ঢাকার কোন টপগানকে টেলিফোনে ইন্টারভ্যু করার জন্য ফোন করলে, পিএস না থাকলে বুয়া ফোন ধরে। পিএস ঠেলা সামলানো লোক। তাই ইন্টারভিউয়ের বিষয় স্যারের পক্ষে গেলে গদ গদ হয়ে পড়েন। বিষয় স্যারের বিপক্ষে গেলে বলে দেন স্যার বিদেশে। কিন্তু বুয়া এসবের ধার ধারেনা। বেগম সাহেবা সবসময় রেগে রেগে কথা বলেন, বুয়া বেগম সাহেবার মেক আপ চুরি করে মাখে,আচরণে বেগম সাহেবাই তার রোল মডেল। সুতরাং টে্লিফোনে বুয়ারা খুব রেগে রেগে কথা বলে। যে কোন টপ গানের বাসার বুয়ার ওপর বেগম সাহেবার আচরণের প্রভাব পড়তে বাধ্য।
বলা বাহুল্য সবচেয়ে ভালো ব্যবহার স্যারের।সাংবাদিক পেঁচাজাত, স্যার জানেন। কিন্তু বেগম সাহেবার বুয়া সেসব ধার ধারে না। ঘোড়ার ডিমের সাংবাদিক, ফ্রি লোডারস। স্যারের পার্টিতে ফ্রি মদ খাইয়া ল্যাছরাইতে ল্যাছ্রাইতে চইলা গেলে, স্যার বলেন, ফ্রি লোডারস।
কখনো দেখা করতে স্যারের বাসায় গেলে ভিন্ন চিত্র। আপনার পোশাক ম্যাগডোনাল্ডসে ঢোকার উপযুক্ত বলে আপনি ড্রইং রুমের সোফায় বসে পেইনটিং বা মুখোশ বা শো পিস দেখতে পাবেন। পোশাক বাজে হলে গেট থেকে গলাধাক্কা। যে কারণে ঢাকায় গরমের মধ্যে ব্লেজার হতভাগ্য আইনজীবী এবং আমজনতাকে ঘেমে ঘুরতে দেখা যায়।
স্যারের ড্রইং রুমে বসে অদৃশ্য পেনসিল হিলের খুটখাট শুনতে পাবেন, খুট খাট শব্দটা কাছে আসতে থাকলে একটু ভয় ভয় লাগে। বেগম সাহেবা আপনার চেহারা সক্রেটিসের মতো হলে পোশাক শেখ সাদীর মতো হলে গম্ভীর হয়ে যাবেন। আপনার ভাগ্যে নির্ঘাত মেরী বিস্কুট আর বিবর্ণ চা। চেহারা ক্যাসানুভার মতো,পোশাক সায়েফ আলী খাঁর মতো হলে উনি কফি পেস্ট্রি পর্যন্ত যাবেন।
তারপর স্যার। সাদাসিদে লোক, ভুরুঙ্গামারী থেকে ঊনিশ টাকা নিয়ে ঢাকায় এসে আজ গুরু হয়েছেন।ট্যাক্স ফাঁকি দিতে দিতে চোখের তলায় কালি পড়ে গেছে। আপনি দেশে থাকলে স্যার কোপেন হাগেন বা লন্ডন থেকে ফেরার গল্প দেবেন। আর আপনি বিদেশে থাকলে স্যার ওদিকে না গিয়ে সেদিন প্রাইম মিনিস্টারকে বললাম (অফ দ্য রেকর্ড) উনার বর্তমান পাওয়ার স্টেটাস জানান দেবেন।
ইন্টারভিউ রেকর্ড করার সময় হঠাত বুয়া কোন শব্দ করলে,স্যার ভুরুঙ্গা মারী স্টাইলে ধমক দেন, ম্যাডাম সেটাকে মেক আপ করতে লাস্য ময়ী কন্ঠে বুয়াকে আদর করতে থাকেন, বহিরাগতের সামনে পারিবারিক সংস্কৃতি উন্মোচিত হোক এটা উনি চাননা।
স্যার এবং ম্যাডাম নধর গোল্পগাল, বুয়া-দারোয়ান-ড্রাইভার (দাসপ্রথার বাসন্তী-সিধু-কানু) শীর্ণ, সেই মুঘল বা বৃটিশ আমলের মতোই। একাধিক এলিট গৃহে অনুসন্ধান করে জানতে পারা যায়, বুয়া-দারোয়ান-ড্রাইভারের জন্য তাদের স্টেটাস অনুযায়ী খাবার দেয়া হয়। অর্থাৎ স্যার বা ম্যাডাম বাকিং হাম প্যালেসের ক্যালরী গ্রহণ করেন, সিধু-কানু-বাসন্তীর জন্য শায়েস্তা খানের চাল, শেখ হাসিনার আশার শাক দিয়ে মাছের আলো ঢাকা।
