somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে শৈবাল হবার নিয়ম নেই

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা সাহিত্যে অতি বিখ্যাত একটি লাইন আছে, "শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির, লিখে রাখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির।"
ছোটবেলা থেকেই স্কুলে আমরা এই ভাব সম্প্রসারণ শিখে আসি, এখানে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। তারপরেও প্রসঙ্গক্রমে দুই লাইন বলতেই হয়, এবং তা হচ্ছে, মানুষের মধ্যে এমন অনেকে আছেন, যারা এক টাকার উপকার করলে যার উপকার করলো, তাঁকে সময়ে অসময়ে বারবার কথা শোনায়, এবং ঢাকঢোল পিটিয়ে সেই উপকারের কথা সবাইকে বলে বেড়ায়।
এখন, কোন ভাল কাজ করে ঢাকঢোল পিটানোর স্বভাব আমার নেই। কোরআন এবং হাদিস মতেই এই কাজ নিষিদ্ধ। কোরান শরীফে সূরা বাকারার ২৬১ নম্বর আয়াত থেকে পরবর্তী বেশ কিছু আয়াত পর্যন্ত পড়ে দেখুন, আল্লাহ কিভাবে দান খয়রাত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আমাদের নবীজি (সঃ) চমৎকার একটি হাদিসে বলেছেন, "দান এমনভাবে করবে যেন বাম হাত টের না পায় ডান হাত কী দিল।"
এছাড়া মুসা (আঃ) নবীর সাথে ফেরাউনের কথোপকথনের মধ্যে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট যা আমরা প্রায়ই উপেক্ষা করি, তা হচ্ছে, ফেরাউন নিজের অন্যায়কে জাস্টিফাই করতে মুসাকে খোটা শোনায়।
"আমি তোমাকে পেলে পুষে বড় করেছি।" মানে বোঝাতে চাইছে, যেহেতু আমি তোমাকে পেলে পুষে বড় করেছি, কাজেই আমার অন্যায়কেও তোমার চুপচাপ মেনে চলতে হবে।
অতি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। উপকার করে খোটা দেয়া অথবা সেই উপকারের প্রতিদান চাওয়া, ফেরাউনের আচরণ, মুসলিমের নয়।
নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নামাজ কোনটাকে ধরা হয়? তাহাজ্জুদকে। কারন এটি "ফরজ" নয়, মসজিদে গিয়ে জামাতে আদায় করার কোন দায়বদ্ধতা বা চাপ নেই। এটি আদায় করতে হয় নিজ গৃহে, গভীর রাতে, যখন পুরো দেশ ঘুমন্ত - কেবল নামাজ আদায়কারী নিজের একান্ত বিশ্বাসে তাঁর আল্লাহর সামনে মাথা নত করে। কোন লোকদেখানো অ্যাকশন এটি নয়। অন্তরে তাকওয়া না থাকলে কেউ তাহাজ্জুদ আদায় করে না।
তো যা বলছিলাম, আজকে কেন এই লেখা লিখছি সেটা আগে ডিসক্লেইমার দিয়ে তারপরে শুরু করি।
এক মেম্বার অভিযোগ করেছেন, তিনি আশায় আছেন, একদিন আমার লেখায় মুসলিমদের "ভাল কাজের" বর্ণনা তিনি পাবেন। কারন আমি কেবল সমালোচনা করি, কখনই প্রশংসা করিনা। ইন্ডিয়ায় কোন মুসলিম বান্দা রোজাবস্থায় কোন বিধর্মী নারীকে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়ে ফেলেছে - সেটা কেন লিখলাম না। বা ইন্ডিয়ায় আরও কোন মুসলিম এইরকমই কিছু একটা করে ফেলেছে - আমি কেন তাঁদের ঘটনা লিখলাম না। কিংবা