somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাব্যগ্রন্থ নতুন মুদ্রায় তুমি সংশোধিত ও পরিমার্জিত ই সংস্করন

০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নতুন মুদ্রায় তুমি
মশিউর রহমান মিঠু

প্রকাশক: খন্দকার মনিরুল ইসলাম
ভাষাচিত্র
(টিমওয়ার্ক সহযোগী প্রকাশনা)
রুম ৭৬,তুতীয় তলা,আজিজ মার্কেট শাহবাগ,
ঢাকা ১০০০।
ফোন : ০২৮৬৫০৩২৯
প্রথম প্রকাশ:
এপ্রিল ২০০৮, বৈশাখ ১৪১৫
মুদ্রন:
টিমওয়ার্ক
পরিমার্জিত দ্বিতীয় ই- সংস্ককরন:
অক্টোবর ২০১২,আশ্বিন ১৪১৯
স্বত্ব:
শিউলী ও অয়ন
প্রচ্ছদ:
শিবু কুমার শীল
মূল্য:
৬০ টাকা



কবিতাসূচী ঃ

সাম্প্রতিক সুখের নির্যাতন ৫
নতুন মুদ্রায় তুমি ৫
শ্লোগান কিংবা রাজনীতিকের শিল্পকলা ৫
একজন প্রফেট ৫
তেজারতির নাও ৬
দেহজীবী অথবা আগুনবাজ ৬
একজন প্রান্তিক মানুষের আত্মজিজ্ঞাসা ৬
গরীবেরচর ৬
শহীদের স্বজনেরা ৭
হৃদয়ে মুদ্রার কালো ছাপ ৭
আরন্যক রাখাল ৭
একটি সাধারণ গল্প ৮
মাইজদী ৮
ঈশ্বর ও একটি জৈবসত্তা ৮
ভগ্নঅভিযাত্রী ৯
ডুবুরী ৯
সমুদ্র কিংবা বিমান বন্দরে ৯
তোমাকে আমি মুদ্রায় সাজাই ৯
হৃদয়ের চোখ ৯
আজন্ম অচেনা ১০
আহত স্বজন ১০
অরণতে একদিন ১০
নি:সঙ্গ মাঝি ১০
ঋতু বন্দনা ১০
মহাজাগতিক ১১
অনাগত সন্তানকে ১১
সিদ্ধার্থ ১১
মেঘ-সংগীত ১১
পাতা কুড়ানীর শিশু ১১
মঙ্গা ১২
যে মুদ্রায় ভালোবাসা হতেছে আলাদা ১২
সৃষ্টির আহ্বান ১২
(হরিপদ চৌরাশিয়ার বাঁশি শুনে শুনে)
নদীবাস্তবতার গাঁথা ১২
উন্নয়ন শ্রমিকের মনের কথা ১২
আমার সম্বল শুধু আকাশ প্রেমিকা আর মানুষকে ভালোবাসার কবিতার স্মৃতি ১৩
উৎসবে ১৩



সাম্প্রতিক সুখের নির্যাতন

ইদানিং মানুষেরা হাটে চলে, ঘর -কন্যা
আসবাব -পত্র ,বাসন- কোসন, টিভি- ফ্রিজের সুখ নিয়ে।
ইদানিং মানুষেরা ফটপাতে স্টেশানে বস্তিতে
পড়ে থাকে বিগত রাজা-রাজড়াদের স্বপ্ন নিয়ে - সেই সুখ,
লটারিতে জিতে যাবে লাখ টাকা; গড়াগড়ি যাবে সোনার মোহর!
ইদানিং মানুষেরা পড়ে থাকে রমণীর নাভিমূলে সুখ খুঁজে -আহা!
অফিস পাড়ায় , শিল্পে , সচিবালয়ে
সুখ স্বপ্নে বিভোর হয়ে মানুষেরা মানূষের সুখ চুরি করে।
মানুষেরা ইদানিং মানুষকে ভালোবাসার নতুন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে
মানুষেরা ভালোবাসাবাসি করে তুলাদন্ডে সুখ মেপে মেপে।
রাজপথে সুখ বেচাকিনি হয় খুব সস্তা দামে ।
ব্যাংকে-বীমায় সুখের মূল্যস্ফীতি স¤প্রতি দারুন দারুন বেড়েছে।
আমিতো মানুষ নই-সুখ বিলাসী কোনো সৌখিন শিকারি,
সেরকম হলে, জর্জরিত হয়ে যাবো মারাত্মক সুখের নির্যাতনে ।

নতুন মুদ্রায় তুমি

বাজিকর সাজিয়েছে চোখবাজি খেলার আসর
সুথের পায়রাগুলো নাচে কোন অচিন মুদ্রায়
ছায়াপথে আজ তারা ঝাঁক বেঁধে গড়ছে বাসর
তোমার মুদ্রাগুলো ভর করে আমার ভাবনায়

তোমার বাঁকানো কাঁখে কললি সে করে যদি ভর
ঠোঁটের কটাক্ষ বাঁকা দুই চোখে নিগূঢ় আহ্বান
অন্তরে ছোবল মেরে রুদ্ধ করে ভালিয়ালি গান
মনের ভেতর খুঁজি দিনমান একখানি ঘর।

সময় পালটিয়ে এ গায়ে আসে কলের মানুষ
বহুবর্ণ আলোক ঝলকে ছুটে উড়ন্ত ফানুস
মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে নিজের প্রকৃত মুখ
দু’চোখ বন্ধক রাখা ধাঁধানো আলোয় কতটুকু সুখ!

