সেদিন অফিসে আসার সময়ে হাইওয়েতে প্রচন্ড ভিড় ছিল। বুঝে গেলাম সামনেই একসিডেন্ট হয়েছে। একটু পরেই দেখলাম সাইরেন বাজিয়ে এম্বুলেন্স, ফায়ার ট্রাক ছুটে চলেছে। এই ভিড়ের মধ্যেও সবাই সরে গিয়ে রাস্তা করে দিচ্ছে। এমনিতেও তাঁদের জন্য ইমার্জেন্সি লেন থাকে। ওটা সবসময়েই ফাঁকা থাকে। ভিড় যতই হোক না কেন, ইমার্জেন্সি লেনে ফাজিলের মতন গাড়ি তুলে দিলে বিরাট অংকের জরিমানা গুনতে হয়।
তো ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে দেখি আসলেই ভয়াবহ একসিডেন্ট হয়েছে। এক গাড়ির উপর আরেকগাড়ি উঠে গেছে, এটার ধাক্কায় ওটা দুমড়ে মুচড়ে গেছে। পুলিশ আমাদের একদিকে চলাচলের ছয় লেনের রাস্তার তিন লেনই বন্ধ করে দিয়েছে। বাকি তিন লেন দিয়ে সবাই গাড়ি চালিয়ে যে যার অফিসে যাচ্ছে।
পাশ কাটিয়ে যাবার সময়ে দেখলাম দুমড়ানো মুচড়ানো গাড়ির পেছনের সিটে একটি শিশু বসা। কৌতূহলী দৃষ্টিতে বাইরের দৃশ্য দেখছে। তাঁর বয়স আমার ছেলের চেয়েও কম।
প্যারামেডিক্স, উদ্ধারকর্মীরা যে যার কাজে ব্যস্ত। আহতদের ঝটপট বের করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। প্রয়োজন বুঝে হাসপাতালে ছুটছেন।
একটা গাড়িও থামছে না। একজন মানুষও তামাশা দেখছে না। জানে এখানে তাঁদের কিছুই করার নেই। উল্টো ভিড় করলে আহত মানুষদের উদ্ধারকাজে ঝামেলা সৃষ্টি করা হবে। তাই সবাই ভিড় ফাঁকা করায় ব্যস্ত। এবং ভিড় ফাঁকা করার প্রথম পদক্ষেপই হচ্ছে নিজেকে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, এই ভিড়ের মধ্যে কয়েকশো বাঙালি আছেন। যারা ড্রাইভ করে ভিড় খালি করছেন।
বিদেশে বাঙালি অত্যন্ত সুশৃঙ্খল জাতি। আমাদের যাবতীয় ইতরামি আমাদের নিজেদের দেশে।
বনানীর টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় যা আরেকবার প্রমাণিত হলো।
ভবনে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে পারছে না "উৎসুক জনতার" ভিড়ে। উৎসুক জনতা কী করছে? মোবাইল ফোন বের করে ছবি তুলছে। লোকজন আগুনে পুড়ে মরছে, এই জানোয়ারগুলো ছবি তোলায় ব্যস্ত। তুই শালা এই ছবি দিয়ে কী করবি? তুই কী ফটো সাংবাদিক? না। তুই বদমাইশ টা ফেসবুকে আপলোড করবি। কিছু লাইক পাবি। এর বেশি কিছুই হবেনা। মাঝে দিয়ে তোর কারনে, হ্যা, তোদের মতন নির্বোধ, উৎসুক জনতার কারণেই আজকে কিছু মানুষ কবরে গেলেন।
তোকে তোর লাইক সহ কবরে পাঠানো উচিৎ ছিল।
প্রিয় বাঙালি ভাইয়েরা ও বোনেরা, আল্লাহর ওয়াস্তে একটা কথা মাথায় গেঁথে নিন।
যখন কোন দুর্ঘটনা হতে দেখবেন, তখন দয়া করে সেখানে ভিড় জমাবেন না। মানুষের মৃত্যুদৃশ্য দেখা এমন কোন সুখকর অভিজ্ঞতা না। এটা আপনার নিজের মস্তিষ্কেই চাপ ফেলবে। আর তারচেয়েও বড় কথা, কোন ঘোড়ার আন্ডা উপকার করতে না পারলে আপনার উপস্থিতি উল্টো সেখানে ঝামেলারই সৃষ্টি করবে। বিপদ আরও বাড়াবে।
আর দয়া করে সব কিছুর ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোডের চেষ্টা নিবেন না। এইটা বর্বরতা, অসভ্যতা, অমানবিকতা। আল্লাহর ওয়াস্তে মানুষের মতন আচরণ করেন। প্লিজ!
আনবিক বোমা সৃষ্টি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনার একটা। অবাধে অটোমেটিক রাইফেল বিক্রিও একইরকম দুর্ঘটনা। আর বাঙালির মোবাইলে ক্যামেরার সংযুক্তি তারচেয়েও বড় দুর্ঘটনা। ইতরামির আগুনে ঝড়ো হাওয়া বইয়ে দিয়েছে এই প্রযুক্তি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:০৩