই আপনাকে সেই ওষুধ সেবন করতে হবে। শুধু মনে রাখবেন, সুস্থ হবার পরে যেন সেই ওষুধ সেবন না করেন। ফেনসিডিল একটি কফ সিরাপ - কাশি হলে এই ওষুধ খায়। অনেকেই হয়তো জানেন না। কাশি ছাড়া খেয়ে লোকে ঝিমায় বলেই ওটা নেশা, এবং তখন ওটা হারাম।
২. কেউ বেশি দাম দিয়ে কিছু কিনলেই আমরা বলতে শুরু করি, "শো-অফ" "লোক দেখানো" "অহংকারী" ইত্যাদি।
হাদিসে আছে নবী (সঃ) বলছেন, "কারোর অন্তরে সরিষার দানা পরিমান অহংকার জমা থাকলেও সে বেহেস্তে যাবেনা।"
সাহাবীরা হায় হায় করে উঠলেন, "ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরওতো শখ হয় ভাল ভাল পোশাক পরার। আমাদের কী হবে তাহলে?"
রাসূল(সঃ) বললেন, "ভাল পোশাক পরা অহংকার না, বরং অহংকার হচ্ছে সত্যকে অস্বীকার করা।"
ব্যাখ্যায় যাই।
ধরুন আমার সামনে একজন গ্রাম্য কৃষক বসলেন। এখন যেহেতু আমি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করে ডলারে ইনকাম করে বাড়ি গাড়ি কিনে বসে আছি - কাজেই আমি কৃষকটিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলাম। তাহলেই কিন্তু আমি অহংকার করলাম। এবং এর ফলে আমি জাহান্নামে যাব।
কিভাবে "সত্যকে অস্বীকার করলাম"? হতে পারে আমি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দীক্ষায় এই কৃষকটি থেকে এগিয়ে আছি, কিন্তু কৃষিজ্ঞানে এই লোকটি আমার চেয়ে কয়েক হাজার মাইল এগিয়ে। এই লোকটি বাতাসের প্রবাহ এবং আকাশের দিকে তাকিয়েই বলে দিতে পারে কখন বৃষ্টি হবে, যেখানে আমাকে ওয়েদার ফোরকাস্টের জন্য ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে হয়। এই লোকটি জানে কবে কোন ফসল উৎপাদন করতে হয়, কিভাবে সেগুলোর যত্ন নিতে হয়, কখন কাটতে হয়, কখন পোকা ধরলে কি করতে হয় ইত্যাদি। এছাড়া এই লোকটি মানুষ হিসেবেই আমার চেয়ে কয়েক হাজারগুন ভাল হতে পারে। সবকিছু তুচ্ছ করে স্রেফ টাকা পয়সা আর লেখাপড়ার ভিত্তিতে আমি লোকটিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেই আমার দ্বারা পাপ হবে।
এই পর্যন্ত সবাই ক্লিয়ার?