বাংলাদেশের মসজিদগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য বিপুল অংকের টাকা তুলে দান করা হয়েছে - ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার ফিলোসফি ক্লিয়ার করার জন্যই উপরে বাংলা সাহিত্যের সেই বিখ্যাত প্রবাদ এবং হাদিস কুরআনের উদাহরণ টেনে আনলাম। সহজ কথায়, মুসলিমদের "দায়িত্ব" হচ্ছে ভাল কাজ করা। এটি আমাদের ইবাদতের অংশ। যাকাত আদায় আমাদের কোন অপশন না, এটি আমাদের অবশ্য কর্তব্য একটি কর্ম। প্রতিবেশীর হক আদায় করা, অসহায় দুস্থের পাশে এসে দাঁড়ানো - এগুলো আমাদের জন্য অবশ্যকর্তব্য কর্ম। মুসলিম হয়ে জন্মালে এই বিপদে পড়বেন, এইসব সামাজিক দায়িত্ব আপনাকে পালন করতেই হবে। নাহলে মুসলিম হওয়া যায় না। ইসলামে শৈবাল হবার উপায় নেই।
নামাজ আদায় করে যেমন ফেসবুকে তিনশো লাইনের স্ট্যাটাস লেখার নিয়ম নেই, তেমনি এইসব কাজ করেও লেখার নিয়ম নেই। যদি লেখা হয়, তাহলে চান্স থাকে, সেটা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। যেমনটা আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ধান্ধাবাজ নেতারা এক ছটাক বিরানির ঠোঙা কোন দুস্থের হাতে তুলে দেয়ার সময়ে দশ বারোজন হাত বাড়িয়ে ছবির জন্য পোজ দেয়। আমাদের ধর্মে এমন কাজ করলে সেটা আর ইবাদতের অংশ থাকেনা। আল্লাহ বলেছেন, "আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করো না।...." (বাকারা, ২৭২)
এখন তাহলে শুরু করি।
আমরা ক্যানভাস এডমিনদের অনেকেই নন প্রফিট অর্গানাইজেশন "স্পৃহার" সাথে যুক্ত আছি। "স্পৃহার ডালাস চ্যাপ্টার" আমরাই প্রতিষ্ঠা করি, এবং এখনও মাশাল্লাহ আমরা এবং বন্ধুবান্ধবরা এর সবকিছু পরিচালনা করি। স্পৃহা মূলত এর কার্যক্রম শুরু করে রায়ের বাজার বস্তি থেকে। সেখানে শিশুদের শিক্ষা, পুরুষ ও নারীদের কর্মমুখী শিক্ষা দিয়ে তাঁদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো, তাঁদের বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা প্রদান, কম্পিউটার ট্রেনিং প্রদান, ইত্যাদি ইত্যদি কাজের মধ্য দিয়ে তাঁদের জীবন পরিবর্তনে বড়সড় ভূমিকা পালন করেছে। স্পৃহার মূল উদ্দেশ্য ছিল, বস্তির মানুষের আয় উন্নত করে তাঁদের পরিবারকে বস্তির বাইরে পাঠিয়ে দেয়া। এখন পর্যন্ত স্পৃহা দারুণভাবে সফল। এখন স্পৃহার হাত ক্রমেই নানা দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
তা আমরা ডালাস চ্যাপ্টার কী করি? বছরে একবার স্পৃহার জন্য ফান্ড রেইজ করি। সত্তুর হাজার থেকে এক লাখ ডলারের মতন তুলে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু এতেই কী আমাদের দায়িত্ব শেষ? না। আমরা যেই সমাজে বাস করি, সেই সমাজের জন্যও আমাদের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। সেই সমাজের জন্য কিছু না করলে আমরা সেই সমাজের অংশ হব কোন যুক্তিতে?
