somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটাল প্রতারক

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন সন্ধ্যায় কিছু একটা কাজ করছিলাম, এমন সময়ে ওয়ান এইট হান্ড্রেড (১-৮০০-XXX-XXXX) নাম্বার থেকে একটি ফোন এলো। সাধারণত কোন অফিস এই ধরণের নাম্বার ব্যবহার করে থাকে। কোন সাধারনের ব্যবহারের জন্য এই নাম্বার না।
সময়টা সন্ধ্যা, তারচেয়ে বড় কথা উইকেন্ড। কাজেই অবাক হতেই হলো। কোন অফিসতো শনিবার খোলা থাকে না।
"হ্যালো। আমার নাম জেফ থম্পসন, এবং আমি apple থেকে ফোন করেছি। তোমার আই.ডি কম্প্রোমাইজ করা হয়েছে, এবং তোমার অ্যাপল ডিভাইস কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ করা বন্ধ করবে। তুমি যদি সিচ্যুয়েশন এভয়েড করতে চাও, তাহলে তুমি তোমার আই.ডি. আমার সাথে ভ্যারিফাই করো।"
আই.ডি ভ্যারিফাই মানে হচ্ছে আমার নাম, জন্মদিন এবং সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার তাকে দিব। সাথে আরও কিছু তথ্য জানতে চাইবে, আমি দিব।
বলে রাখা ভাল, এই দেশে স্রেফ এই তিন তথ্য জানা থাকলে যে কেউ আমার নামে ক্রেডিট কার্ড খুলে ইচ্ছেমতন শপিং করে আমার ক্রেডিট হিস্ট্রি বরবাদ করে দিতে পারবে। Debt কালেকশন এজেন্সি তখন টাকা উদ্ধারের জন্য ফোনে ফোনে আমার জীবন তামাতামা করে দিবে। এই দেশে আইডেন্টিটি থেফ্ট একটি মহা যন্ত্রণার নাম। একবার হয়েছিল, সেই ইতিহাস অনেক লম্বা, পরে বলা যাবে।
তো যা বলছিলাম, এই ধরণের ফাঁদে মানুষকে নিয়মিত পরতে দেখি। তাই আমি এই ধরণের ফোন কলকে ১০০% অবিশ্বাস করি। একবারতো জেনুইন মালকে অবিশ্বাস করে ঝুলিয়েছিলাম বেশ কিছুক্ষন। মহিলা কোনভাবেই বিশ্বাস করাতে পারছিল না সে আসলেই আমার ইন্স্যুরেন্স এজেন্সিতে কাজ করে। আসলেই একটি ব্যাপারে আমার ভ্যারিফিকেশন দরকার। সে প্রসঙ্গেও পরে আসছি। আপাতত এই প্রসঙ্গ শেষ করা যাক।
আমি হয়তো ১% হলেও লোকটাকে গুরুত্ব দিতাম, কিন্তু লোকটা প্রথমেই আমাকে হাসিয়ে দিয়েছে নিজের নাম বলে।
দীর্ঘ বক্তব্য শুনে আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, "this is who?"
লোকটা কড়া ভারতীয় উচ্চারনে বললো, "this is জেফ থম্পসন।"
আমি আবারও হাসি চেপে বললাম, "এবং তুমি কেন ফোন করেছো?"
সে আবারও একই কথা রিপিট করলো। আমি ফোন মিউট করে হোহো করে হাসতে লাগলাম। ব্যাটা বলদ! যার নাম জেফ থম্পসন, সে জিন্দেগীতে এমন কুতায় কাতায় ইন্ডিয়ান এক্সেন্টে (আরও বিশেষ করে বললে সাউথ ইন্ডিয়ান এক্সেন্ট) ইংলিশ বলবে না। ব্যাটা যদি বলতো তার নাম মিথুন সুব্রামানিয়াম, আমি ১% হলেও তার কথায় গুরুত্ব দিতাম।
সে আমাকে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করলো, "তুমি এখনই তোমার আইডি আমাকে না দিলে তোমার আইফোন কাজ করা বন্ধ হয়ে যাবে।"
তারপর শুরু করলাম ব্যাটার সাথে টাইম পাস। কোন ওয়েবসাইটে যেতে হবে বিষয়টা ফিক্স করতে। আমি নিজেই করবো। তার এমপ্লয়ী আইডি কি, ইত্যাদি। বলদটা আমাকে নিজের ইমেইল আইডি দিয়ে বলে এইটাই তার এমপ্লয়ি আইডি। এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে, জেফ থম্পসনের আইডি হচ্ছে, রাজ ডট কিছু একটা অ্যাট কিছু একটা ডট কো ডট আই এন। .in মানেই ধরে নিবেন ইন্ডিয়া। জেফ থম্পসনের ইমেইল আইডি কেন রাজ সামথিং ইন্ডিয়ার হবে?