সেই বহুরুপী বাজিকরের সাজানো মজমায়
অচেনা ভঙ্গিতে তুমি নাচো কোন নতুন মুদ্রায়।


শ্লোগান কিংবা রাজনীতিকের শিল্পকলা

এখন ব্যক্তি হয়েছে সাধারণ শিল্প
শিল্পকলা মানে ব্যক্তির জয়গান
রাজনীতি তো অবিশ্বাসের যোগফল সমগ্র
মানুষের দোষাবলীর গলিত স্তুপ থেকে যার উত্থান।

এখন কবিরাও করছে েেশ্লাাগানের কাছে আতœবিসর্জন
হয়েছে সে রাজনীতিকের স্তাবক
কিংবা প্রতাপাদিত্বের বেতনভূক সভাকবি
স্তুতি গান লিখে করছে কেউ আতœনিস্পেষণ।

জনতার চেয়ে নিম্নমান যার স্তর
শৃগালের মত ধূর্ত আর সিংহের জান্তবতা
কুয়াশাময় এই প্রদোষে সে-ই হয়েছে নেতা
জনতা যার আজীবনই পর।

একজন প্রফেট

ওরা ভেবেছিল এ্যরিস্তোতলের অনিবার্য ক্রীতদাস আমি
তাই ওরা আমাকে মেষ-শাবকের সাথে
মরুভূমির দূর্গম প্রান্তে পাঠালো।
জান্তবতার হোলিখেলায় রক্তাক্ত করলো ওরা
একবার আমাকে।
ওরা আমাকে যা ভেবেছিলো ওরকম দাস ও শ্রমিকের
বুকের আগুন ওরা কখনো দেখেনি ;
ওরা কখনো দেখেনি আমার চোখের দ্রুতি আর
নির্জন ধ্যানের অভিজ্ঞতা রাশি।
ফিরে আসবো বলেছিলাম,
তাই ওরা আমার পথ চেয়ে বসে আছে;
আমি বার বার ফিরে আসি আর ওরা আমাকে
হত্যা করে ফ্যালে।

তেজারতির নাও

তেজারতির নাও এক ভাসমান হৃদয় দরিয়ায়
অনাদিকাল থেকে লেন আর দেনের ব্যবসায়
ভূখারা নিপাত যাক,বিত্ত আসুক চোখের ইশারায়
হৃদয়ের কারবার দিয়ে অনাহারে কে চোখ বাসায়।

বিত্ত আসে সংসারে গৃহিনীও সোনারুপায় মোড়া
শয়ানে আশরুপি আপ বুকে রমনীর পয়োদর
সিন্দুকে লুকানো থাকে হিরে আর জহরতের তোড়া
চিরস্থায়ী সুখে ভাসি,দরিদ্র এক তুচ্ছ নশ্বর।

আত্মীয়রা পর হয়, অর্থবিত্ত সুখ মহাপ্রভূ
ধর্ম আর ধ্যানে বসে মন করে উঁচাটন তবু,
চিত্ত অস্থির হয়ে খোঁজে মনি-রতেœর পাহাড়
অশান্ত আকরে পড়ে ছটফটায় আত্মাখানি তার

রক্তে খেলে নেশা তেজারতির অশুভ কারবার
শয়তানের হাত ধরে জন্ম হয় যার বার বার।

দেহজীবী অথবা আগুনবাজ

মফঃস্বল শহরের কোন ভদ্রমহিলা উৎপাদন কেন্দ্রে
তালিম নিচ্ছ তুমি ভবিষ্যত খ্যাতি আর বিত্তবৈভবের,
শিকার খুঁজে বেড়াচ্ছো তামাম শহরে
দেহকে করেছ অস্ত্র, ছলাকলা-নখরামি
এইসব গোলাবার সজ্জিত তুমি-আগুরবাজ !
দামী প্রসাধনীর প্রলেপ পড়ে গেছে তোমার আতœাায়।

আগুনবাজ ; চেয়ে দেখ একজন দেহপসারিনী
কতটা রক্তক্ষতে নিজ দেহে টেনে নেয় সভ্যতার পাপ
তবু তারা ক্ষুধার্ত অসাড় দেহে পড়ে থাকে
পরিত্যাক্ত আস্তাবলের পাশে
আর তুমি এদেরই শ্রমচুরি করে আজ
সাজাচ্ছো প্রাসাদ।
কে তবে দেহজীবী - সমাজ কি দেবে তার উত্তর ?
উত্তর নিশ্চিত পাবে পড় যদি আগামী দিনের ইশতেহার।


একজন প্রান্তিক মানুষের আতœজিজ্ঞাসা

নদীর সীমান্তে দেখি কুয়াশার কুটনীতি
নারীর শরীরে আছে অদৃশ্য এক চুম্বকবলয়
মাছেদের কানকো আর জোনাকীর জৈবপ্রভা
পাখির শরীরে আছে স্মৃতিগন্ধী পাখা
সাপের সোনালী ফণা গাছেদের ধ্যানমগ্নতা
আমার ভেতরে আছে কি?

