somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার সৌন্দর্য্য দিয়ে কখনই কোন ছেলেকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করবেন না।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডেভিড লেটারম্যান পৃথিবী বিখ্যাত অনুষ্ঠান সঞ্চালক। তাঁর অনুষ্ঠানে একবার ঐশ্বরিয়া রাই অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন। বলিউডে তখন সে সাফল্যের তুঙ্গে, দেবদাস সিনেমা দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। হলিউডের সিনেমায়ও সুযোগ পেয়েছে। লোকে তাঁর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ। কিন্তু যেহেতু সে ভারতীয়, এবং আম জনতা অ্যামেরিকানরা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের বাইরের জগৎ সম্পর্কে রীতিমতন মূর্খ, কাজেই তাঁকে কেউই তেমন চিনে না। ডেভিড লেটারম্যানের শোর মাধ্যমেই মূলত তাঁর পরিচয় ঘটছে।
তো হাসি মজাক করায় অভ্যস্ত ডেভিড লেটারম্যান ঐশ্বরিয়াকে পঁচানোর জন্য বললো, "আচ্ছা, এইটা কী সত্যি যে তুমি তোমার বাবা মায়ের সাথে থাকো?"
ঐশ্বরিয়া হাসিমুখে বলল, "হ্যা।"
লেটারম্যান ভাই তখন বললেন, "এইটা কী ইন্ডিয়াতে খুবই সাধারণ ঘটনা যে বড় বড় ছেলে মেয়েরা তাঁদের বাবা মায়ের ঘরে থাকে?"
পুরো দর্শককুল এখন হোহো করে হেসে দিল। অ্যামেরিকায় ব্যাপারটি খুবই অপমানজনক। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে আমাদের দেশে যদি কেউ দেখে কলেজে পড়া ছেলেকে এখনও মা জুতার ফিতা বেঁধে দেন, মাথার চুল আঁচড়ে দেন, মুখে তুলে খাইয়ে দেন, এমনকি কলেজে ড্রপ করে দেন এবং কলেজ ছুটি শেষে তাঁকে নিজে আনতে যান - তখন সেই ছেলের ক্লাসের বন্ধুবান্ধবগুলি তাকে নিয়ে যেভাবে হাসি ঠাট্টা করে, অ্যামেরিকায় তেমনি কোন গ্রোনআপ কিড যদি বাবা মায়ের বাড়িতে থাকে - ওরা সেই চোখেই দেখে। (এখন অবশ্য ব্যাপারটির অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। প্রচুর ইমিগ্র্যান্টস এসেছে, ওরা এখন বুঝে আমরা এশিয়ানরা আমাদের পরিবারের সাথেই থাকি। বয়স ১৬ হতেই বাধ্যতামূলক গৃহত্যাগ পুরোপুরি অ্যামেরিকান কালচার।)
একাধিকবার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতা ঐশ্বরিয়া হাসি দিয়ে নিজের অপমান ঢাকার চেষ্টা করলেন, কিন্তু বিশ্বখ্যাত ঘন সবুজ ঐ চোখে ক্ষোভ ফুটে উঠলো। দর্শকের হাসির দমক শেষ হতেই তাঁর জবাব, "It’s fine to live with your parents because…ummm….it’s also common in india that we don’t have to take appointments with the parents to meet for dinner Sir!"