যখন বললাম, তোমার ইমেইল আইডি না, এমপ্লয়ি আইডি চাইছি, সে বললো, তুমি আমার এমপ্লয়ী আইডি নিয়ে কী করবে?
বললাম, আমার ভাই অ্যাপলে কাজ করে। ওর কাছে তোমার আইডি পাঠিয়ে দিব।
তখন বলে, "ও আচ্ছা। কিন্তু আমার আইডিতো লাগবে না। তোমার আইডি লাগবে। নাহলে তোমার আইফোন কাজ করা বন্ধ করে দিবে।"
আবারও কথা প্যাঁচাতে লাগলাম। তখন সে বললো, "তোমার ভাইয়ের আইডি আমাকে দাও।"
"তুমি ওর আইডি জেনে কী করবে?"
এইবার আর সে নিজের ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারলো না। গালাগালি শুরু করে দিল। এবং আমিও তখন বাংলা হিন্দি ইংলিশ শংকর করে গালাগালিতে যোগ দিলাম। আমাদের গালাগালিও চললো দীর্ঘক্ষণ। বেচারার সাথে আধাঘন্টার মতন ফোনে কথা বললাম। আশা করি তার বিল যথেষ্ট উঠেছে। যদি কিছুটা শিক্ষা পায়। যদিও এরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফোন করে। বিল উঠার কথা না।
সবার জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, apple এর কাস্টমার সার্ভিস দুনিয়ার সেরা। যে কারনে মানুষ একটু বেশি টাকা ব্যয় করে ওদের কাছ থেকেই ফোন কিনে। উদাহরণ দেই।
আমার এবং আমার বৌয়ের ফোন স্ক্রিন একই সপ্তাহে ভেঙেছিল। আমারটা হাত থেকে পরে গিয়েছিল। এবং এইটা আমার পুরানো রোগ। বরং আমার ফোন স্ক্রিন ভাঙা না থাকা মানেই হচ্ছে আমার কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। এর চিকিৎসা হচ্ছে ফোনে মেটাল কভার ব্যবহার করা।
ওর ফোন ভাঙ্গার কাহিনীটা একটু বিস্তারিত লেখা যাক।
সকাল বেলা অফিসে যাবার জন্য বেড়িয়েছি। গাড়িতে উঠেই বলল, "আমি ফোন আনিনি মনে হচ্ছে।"
এইটাও ওর পুরানো রোগ। আমি ফোন ভাঙি, ও ফোন হারায়।
আমি কল দিলাম। ভাইব্রেশন হলো। ধরেই নিলাম ফোন গাড়িতেই কোথাও আছে, তাই ভাইব্রেট হয়েছে।
রওনা হলাম অফিসের উদ্দেশ্যে। অফিসে এসে যখন আবার ফোন দিলাম, তখন তাঁর ফোনে রিং হলো ঠিকই, কিন্তু গাড়িতে কোন ভাইব্রেশন টের পেলাম না। ফোন হাওয়া। যেন ভুতুড়ে ব্যাপার।
দিনভর বৃষ্টি হলো। টেক্সাসের বৃষ্টি মানে উথাল পাথাল বৃষ্টি। বড় বড় ফোঁটা। ড্রেনেজ সিস্টেম ভাল না হলে কোমর জলে ডুবে যেত শহর নিশ্চিত।
বৃষ্টির মধ্যেই আমরা বাড়িতে ফিরলাম। ফিরেই ফোনে কল দিলাম, রিং হচ্ছে, কিন্তু বাড়িতে বা গাড়িতে কোথাওই ফোনের নড়াচড়া নেই।
apple এর একটি সুবিধা হচ্ছে ফোন হারালে সহজেই বুঝা যায় ফোন কোথায় আছে।
জিপিএস দেখালো হাইওয়েতে পড়েছে।
আমরা সাথে সাথেই গেলাম সেই লোকেশনে। বৃষ্টি তখনও মুষলধারে পড়ছে। গ্যাস স্টেশনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেউ কোন আইফোন জমা দিয়েছে কিনা।
ওরা তাঁদের লস্ট এন্ড ফাউন্ড বাক্স ঘেঁটে বললো, না। এমন কোন ফোন জমা পড়েনি।
কি আর করার? বাড়িতে ফিরে গেলাম।
পরের দিন আবার অফিস। বাসায় ফেরার সময় তিন্নিকে বললাম, "হতে পারে এখনও রাস্তায় পড়ে আছে। এইবার রাস্তায় খোঁজা যাক।"
ফোন তখন রিং হওয়া বন্ধ হয়েছে। দিনভর বৃষ্টি হলেও বাড়িতে ফিরতে ফিরতে বৃষ্টি থেমে গিয়েছে।
রাস্তায় খুঁজতে শুরু করতেই দেখি ফোন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে পাশে। শুধু স্ক্রিন গুড়িয়ে গেছে। বাকি সব হয়তো ঠিক আছে। দুইদিন বৃষ্টিতে ভেজার পরও এই অবস্থা!