এবার আসি নিউজরুমে, আপনি বার্গার খেলে সুগারমামু আপনি এলিট হিসেবে আপনার সঙ্গে প্রশ্রয়ের ব্যবহার করবে।আপনি বাংলাফুড খেলে উনি আপনাকে দেখতেই পাবেন না। আপনি বার্গার মেয়ে হলে সেলারী রেইজ, সাদাকালো মেয়ে হলে পিংক স্লিপ। বার্গার সেক্স পলিটিক্সসঞ্জাত অর্ধমূর্খ নারী নেতার বিকাশ মিডিয়াতে চলতেই থাকবে, সাদাকালো নারী সারাজীবন সাবএডিটর থেকে যাবে। নারী নেতা পেলেই নারীর ভাগ্য বদলায় না। নেতা হিসেবে হাসিনা খালেদা থাকার পরেও বাংলাদেশের নারী ইভ টিজিং, এসিড সহিংসা ও পারিবারিক নির্যাতনের শিকার।
এবার ধরেন গুলশানে কোন শোরুমে গেছেন। আপনি বিদেশ থেকে গেছেন বুঝলে পেলব হাসি দিয়ে দোকানী কাদা হয়ে যাবে, আর না বুঝলে গম্ভীর, লইলে লন,না লইলে ফুটেন ভাব নিয়ে উলটো করে ধরে ইংরেজী পত্রিকা পড়বে।ঢাকার মতো পোশাক এবং স্টেটাস সচেতন শহর শুধু ঢাকাতেই আছে।
রংপুরের এক বিড়ির ব্যবসায়ী লুঙ্গি পরে ঢাকার এক মোটর বাইক শো রুমের সামনে উইন্ডো শপিং করছিলেন। এই সময় সেলসম্যান এসে ধমক দিয়ে বলে যান, মিয়া কিনোনের মুরোদ নাই খালি দ্যাহেন। লুঙ্গি পরা বিড়ি সওদাগর রাগ করে পুরো শোরুম কিনে নিয়ে একটা শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। পরিতাপের বিষয় ফরহাদ মাজহারের ভুল লুঙ্গী নেতৃত্তের কারণে স্টেটাস বিনাশী লুঙ্গী বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছে।
ঢাকায় রোমান্টিকতার মধ্যে চরম শ্রেণী সচেতনতা। ইভ টিজিং এর কারণ সম্ভবত সেখানে। মেয়েরা এই ছেলে আমার সঙ্গে বিয়ের উপযুক্ত কিনা তা মেপে মিশলে, ছেলেদের দূর দূর ছেই ছেই করলে ওরা নেতিবাচক আচরণ করবেই। অবজ্ঞা প্রতিহিংসা তৈরী করে আমার মনে হয় ইফ ইউ প্রোভোক দ্য সোসাইটি, ইউ মাস্ট ডু সামথিং টু প্যাসিফাই ইট। নাক উঁচু নীরোদ সি চৌধুরী শিকার করেছেন সর্ব ভারতীয় পুরুষেরা আউটডোরের নারীদের প্রতিশ্রুতির প্রশমন ইনডোরে স্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা করেন।ছেলের বাপেরা বা মামুরা চারপাশে ছোক ছোক করে ঘুরলে, বাচ্চারা ইভটিজার হয়ে ধরা পড়বে, আবার মেয়ের বাপেদের ছোক ছোকানির নিউটন থিয়োরীতে ইভ টিজারের আগমন ঘটে। প্রকৃতি এরকম কাটাকুটি খেলে।
মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে অন্তত একটু ভদ্র ভাবে কথা বললে, মানবিক হাসি বিনিময় করলে পরিস্থিতি সুস্থ হতে বাধ্য। পশ্চিমা মেয়েরা প্রতিশ্রুতিশীল পোশাক পরে, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে নানা পর্যায়ে। আর দক্ষিণ এশিয়ার থিম সং ছুয়ো না ছুয়ো না মুঝে ছুয়ো না। অতিরিক্ত রক্ষণশীল মন আর উদার পোশাকের ফিউশন কখোনোই সুস্থ সমাজের প্রতীক হতে পারেনা। আবার হিজাব বা বোরখা আরো ভয়ংকর বিকৃতির দিকে সমাজকে নিয়ে যায়। স্কাইপ হয়ে দাঁড়িয়েছে অবগুন্ঠিত অন্ধকার সমাজের নারীর প্রতিবাদের জায়গা। তার চেয়ে ঢাকার পরিস্থিতি অনেক ভালো।