সভ্যতার বিষনিঃশ্বাসে এত জটিল জীবিকা
নাকি স্বপ্নবীজ নিয়ে কোন নতুন বেসাতি।

গরীবেরচর

প্রমত্তা পদ্মা নদী সঙ্গমের বাঁকে এসে প্রসর করে গরীবের চর
গরীবের চরের মানুষগুলো একটুও অহংকারী নয়
খুব সহজ তাদের প্রকৃত পরিচয়;
পর্ণোকুঠির আর জীর্ণশীর্ণ দেহে প্রচন্ড ক্ষুধা,
তবু তারা শীর্ণ দেহ জাগিয়ে রাখার জন্য
প্রতিবেশিদের সাথে মজে তুমুল আড্ডায়।

রাজনীতি ওলট পালট হলে ধাক্কা খায় মানুষের বিবেচনা বোধ
তাতে কেউ লালে লাল হয়ে যায়
কেউবা ক্ষোভে-হতাশায় দেশ গরম করে।
এ নিয়ে গরীবের চরের মানুষেরা লাভ-ক্ষতির অঙ্ক করে না
তবু এর বিপত্তি এসে পড়ে ওদের ঘাড়ে
ফাঁদে পড়া জীবের মতন রাজনীতি ওদের আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যায়;
বন্যা আর ভাঙ্গনপ্রবণ তটে সমুদ্রের মাতাল পুত্র পবন
বার বার হানা দেয় ওদের ডেরায়।


শহীদের স্বজনেরা

দূর আকাশে যেন এক ঝাক পাখি উড়ে যায়
শাঁ শাঁ শব্দ শুনি কানে
এমনই বিরান দেশ, পাখিরা তো গেছে গিয়া
পাখির আড়াল নিয়া এখন শকুন আসে
কদাকার পা আর তীব্র চঞ্চু দিয়ে খাবে স্বদেশের লাশ
মানেনা পরানে।

খোলা মাঠে শুনি যেন কোকিলা কন্যায় গায় গান
গান না শোকের বিলাপ দূর থেকে বুঝতে পারিনা
মাঝে মাঝে ইন্দ্রিয়রা করোটীতে করে প্রতারণা ;
তার শাড়ির জমিন...
লেছড়াগঞ্জের পোড়াপাটা খাল
লোনা চোখে জল নাই এমনি আকাল
শকুনেরা খায় তার খসমের স্বপ্নের লাশ
যে বিধবা অন্ধকারে করে শুধু স্মৃতির তালাশ।

হৃদয়ে মুদ্রার কালো ছাপ

হৃদয় দিয়ে হৃদয়ের বাড়াবো মাহিমা
করবো এবার হৃদয়ের চাষ
বাস্তবতা! সে তো অন্ধকারের কাঁক
পরাণমাঝির হবে সর্বনাশ।
সুতরাং,হৃদয়ের উপরে দাও রঙ্গের আস্তরণ
হোক কামকদর্য়ময়, তাকে করে তোল পণ্য
কর তার মহিমাকীর্তন
অন্তত: খোলাবাজার অর্থনীতির জন্য।

আনন্দের সাথে যদি কল্যানের চির সখ্য
আনন্দে উদ্বেল হোক, কল্যানময় হোক বিশ্ব।
এখন সময়! সে তো শঁকুনের শাবক
আনন্দকে করেছে তার শিষ্য
এবং করেছে তাকে আফিমের অলসতা
ইন্দ্রিয় পরায়ন- হীনমন্য
অন্তত: তৃতীয় বিশ্বের জন্য।

সুন্দর যদি সত্যের সহোদর
পবিত্রতম হোক মর্ত্য
সংসার! সে তো যুবকের পুতুল খেলা
খেলাপ্রিয় সেই শিশুর অকাল মৃত্যু
অতএব, সুন্দরকে কর সত্যের প্রতিদ্বন্ডি
আদিরসাতœক নিলাজ পদলেহী
স্যাঁত-স্যাঁতে কাদকার আর ঘৃণ্য
অন্তত: আফ্রো-এশিয়ার জন্য।

স্বপ্ন যদি জীবন পথের ষষ্টি
মর্তলোকে দেবতায় টানা রথ
ভালোবাসা! সে তো বিপণনসামগ্রী
পায়ের তলায় চোরাবালির পথ।
অতপর: বালিকা দেখুক স্বপ্ন দোলনায় শুয়ে
লক্ষ্য টাকায় নিজেকে বিকোবার
বালক হয়ে উঠুক মনোলোকের স্বৈরাচার
আর চুড়ান্ত শাসকের পদলেহী তাবেদার।
হোক তা যতই জঘণ্য
অন্তত: দানব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য।

আরন্যক রাখাল
( নোয়াখালীর অকাল প্রয়াত সাংস্কৃতিজন মঞ্জুর হাছান লিটন)
এ শহরের তপ্ত কংকীটে তুমি হয়ে এলে
এক ফোঁটা জল, আরন্যক রাখাল
আমাদের বৈশাখী মেলায়
গভীর রাত্রি অবধি জেগে
দেয়ালে দেয়ালে আঁকা শ্লোাগানে
স্বহস্তে পোষ্টার লেখা ভালোবাসার
বর্ণিল আলপনায় স্বদেশী ইমেজ
তারপর ক্লান্ত শিশুর মত ঢলে পড়া গভীর নিন্দ্রায়
তখনও তোমার বিশাল হৃদয় জুড়ে
জেগে ছিলো হিরন্ময় ভালোবাসা।

আহা! এখন আমাদের পরিবৃত করে আছে
বিকলাঙ্গ রাজনীতি মেরুদ্বন্ডহীন কারুকলাবিদ
কে আর তোমার মত উপড়ে ফেলতে চাইবে
স্থবিরতার করাল পাথর ;
হায়, কেন তুমি চলে গেলে অসময়ে কোন অভিমানে?
চলে গেছো আজো মনে হয়
তোমার হৃদয় জুড়ে হিরন্ময় ভালোবাসা আজো জেগে আছে।


একটি সাধারণ গল্প

টাকা হলো পরজীবির মত
মানুষের হাতবদল হতে হতে বেঁচে ওঠে
প্রাণশক্তি জাগে আর উহাদের পাখা গজায়।

গ্রামের টাকাগুলো উড়ে উড়ে শহরে চলে যায়
শহুরে জীবন গতিময় হয়ে উঠে, হাতগুলো শক্তিশালী হয়।
তবে টাকারাও রোগ-শোকের উদ্ধে নয়।