চালের স্তুপে চুবিয়ে রাখলাম। চার্জ দিলাম। স্ক্রিন বাজেভাবে ভাঙা। বদলাতেই হবে।
ঘটনা হচ্ছে, অফিস যাবার সময়ে তাড়াহুড়ায় গাড়ির ছাদে ফোন রেখে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকার সময়ে সে ফোন নিতে ভুলে গিয়েছিল। তাই সেই ফোন কলের ভাইব্রেশনে আমরা ভেবেছিলাম ফোন হয়তো গাড়ির ভিতরে আছে, ছাদে আছে বুঝতে পারিনি।
পরে হাইওয়েতে গিয়ে স্পীড বাড়ার সাথে সাথে ফোন ছিটকে পড়েছে। এবং তারপর দুইদিনের কুত্তাবিলাই বৃষ্টিতে ভিজেছে।
আমরা দুইজনে যার যার ফোন কোম্পানিতে ফোন করে রিপেয়ার করালাম।
আমারটা ছিল তখন ওয়ানপ্লাস কোম্পানির। আমার অভিজ্ঞতা বলি।
প্রথমে ওদের কাস্টমার সার্ভিসে ফোন করলাম। ওরা আমাকে একটি ওয়েব এড্রেসে গিয়ে নিজে নিজে রিপেয়ার টিকেট খুলতে বললো। আমি পারছিলাম না, ওরা সাহায্য করলো। তবে ঝামেলা হচ্ছে ওরা একটা বক্স পাঠাবে, সেই বক্সে ভরে ওদের কোম্পানিতে আমার ভাঙা ফোন মেইল করতে হবে। তারপরে ওরা ঠিক করে আমার বাড়িতে ফোন ফেরত পাঠাবে। পুরো প্রসেসিংয়ে এক সপ্তাহের মতন সময় লাগবে। এবং এই এক সপ্তাহ আমার হাতে কোন ফোন থাকবে না। এইটা তাদের মাথা ব্যাথাও না।
আর apple কে ফোন করতেই ওরা বললো ওদের দোকানে নিয়ে যেতে। দোকানে নিয়ে যেতেই ওরা সেম মডেলের নতুন ফোন ধরিয়ে দিয়ে বললো, ফি আমানিল্লাহ।
কোনই ঝামেলা নাই। কোনই প্যারা নাই।
সাধে লোকে পয়সা খরচ করে apple এর ফোন কিনে না।
তো, অ্যাপেল ডিভাইস নিয়ে ঝামেলা হলে অবশ্যই অ্যাপল স্টোরে যাবেন। ওদের কোন ঠ্যাকা পড়েনি ইন্ডিয়ান ইংলিশ বলা কোন জেফ থম্পসনকে দিয়ে আপনাকে ফোন করিয়ে আপনার আইডি ভ্যারিফাই করবে।
এখন দেশেও লোকজন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার শুরু করেছেন। বিকাশ বা এইরকম ইজি মানি ট্রান্সফার সিস্টেম ব্যবহার করছেন। ব্যাংকও ডিজিটাল হয়ে গেছে। কাজেই আপনাদের অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। আপনার আইডি হ্যাক হলেই আপনার সারাজীবনের সঞ্চয় চোরের পকেটে চলে যাবে নিশ্চিত থাকুন। ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রতারক হইতে সাবধান! ফোনে কাউকে বিশ্বাস করবেন না। কাউকে না।
কথা প্রসঙ্গে আরেকটা প্রতারকের ঘটনা বলি।
প্রতিবছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকে আমাদের ট্যাক্স সিজন। গেল বছরের ট্যাক্স ফাইল এই সময়ের মধ্যেই করে ফেলতে হয়। এবং ঠিক তার পরপরই ঐ ওয়ান এইট হান্ড্রেড নাম্বার থেকে লোকজনের কাছে কল আসে, "তুমি গত বছরের ট্যাক্স ফাইলিং ঠিক মতন করতে পারোনি। পাঁচশো ডলার কম দিয়েছো। তোমার নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে গেছে। পুলিশ তোমাকে ধরতে রওনা হয়েছে। এই মুহূর্তে তুমি আমাদের পে করতে না পারলে তুমি জেলে যাবে।"
এই দেশে পুলিশকে সবাই যমের মতন ভয় পায়। একবার আমাদের অফিসের সাবেক কলিগের স্ত্রী, যার স্বামী নিজে একাউন্টেন্ট, এমন কল পেয়ে ভয়ে পাশের বাড়িতে চার ঘন্টা বসে ছিলেন। সারাক্ষন আতঙ্কে ছিলেন এই বুঝি পুলিশ এসে তাঁর বাড়ি ঘিরে ফেলে!