একটু আগেই যারা টিটকারি করেছিল, বিশ্বসুন্দরীর অমন জবাবে তাঁরাই মুগ্ধ হয়ে হাততালি দিল।
এরপরেও ডেভিড লেটারম্যান ভাই হালকা পচানোর চেষ্টা করেছিলেন। এবং ঐশ্বরিয়া সেইভাবেই তাঁকে চাতুরতার সাথেই জবাব দিয়েছিল। ক্রিকেটীয় ভাষায় প্রতিটা বাউন্সারে হুক করে ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কেউ যেই মেয়েটিকে চিনতো না, মাত্র সাত মিনিটের মধ্যেই তাঁর ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিমত্তায় সবাই মুগ্ধ হয়ে গেল। একটি তথ্য দিয়ে রাখি, ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় ঐশ্বরিয়া রাই পুরো ভারতে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন। বিউটি এবং ব্রেন একসাথে যায় না - এমন তথ্য যে আহাম্মক কপচায়, তার নিজের ব্রেন তার সাথে যায় না।
কেউ কী সুস্মিতা সেনের কথাবার্তা শুনেছেন? সাধারণ কথাবার্তাতেই তাঁর শব্দচয়ন, তাঁর বুদ্ধিমত্তা, তাঁর ব্যক্তিত্ব যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
প্রিয়াংকা চোপড়ার শুধু সিনেমা না, তাঁর কথাবার্তা লক্ষ্য করবেন। বিশেষ করে বিদেশী ইন্টারভিউভিত্তিক শোগুলোতে তাঁর কথোপকথনগুলো। বুঝবেন ঐ মস্তিষ্ক কতটা তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ধারণ করে।
খুব ছোটবেলায় একবার এক আর্টিকেল পড়েছিলাম, ভারতীয়রা কেন বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় সবসময়ে এগিয়ে - এই নিয়ে গবেষণাভিত্তিক আর্টিকেল। সেখানে জেনেছিলাম, প্রতিযোগীদের দুইটা জিনিস অবশ্যই নিয়ে আসতে হয়। এক, উচ্চতা। যার উপর কারোর হাত নেই। বিশ্বসুন্দরী হতে হলে অবশ্যই লম্বা হতে হবে। দুই, বুদ্ধিমত্তা। যেটির উপর ৫০% হলেও আমাদের হাত আছে। নিয়মিত বুদ্ধি চর্চার মাধ্যমেই যা কেবল ধারালো হয়।
প্রশ্ন উঠতে পারে, সুন্দরী প্রতিযোগিতায় "সৌন্দর্য্য" প্রাধান্য পায় না তাহলে? উত্তর হচ্ছে, পায়, তবে সেটি মুখ্য নয়, গৌণভাবে। বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় একেকটি মেয়ে চোখ ধাঁধানো সুন্দরী হয়ে থাকে সত্য, তবে কেবল সৌন্দর্য্যই তাঁদের বিজয়ী করে না। তাঁদের কথাবার্তা, তাঁদের মনুষ্যত্ব বোধ, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে তবেই বিচার করা হয়।
স্রেফ সৌন্দর্য্য হয়তো মডেলিংয়ের জন্য প্রযোজ্য, বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার জন্য নয়।
সৌন্দর্য্য ব্যাপারটা কী? মানুষের শরীরের ২০৬ টা হাড্ডির গঠন কতটা পারফেক্ট, সেটার উপরই আমাদের সৌন্দর্য্য নির্ভর করে। এখন কোন প্রতিযোগী যখন সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতায় আসেন, তখন দেখা যায় তাঁর নাকটা আরেকটু খাড়া হলে তাঁকে আরও সুন্দর দেখাতো। হয়তো তাঁরা চিবুকটা একটু গোল করে দিলে তাঁকে অনেক সুন্দর দেখাতো। এইরকম মাইনর ব্যাপার স্যাপার যেগুলো মেকাপ দিয়ে ঠিক করা গেলে গেল, নাহলে ওরা সার্জারি করে ঠিক করে ফেলে। কিন্তু বুদ্ধিমত্তার উপরতো এক প্রতিযোগী ছাড়া আর কারোর হাত নেই। আপনাকে বুদ্ধিমতী হতে হলে অবশ্যই পড়ালেখা করতে হবে। এবং বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় কোন মূর্খ বুদ্ধিহীন প্রাণী কখনও মুকুট জিতেছে এমন নজির নেই।
আমাদের দেশের প্রতিযোগিতায় ফাইনালিস্ট কোন নারী যখন "উইশ করার" মানে বুঝেনা, তখন সেই প্রতিযোগিতার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। যদি প্রথম রাউন্ডে এমন আহাম্মককে বিদায় করা হতো, তাহলে কোন সমস্যা ছিল না। প্রথম রাউন্ডের একেকজন প্রতিযোগীর পরীক্ষা আসলেই পিওর কমেডি। কিন্তু ফাইনালে গিয়ে এমন আহাম্মকীপনা আসলেই বিরক্ত করে। এর আগেরবার জালিয়াত একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করে নানা নাটক এবং এইবার এমন বেকুবকে ফাইনালে তুলে দেয়া - বোঝা যায় আমরা এখনও বাহ্যিক সৌন্দর্য্যকেই স্ট্যান্ডার্ড ধরে সুন্দরী নির্বাচন করে থাকি।
এই মানের প্রতিযোগিতা আসলে নারী সমাজকে এগিয়ে নেয়ার বদলে উল্টো আস্ত সমাজের জন্যই বড় বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠে।
আমাদের দেশের নারীদের এগিয়ে নিতে গেলে কী এইরকম মেয়েদের আদর্শ বানাতে হবে?
