somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেমসের প্রতি ভালবাসা।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নেহা কাক্কার এবং সনু নিগাম আসলেন ডালাসে। বলিউড তারকাদের আমাদের শহরে আগমন নতুন কোন ঘটনা না। প্রতি মাসে বড় সর তারকার আগমন ঘটে। গত সপ্তাহে আমাদের শহরে এলেন সুস্মিতা সেন। তারপরে এলেন সনু-নেহা। আগামী মাসে আসবেন অরিজিৎ সিং, এবং তারপরের মাসে আসবেন হৃত্বিক রোশান, টাইগার শ্রফ, অমুক তমুক প্রমুখ।
তা সনু নিগামের ক্যালিবার নিয়ে কারোর কোন সন্দেহ নেই এইটা নিপাতনে সিদ্ধ। যার সন্দেহ আছে, সে সংগীত বিষয়ে মূর্খ। মূর্খের কথায় কান না দিলেও চলবে।
তবে তাঁর প্রতিভা কোন পর্যায়ের, সেটার সামান্য নমুনা দেখতে হলেও অবশ্যই তাঁকে মঞ্চে সামনা সামনি শুনতে হবে। তখন নিশ্চিত জানতে পারবেন, কিশোর কুমারের পরে ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে প্রতিভাবান কণ্ঠশিল্পী হচ্ছেন এই সনু নিগাম। ৪১ বছর ধরে লোকটা গাইছে, শুরু বয়স যখন সেই চার ছিল। ভাবতে পারেন?
যাই হোক, এদেশে আসার পর থেকে বলিউডের সাথে আমার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। বাড়িতে হিন্দি চ্যানেল নেই, কালেভদ্রে হলে গিয়ে হিন্দি সিনেমা দেখা হয়, তাও আমির খান না হলে চিন্তা ভাবনা করে হলে যাই। নতুন নায়ক নায়িকাদের অনেককেই চিনিনা। পোলাপান আলিয়া-সোনম করে, আমি এখনও সেই হাম দিল দে চুকে সনমের ঐশ্বরিয়ায় পড়ে আছি। বুঝেন আমি হিন্দি সিনেমা জগতে কত ব্যাকডেটেড। তাই নেহা কাক্কার যখন মঞ্চে উঠলো, আমি টাইট হয়ে বসে রইলাম। এতটুকুন সাইজের একটা বাচ্চা মেয়ে লাফালাফি করে গান গাইছে, আমার আশেপাশের লোকজন হাত পা ছোড়াছুড়ি করে নাচানাচি করছেন - আমার অবস্থা তখন দৈত্যকূলে প্রহ্লাদের মতন। পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন না পড়লে পরীক্ষার্থী যেমন অসহায় চেহারায় এদিক ওদিক তাকায়, আমিও আমার আশেপাশের লোকজন দেখি।
আমার ইমিডিয়েট পাশেই এক আংকেল বসে ছিলেন। টাইট হয়ে বসার দিক দিয়ে তিনি আমার চেয়েও এগিয়ে। বুঝে নিলাম, আমি যেমন "হাম দিলের..." ঐশ্বরিয়ায় আটকে আছি, তিনি তেমন "তেজাবের" মাধুরীতে আটকায় আছেন। তিনিও আমার মতোই আশেপাশে নজর বুলাচ্ছেন।
নেহা বিদায়ের পরে এলো সনু। জীবন্ত কিংবদন্তি। গলা দিয়ে কি কি করার ক্ষমতা তাঁর আছে সেটা নির্দ্বিধায় শো-অফ করেন। আম জনতা মুগ্ধ হয়ে তাকায় থাকে।
সমস্যা হলো, সনুও গাইলেন তাঁর বেশ কিছু নতুন গান। এমন নতুন যা আমি আগে সেভাবে শুনিনি। মাঝে মাঝে পুরানো কিছু গান ধরেন, "প্রশ্ন কমন পড়েছে" ভেবে আমি ঠিক মতন নড়ে চড়ে উঠার আগেই তিনি লাফিয়ে আরেক গানে চলে যান। আমি আবার ফ্যালফ্যাল করে আমার আশেপাশের দর্শক দেখি। ঐ আঙ্কেল বেচারা আমার চেয়েও অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকেন। পরীক্ষায় নিশ্চিত ফেলুয়া ছাত্র আমরা দুইজন।
কনসার্ট শেষে বৌকে জিজ্ঞেস করলাম, "এনজয় করেছো?"
