নেহেরু যে কারখানার মালিক হয়েছিলেন সেটা বলিউড বম্ব দিয়েছে, দক্ষ জনসম্পদের গর্ব দিয়েছে। আর জিন্নাহ রাতারাতি সাচ্চা মুসলমানের কস্টিউম পরে আরবের চেয়েও রক্ষণশীল যে অন্ধকার উতপাদন কারখানার মালিক হয়েছিলেন তা কাদির খান ও জিয়াউল হক উপহার দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু ৭১ সালে যে সবুজ কারখানা জিতে নিয়েছিলেন সেটি কিছু জিয়া এরশাদ জলপাই আর দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজ উপহার দিয়েছে।আর ৭১এর কোলাবরেটরদের জীন সঞ্জাত ইভ টিজাররা নারী নির্যাতনে দলে বলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
দশের মধ্যে নেহেরু ৮, জিন্নাহ ৪, মুজিব ৫ পেয়েছেন। নেহেরুর দুই নম্বর কাটা গ্যাছে কাশ্মীর ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘ সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করার জন্য। জিন্নাহর ছয় নম্বর কাটা গ্যাছে রাষ্ট্রে ইসলাম মিশানোর ডমিনো এফেক্টের তালিবানিস্তান বাস্তবায়নের সুফি রাজনীতিক হিসেবে মুসলমান দের জীবন দুর্বিষহ করার নিয়ামক হিসেবে কাজ করায়। আর বঙ্গবন্ধুর ৫ নম্বর কাটা গেছে অতিরিক্ত আবেগের কারণে। এই অতিরিক্ত আবেগের কারণে গান্ধী পরীক্ষার আগে জর বাধিয়েছেন। উনি এই ভাবে দুধভাত হয়ে না গেলে অখন্ড সেক্যুলার ভারত হতে পারতো।
রাজনীতির পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে গান্ধী দার্শনিক হিসেবে ওবামার এবং অতীতে মার্টিন লুথার কিং এর এবং দক্ষিণ এশিয়ার সেক্যুলার সমাজের সক্রেটিস হয়ে ওঠেন। ওবামা সামনে ইলেকশনে হেরে গান্ধীর মতো পোশাক পরে বেরুলে আর অবাক হবোনা। কারণ গান্ধীজি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন সভ্যতার যতটুকু উন্নতি হয়েছে তাতে এর চেয়ে বেশী পোশাক সভ্যতা ডিসার্ভ করেনা। বলিউডের নায়িকাদের পোশাক গান্ধীগিরি আজ পশ্চিমা দুনিয়াকে উথাল পাথাল করেছে, জার্মান রাজনীতিক ইয়শকা ফিশার থেকে ফরাসী উঠতি কবি আঁকিয়েরা আজকাল ভারতীদের প্যারিস আড্ডার কাস্টিং কাউচে ওদের ঘ্রোণই বা সোনাব্যাং হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। গোটা দুনিয়ায় বলিউড এক ভারতীয় রঙ্গের বসন্ত কায়েম করেছে,তাতে অর্থনীতির ব্যাকোয়ার্ড লিংকেজ আর জাতিসঙ্ঘের ফরোয়ার্ড লিংকেজ,সর্দারজীর মুদি দোকান, ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট আর গবেষক,পড়ুয়া গিক সবাই দৌড়াচ্ছে ভারতীয় ঐক্যের রিলে রেসে।। গান্ধী থিয়েটার থেকেই বলিউড গোলক যাত্রার শুরু। নেহেরু ইংরেজীটা শেখানোর,পড়ালেখাটা ফাঁকি না দিয়ে শেষ করার তারপর জার্মানীতে পাঠানোর বন্দোবস্ত করে দিলে গোটা গোলকে ভারতীয় মেধা সাম্রাজ্যের বিকাশ নিশ্চিত হয়ে যায়।