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে কোএড করে নারী-পুরুষ বিভাজনের আদিম সমাজ থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরী। মানুষ হিসেবে বা পারসন হিসেবে বাচ্চাদের না গড়ে তুললে এই ইভটিজার পশুর সংখ্যা বাড়বে। যে কোন একজন ইভটিজারকে ডেকে পনেরো মিনিট কাউন্সেলিং করে দেখবেন এই ছেলে সংশোধনের উপায় আছে। একে রাক্ষস ভাবার কারণ নেই। এর চেয়ে বড় শিক্ষিত রাক্ষস আপনার মেয়েকে সামলাতে হতে পারে টরান্টোতে বা প্যারিসে।
বিত্ত সচেতনতা একটি বিমূর্ত বিষয়। কিন্তু মানুষের আচরণে তা বেরিয়ে পড়ে। ঢাকার নিম্ন দরিদ্র মানুষ ভিক্ষুক বা ভাসমান। এরা উপায়হীন। ফলে এরা সবশ্রেণীর ইভ টিজিং এর শিকার। উর্ধ দরিদ্র্য শ্রেণীতে ড্রাইভার, বুয়া, দারোয়ান। এদের মেয়েরা বিপন্ন নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘুষ খোর কেরানীপুত্র বা টেনডার শাবক নিম্ন মধ্যবিত্ত ইভ টিজার দের হাতে।এদের বোনেরাই সবচেয়ে বেশী ইভটিজিং এর শিকার।
মধ্যবিত্ত মেয়েরা ইভ টিজিং এর শিকার কম হয়। মধ্যবিত্ত মিলে মিশে থাকাটা মেয়েকে শেখায়। মধ্যবিত্তের মধ্যে যারা নিজেদের উচ্চমধ্যবিত্ত ভাবে তাদের ইভ টিজিং কর্ম ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা যায়। দরিদ্র-নিম্ন মধ্যবিত্ত অবস্থান থেকে যুদ্ধ,অভ্যুত্থান আন্দোলনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ উচ্চমধ্যবিত্ত ইভ কিলিং এর শিকার হতে থাকে। উচ্চবিত্ত ঢাকায় নেই, উচ্চমধ্যবিত্তরাই নিজেকে উচ্চবিত্ত ভেবে গম্ভীরভাবে ব্ল্যাক মানির প্রাডো থেকে নামে। ফলে তাদের মেয়েদের ইভ সেডাকশন ইউটিউবে বা পর্ণসাইটে উঠে যায়।
মেয়েদের অভিভাবকের বিত্ত সচেতনতা মেয়েদের মুখাবয়বে থাকে। বাপমায়ের বিত্তের সঙ্গে যোগ হয় মিডিয়া ইলিউশন। নিজেকে কারিনা কাপুর বা বিপাশা বসু ভাবে অনেক মেয়ে। কারিনা মধ্যবিত্ত বিপাশা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা। ফলে কেরানীর মেয়ে কেরানীর বা টেন্ডারের ছেলেকে অবজ্ঞা করে। প্রেমে রাজি নই এই কথাটা কারিনার মতো রেগে রেগে না বলে বিপাশার মতো হেসে হেসে বললেই ছোকছোকানি টাইপের ইভটিজার উতসাহ হারাবে। মানুষকে মানুষ ভেবে মিশলে সমাজটা বন্ধুতার উতসবে বর্ণিল হয়ে উঠতে পারে।
যদি কাল সকাল থেকেই ঢাকার তিরিশের নীচের ছেলে মেয়েরা একে অন্যকে দেখে হাই-হ্যালো বা মৃদু হেসে তারুণ্যের বিপ্লব সূচিত করতে পারে দেখবেন ঘণ্টা খানেকের মধ্যে পুলিশ বেকার হয়ে যাবে, গম্ভীর সমাজ এবং রামগো্রুড়ের ছানারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। সরকার ২০১১ কে হাসিবর্ষ ঘোষণায় বাধ্য হবে। কারণ খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কান্না জাতীয় হাসির পাত্রী হলে স্পীকার মহোদয় হাসিকে জয়যুক্ত ঘোষণা করেছেন। স্পীকার সন্দেহাতীত রসিক মানুষ। উনি শেখ হাসিনার দিন বদলের ভাষণ শুনে মনে মনে হাসেন। ঢাকার যে পরিস্থিতি তাতে কান্না পেলেই হাসা ছাড়া বাঁচার আর উপাই নাই। বাদ দেন বিত্তের চিন্তা একটু হাসুন।
ব্রেকিং নিউজঃ বিএনপি থেকে হুদা নক্ষত্রের পতন।
আজকাল যে কোন ব্রেকিং নিউজই হাস্যউদ্দীপক
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৫৭