somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তদন্ত আলোর মুখ দেখুক, ড্রাইভার শাস্তি পাক, এবং শ্রমিকেরা আন্দোলন করে সেই ড্রাইভারকে ছাড়িয়ে আনুক।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাইরের জগতের চোখে পৃথিবীর স্বর্গভূমি অ্যামেরিকা হলেও এই স্বর্গেও কিছু ইবলিস বিচরণ করে। পুলিশের পোশাক পরা এইসব ইবলিসকে ডাকা হয় "killers in blue." এদের কাজ হচ্ছে কালো চামড়ার মানুষকে সুবিধামতন অবস্থানে পেলেই গুলি করে মারা। এদের পূর্বপুরুষেরাই কু ক্লাক্স ক্ল্যান নামের কুখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো গড়েছিল, যারা কালোদের ধরে ধরে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে ফাঁসি দিত। শুধু "কালোদের" বললেও ভুল হবে, কালোদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশকারীকেও এরা বিনা বাক্যব্যয়ে হত্যা করতো। জিন হ্যাকম্যান অভিনীত মিসিসিপি বার্নিং নামের একটি চমৎকার সিনেমা আছে - সময় সুযোগ বুঝে দেখে ফেলতে পারেন।
তো যা বলছিলাম, অনেক সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট দলগুলোর প্রকাশ্য বর্বরতা বন্ধ হয়েছে আজ কয়েক যুগ হয়ে গেছে, তবু এখনও, এই দুই হাজার আঠারো সালের এই অতি আধুনিক যুগেও এরা শহরের বাইরে নিজেদের অঞ্চলগুলোতে নিজেদের ঐতিহ্য ঠিকই ধরে রেখেছে। এখনও এরা নিয়মিত সভা সমিতি করে। এখনও কালো চামড়ার মানুষ, ইহুদি এবং মুসলমান সহ যাবতীয় অশ্বেতাঙ্গগোষ্ঠীর গীবত গায়। তারপরে নিজেদের মধ্যেই আলাপ আলোচনা করে বাড়ি ফিরে আসে।
এরা কোলে শিশু নিয়ে প্রকাশ্যেই বলে, "আমি আমার গাত্রবর্ণ নিয়ে গর্বিত। মানুষ হিসেবে আমরাই শ্রেষ্ঠ। আমার ছেলেমেয়েকেও এই শিক্ষাই দেব।"
এদের ছেলেমেয়েরাই শৈশব থেকে এই আইডিওলজি নিয়ে বড় হয় যে কালো মানুষ মাত্রই বেবুন শ্রেণীর প্রাণী। ওরা মাত্রই অপরাধী। ঈশ্বরের চোখেও ওদের কোন গুরুত্ব নেই। কাজেই ওদের হত্যা করলে কোন পাপ নেই।
ফেসবুক, টুইটার বা ইনস্টাগ্রামে হ্যাশট্যাগে ব্ল্যাক লাইভ্স ম্যাটার নিয়ে সামাজিক আন্দোলন নিশ্চই ইতিমধ্যেই আপনাদের চোখে পরেছে। প্রতিবছর শয়ে শয়ে লোক অ্যামেরিকান পুলিশের গুলিতে মারা গিয়ে থাকে। সবার স্বচ্ছ ধারণার জন্য বলে রাখি, অ্যামেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্রের উপর সরকারের কোনই কন্ট্রোল নেই। আমি একজন সাধারণ মানুষ হয়েও ইচ্ছা করলেই আমার বাড়িতে আধুনিক এসল্ট রাইফেল রাখতে পারবো। সেখানে যারা বিভিন্ন বেআইনি কর্মকান্ডে জড়িত, তারাতো রাখবেই। পুলিশদের এইসব কুখ্যাত অপরাধীদের সাথে লড়তে হয়। কেবল এই বছরই লাইন অফ ডিউটিতে প্রাণ গিয়েছে আটানব্বইজন অফিসারের। কাজেই বুঝতেই পারছেন, আত্মরক্ষার্থে পুলিশকে অবশ্যই গুলি চালাতে হয়। এবং আপনি যদি বন্দুক চালানো শিখতে যান, ট্রেনিংয়ে প্রথমেই আপনাকে যা শেখানো হবে তা হচ্ছে, যখন আপনি কারোর উপর গুলি চালাবেন, অবশ্যই অবশ্যই সেটা যেন তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই চালান। "গায়ে গুলি করে আহত করে" সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা বলিউড ঢালিউডের সিনেমাতেই পাবেন। অ্যামেরিকান পুলিশ আপনার দিকে গুলি ছুড়লে ধরে নিবেন আপনি দুনিয়ায় আর মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মেহমান। আপনার টিকেট কাটা হয়ে গেছে, আপনাকে এখন রওনা হতে হবে।