একবার টাকাদের ফ্লু হলো,
টাকা উড়ে না।
একজন আইনজীবি বলেন,আমি উড়ন্ত টাকা ধরা বেশ উপবোগ করি।
একজন সাংবাদিক বলেন,টাকা ওড়া দেখে দেখে
আমি প্রতিদিন সময় কাটাই।
টাকাদরে শুশ্রুষার আসল মজেজা জানেন রাজাগণ:
সমর রাজা,নগর রাজা, বণিক রাজা;
তারা টাকাগুলোকে বালিশে-তোষকে শুইরে রাখেন আর
মহাপ্রভূদের কৃপা কামনা করেন একটি শক্তিশালী ভ্যাকসিন বানিয়ে দেয়ার জন্য।

মাইজদী

একবার আমার শহর দেখার সাধ হয়েছিল
তিনক্রোশ পথ পায়ে হ্ঁেটে গিয়ে দেখলাম
সিনেমা বাইস্কুপ,
সেই প্রথম বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমার দেখা হলো
বয়স্ক প্রমোদ বালার মতন শহর;
আমি তাকে ভালোবেসেছি ; কেননা সে আমাকে
দুষ্ট ছোট্ট ক্রীড়নকের মত বুকে তুলি নিয়েছিলো
অজস্র আদরে।
জানি এই শহরের ও গভীর দুঃখ আছে ,
কয়েকবার সে মরতে মরতে বেঁচে গেলো
তিনবার নদী সিকিস্তিতে সে হয়ে গেল
উচ্ছন্ন ভিটে ছাড়া
বয়সী বট, কাচারীঘর নদী-গর্ভে চলে গেল
এইসব পরিজন আতœীয়-স্বজন।
যৌবনের কোন এক শুভক্ষনে সে তার
সুধা ও সুষমাভান্ডার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল
বুদ্ধদেব বসু আর গোপাল হালদারদের জন্যে।
আমি এখনো পায়ের শব্দে জেগে ওঠি
মাঝরাতে শহরের প্রধান সড়ক ধরে হেঁটে যান
শৈলেস বাবু ,মুজাফ্ফর, মোফাজ্জল হায়দার
তখন বাতাসে ছিলো বেগ, সমুদ্রের মাতাল গর্জন।
অথচ এখন সন্ধ্যে হলে নেমে আসে আশ্চার্যরকম স্তব্ধতা !
আমি এই শহরটিকে কবিত্বের বসে
মাথায় নিয়ে নাচি না;
আমি তাকে ভালোবাসি
সে এক প্রান্থশালার প্রসন্ন সুন্দরী।

ঈশ্বর ও একটি জৈবসত্তা

ঈশ্বর ঃ মর্তলোকে আজ প্রার্থনার দৈন্যদশা কেন?
জৈবসত্তা ঃ হে মহাশক্তিধর, হে ঈশ্বর,
প্রার্থনার অর্থ যদি হয় কল্যাণ-কামনা,
তবে প্রার্থনা করা হয় চিরায়ত প্রতিনিয়ত,
সমগ্র জীবের কল্যাণ কামনার।
ঈশ্বর ঃ আমি কি চাইনি নিঃস্বার্থ প্রার্থনা- কেবলি আমার , তবে কে এই প্রার্থনার অংশীদার ?
জৈবসত্তা ঃ এ প্রার্থনা জীবন-জীবিকার।
ঈশ্বর ঃ আমি অংশীদারহীন বলে সেই কবে ধর্মগ্রন্থে বাণী পাঠিয়েছি, তবে প্রাণীকুলে কোন হিন্মতে আজ
ধর্মহীন আচরণ।
জৈবসত্তা ঃ আপনার দেয়া ধর্মগ্রন্থ আশ্রয করেছে শয়তান,এ জীবের এমন কসুর কি
দেখেছি তো জন্মাবধি বিরুদ্ধ প্রকৃতি;
ঈশ্বর ঃ মৃত্যু জয় করে তারা কি হয়েছে চিরন্তন,
তবে মৃত্যুদূত কি বিভ্রান্ত শয়তানের হাতে?
জৈবসত্তা ঃ মৃত্যুঞ্জয় মানে নির্ধারিত মৃত্যুর আগে
আতেœাৎসর্গ বলে মর্তবাসিরা জানে
স¤প্রতি শয়তান ও তার সহোদরগণ
দেখাচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট ধর্মাচারণ।
ঈশ্বর ঃ শয়তান একদা পূর্ণবান ছিলো
তবে কি সে আমার বশ্যতা স্বীকার করেছে পূনঃর্বার?
মর্তের সকল বিদ্রোহের হবে অবসান।
জৈবসত্তা ঃ তারপরও অবশিষ্ট থাকে এক
বিকাশমান আতœসত্তা- আশ্চার্য অহম।
যা সৃষ্টির চেয়ে শক্তিধর
মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর।
ঈশ্বর ঃ আমি তামাম মর্ত্যে ঝড় তুলে দিতে পারি লহমায়
আঙ্গুলি হেলানে।
জৈবসত্তা ঃ অহম একটি গাছের শিকড়ে লুকিয়ে থাকবে।
ঈশ্বর ঃ আমি সূর্যকে মৃত্তিকার বার হাত উপরেও নিয়ে আসতে পারি।
জৈবসত্তা ঃ পাহাড় খসে পড়বে,যাবতীয় ধাতব পদার্থ গলিত লাভা হয়ে যাবে ,ঘর- দোর, গাছ- গাছালী জ্বলে কাঠ কয়লা হয়ে যাবে।
তারপর অসংখ্য পাহাড় খসা পাথর থেকে,
কয়লা কনিকা থেকে অজস্র অহম ঘোষনা দেবে ”আমিই ঈশ্বর”।
এ অহমের সৃষ্টি দাতা কে
এমন জটীল সমস্যার আবর্তে ঈশ্বর তন্দ্রা অনুভব করলেন
এবং গভীর নিন্দ্রামগ্ন থাকলেন।

