somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখন দেশের খেলা দেখলে মনে হয় কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিনগুলো।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্র্যাডম্যান বলতেন খেলাকে কখনও পেশা হিসেবে না নিতে। তাহলে সেটিকে উপভোগ করা যাবেনা।
তাঁর মতন খেলাকে আজ পর্যন্ত কেউ উপভোগ করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে কিনা কে জানে! কুড়ি বছরেরও বেশি ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড় যার, তাও এমন উইকেটে যখন বৃষ্টি হলে পিচ ঢাকাঢাকির কোন বালাই ছিল না। ছিল না মাথায় কোন হেলমেট। প্রতিটা দলেই ছিল ডেল স্টেইনের মতন আগুনে গতির ফাস্ট বোলার। "বডিলাইন সিরিজও" লিগ্যাল ছিল। তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়া কারোর পক্ষে আদৌ কখনও সম্ভব কিনা সেটা ভবিষ্যৎই বলবে। তবে তাঁর যুগের একটি ফ্যাক্ট তুলে ধরা যাক।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার তখন এমন রমরমা অবস্থা নেই। খেলোয়াড়রা কেমন পারিশ্রমিক পেতেন জানিনা, তবে এইটা সত্য যে তাঁদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা জীবিকা ছিল। সেখান থেকেই ছুটি নিয়ে খেলতে যেতে হতো। তারপর খেলা শেষে আবার দৌড়ে সেই কাজ করতে যেতে হতো।
আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর খেলোয়াড়দের এখনও এই কাজ করতে হয়। এই ব্যাপারে একটি ঘটনা শুনেছিলাম। শেয়ার করা যাক।
একজন কর্মচারী ছুটির দরখাস্ত করেছেন, বস তখন জিজ্ঞেস করলেন, "কেন ছুটি লাগবে?"
"স্যার, ওয়ার্ল্ডকাপ খেলতে যাব।"
বস ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলেন, "কিসের ওয়ার্ল্ডকাপ?"
"স্যার ক্রিকেট।"
বস তখন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, "দেখো বাবাজি, এই ওয়ার্ল্ডকাপ খেলার চক্করে ঘরে যে চায়ের কাপটা আছে, সেটা কেন হারাতে চাও? যাও, ডেস্কে গিয়ে কাজ করো।"
বেচারা কর্মচারী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাজে ফেরে। তাঁর আর বিশ্বকাপ খেলা হয়না।
যতদূর জানি, গাভাস্কারদের সময়ে ভারতীয় দল একটি টেস্ট ম্যাচ তিন-চারদিনে জিতে যাওয়ায় বোর্ড উল্টো তাঁদের বেতনের টাকা কেটে রেখেছিল।
"পুরো পাঁচদিনতো খেলোনি, তো সেই দিনের জন্য বাড়তি কিসের টাকা?"
যাই হোক, আমাদের শৈশবে আমাদের বোর্ডের অবস্থাও এমন ছিল। আমাদের ভবিষ্যৎও ছিল অন্ধকার। আমাদের সুপারস্টার আমিনুল ইসলাম বুল্বুল, নান্নু, আকরামরা বিদেশী দলের এ-বি টিমের সাথেও তুলোধুনো হতেন। কেনিয়া, হল্যান্ডের সাথে বিজয়কেও আমরা বিরাট এচিভমেন্ট মনে করতাম। শ্রীলংকা তখন অবিসংবাদিত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, আমরা তখনও ওয়ানডে স্ট্যাটাসই পাইনি। কে বলবে আজকে এই শ্রীলংকার সাথেই আমাদের দ্বৈরথ জমে উঠে?
তো, আমাদের শৈশবে যখন কোন শিক্ষিত বাড়ির সন্তান তাঁর বাবা মাকে বলতো বড় হয়ে ক্রিকেটার হতে চায় - তখন অবধারিতভাবেই প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তো। "ক্রিকেটারদের কোন ভবিষ্যৎ আছে? জাতীয় দলের খেলোয়াড় হয়েই কে বা কি করে ফেলেন? আর ঘরোয়া খেলোয়াড় হলেতো কথাই নাই। এরচেয়ে পড়ায় মন দাও, পড়ালেখা করে ভাল চাকরি করে জীবন কাটাও।"
কথা সত্য। দেশের কতজন সিনিয়র খেলোয়াড় কত কষ্টে জীবন কাটান জানেন?