মওলানা আবুল কালাম আজাদ অখন্ড ভারত চেয়েছিলেন। কারণ উনি জানতেন যোগ্যতা থাকলে খান পাঠানরা বলিউড-ক্রিকেট দাপাবে। ভারতে যোগ্যতা থাকলে ধর্ম কোন বাধা নয়,কলকাতা দিল্লী মুম্বাই খুঁজে অনেক জাভেদ আকতার,শাবানা আজমী, মীরাক্কেল,সাইফ আলী খান বা নিজ নিজ পেশায় সফল মানুষ পাওয়া যাবে। আমার ধারণা রামেন্দু মজুমদার বাংলাদেশে যে বাধা পেয়েছেন জাভেদ আকতার ভারতে তা পাননি। ব্যক্তিগত ইন্টারভ্যু থেকে এই হাইপোথিসিস একটা সত্যতা পেয়েছে।সুতরাং মুসলমানদের জন্য নিরাপদ আবাসের যে আত্মকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত জিন্নাহ নিয়েছিলেন তা পাকিস্তানের প্রতিদিনের বোমাবাজির মাঝ দিয়ে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশ একটি স্থবির দেশ। আওয়ামী লীগ সেক্যুলার একটা পরিবেশ দিয়েছে। ব্যস ঐ টুকুই। তারপর দুর্বল ব্যবস্থাপনার ট্র্যাজিকমেডি। বঙ্গবন্ধু আর তাজউদ্দীনের পর জাতির অভিভাবক হবার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। জাতির পিতাকে মেরে মুশতাক-খালেদ-তাহেরের হাত ঘুরে জিয়ার হাতে ক্ষমতা এলো। বাংলাদেশ আবার জিন্নাহর বোমাকর্ষী পথে হাঁটতে শুরু করলো। তারপর এরশাদ মামুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেন। বাংলাদেশের চারদশকের অধোগতির জন্য মামুর আবেগ এবং মামুর টেলিফুন দায়ী।
আপাসরকারকে মামুরা চারপাশ থেকে বিভ্রান্ত করছে। ম্যাডামের চারপাশে কিছু বিএনপি ও জামাত মামু। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে মুক্তি পেতে রাজনীতির মামুদের বিদায় দিতে হবে।
বাংলাদেশের আজকের দুর্গতির জন্য পলিসি মেকার মামুরাই দায়ী। বাংলাদেশের সচিব থেকে শুরু করে চাপরাশী দুর্নীতি গ্রস্ত, কারণ মামুরা নথি পড়তে পারেন না। মন্ত্রীদের মনোযোগ গোল্ডফিসের মেমরীর মতো, আমি নিজে মন্ত্রীর সঙ্গে মাসছয়েক কাজ করেছি। রাজনীতিবিদ দের অনেক দুর্নাম আছে। আমি মনে করি অতিরিক্ত আবেগ আর মামুগিরি তাদের আজকের অজনপ্রিয়তার কারণ।
ভারত এবং বাংলাদেশের তরুণদের দক্ষতা ও পেশাদারী যোগ্যতা একি পর্যায়ের। কিন্তু ভারতের নীতিনির্ধারণী মহল বাংলাদেশের চেয়ে দক্ষ ও শিক্ষিত। অর্থাৎ ওদের রাজনীতিতে কয়েকজন তাজউদ্দীন আছেন। আমাদের রাজনীতিতে বার্ধক্য-ভ্রান্তি-জেনারেশন গ্যাপ।প্রতারণাময় সফল সমাজ সৃজনে ড কামাল হোসেন, তোফায়েল আহমেদ,রাশেদ খান মেনন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না,হাসানুল হক ইনু, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ড। মঈন খান যুক্ত হলেন আমার ভাবতে অবাক লাগে। এই লোকগুলো একটা করে এনজিও করলেও আরো কিছু নোবেল পুরষ্কার হয়তো আসতো। আজে বাজে লোকের সঙ্গে থেকে বেশ কিছু ভারতীয় রাজনীতিকদের সমকক্ষ নেতা আজ ওএসডি হয়েছেন।