ভগ্ন অভিযাত্রী

সদ্যযৌবনের উদ্দীপ্ত বীজমন্ত্রে
একদা আপনি বলেছিলেন,
তুমি সন্মুখে এগিয়ে যাও
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মূখশ্রী নিয়ে
তোমার জন্য অপেক্ষা করছে অচুম্বিত অধরা ।

তমি এগিয়ে যাও
হয়তো হবে ট্রাজেডিতে তোমার বিনাশ
এতো পরাজয় নয়
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী হীরক খন্ডটি
তোমার এপিটাপে শোভা পাবে
সেখানে পাহারায় থাকবে দিনে রাতে
সত্যদের সত্যদের সমস্ত দেবতা ।

তমি এগিয়ে যাও সন্মুখে
দারিদ্র ও ক্ষুধার জারক রস
তোমার রক্তে চালাবে তুমুল সংশোধনী
এ রক্ত তোমার উত্তরপুরুষের শিরায় শিরায়
বইবে অজস্রবছর
মৃত্যু তোমাকে আর স্পর্শ করতে পারবেনা
তুমি এগিয়ে যাও সভ্যতার অভিযাত্রী।

আজ আমি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পথে যেতে যেতে আপনাকে খুঁজি
অমরত্বের প্রত্যাশাগুলো ফিরিয়ে দেবার জন্যে,
অথচ আপনি চলার পথ বদল করতে করতে
পৌঁছে গেছেন ক্ষমতার অলৌকিকতায়!

ডুবুরী

তোমাকে ভালোবেসে দেখলাম তুমি কাছে নাই
নাকি কাছে থাকলে ভালোবাসা যায় না
অথবা ভালোবাসলে কাছে থাকা যায় না
তাই, আমার সমুদ্রের তলে ডুব দিয়ে যাই।

সমুদ্র কিংবা বিমান বন্দরে

সমুদ্র কিংবা বিমান বন্দরে
যে কেউ দাঁড়ালেই হয়ে যায়
আন্তর্জাতিক মানুষ
আমি আন্তর্জাতিক মানুষটির মুখে
খুঁজতে থাকি প্রতিশ্রƒতির ছাপ
আমি খুঁজতে থাকি
প্র-তি-শ্রƒ-তি-র ছা-প
বিমান কিংবা সমুদ্র বন্দরে।

তাইতো তোমাকে আমি মুদ্রায় সাজাই

ভালোবাসি ভালোবাসি এক’শ বছর ,যাচ্ছে তাই
আসলে তোমাকে আমি মুদ্রায় সাজাই
নির্জনে সংগোপনে তোমার অধরে রাখি ঠোঁট
পকেট থেকে ঝাপটা মারে হাজার টাকার নোট।
বিনিময়ে কতটুকু পাই ?
তবু তোমাকে আমি মুদ্রায় সাজাই।

হৃদয়ের চোখ

হৃদয় সুন্দর হলে ভেতরে তার
ফ^ুটে ওঠে একজোড়া চোখ
মায়াবী-গভীর-সুন্দর।
সুন্দরীর রূপ দেখে মাথার ভিতরে এতো
আনন্দযন্ত্রনা জাগে, তবু তার চোখে প্রতিশ্রƒতি নেই,
এইসব ভালোলাগা প্রতিশ্রƒতিহীন!
সুন্দরী সর্বনাশের হাত ধরে যায় চলে যায়
দেখে দেখে একজোড়া হৃদয়ের চোখ
সর্বস্ব হারায় ।


আজন্ম অচেনা

তুমি সেখানে আমার প্রতীক্ষায়
আমি এখানে তোমার কামনায়
আমরা পরম্পর অজস্র বছর ধরে অপেক্ষা করছি
আমাদের দেখা হয় না।
এভাবে আমাদের অজস্র জন্ম চলে যায়
ভূল অদেখায় অথবা অদেখার ভূলে
আমাদের দেখা হয়না,
আসলে আমরা দুই আজন্ম অচেনা ।

আহত স্বজন

দ্যাশের গহীন থেকে ডানা ঝাপটায় এক পাখি
মানুষ দ্যাখেনা তারে, মানুষেরে করে ডাকা-ডাকি,
দ্যাখো দ্যাখে দুপুরের রোদে পুড়ে এক বালি হাঁস
ডানা ভাঙ্গা, পড়ে আছে কিসে হয় তার সর্বনাশ।
মানুষও এমন হয়ে পড়ে থাকে এই দেশে
শরীল বিকল ,বুকভাঙ্গা কাশি বয়সের শেষে
বাত-পীত নানান অসুখ ; ঘরে খোরাকী থাকেনা
বিদেশী পাখির মতো তার দেশ জগৎ অচেনা
হয় তখন ; অথচ স্বজন তার আছে এ দেশে
খুবই নিভৃতে আছে দো-আঁশ মাটির কোল ঘেঁষে
অথবা স্বজন আছে মাঝখানে দেয়াল জালের
ঘাটে ও পাথারে আছে ব্যবধান শুধুই কালের
না’ই বা নিলো খবর , স্বজন কি হয়ে যায় পর ?
আজন্ম জেগে থাকে ভেঙ্গে থাকা বুকের ভেতর।