সে বললো, "আমিতো করেছি, তুমি করেছো?"
অবাক হয়ে বললাম, "কেন করবো না? সনুর কনসার্টে সনু কাউকে বিনোদন না দিয়ে ছাড়ে?"
কথা সত্য। সনুর কনসার্ট এর আগেও দেখেছিলাম। একক কনসার্ট ছিল সেটা। সেখানে সে আরও খোলামেলা পারফর্ম করে। নিজের উঠান বলে কথা, গাইতে গাইতে স্ট্যান্ড আপ কমেডি পর্যন্ত শুরু করে দেয়। হাসাতে হাসাতে পেট ব্যথা হয়ে যায়।
বৌ বলল, "তোমাকে দেখেতো মনে হলো না। কেমন পাথরের মূর্তির মতন বসে ছিলে।"
আমি বললাম, "একেকজনের এক্সপ্রেশন একেক রকম হয়। সবাই নাচানাচি করে এক্সপ্রেস করে, আমি চুপচাপ বসে।"
সে বললো, "কই - অন্যান্য কনসার্টেতো তোমাকে এমন দেখি না।"
"অন্যান্য কনসার্ট মানে?" বেশ অবাক হলাম। "কার কনসার্টের কথা বলছো?"
'জেমসের.... "
বৌকে আর কথা শেষ করতে দিলাম না। চোখ বড় বড় করে বললাম, "তুমি জেমসের সাথে অন্যান্যদের তুলনা করছো? সিরিয়াসলি? তুমি জানো জেমস আমাদের কাছে কী? রিক্সাভাড়া বাঁচিয়ে জেমসের অ্যালবাম কেনার টাকা জমাতাম। প্রতি মাসে বের হওয়া মিক্সড এলবামের প্রথম কপি কেনার জন্য দোকান খোলার আগে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে শুভেচ্ছা নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখতাম শুধুমাত্র এই আশায় যে সেখানে জেমসের নতুন গানের মিউজিক ভিডিও দেখানো হতো। নগর বাউল যখন নতুন অ্যালবাম প্রকাশের ঘোষণা দিত, তখন তীর্থের কাকের মতন দিন গুনতাম। শুধুমাত্র জেমসের গান সামনা সামনি শুনবো বলে পয়সা জমিয়ে শেরাটন উইন্টার গার্ডেনের টিকিট কিনতাম। একই দিনে ঢাবি থেকে ছুটে গেছি মহাখালী। ব্যাক টু ব্যাক কনসার্ট শুনেছি, তবু প্রাণ ভরেনি।"
বৌ আর কথা বাড়ালো না। চুপ হয়ে গেল।
জেমস, আইয়ুব-বাচ্চা-হাসান....তাঁরা আমাদের কাছে কী সেটা কাউকে বুঝানো সম্ভব না। বাংলাদেশ ব্যান্ড সংগীতের সোনালী প্রজন্মে যারা বেড়ে উঠেনি, যাদের গায়ে সেই মোহনীয় মুহূর্তের হাওয়া লাগেনি - তাঁরা বুঝতে পারবে না।
জীবনের প্রথম উপন্যাস "সাক্ষী" লেখার সময়েও ঐ হাওয়া লেখায় চলে এসেছে। এমনি এমনি নয়।
গুরুর প্রতি ভালবাসা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:২৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×