কাজেই লোকজন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেয়। কোন পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করতে আসেনা। তাঁরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। "খুব বাঁচা বেঁচে গেছি বাবা!"
জ্বি না, আসলে বিরাট ধরা খেয়েছেন।
প্রথম কথা, IRS (Internal Revenue Service) জীবনেও আপনাকে ফোনে ট্যাক্স চাইবে না। ট্যাক্সে গড়মিল থাকলে অবশ্যই আপনাকে চিঠি পাঠাবে। ক্ষেত্র বিশেষে একাধিক চিঠি পাঠাবে যাতে আপনি কোন অবস্থাতেই মিস না করেন। ডেড লাইন দেয়া হবে টাকা পরিশোধের। তারপরেও যদি শোধ না করেন, জরিমানা করা হবে। আপনার ব্যাংক থেকে সরাসরি টাকা তোলার ক্ষমতা ওদের থাকবে। ওরাও ছোটখাটো বিষয়ের জন্য চাইবে না আপনাকে গ্রেফতার করে জীবন বরবাদ করতে। হ্যা, বড় সর ফ্রড কিছু করলে তখন অবশ্যই আপনাকে জেলে যেতে হবে। কিন্তু সেটা আসলেই বড় কিছু হতে হবে।
কিন্তু এইসব কিছু না জেনেই ভোলাভালা লোকজন ভয়ের চোটে নিজের কষ্টের টাকা প্রতারকের হাতে তুলে দেন।
এই কারণেই সবার আগে মাথা ঠান্ডা রাখাটা সবচেয়ে জরুরি। কেউ আপনাকে প্যানিক সিচ্যুয়েশনে ফেলার চেষ্টা করছে বুঝতে পারলেই বুঝবেন এখানে কোথাও কোন কিন্তু আছে। তারপরে সময় নিয়ে রিসার্চ করুন। যেই নাম্বার থেকে ডায়াল করেছে, সেই নাম্বারটা গুগলে দেখুন আসলেই সে সংস্থার কিনা। যদি বলে আপনার ব্যাংকের থেকে ফোন করা হয়েছে, তাহলে আপনি নিজে সেই ব্যাংকে ফোন করে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে ভ্যারিফাই করুন। ওদের ঠ্যাকা থাকলে ওরা অবশ্যই আপনাকে আবার ফোন দিবে। ওরা জেনুইন হলে আপনি ওদের সন্দেহ করছেন ভেবে রাগ করবেনা, বরং আপনার ভুল ভাঙাতে সহযোগিতা করবে। বাটপার হলেই দেখবেন একসময়ে হাল ছেড়ে দিয়ে গালাগালি শুরু করেছে।
এইবার আসা যাক আরেক ধরণের প্রতারকের ঘটনায়।
আমি তখন ব্যাচেলর। দেশে তিন্নির সাথে লং ডিস্টেন্স প্রেম চলছে। প্রেম কম, ঝগড়া বেশি হয়। ঐদিকে তাঁর বিয়ের কথাবার্তা পাকাপাকি হয়ে যাচ্ছে। এইদিকে আমার আরেকটু সময় দরকার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হতে। এমন সময়ে আমার ইমেইলে এক রাশান তরুণীর ইমেইল এলো। মেয়েটি নাকি অনলাইনে আমাকে খুঁজে পেয়েছে। এবং প্রথম দেখাতেই ভালবেসে ফেলেছে। সে থাকে রাশিয়ার কোন এক ছোট শহরে। পেশায় জিম ইন্সট্রাক্টর, এবং টুকটাক মডেলিংও করে। কিছু ছবি এটাচ করে পাঠিয়েছে। এবং গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, তাঁর সেইসব ছবি দেখে যে মুগ্ধ হবেনা, সে পুরুষই না।