এই কারণেই আমরা সাউথ ডালাসের তিনটি স্কুলের সবকটি ছাত্রছাত্রীদের পুরো বছরের বই খাতা পেন্সিল ইরেজার ব্যাগ ইত্যাদির ব্যবস্থা করে দেই।
এই কারণেই আমরা সাউথ ডালাসের গরিব শিশুদের ছুটির মৌসুমে খেলনা, খাদ্য ও পোশাকের ব্যবস্থা করে থাকি।
এই কারণেই আমরা চিন্তাভাবনা করছি একটি পার্মান্যান্ট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠানের, যেখানে ডালাস এবং এর আশেপাশের শহরের সব গরিব মানুষেরা বিনা পয়সায় চিকিৎসা নিতে পারবেন। বহুদূর যাবার আছে, কিন্তু প্রথম কদম নেয়া যখন হয়ে গেছে, ইন শা আল্লাহ, আমরা স্বপ্ন দেখছি একদিন এটি বাস্তব রূপ পাবে।
এছাড়া প্রতি মাসের প্রথম শনিবার সকালে আমরা নর্থ ডালাস ভলান্টিয়ার গ্রূপের সাথে মিলে হাজার হাজার স্যান্ডউইচ তৈরী করি হোমলেস মানুষদের জন্য। এই নভেম্ববরের আয়োজনে আমরা আট হাজারের বেশি স্যান্ডউইচ বানিয়েছি। এর আগের মাসে সংখ্যা ছিল সাড়ে ছয় হাজার। এর আগের মাসে আরেকটু কম। মানে দিন দিন লোকসংখ্যার সাথে সাথে স্যান্ডউইচ সংখ্যাও বাড়ছে। এই যাত্রার সূচনা হয়েছিল সেদিন যেদিন এক মহিলা, তাঁর স্বামীকে হঠাৎ করেই বলেছিলেন হোমলেসদের জন্য তিনি খাবার বানাতে চান। শুরু করেছিলেন ছয়জন বন্ধুবান্ধব মিলে। সেই ছয় বারো হলো, সেটা চব্বিশ হলো, আজকে কয়েক শতে গিয়ে পৌঁছেছে।
হোমলেসরা এই স্যান্ডউইচ এক সপ্তাহ ধরে খায়। তাঁদের মাথার উপর ছাদের ব্যবস্থা আমরা করতে পারছি না, কিন্তু এক-দুইবেলা খাওয়া খাদ্যেরতো ব্যবস্থা হচ্ছে। এই বা কম কিসের?
এখন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, এই যে, যে সমাজের জন্য আমরা কিছু একটা করছি, সেই সমাজের মোটামুটি ১০০% মানুষই নন মুসলিম এবং নন বেঙ্গলি। যাদের সাথে আমরা হাত মিলিয়েছি, সব অ্যামেরিকান খ্রিষ্টান। স্পৃহার হয়ে আমার সাথে অনেকেই কাজটা করছেন, কারন তাঁরা বাঙালি। তাঁরা চান ওরা বুঝুক বাংলাদেশি কমিউনিটি সমাজ থেকে শুধু নিতেই জানেনা, দিতেও জানে। অনেকেই করছেন স্রেফ মানুষ হয়ে মানুষের পাশে থাকার জন্য। অনেক ছাত্রছাত্রী কাজটি করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে তাঁরা দেখাতে পারে যে তাঁরা সমাজের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছে। আর আমি কাজটা করছি, কারন আমি মুসলিম, বাঙালি এবং মানুষ। আমার নবী এবং আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন মুসলিম হলে অবশ্যই মানুষের জন্য সমাজের জন্য কিছু না কিছু করতে। পয়সা থাকলে পয়সা দিয়ে করতে, পয়সা না থাকলে গতর খাটিয়ে করতে। যদি মানুষের প্রয়োজন না হয়, তাহলে পশুপাখির জন্য করতে হবে, ফুল লতাপাতা বৃক্ষের জন্য করতে হবে। মৃত্যু ছাড়া আমার কোন অজুহাত কাজে আসবেনা।
আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে আমরা বিভিন্ন দেশের বেশিরভাগ মুসলিমরা এবং বাঙালিরা, মাশাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, এই বিদেশে বেশ আরামেই আছি। আমরা অতি সৌভাগ্যবান যে আমরা কারোর উপকার করতে পারছি, কারোর উপকার নিতে হচ্ছে না। আমাদের হয়তো সবার প্রচুর টাকা পয়সা নেই, কিন্তু রাতে ঘুমানোর সময়ে মাথার উপর ছাদ অন্তত থাকে। যেসব শিশুদের জন্য আমরা হলিডে সিজনে খেলনা নিয়ে যাই, দেখা যায় লেদার জ্যাকেট উলের টুপি দিয়ে কান ঢাকার পরেও আমরা শীতে কাঁপছি, এদিকে তাঁরা স্যান্ডেল পায়ে মোটামুটি পাতলা সোয়েটার পরে চলে এসেছে। ছোটছোট শিশু! আপনার চোখে পানি আসতে বাধ্য! কতকিছু করার আছে ওদের জন্য, আর আমরা সামান্য জামা আর খাবার এনে ভাবছি অনেককিছু করে ফেলেছি! তখন মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়।
তখন নিজের অবদান দেখে উপলব্ধি হয়, দীঘি ভর্তি জল প্রয়োজন, আমরা সামান্য দু ফোঁটা শিশির দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে লাইক ও শেয়ার দাবি করি!