অরণ্যতে একদিন

অতঃপর এই অরণ্যানীতে
কোনদিন হয়তো র্ফিরে আসবো না আর;
এখানে নিঝুম পাহাড় , একাকি ঝরনা
চুপচাপ বনমোরগ , মৃদ শব্দে চলে যাওয়া
ব্যস্ত কাঠবিড়ালী
প্রকৃতির সবুজ ফাঁদে হয়তো আর ধরা দেবনা ।
বন্ধু ,
প্রকৃতির ও নারীর রহস্যের বিস্তার
খুঁজে ফিরবো না আর
মানুষ আসলে একা , সরব ও নীরব একা ;
রহস্য অপার ।

নি:সঙ্গ মাঝি

দক্ষিনের দরিয়ায় কোষা নিয়ে ভেসে যায় কেউ
উথাল-পাথাল করে বাস্তুহীন আমার পরাণ
কোষাটাকে গিলে খায় আবার উগলে দেয় ঢেউ
বেসুমার দরিয়ায় ভেসে যায় খড়ের লাহান।

পড়ন্ত বেলায় মাঝি ভেসে যায় কোন অভিমানে
নাকি পরানের নারী ব্যাথা দিল, না দিল দরদ
অথবা গাঙের নেশা ভেতরে মোচড় দিয়ে টানে
কিংবা জলের তোড়ে ভেসে গেল হালের বলদ?

মায়াবী নারীর সুখ সংসারী টান যত থাক
সোনালী বন্ধনে থাকি মায়ার খাঁচায় থাকি যত
অতল সুরের ডাকে পুড়ে পুড়ে আমি হই খাঁক
গভীরে পরাণ পাখি ডেকে যায় ,ডাকে অবিরত।

মানুষ এমন তবে অসীমের পিছু ছুটে প্রাণ
তবে কি মানুষ একা নিঃসঙ্গ মাঝির লাহান ?

ঋতু বন্দনা

শরতের শেষে ঝরে অন্ধকারে একাকী কুয়াশা
পথ-ঘাট শুকাইয়া শুকায় ফসলী জমি, জ্বলা
নদী শুকায়, তিমির পিঠের মত দেখা যায় তলা
গৃহস্থেরা আবার নির্মান ঘর-দোর-বাসা।

আবার বিজন মাঠে জমে ওঠে শিবগঞ্জে মেলা
যুবতী কন্যাও আসে, নববধু মেলায় যায় না
স্বামীরে ইঙ্গিতে করে রঙ্গিন চুলের কাঁটা, চুঁড়ির বায়না
মানুষ বেকুব হয়ে দেখে যায় বাজিকরী খেলা।

শীতের প্রকোপ বাড়ে গাছে বাড়ে খেজুরের রস
উঠতি যুবক ভাবে পার হয় বিয়ার মৌসুম
নব বধূয়ার বুকে মাথা রেখে দেয় কালঘুম
গাঙ কি কখনও মানে গৃহস্থ-সংসারীর বস্।

আবার বর্ষা আসে, জোয়ারেরও আসে তীব্র জ্বর
ঘূর্ণিদিয়া নদী ভাঙ্গে গৃহস্থের সাধে-গড়া ঘর।



মহাজাগতিক

মাঝে মাঝে গগনের চাঁদ দেখি পূর্ণিমায়
আতœার ভিতরে ঢোকে অপার্থিব হলুদ জ্যোছনা
কারো দরোজায় টোকা মারে ছুরি-হাতে হঠাৎ সীমার
আর সেই সব মানুষেরা মহাজাগতিক ধূলিকণা...
দুই.
কখনও বা পৌষের মাঠে শুকনো খড়ের গায়ে চিৎ হয়ে শুয়ে
তীর্যক রোদ আর আকাশের চিল দেখে
জীবনান্দের ঘোর কাতরতায়
কলার ভিতরে কোষ সরিশৃপ শীত নিদ্রা চায়
আর তাদের স্পপ্নের ভেতরে
নিখিলের পরমায়ু পাখির পালক .....
তিন.
বৃক্ষদের ডাল পালাায় সুখ-দুখের কাব্য বোঝে
কিছু কিছু পাখি , আর বৃক্ষদের জীবন দেখে
কেউ কেউ আক্ষেপে হুতাশে কাঁদে
পরজন্মে বৃক্ষহতে শুনিনাই কাউকেও,
বৃক্ষরাও চাঁদ, মাঠ, পাখি, মানুষ তাই
এই সব পেলব মেঘের এক ¯্রােতে ভেসে যায়।

অনাগত সন্তানকে
আমার অনাগত সন্তানের কানে মুখ রেখে বলি
তুমি কি সহসা পৃথিবীতে আসতে চাও বাছা ?
ও আমার মূখের দিকে নিস্ফলক তাকিয়ে থাকে
যতক্ষণ না আমি বিব্রতবোধ করি ;

আমার অবয়ব থেকে বুঝে নিতে চায় পথিবীর বাস্তবতা, বিবমিষা
বিরক্তি-হতাশা।
তারপর বলে ঃ উন্মত্ত তোমরা এখন পৃথিবীতে ধ্বংশযজ্ঞ
নারকীয়তায়,
যুদ্ধের ধ্বংশস্তুপ থেকে জন্মনেয়া লক্ষ শিশু
ক্ষয়ে ক্ষয়ে অকালে ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে,
এমন জ্বরাগ্রস্ত তোমাদের সভ্য পৃথিবী ।
আর যারা টিকে আছে ফুটপাতে বস্তিতে
তারাও তো ক্ষুধার্ত অভিশপ্ত শিশু
তবে কেন আগামী বংশধ্বরের জন্য কর নতুন আয়োজন।
যদিও জানি, মানব জন্মে হবে আমার পুর্ণতা
তবু আমি পৃথিবীতে আপাততঃ আসছিনা।
আমাকে ঘুমোতে দাও
তুমি নরকে যাও !