আর ভালো নেতাদের বিপর্যয় শাওনদের তারুণ্যের প্রতীক করে তুলেছে। অন্যদিকে তারেক জিয়া।
ভারতের তরুণদের সমান যোগ্যতা নিয়ে ঢাকার আই টি শিক্ষিত তরুণেরা ফার্মভিল খেলছে। আর ভারতের তরুণেরা পশ্চিমের আস্থা অর্জন করেছে চন্দ্রনাথ নাইডুর দক্ষিণ ভারতীয় সিলিকন বিপ্লবের সূত্র ধরে। নেহেরুর রিলে রেসের কাঠিটা চন্দ্রনাথ নাইডু তথ্যবিপ্লবে কাজে লাগালেন। আর বঙ্গবন্ধু কৃষি বিপ্লবের কাঠিটা মতিয়া চৌধুরী কাজে লাগিয়ে বাম্পার ফলন করলেন। ব্যর্থ হয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মঈন খান । উনি বিএনপি করেন, কিন্তু ভারতের এপিজে আবুল কালামের পর্যায়ের বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে ওয়াজেদ মিয়ার মতো পরমাণু বিজ্ঞানীকেও কাজের সুযোগ দেয়নি কেউ।
আশার কথা আমাদের অর্থমন্ত্রী মুহিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন পর্যায়ের মেধাবী। এই সব রাজনীতিকের সাথে ব্যক্তিগত সাক্ষাতে এই ধরণের হাইপোথিসিস আপনার কাছে কিছু সত্যতা পাবে আমি নিশ্চিত।বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ কলকাতার মুখুমন্ত্রী বুদ্ধদেব পর্যায়ের ভালো নেতা । আমাদের সমস্যা জনপ্রশাসনে,বিশেষত সার্ভিস সেক্টরে।বিদ্যুত,পানি,গ্যাস,রাস্তাঘাট,যানবাহন,চিকিতসা এইসব জায়গায়। এসব দপ্তরে ভালো একজন ম্যানেজার নাই। থাকলে বিদ্যমান বাস্তবতায় কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের মতো কেউ এলজিইডি প্রকৌশলের লিগ্যাসীর কাঠিটা হাতে নিতেন। একজন নারী এসপি ভারতের কিরণ খেরের মতো ম্যাগস্যাসাই এওয়ার্ড জিততেন। একজন ভেজাল বিরোধী রোকনুদ্দোলা আমরা পেয়েছিলাম, মিডিয়ার গ্রাম্যতা আর জনপ্রশাসনের কড়াকড়িতে তাকে ডানা ছেটে বসিয়ে দিয়েছেন সংস্থাপন মন্ত্রকের মামুসব।
ভারতীয়রা কেউ কাউকে ব্লক করে না, হাতে হাত দিলে তোলে। চাকরীক্ষেত্রে নেট ওয়ার্ক শব্দটির জন্ম হয়েছে নোয়াখালী থেকে। কিন্তু সেটা বাংলাদেশের কাজে লাগেনি। আমাদের দেশের প্রতিটি অফিসে অনাবশ্যক ল্যাং মারামারীর মুরগী লড়াই বা অধুনা করপোরেট প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে ৮০ ভাগ এনার্জী চলে যায়, বাকি ২০ ভাগ ইলানভাইটাল দিয়ে আমরা টিকে আছি। ভারতে এটা কম। অল ইজ ওয়েল। সেকারণেই অনাবাসে ওরা একসাথে পুজো করে,দিওয়ালী করে,শাহরুখের ছবি দেখায়,যে যেখানে থাকে ভারতের মডেল তারকা হয়ে ঘোরাঘুরি করে।
সেইটা দেখে পাকিস্তানীদের চোখ টাটায়। বিদেশে ভালো ভালো চাকরী ভারতীয়রা জিতে নেয়। পাকিস্তানীরা এম আই টি তে পড়ে পশ্চিমা বোমা বিদ্যা নিয়ে তালেবান মামুদের ক্ষপ্পরে পড়ে যায়।