ইয়েমেনে লাখে লাখে মানুষ মরছে, সিরিয়া ধ্বংস হয়ে গেল, সোমালিয়ায় কবে খাদ্যাভাব ছিল না সেটা আমার বাবাও কখনও মনে করতে পারবেন না - আমরা সেখানে যদি বড়াই করে বেড়াই অমুককে এক বেলা খাইয়েছি, তমুককে দুইটা রুটি দিয়েছি এবং সেটা ফলাও করে ফেসবুকে প্রচার করি - তাহলেতো আমার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিৎ।
ফেসবুক ভরে যাচ্ছে ইয়েমেনি শিশুদের ভিডিওতে। আপনারা জানেন সেখানকার এতিম শিশুদের মাসিক স্পন্সর হতে আপনাকে মাসে সত্তুর ডলারও খরচ করতে হবেনা? আপনি কী জানেন, মাসিক মাত্র তিরিশ ডলারে সোমালিয়ার এক এতিমের দায়িত্ব আপনি নিয়ে নিতে পারেন? গাজায় মেয়ে শিশুদের স্কুলের জন্য মাত্র বিশ ডলার দান করলে আপনি "জেনেরাস ডোনার" ট্যাগ পেয়ে যাবেন। কয়জনের দায়িত্ব আপনি নিয়েছেন? ফেসবুকে শেয়ারিংয়ের দরকার আছে। বিশ্ববাসী জানুক ওদের সাথে কি ঘটছে। কিন্তু তারচেয়ে বেশি উপকার কী আপনার স্পন্সরশিপ নয়?
আমাদের এখানে পড়ালেখার সময়ে প্রিয় শিক্ষকগন একটি কথা প্রায়ই বলেন, যতই তুমি জানবে, ততই তুমি বুঝবে, তুমি কতটা অজ্ঞ!
অন্য কথায়, নিজেকে মহা পন্ডিত ভেবে বসলেই আর কিছু শেখা হবেনা। কখনই না।
জ্ঞানার্জনের প্রথম শর্তই হচ্ছে, ধরেই নিতে হবে আমি কিছুই জানিনা। বিশ্বখ্যাত মুসলিম স্কলার মুফতি মেংক যেমন বলেন, "knowledge হলো এক মহাসাগর যার কোন কুলকিনারা নাই।"
তেমনি, যখনই আপনি জেনুইন মনে মানুষের জন্য কিছু করতে মাঠে নামবেন, তখনই বুঝবেন পৃথিবী ভর্তি কোটি কোটি অসহায় হাত আপনার দিকে বাড়ানো। আপনার তখন আফসোস হবে, আপনি কেন সবার সব সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন না! কেন আপনার সেই ক্ষমতা নেই! উল্টো আপনি যদি দুয়েকজনের উপকার করে সেটা ফলাও করে প্রচার শুরু করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনার উদ্দেশ্য মানুষের উপকার করা নয়, বরং লোকের প্রশংসা প্রাপ্তি। সেক্ষেত্রে লোকে আপনার নামে বাহবাহ করলেও, আল্লাহ আপনার পাশ থেকে সরে যাবেন।
এখন নবীর (সাঃ) জীবনের উদাহরণ দেই।
আমাদের নবী (সঃ) তখনও নব্যুয়াতি পাননি। তিনি ছিলেন মক্কার এক সামান্য এতিম। সেই সময়ে তাঁদের সমাজে কোন আইনের শাসন ব্যবস্থা ছিল না। এক ক্ষমতাবান এক দুর্বলের হক মেরে দিলে সেই দুর্বল ব্যক্তি মক্কার প্রতিটা গোত্রপ্রধানের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সাহায্য চেয়েও ব্যর্থ হয়ে পরে কাবার বাইরে দাঁড়িয়ে খুবই শক্তিশালী কাব্য ভাষায় নিজের তিক্ততা প্রকাশ করে।
তখন কুরাইশ বয়োঃজ্যেষ্ঠদের মধ্যে কিছু ভাল মানুষ সিদ্ধান্ত নেন এমন অনাচার হতে দেয়া যাবে না। তাঁরা একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। নাম দেন হিলফুল ফুদুল। এদের কাজ হয় যখন কোন ক্ষমতাবান তাঁদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্বলকে ঠকানোর চেষ্টা করবে, তখন তাঁরা সেই দুর্বলের পক্ষ নিয়ে তাঁকে ন্যায় পাইয়ে দিবে। আমাদের নবী (সঃ) ছিলেন সেই দলের সবচেয়ে "যুবক" প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