সিদ্ধার্থ

মানুষকে ছেড়ে আমি আর কোন ঈশ্বর দেখিনি
আর তাই আমি বোধিবৃক্ষের তলে নির্বাসন নিলাম
পেছনে ফেলে আসি ঝাড়বাতি রাজ-অভিষেক
সম্মুখে বৃক্ষরাজি সুশৃংখল ধ্যানী শান্ত স্থির
তাই আমি ফলবতি বৃক্ষ হতে চেয়েছিলাম
দীর্ঘ তপস্যায় নির্বান লাভের পর জেনে যাই
জগতের দুংখ আছে ; দুঃখ মোছনের উপায় আছে
সত্তার ভেতরে; তবুও মানুষ দুঃখের অমোঘ চক্রের দিকে
কেবলি এগিয়ে যায়।
অতপর মহাসত্তার সন্ধানে আমি বিশ্ব পরিব্রজক হলাম
অজস্র ছায়াপথ আর নক্ষত্র মন্ডলী ছেড়ে গিয়ে দেখি
সশ্রুমন্ডিত এক উজ্জ্বল অবয়ব পদ্মাসনে বসেছেন নির্বানি ভঙ্গিতে,
সন্তঃর্পনে করজোড়ে আমি তাকে প্রণতি জানাতে এগিয়ে যাই ;
আর এগিয়ে যেতেই সহসা ধ্যাণ ভেঙ্গে
আমাকেই তিনি শুধালেন,‘আচ্ছা আপনি কি ঈশ্বরকে দেখেছন?
মানুষকে ছাড়া আমি আর কোন ঈশ্বর দেখিনি।

পাতা কুড়ানীর শিশু

এখনও সূর্যের আলো ফুটেনি তবুও ভোর
ফুটপাতে কাগজ কুড়ানো এক জোড়া কিশোর
এই প্রদোষের প্রেতের সঙ্গে লড়তে গিয়ে
দিয়েছে তারা সূর্য দেবের ঘুম ভাঙ্গিয়ে
হাতে হাত রেখে করেছে চলার মেল-বন্ধন
তাদের জন্য শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন ।

দিগন্ত ছুঁয়ে গাছের তলায় রাখাল বালক
অগোচরে যেন খঁসে পড়া এক পাখির পালক
ছায়াতে বসে হয়েছে ভাবুক হয়েছে সন্ত
প্রকৃতি দিয়েছে গোপন কোন মহামন্ত্র
গবাদিগুলোর তোমার কাছে অনেক ঋণ
তোমার জন্য আসুক একটা নতুন দিন ।

পাতা কুড়ানো ফ্রকপরা ওই ছোট্ট মেয়ে
হরিনী চোখে ইস্কুল ঘরটি দেখছে চেয়ে
বই খাতা হাতে ইস্কুল পড়–য়ারা লাজুক হেসে
অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানিয়েছে ভালোবেসে
শুভেচ্ছা জানিয়ে কমিয়েছে তারা কিছুটা ঋণ
সবার জন্য আসুক একটা নতুন দিন ।

মঙ্গা
আহারে দারুন খরা লাগিছে ধানেরক্ষেতে
শুকাইয়া গেছে কালি-গঙ্গা
কোনঠে যাবো সকলে
চারদিকে লাগিছে যে মঙ্গা।
আহারে পানির তোড়ে ফসলাদি ভেসে গেছে
ফোসলাইয়া ছোবল মারে গঙ্গা
কোনঠে যাবো সকলে
চারদিকে লাগিছে যে মঙ্গা।

যে মুদ্রায় ভালোবাসা হতেছে আলাদা

দশ টাকার কড়-কড়ে নোটের মত রূপ তোমার
সিকির মতন ঝিঁকিমিকি চোখ
আধুলির আদলে গড়া অধর-চিবুক
আইএমএফের মত হৃদয় প্রশস্ত
্আমাদের ভালোবাসা দীর্ঘজিবি হোক!

সৃষ্টির আহ্বান
(হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার বাঁশি শুনে শুনে)

এসো, তোমাকে আকুল আহ্বান করছি
তুমিও দেবে সাড়া জানি,
শর্তহীন শর্ত হয়েছিল কবে সবকিছু সৃষ্টির আগে
তোমার আমার কথা হয়েছিল কোন আদি রাগে
তুমি আসবে জানি , তবুও শংকা জাগে মনে
আমি আমার অস্তিত্বে ভেতর টের পাচ্ছি তোমার আগমন ধ্বণি
তবুও তোমার জন্য এতোটা উতলা আমি
তুমি যেন পাথরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত সময় !