যাই হোক, আমি বুঝে গেলাম এটা কোন প্রতারকের কাম। নিজের উপর কনফিডেন্স আছে, কিন্তু এতটাও নেই যে মারিয়া শারাপোভার চেয়েও সুন্দরী কোন রাশিয়ান তরুণী অনলাইনে আমার ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবে। তখনকার সব ছবিই ছিল কোন না কোন দাওয়াত বা রেস্টুরেন্টে কিছু না কিছু খাচ্ছি। হয় আমার হাতে ভাতের প্লেট, নাহলে স্টেকের প্লেট। ঐ ছবি দেখে কেবল হাভাইত্যারাই ইম্প্রেসড হয়। যেই ছবি মেয়েটি পাঠিয়েছে, তাঁকে হাভাইত্যা ক্যাটাগরিতে ফেলা যাবেনা।
শুরু করলাম ফাজলামি। মেয়েটি যাই বলে, ভাব করি যেন বিশ্বাস করেছি। সাথে রেস্পন্সও করি সেই অনুযায়ী। দেখি কোথাকার পানি কতদূর পর্যন্ত গড়াতে চায়।
মেয়েটি তাঁর দৈনন্দিন জীবনের বর্ণনা দিত। তাঁরা কয় ভাইবোন, পরিবারে কে আছে, কে নাই। সে কী করে। রাশিয়া কত সুন্দর। অ্যামেরিকা কেমন ইত্যাদি।
একদিন সে জানালো সে আমার সাথে দেখা করতে অ্যামেরিকা আসতে চায়। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে করে তাঁকে টিকেটের টাকা পাঠালেই সে আমার কাছে চলে আসবে। তাঁর আর ভাল লাগেনা রাশিয়ায় থাকতে। সে আমার সাথে ছোট্ট সুখের সংসার করতে চায়। এখানে এসে কোথাও জিম ইন্সট্রাকশন শুরু করবে। তাঁর স্বপ্ন নিজের জিম খোলা। ইত্যাদি ইত্যাদি।
এতক্ষনে বুঝলাম ইমেইল প্রেমের উদ্দেশ্য। আমি তখন বললাম আমার কাছে টাকা নেই। কিন্তু আমি সত্যই চাই সে চলে আসুক অ্যামেরিকা।
সে আরও লম্বা ইমেইল লিখে। সে কতটা ভালবাসে। আরও ছবি পাঠায়। প্রতিটা ছবি খুবই ভাল ফটোগ্রাফার দিয়ে তোলা। একদম প্রফেশনাল ছবি। লোভ দেখানোর চেষ্টা আর কি।
আমি অনড়। আমার পয়সা নাই। কিন্তু বিরাট একটা মন আছে। বুক ভরা ভালবাসা আছে। হাহাহা।
সে একদিন জানালো সে ফ্যামিলির সাথে রাগ করে সেইন্ট পিটার্সবার্গে চলে এসেছে। রাশিয়াতে থাকার জায়গা নাই। আমি টাকা পাঠালে সে আমার কাছে উড়ে আসতে পারে। নাহলে তাঁর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল আর কি।
যাই হোক। আমার কঠিন হৃদয় গললো না। বেচারিকে টিকিটের টাকা পাঠিয়ে উদ্ধার করা হলো না। আমার রাশিয়ান রূপকথাও রচনা হলো না।
যদি প্রেমে গদগদ হয়ে টাকা পাঠাতাম, তাহলে প্রেমিকাতো হাওয়া হতোই, টাকাটাও মার যেত। অতি বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত।
পরে পরিচিত অনেকের কাছে এইসব ধরা খাওয়ার ঘটনা শুনেছি। মজার মজার ঘটনা। মন খারাপ করে তাঁরা গল্পগুলি বলে, এবং আমরা সেসব শুনে হাসতে হাসতে শেষ। এইটা দেখে তাঁরা ক্ষেপে গিয়ে বলে, "আমার এমন কষ্টের ঘটনায় তোরা হাসছিস?"