এখন আসা যাক দামি গরু প্রসঙ্গে। গতকালও বলেছি, আবারও বলছি, কেউ যদি নিজের হালাল টাকা খরচ করে বাজারের সেরা গরু কিনতে চায়, তাহলে অবশ্যই তাঁর অধিকার আছে সেই গরু কেনার। লোকে এভারেজ সাইজের গরু কিনছে বলেই যে আমাকেও কিনতে হবে এমন কোন শর্ত ইসলামে নেই। তবে এখানে একটি কঠিন শর্ত আমার উপর আরোপ হবে। আমি এক কোটি টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছি বলেই কেউ দশ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনলে আমি তাঁকে তুচ্ছজ্ঞান করতে পারবো না। তাহলেই আমার পুরো পশু কোরবানি বরবাদ হয়ে যাবে। আমাকে অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই আমার পশু নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে, কে কি কোরবান করলো - সেটা নিয়ে কোনরকমের মন্তব্য করতে পারবো না। আমার সেই অধিকারও নেই।
তেমনি ভাইস ভার্সা। আমি দশ হাজার টাকা দিয়ে কুরবান দিচ্ছি, এবং বাকিরা লাখ টাকার পশু কিনছে বলেই আমি তাঁদের দুর্নীতিবাজ, চোর বাটপার বলে দিব - এটার অধিকার আমার নেই। হ্যা, সরকারি কর্মচারীদের যখন দেখবো লাখ টাকার গরু জবাই দিতে, এবং ৯৯% নিশ্চিত থাকবো তাঁদের এই টাকা দুর্নীতির টাকা, তারপরেও ঐ ১% অনিশ্চয়তার জন্য আমি জাজমেন্ট শুনাতে পারবো না। আল্লাহ বলেছেন, তিনি বিচারক। যেহেতু আমি নই - কাজেই চুপ থাকাই আমার জন্য ভাল হবে।
৩. এত টাকা (২৮ লাখ) দিয়ে কেন একটাই গরু দিল? এর বদলে সে পঞ্চাশটা পশু কোরবান দিতে পারতো। তাহলে বেশি গরিব খাওয়ানো যেত। ইত্যাদি।
কুরবানী প্রসঙ্গে সূরা হজ্জ্বের ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন "......এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্থকে আহার করাও।"
মানে কোরবানির পশু কেবল দুস্থ-অভাবগ্রস্থের জন্যই নয় - আমার নিজেরও আহারের জন্য। এখন আমার যদি শখ হয় দামি পশু খাবার, যদি আমার সামর্থ্য থাকে, যদি আমি কাউকে না ঠকিয়ে, কাউকে ছোট না করে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাথে নিজের শখ মেটাতে দাম দিয়ে গরু কিনি - সেটা আল্লাহ সম্পূর্ণ হালাল করেছেন। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এটি টাকা পয়সার অপচয়। কিন্তু আপনার কাছে যা "অনেক" টাকা, অনেকের কাছেই সেটি "সামান্য।" যেমন আপনার কাছেও যেখানে ৫-১০ হাজার টাকা "সামান্য" সেটাই অনেকের কাছে "অনেক।" এই টাকায় কেউ কেউ তাঁদের এক দুই মাসের সংসার চালায়। আপনি পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন, সেটাও অন্যের যুক্তিতে অপচয় করেছেন। কারন সেই টাকায় আপনি গ্রাম থেকে সস্তায় দুইটা বা ক্ষেত্রবিশেষে তিনটা গরু কিনতে পারেন। মাংস বেশি হতো। বেশি গরিব খাওয়াতে পারতেন।
ইসলাম কেবল আপনার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে নিয়ম করেনা। সবার সব দৃষ্টিকোণ বিচারে নিয়ে তারপরে কেবল ন্যায়ের পক্ষে নিয়ম করে। আবারও বলছি, আপনি যদি কারোর প্রতি কোন রকম ক্ষতি (দৈহিক বা মানসিক) না করে নিজের টাকায় গরিবের হক আদায় করে (যাকাত এবং সদকা) নিজের জন্য বিলাসবহুল কিছু কিনতে চান - ইসলাম আপনাকে সেই অনুমতি দেয়। নাহলে আমরা আজকে গাড়ি কিনতে পারতাম না, বাড়ি বানাতে পারতাম না, ভাল মন্দ খেতেও পারতাম না। সবই কারোর না কারোর চোখে বিলাস বহুল, অপচয়।
আরও কিছু পয়েন্ট উঠেছিল, মনে পড়ছে না। তবে বটম লাইন হচ্ছে, আল্লাহ ইসলামকে একারনেই আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন যাতে আমাদের জীবন সহজ হয়। এর বাইরে গেলেই বরং আমাদের ক্ষতি হয়। আজকে না হলেও ধীরে ধীরে ভবিষ্যতে কখনও না কখনও হবেই। কাজেই ইসলামকে শুধুশুধু জটিল বানাবার চেষ্টা করবেন না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে বোঝার ক্ষমতা দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৩২
১৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×