তুমি যখন এলে, প্রেম আমার, অস্তিত্ব আমার,
একি দেখি অবাক নয়নে,
পাথরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হবার দাগ-চিহ্ন লেগে আছে
তোমার শরীরে, চিড়ে চ্যাপ্ট হয়ে আছে হৃদয় তোমার,
তোমার শরীর এতো স্থূল আর প্রচন্ড জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে তোমার গা।
আমি শোকাহত বৃক্ষের মতো বিস্ময়ে বিমূঢ়
চারিদিকে হিস হিস নৈঃসঙ্গতা, এ যেন দুর্দান্ত পাথর আর কৃষ্ণবিবর কিংবা প্রতিহিংসার তীব্র আর্তনাদ,
এতঃপর আমরা পরম্পরকে নির্মান করে চলি
এসো আনন্দ করি, এসো আনন্দ করি
সৃষ্টির উল্লাসে মেতে উঠি।

নদীবাস্তবতার গাঁথা

ডুবছে সবুজ ক্ষেত পশু-শিশু
আরণ্যক মানুষের আবাসিক ভূমি
নদী-মানুষের দুর্বিপাকে;
এ নদী নাকি এদেশের শিরা-উপশিরা
আদ্র্য মৌসুমীবায়ু বাঁকাঘোলা জল
এই সব নাকি হিমালয়ের রক্ত-মাংশ-পুঁজ।
এই খানে আরণ্যক মানুষেরা আবদ্ধ কীট
মাঝে মাঝে এক বাও মেলে না, দুই বাও মেলে না
বলে যাচ্ছে ঠাঁরে, জলজ সংকটে।
নদী-বাস্তবতার গাঁথা এই সব
হিমালয়ের রক্ত-মাংস-পুঁজ খায় আরণ্যক কীট।

উন্নয়ন শ্রমিকের মনের কথা

চুলের মাঝখানে সিঁথিকেটে আমাদের মামুন ভাই ঃ কৈশোরের কাজী নজরুল, যদিও কবি হবার সুযোগ হয়ে উঠেনি তার; কারন সমিতির সাপ্তাহিক ঋণের কিস্তি ওঠাতে গেলে কবি হবার ভাব নষ্ট হয়ে যায়, সদস্যদের অভিযোগে অজুহাতে বার বার মুড ভেঙ্গে চুরে একাকার। তবুও রাতে ঘরে ফিরে সে অন্যদের মতো ফুর্তিতে থাকার চেষ্টা করে ; পকেটে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সারা দিন আমরা যখন গ্রামীন উন্নয়নের চাপে চোখে অন্ধকার দেখি, তখন রাত্রিটা আমাদের কাছে আলোকিত হয়ে ওঠে, সামনে পড়ে আছে দীর্ঘরাত সে প্রত্যাশায় আমাদের মামুন ভাই, হাসানের মেয়েলি সুরের গান নেচে নেচে গায়, প্যান্টোমাইম করে ব্যান্ডের গীটার বাজায়, আর লুঙ্গির সাথে ম্যচ করে ফ্যান-সু পরে হাটে কিম্ভুত ভঙ্গিমায়। আমরা তখন গ্রামীন মানুষের অজ্ঞতা অথবা নিজেদের নিয়ে গীবৎ করার কথা ভূলে গিয়ে উল্লাসে তালিয়া বাজাই



আমার সম্বল শুধু আকাশ প্রেমিকা আর মানুষকে ভালোবাসার কবিতার স্মৃতি

ছোট বেলায় স্কুলে যেতে যেতে
একবার শিউলীর প্রেমে পড়েছিলাম।
বন্ধুরা বলল, এত কম বয়সে প্রেম করা শুভ নয় ;
আমি বললাম তথাস্তু।
সেই থেকে শিউলীকে আমি আর কোথাও দেখিনা।
কৈশোরে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতাম,
কতটা ছড়িয়ে আছে আকাশের ওপরে আকাশ;
বন্ধুরা বলল, অতো ভাবুক হওয়া ভালো নয় ;
আমি বললাম তথাস্তু।
সেই থেকে আমি আর সুগভীর আকাশ দেখিনা।
যৌবনের শুরুতে আমি কবিতা লিখি, মফ:স্বল সংবাদ লিখি,
সাংস্কৃতিপ্রেমি হয়ে যাই।
শুভাকাঙ্খীরা বলল, ’এই সব করে পেটের অন্ন যোগানো যায় না।’
আমি বললাম তথাস্তু।
আমি কবিতা ছেড়ে দিই, যদিও কবিতা আমাকে ছাড়ে না।
যৌবনের দ্বিতীয় ভাগে আমি উন্ন্য়ন কর্মী,
দীনহীন মানুষদে মাঝে পড়ে থাকি
’কলম না অস্ত্র’ শিল্প না মানুষ এই সব ভেবে দিন কেটে যায়।
বন্ধুরা বলল, রিমোট গাও গেরামে পড়ে থাকলে হবে না,
তোমাকে আরো প্রফেশনাল আরো র্স্মাট হতে হবে।
আমি স্মার্ট হতে হতে দেখি আমার সম্মূখ-পিছনে শুধুই শুন্যতা,
এখন আমার সম্বল শুধু আকাশ প্রেমিকা আর মানুষকে ভালোবাসার
কবিতার স্মৃতি।।


উৎসবে
হাজার বছর ধরে এদেশের প্রস্ফুটিত প্রকৃতির ভেতর
তোমাদের জন্য মৃত্যুকূপ বানিয়েছে,বাঙলার কৃষক
তবু তোমরা মর নাই।
তারাতো বোঝেনি,তোমাদের মৃত্যু নাই
তোমাদের আত্মারা প্রবিদ্ধ হয়ে আছে ফসলের বীজের শেঁকড়ে,
অথবা তোমার বিশাল দেহ পড়ে আছে এই খানে উর্বর ভূমিতে।
আর তোমার হাঁড়-কংকাল থেকে তৈরী হলো রেল-গাড়ি
চর্যাপদ পান্ডুলিপির কাগজ, তোমার তন্তুতে জৈবনিবিড় মাটি
ফলাইতেছে নানান ফসল।
ঋতু ও পার্বনে তোমাদের আত্মারা সারি গান গেয়ে যায়
সাবঅলটার্ন জ্ঞাতিদের ভিড়ে
আশ্বিনী পূর্ণিমায় নাচো অসংখ্য মহাত্মাগান্ধির মতো উদোম গতরে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×