এবং এই কাজ ও এই পদের ব্যাপারে তিনি এতটাই গর্বিত ছিলেন যে নব্যুয়াতি প্রাপ্তিরও বহুবছর পরে যখন তিনি মুসলিম সমাজের একচ্ছত্র অধিপতি, সেই সময়ে তিনি বলেন, "আমি একশো উটের বিনিময়েও আমার সেই পদ বিনিময় করবো না।" মানে হচ্ছে, সেই কাজের জন্য তাঁর গর্বের কোনই সীমা নেই। তাঁকে মিলিয়ন ডলার দিলেও তিনি সেই পদ থেকে সরে আসতেন না।
এখানে উল্লেখ্য, নবী মুহাম্মদ (সঃ) যখন মক্কায় ছিলেন, এবং মক্কা ছিল পুরো পৌত্তলিক সমাজ, তিনি তারপরেও সেই সমাজের জন্য কিছু কাজ করেছেন। তারপর তিনি যখন মদিনায় এলেন, তিনি বেশ কিছু নিয়ম তখন করে দিলেন। যেমন প্রতিবেশীর অধিকার, বা অন্যান্য সামাজিক নিয়মগুলো, তখনও মদিনায় মুসলিম বাদে ইহুদি গোত্র ছাড়াও গুটিকয়েক পৌত্তলিকের বাস ছিল। আমাদের নবীজি (সঃ) কখনই কোন সামাজিক কাজে ধর্মের ভিত্তিতে কাজ করেন নি। তাঁর সাহাবীরাও তাই করতেন। আমরা হজরত আলীর (রাঃ) সেই বিখ্যাত ঘটনা প্রায়ই পড়ি, ঐ যে যেখানে তাঁর যুদ্ধ ঢাল এক ইহুদি দাবি করেন নিজের বলে। আলী (রাঃ) তখন খলিফা, এবং কাজীর কাছে নিজের সাক্ষী হিসেবে কেবল তাঁর দুই পুত্রকে হাজির করেন। এবং মুসলিম কাজী রায় দেন এই বলে যে পুত্রের সাক্ষ্য বায়াস্ড হবার সম্ভাবনা আছে। কাজেই সাক্ষ্যের অভাবে খলিফা এক ইহুদীর সাথে মামলায় হেরে যান।
এই ঘটনা প্রমান করে যে আমাদের ধর্মে ন্যায়ের ক্ষেত্রে কখনই মুসলিম বা বিধর্মী ইত্যাদি নিয়ে বিচার করতে নেই। আমাদের ধর্ম ক্ষুধার্তকে খাদ্য, বস্ত্রহীনে বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে বলে। সে অমুসলিম হলে করতে পারবো না - এমন কোন রায় দেয় না।
কাজেই মুসলিম হয়ে রমজান মাসে হিন্দুকে রক্ত দান করেছেন, এই বিষয়টি মহান অবশ্যই, কিন্তু এটি এক মুসলিমের দায়িত্ব। আফসোস! এই দায়িত্বটাই আমরা পালন করিনা বলে আজকে এটা হাইলাইটেড নিউজ হয়।
এখন আসি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাবে। অভিযোগটা আবার মনে করিয়ে দেই - যারা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা দাবি করছেন, আমি আমার লেখায় কেবল মুসলিমদের কেন "সমালোচনা" করছি? তাঁরা যদি খোলা মনে আমার লেখাগুলো পড়েন, তাহলে বুঝবেন, আমি মুসলিমদের তাঁদের সামাজিক দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। "সমালোচনা" করা হচ্ছে কেবল তখনই যখন তাঁরা সেই দায়িত্ব পালন করছেন না। কারোর ভুল ধরিয়ে দেয়া বন্ধ করলে সেই কাজ শুধরানোর কোনই উপায় থাকেনা। নিজেদের শুদ্ধ করতে হলে অবশ্যই নিজেদের ভুল ধরতে হবে।