তাই দাগি আসামির দিকে পুলিশের গুলি চালানোতে লোকজন মাথা ঘামায় না। মাথা ঘামায় তখনই যখন এরা কোন নিরস্ত্র লোকের দিকে গুলি ছুড়ে। অপরাধী/সাবজেক্ট আত্মসমর্পণ করে ফেলেছে, তারপরেও গুলি চালিয়ে তাকে মেরে ফেলাকে হত্যা হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। সেটা যেকোন দেশের যেকোন আইনে প্রযোজ্য। গত কয়েক বছরে ডজন খানেক ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা গেছে আসামি হাত তুলেছে, নিরস্ত্র, তারপরেও পুলিশ গুলি করে তাঁদের বুক ঝাঁজরা করে দিয়েছে। এবং সর্বক্ষেত্রে দেখা গেছে নিহত ব্যক্তির গায়ের চামড়া কালো। কোন অবস্থাতেই তখন আর একে পুলিশের "আত্মরক্ষার্থে শুটিং" কর্মকান্ড বলে জাস্টিফাই করা যায় না। আর এদেশের মানুষও আমাদের দেশের মানুষের মতন নির্বিকার নন যে rab এর ক্রসফায়ারের গালগপ্পো শুনে নীরবে মেনে নিবে, অথবা এই বিষয়টা নিয়েও ট্রল করবে।
পুরো অ্যামেরিকা জুড়ে ব্ল্যাক লাইভ্স ম্যাটার মুভমেন্ট আন্দোলন ছড়িয়ে পরেছে। এদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে আরও বাকি সব মাইনোরিটি গ্রূপ। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না।
জর্ডান এডওয়ার্ড নামের পনেরো বছর বয়সী এক কিশোর গতবছরের ২৯ এপ্রিল রাতে কিছু টিনেজার নেইবারহুডে পার্টি করছিল। পুলিশকে কেউ কল করে জানায় একশোর মতন টিনেজ ছেলেমেয়ে মদ খেয়ে হল্লা করছে। পুলিশ এসে পার্টি ভঙ্গ করে দেয়। এই সময়ে জর্ডান গাড়ির প্যাসেঞ্জার সিটে চেপে পার্টি থেকে চলে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই পুলিশ অফিসার রয় অলিভার পেছন থেকে গুলি চালায়। গুলি জর্ডানের মাথার পেছন দিকের খুলি ভেদ করে মগজে ঢুকে পরে, এবং সে মারা যায়। জর্ডান নিরস্ত্র ছিল, এবং তারচেয়ে বড় কথা, সে ঘটনাস্থল ত্যাগ করছিল। কোন আইনেই, কোন পরিস্থিতিতেই একে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানো বলে জাস্টিফাই করা যাবেনা। পুলিশ অফিসার রয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তবুও জর্ডানের মায়ের সাথে পুরো জাতির এই ভয় ছিল যে আজ পর্যন্ত কোন শ্বেতাঙ্গ অফিসারকে কোন আদালত কোন কৃষ্ণাঙ্গের হত্যার জন্য খুনি বলে বিচার দেয় নি। তা অভিযোগ-প্রমান যতই সুস্পষ্ট হোক না কেন।
আলহামদুলিল্লাহ! এইবার ডালাস আদালতের জুড়ি বোর্ড রয় অলিভার নামের এই বর্ণবাদী ইবলিসকে খুনি হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করে পনেরো বছরের সাজা দিয়েছে। সাথে দশ হাজার ডলার জরিমানা। তাছাড়া এটাই প্রথম ঘটনা ছিল যখন মামলা করারও আগে পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে এরেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। ডালাস কাউন্টির প্রতি এজন্য কৃতজ্ঞতা।
মামলায় যদিও উকিল সাজা হিসেবে ৬০-১০০ বছরের শাস্তি দাবি করেছিলেন, জর্ডানের মা তারপরেও চেয়েছিলেন অন্তত পঁচিশ-তিরিশ বা তারচেয়ে বেশি বছরের শাস্তি হোক।
উপস্থিত সাংবাদিকগণ জিজ্ঞেস করেন, "জর্ডানের বয়স ছিল পনেরো বছর, শাস্তির মেয়াদও পেনরো, তোমার কী মনে হয় সুবিচার হয়েছে?"
মা বলেন, "না। মোটেও না। পনেরো বছর পরেও রয় নিজের জীবন ফিরে পাবে, আমার জর্ডানতো সেই সুযোগ পাচ্ছে না।"
আহারে! আমার দেশে কুষ্টিয়ার সড়কে বাস চাপায় নির্মমভাবে খুন হওয়া আট মাস বয়সী মৃত আকিফার বাবাটার চেহারাটা আজকে সারাদিন চোখের সামনে ভেসেছিল। পত্রিকায় জানলাম তিনি শুধু চান তাঁর মেয়ের হত্যাদৃশ্যের ভিডিওটা যেন যোগাযোগ মন্ত্রী একটু দেখেন। যোগাযোগ মন্ত্রী সেটা দেখেছেন কিনা জানিনা। দেখে হেসেছেন নাকি মন খারাপ করেছেন সেটাও জানিনা। তবে ফরিদপুরের বাস মালিক সমিতির নেতার কথাটা শুনুন, "ইনভেস্টিগেশন করে বুঝতে হবে কিভাবে কি ঘটছে।"
তদন্ত আলোর মুখ দেখুক, ড্রাইভার শাস্তি পাক, এবং শ্রমিকেরা আন্দোলন করে সেই ড্রাইভারকে ছাড়িয়ে আনুক।
আকিফার বাবা ততদিনে সেই ভিডিও বারবার দেখতে থাকুন। কেবল এই আশায় যে বাস চলতে শুরুর আগে ড্রাইভার হর্ন বাজিয়ে সতর্ক করবে। আকিফার মা রাস্তা থেকে উঠে যাবার পরেই সে কেবল এক্সেলেটরে চাপ দিবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৪:১৫
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×