আর বাংলাদেশীরা ভারতের সাফল্য দেখে গম্ভীর হয়ে যায়। ভারতীয়দের বাচাল বলে,ভারতীয় মেয়েদের ঢঙ্গী বলে বিচিং করে ঢাকাগম্ভীর আপা।
বাঙ্গালী মিতভাষী লাজুক,কম কথা বলে,মন্দ্র মানুষ,বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা শিখবেনা জার্মান্ দের মতো। খুব ভালো।কিন্তু ইংরেজীটা না শিখলে অবস্থা আবার ওই বৃটিশ আমলের মতো। বড়জোর আলীগড় মুসলিম মুভমেন্টের পর ঢাকার ভাইবেরাদার মুভমেন্ট।
ওবামা এসে মনমোহনকে মামা বলে ডাকলেন। রবীন্দ্রনাথ জপলেন, বিবেকানন্দের মন্ত্র পড়লেন।গান্ধী মেমোরিয়ালের প্রাঙ্গণে মার্টিন লুথার কিং এর মানসে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের আগুণ নিয়ে কথা বললেন। যে গান্ধী কালো মানুষের পক্ষে লড়াই করেছেন, ওবামা তো সেই গান্ধী লিগ্যাসীর কালো হোয়াইট হাউজ।
ওবামা হাসু খালার বাসায় এলেন না। খালা গরীব হলে বড়লোক ভাগ্নেরা টেলিফোনেই সালামাদি সেরে নেয়। আর জারদারি মামু টেনপারসেন্ট, ঘুষখোর মামুর টেলিফোন ওবামা এড়িয়ে যাবেন, যে কেউ তাই করবে। মনমোহন কাকুর সঙ্গে আড্ডা দিলে অর্থনীতিটা শেখা যায়। গরীব অর্থনীতিক জানেন ওবামার গরীবী কমাতে কী করা দরকার। গরীবীর ডাক্তার ইউনুস আংকেল ওবামাকে সোশ্যাল বিজনেস করাবেন। কিন্তু ইউনুস আংকেলের সঙ্গে ওবামার এই সম্পর্ক বাংলাদেশ সঞ্জাত নয়, কারণ হাসু খালাতো রাগের মাথায় বলেই দিয়েছেন, ইউনুস চাচ্চু সুদ খোর। এরশাদ মামু খালার পক্ষে। আর খালেদা চাচী বাড়ি হারিয়ে গাছতলায়।উনাদের ক্যাচালটা না থাকলে ৩২ নম্বরে গিয়ে আরেক নেলসন ম্যান্ডেলাকে খুঁজে পেতেন। খালা-মামু-চাচী- চাচাদের কলতলা কালচারের কারণে বংঙ্গবন্ধু যাদুঘরে ওবামা বা বিল গেটস শক্তি খুজতে যেতে পারলেন না, ব্যাপারটা গ্রাম্য।
ওবামার সফলজীবনে সবচেয়ে আশাভঙ্গের সময় এটা। তাই এখন তাকে দার্শনিক শক্তি খুজতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র গরীব হয়ে যাচ্ছে। তার এখন কেজো বন্ধু দরকার ব্রিক ইকোনমিকে চীনের ইকোনমির সঙ্গে রেসে রাখতে। যেটা প্রায় অসম্ভব।ওবামা ভারতকে নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক বলয় তৈরী করছেন। রাশিয়া-ভারত-ব্রাজিল আরেকটি অর্থনৈতিক মেরু প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এটি চীনা সাম্যবাদী অর্থনীতির বিপরীতে ইক্যুইটিলক্ষী বামসঞ্জাত অর্থনৈতিক অক্ষ।ভারত দুটি বলয়ে কমন ফ্যাক্টর।মনমোহন অর্থনীতির এক ঝানু খেলোয়াড়। উনি জানতেন কিভাবে পৃথিবীর আস্থা আর সম্মান অর্জন করা যায়।ছাত্র নং অধ্যায়নং তপঃ।
সো লেটস ডু ইট। জীবনে একবার একটু বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং করি। বাংলাদেশের রঙ ছুঁড়ে দিই গোলকের ক্যানভাসে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৭