উল্টো ড. সুসানে গীতি নামের যে মহিলাটি দেশের সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথম নারী মেজর জেনারেল হলেন, তাঁকে কী আদর্শ হিসেবে নেয়া উচিৎ না? আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চান্সই পেলাম না, সেখানে এই মহিলা একদম মেজর জেনারেল হয়ে গেলেন! স্যালুট! কে জানে, একদিন হয়তো আমাদের দেশের সেনাবাহিনীতে কোন নারী জেনারেলও হবেন! যেই দেশে গত তিরিশ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর পদে দুই নারী গদি অদল বদল করেন, সেই দেশের সেনাবাহিনীর জেনারেল নারী না হওয়াটাইতো অস্বাভাবিক।
কেউ হয়তো বলবেন, নিজে সুন্দরী বিয়ে করে বড় বড় ফাপর নিচ্ছেন। আসলে আমার জীবনে নারীভাগ্য খুব একটা খারাপ কখনই ছিল না। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসগুলো করেছি একের পর এক সুন্দরীর সাথে। কিন্তু যাকে বিয়ে করেছি, তাঁকে "কেবল সৌন্দর্য্যের" জন্য বিয়ে করিনি। তাঁর ব্যক্তিত্ব, এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার কারণেই আমি ঐভাবে ঝুলে ছিলাম। কেবল সৌন্দর্য্য স্ট্যান্ডার্ড হলে ট্রাস্ট মি, আরও অনেক মেয়েই আশেপাশে ছিল।
কিভাবে জীবনসঙ্গিনী বাছাই করেছি, সেটি আরেক ইস্যু। অন্য একদিন বলা যাবে।
তবে কথাপ্রসঙ্গে বলে রাখি, ব্যক্তিত্ব মানে এই না যে মানুষের সাথে রূঢ় আচরণ করে বেড়ানো। আমাদের দেশে এইটা একটা বিশাল মিসকনসেপ্শন। লোকজন বেয়াদবি আর ব্যক্তিত্বকে গুলিয়ে ফেলে। সঠিককে সঠিক মানা, তাঁর পক্ষ্যে সবার বিপরীতে গিয়ে হলেও স্ট্যান্ড নেয়া, এবং খারাপকে খারাপ মানাটাই আমার চোখে ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা। এখন কেউ বেঠিক কথা বলছে, তাই তাঁকে শুধরাতে গিয়ে আমি বেয়াদবি (যা একটি বেঠিক আচরণ) করে ফেললাম, এইটা ব্যক্তিত্ব না। আরও ডিটেইলে বলার আছে। আজকে না।
উঠতি বয়সী আপুদের অনুরোধ করছি, একটা ব্যাপার অবশ্যই মাথায় রাখবেন। আপনার সৌন্দর্য্য দিয়ে কখনই কোন ছেলেকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করবেন না। ওটা একদিন অবশ্যই নষ্ট হবে। বয়সের স্রোত প্রতিদিন একটু একটু করে আপনার সৌন্দর্য্য ধুয়ে নিয়ে যাবে। বরং নিজের বুদ্ধিমত্তা (পড়ালেখা), নিজের ব্যক্তিত্ব গঠনে সময় ব্যয় করুন। ওসব কবর পর্যন্ত আপনার সাথে থাকবে। যে ওগুলোর প্রেমে পরে আপনাকে ভালবাসবে, আপনি কবরে যাওয়া পর্যন্ত সে আপনার প্রেমে বুদ থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:২৫
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×