তখন বলতে হয়, "আসলে মন থেকে হাসছি না, শুধু মুখ দিয়ে হাসছি। বিশ্বাস কর দোস্ত, মনটা দুঃখে একেবারে ভেঙে গেছে। কিন্তু জন্ম থেকেই চেহারাটা হাস্যময়ী বলে ভুল বুঝছিস। হিহিহি।"
বন্ধু/পরিচিত তখন মর্মাহত হয়ে বলে, "ধুর শালার! কথাই কমু না।"
তা আমিও একবার এমন টাউটের হাতে ধরা খেয়েছিলাম। এবং ব্যাটা একজন ছিল একজন বাঙালি।
বিয়ের জন্য বাংলাদেশ যাব। বন্ধু জানালো তাঁর পরিচিত এক "মামা" আছেন যিনি খুব কম দামে বাংলাদেশের টিকিট দিচ্ছেন। তখন দেশের টিকিটের দাম মিনিমাম দুই আড়াইহাজার টাকা, আমাকে তিনি দিচ্ছেন সাড়ে তেরোশো টাকায়।
খুবই ভাল কথা। কিনে ফেললাম তার কাছ থেকে। ই-টিকিট পাঠিয়ে দিল। মানুষের উপর বিশ্বাস আমার সর্বকালের দোষ। তাই সেই টিকেটে যে আইটিনারি নাম্বার নেই, সেটা আর চেক করলাম না। টিকিটটা ছিল বুকিং টিকিট। আমার এবং ভাইয়ের নামে বুকিং দেয়া হয়েছে কেবল।
যাবার দিন এয়ারপোর্টে গিয়ে শুনি এজেন্ট এয়ারলাইন্সকে টাকা দেয়নি। কাজেই আমাদের নামে কোন টিকিট ইস্যু হয়নি। আমি লোকটাকে ফোন দেই, ধরে না। এদিকে প্লেন ছাড়ার সময় হয়ে আসছে।
জানতে চাইলাম, যেই টিকেট বুকিং দেয়া হয়েছিল, সেটা যদি এখন কিনি, কত নিবে?
মহিলা জানালো সাড়ে দশ হাজার ডলার। চিন্তা করতে পারেন, একটি ইকোনমি ক্লাস টিকেটের এই দাম?
আমার বিয়ে আর এক সপ্তাহ পরেই। বিজি সিজন চলছে তখন। এত দ্রুত টিকিট পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। এই ফ্লাইট মিস মানে বিয়ে ক্যানসেল।
চড়া দামে টিকেট কিনতে আমি রাজি হয়ে গেলাম। কিনতে যাব, তারেক তখন বাঁধা দিয়ে বলল, থামো মিয়া। আগে দেখি আমাদের আর কোন অপশন আছে কিনা।
ডালাসের পরিচিত একজন ট্রাভেল এজেন্টকে ফোন করা হলো, এবং তিনি অন্য এয়ারলাইন্সে আমার এবং আমার ভাইয়ের যাবার ব্যবস্থা করে দিলেন। আড়াইহাজারের মতন করে পড়েছিল দাম, কিন্তু দশ হাজারের চাইতেতো ভাল। আমরা চেক ইন লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে টিকেট কনফার্ম করছি। লাগেজ চেকইন হচ্ছে, আর ঐদিকে আমাদের টিকিট কনফার্ম হচ্ছে। প্লেনের যাত্রীরা সবাই উঠে গেছেন। আমাদের জন্যই কেবল দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের টিকিট কনফার্ম হতেই দৌড়। সেইদিন আধুনিক টেকনোলজির প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে গিয়েছিলাম।
যাই হোক, ফেরার পরও হারামজাদাকে ফোনে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমার ফোন ব্লক করে রেখেছিল। অন্যের ফোন থেকে ফোন দিয়ে যখন পেলাম, ব্যাটা বলে সে ট্রাভেল এজেন্সিকে টাকা দিয়ে দিয়েছে। ট্রাভেল এজেন্সি বলল, ওর সাথে ওদের কোন সংযোগ নেই। আমাকে নিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলতে শুরু করলো দুই ফাজিলের দল। ২৭০০ ডলারের জন্য আর কত সহ্য করা যায়? ছেড়ে দিলাম হাল। ধরে নিলাম ওটা ছিল আক্কেল সেলামি। নিজের দেশের লোক ভেবে লাফাতে লাফাতে বিশ্বাস করা উচিৎ না। টাউট বাটপারের কোন দেশ বা জাত থাকেনা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৩৫
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×