সৈয়দ রাসেলের কথা মনে আছে? দুর্দান্ত ইকোনোমি রেট ছিল বলে যাকে সতীর্থরা ডাকতেন, "কিপ্টা রাসেল?" সেতো এই মাশরাফিদের সাথেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলেছে। সে এখন কাপড়ের দোকানে বসে।
কে ভেবেছিল আমাদের দেশে একদিন বিপিএল হবে? কেবল বিপিএল খেলেই স্থানীয় খেলোয়াড়রা লাখ লাখ টাকা ব্যাংকে ভরবে?
আমাদের বাবা মারা রেজাল্ট খারাপ হলে সবার আগে শাস্তি দিতেন ক্রিকেট ব্যাটকে, তারপরে আমাদেরকে। "ঐ ব্যাটের জন্যই এই রেজাল্ট হয়েছে। এই ব্যাট আমি পুড়িয়ে দিব!"
এবং সেটাই করা হতো।
তা সেই কঠিন সময়েও, পরিবারের, সমাজের প্রবল বাঁধা ডিঙিয়ে যারা ভবিষ্যৎ অন্ধকার জেনেও স্রেফ খেলাকে ভালবেসে সাধনা করে গেছে, তারাই বতর্মানে মাশরাফি, মুশফিক, তামিম, সাকিব জেনারেশন। এর আগের জেনারেশন যেমন হাবিবুল বাশার, পাইলট, রফিকরা বুল্বুল আকরামদের থেকে টেনে দলকে যে অবস্থানে নিয়ে এসেছিলেন, এই মাশরাফিরা সেই দলকে এক ধাক্কায় অনেক উপরে নিয়ে গিয়েছেন স্রেফ খেলার প্রতি ভালবাসা থেকেই।
একটা সময়ে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের যারা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন, তাঁরাই এদের তারকাজ্ঞান করতে শুরু করলেন। এবং তারপরেই দেশের সংস্কৃতির বদল ঘটলো। তখন একটি জেনারেশন এলো যারা তারকাখ্যাতির জন্য ক্রিকেট খেলতে শুরু করলো। ট্যালেন্ট নিয়ে এসে ভাল খেলে, আধুনিক ফ্যাসিলিটি যোগ করে প্রতিভা আরও ধারালো হয়েছে, কিন্তু ঐ যে কোন কিছুর চিন্তা না করে স্রেফ খেলাকে ভালবেসে খেলার যে মানসিকতা - সেটাই যেন মিসিং এদের থেকে।
তারকা হলে প্রচুর নারী ভক্ত হবে, তাই খেলে যাও। তারকা হলে ব্যাংকে প্রচুর টাকা আসবে, খেলে যাও। এমন মানসিকতা না যে জীবনে যাই ঘটুক না কেন, আমাকে খেলতে হবে কারন আমি খেলতে ভালবাসি।
আজকে ভারতের কাছে বাংলাদেশের এই অসহায় আত্মসমর্পণ খুবই মর্মাহত করলো। ভারতের সাথে খেললে রিয়াদের ভাগ্য এতটা অপ্রসন্ন কেন হয় কেউ বলবেন? আর বাকি ব্যাটসম্যানরাই বা কেন এইরকম উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন? প্রতিপক্ষকে হারাতে চাইলে আগে তাঁকে অবশ্যই রেস্পেক্ট করতে হবে। শত্রুকে যেই মুহূর্তে তুচ্ছজ্ঞান করবে, সেই মুহূর্তেই তুমি যুদ্ধে হেরে যাবে। সহজ এই সূত্রটা একজনেরও মাথায় ছিল না? আর তরুণরা কবে নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নিতে শিখবে?
সেই হিসেবে আফগানরা খেলছে দারুন! নিজেদের লিমিটেশন সম্পর্কে সচেতন, নিজেদের ক্ষমতার পরিপূর্ণ ব্যবহার। ঠিক আমরা যেমনটা খেলতাম ২০১৫-১৬ সালে, ঠিক যখন আমরা হাসতে হাসতে হারিয়ে দিতাম ভারত, পাকিস্তান দক্ষিণ আফ্রিকাকে। বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লড়তে যখন কলিজা শুকিয়ে যেত ক্রিকেট পরাশক্তিদের। হঠাৎ কী হলো আমাদের যে আমরা উল্টোপথে হাটতে শুরু করলাম? সিনিয়র খেলোয়াড় ছাড়া আমরা সেই নব্বই দশকের হরিণ শাবক হয়ে যাই যখন অন্যান্য দলের এ-বি টিমও হাসতে খেলতে আমাদের শিকার করতো।
এখন দেখলে মনে হয় কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিনগুলো। :(
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:০৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×