তর্ক করতে পারেন সবাই দায়িত্ব পালন করছি, দুয়েকটি "বিচ্ছিন্ন ঘটনা"কে হাইলাইট করে বিগডিল বানাচ্ছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁরাই বরং "বিচ্ছিন্ন ঘটনা।" যদি সবাই সঠিকভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে ৯০% মুসলিম জনসংখ্যার বাংলাদেশের অবস্থা এই হতো না। যাকাত এবং সদকা সম্পর্কে যাদের বিন্দুমাত্র ধারণা আছে, তাঁরা অবশ্যই উপলব্ধি করছেন যে আমরা সঠিকভাবে তা আদায় করলে দারিদ্র্য বহু আগেই আমাদের দেশ থেকে বিদায় নিত। যেহেতু এখনও আমরা গরিব, কাজেই গন্ডগোল কোথাও না কোথাও ঘটছে।
এবারে লেখার উপসংহার টানা যাক।
মুসলিম হিসেবে আমাদের কাঁধের উপর বিরাট দায়িত্ব চাপানো থাকে। আমাদের আচার ব্যবহারে আমাদের নবীর (সাঃ) আমাদের আল্লাহর রেপুটেশন রিফ্লেক্টেড হয়। লাদেন যখন আল্লাহু আকবার বলে টুইন টাওয়ার ধসায়, তখন পুরো বিশ্ব মুসলিমদের সন্ত্রাসী হিসেবেই চেনে। কেউ যখন আল্লাহু আকবার বলে দায়ের কোপে কোন লেখক/ব্লগারের মাথা ফেলে দেয়, তখনও রেপুটেশন খারাপ ছাড়া ভাল হয়না।
তখন মুখে ফেসবুকে হাজার হাজার হাদিস কুরআনের রেফারেন্স দিলেও কারোর মনের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ঘটবে না। পরিবর্তন করতে হবে কাজের মাধ্যমে। লোকে যখন দেখবে এক মুসলিম ছেলে বা হিজাবি মেয়ে কিছু ক্ষুধার্ত ইহুদি-খ্রিষ্টান শিশুর মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে, অথবা নিশ্চিত করছে যে তাঁর বিধর্মী প্রতিবেশী না খেয়ে ঘুমাতে যাচ্ছে না - তখন আপনাতেই তাঁদের ধারণা আপনার সম্পর্কে পাল্টাতে শুরু করবে। আপনার বাড়তি কিছু করা লাগবে না। উল্টো যদি বলে বেড়ান, "এই যে আমি সত্য ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত, তাই তোমার সেবা করছি। এখন তোমার দায়িত্ব আমার ধর্ম কবুল করা" - তাহলেই ধরা খেয়ে যাবেন। এই শর্ত আরোপ ইসলামে নিষেধ। উমার (রাঃ) তাঁর খিলাফতে এক খ্রিষ্টান মহিলাকে সাহায্য করার সময়ে মুখ ফস্কে এমনই ছোট্ট ভুল করে ফেলেছিলেন, আর আফসোসে শেষ হয়ে গিয়েছিলেন কেন তিনি কাজটি করলেন।
আর যাদের (বিশেষ করে বললে ইসলামোফোব) মনে ইসলাম সম্পর্কে ধারণা পাল্টাবে না, তাদের সামনে নবীও (সাঃ) যথেষ্ট নন। কুরআনেতো আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ সামনে এসে দাঁড়ালেও ওরা বিশ্বাস করবেনা। আবু জাহেল, আবু লাহাবদের সামনে নবী (সঃ) চলাফেরা করতেন। ওদের মন পাল্টায়নি। ওদের ইচ্ছা না থাকলে আপনিও কিছু করতে পারবেন না। কাজেই ওদের নিয়ে টেনশনেরও কিছু নেই। আপনি আপনার কাজ করে যান।
আবারও ডিসক্লেইমার, আমরা এখানে যা করি - তার একটি ক্ষুদ্র অংশ উদাহরণ হিসেবে দিয়েছি কেবল। এটা বুঝানোর জন্য বলেছি যে আপনারাও চাইলে এত সহজেই কাজগুলো করতে পারবেন। শুধু নিয়্যত পরিষ্কার থাকতে হবে। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে এখানে কিছু বলা হয়নি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৪
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×