somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি কী মুসলমান !

২৬ শে জুলাই, ২০০৮ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলাম মানে শান্তি । এরকমই পড়ে এসেছি ছোটবেলা থেকে। কিন্তু যখন শুনলাম ইসলাম (আরবী শব্দ) হচ্ছে একটা ক্রিয়া পদ (verb), তখন মনে হল, আর যাই হোক ইসলাম মানে শুধুমাত্র শান্তি হতে পারেনা । কারণ, শান্তি হচ্ছে বিশেষ্য পদ (noun)।

ইসলাম শব্দটা এসেছে আরবী শব্দ-মূল সালাম এবং সিল্‌ম থেকে । সালাম মানে হচ্ছে শান্তি । আর সিল্‌ম মানে হচ্ছে আত্ননিবেদন করা (to submit[verb] ) অথবা আত্নসমর্পণ করা (to surrender[verb] ) । কাজেই, ইসলাম এর অর্থ হচ্ছ আত্নসমর্পণের মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা । আবারো বলছি, ইসলাম একটা ক্রিয়া পদ । সালাম শব্দটাকে আরেকভাবেও বলা যায় - পরিপূর্ণতা । অর্থাৎ ইসলাম কে এভাবেও বলা যায় যে, আত্নসমর্পণের মাধ্যমে পরিপুর্ণতা অর্জন করা । ঠিক একইভাবে আস্‌ সালামু আলাইকুম এর অর্থ, তোমার শান্তি হোক, আমরা সবাই জানি। এর অর্থ এভাবেও বলা যায় যে, তোমার জীবন সবদিক থেকে পরিপূর্ণ হোক । কত চমৎকার একটা সম্বোধন !

আত্নসমর্পণ করা বলতে আসলে কি বুঝায়? এক কথায় বললে নিজেকে আল্লাহ্‌র কাছে সঁপে দেয়া । এখন কথা হচ্ছে নিজেকে সঁপে দিয়ে কি করব কিংবা নিজেকে যে সঁপে দিয়েছি বুঝব কিভাবে ? জিনিসটাকে আমি এভাবে দেখি - ধরলাম, আমি কোন নতুন দেশে ভ্রমাণে গিয়েছি। সেই দেশের কিছুই আমি জানি না । তখন আমি কি করব, আমাকে গাইড করে সবকিছু ঘুরিয়ে দেখাতে পারে এরকম একজন গাইডের শরণাপন্ন হব । তারপর, গাইড আমাকে যা বলবে আমি সেই অনুযায়ী কাজ করব, কারণ, আমি কিছুই জানি না । এটাকে বলে সঁপে দেয়া । এখানে আমি সেই গাইডের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়েছি । আমি বিশ্বাস করছি গাইড আমাকে ঠিকমতো সবকিছু ঘুরিয়ে দেখাতে পারবে । এবং এরপর গাইড আমাকে যা করতে বলবে আমি তাই করব। সে আমাকে ডাইনে যেতে বললে আমি ডাইনে যাব; সে আমাকে বাঁয়ে যেতে বললে আমি বাঁয়ে যাব - কারণ আমি যানি তা না করলে আমি হারিয়ে যাব, এবং তাতে আমার নিজেরই ক্ষতি হবে ।

ইসলামের সঁপে দেয়াটা ঠিক এরকমই মনে হয় আমার কাছে । আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং একইসাথে আমাদের পথ দেখানোর জন্য গাইডলাইন দিয়েছেন (কো’রান এবং হাদীস) । কো’রানে যদি বলা থাকে ডাইনে যেতে আর যদি আমি বাঁয়ে যাই, তাহলে আমি কিভাবে বলব যে, আমি নিজেকে আল্লাহ্‌র কাছে সঁপে দিয়েছি । অর্থাৎ, আল্লাহ্‌র কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া বা নিজেকে সমর্পণ করার মানে হচ্ছে আল্লাহ্‌ আমাকে যে পথ দেখিয়েছেন সেই পথে চলা, সহজভাবে বললে, আল্লাহ্‌কে মান্য করা; তার আদেশ নিষেধ মেনে চলা । আর যে এরকম করে সেই লোকই তো মুসলিম বা মুসলমান । কারণ, আরবী শব্দ মুসলিম আর বাংলা অর্থ হচ্ছে আত্নসমর্পণকারী । আমি যখন এভাবে জানলাম, তখন আমার মনে হতে থাকল, আরে আমি কি আসলেই আত্নসমর্পণকারী কিনা ? দেখলাম যে না; আমিতো আল্লাহ্‌কে খুবই কম মান্য করছি । এত কম যে, নিজেকে আত্নসমর্পণকারী ভাবতে লজ্জা লাগল - মনে হল যে, না, আমি তো আত্নসমর্পণকারী না । তার অর্থ আমি মুসলমানই না !!

ইসলাম শব্দটাকে আরো সুন্দরভাবে বিশ্লেষেণ করা যায় । ব্যুৎপত্তিগত ভাবে এর অর্থ দুইটি - শান্তি (বিষেশ্য পদ) ও আত্ননিবেদন করা (ক্রিয়া পদ) বা আত্নসমর্পণ করা (ক্রিয়া পদ) । আর, মান্য করা জিনিসটা না থাকলে যেহেতু আত্নসমর্পণ করার কোন মানেই হয় না কাজেই ইসলাম এর মাঝে মান্য করা (ক্রিয়া পদ) শব্দটাও অনর্ভুক্ত করা যায় । আবার, কোন একটা কাজ কেউ যখন করে সেই কাজটা আন্তরিকতার সাথে না করলে সত্যিকার অর্থে কাজটা পরিপূর্ণতা পায় না - তা সে যে কাজই হোক না কেন । কাজেই ইসলাম শব্দটাকে আরও বিশদভাবে এভাবেও বলা যায় - ইসলাম হচ্ছে একটা ক্রিয়া পদ যার অর্থ, আল্লাহ্‌র কাছে আত্নসমর্পণ ও আত্ননিবেদন করে, আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধ আন্তরিকতার সাথে মান্য করে জীবনে পরিপূরণতা ও শান্তি অর্জন করা (ক্রিয়া পদ) । আর, যেই ব্যক্তি এই কর্মটা করে সেই ই আত্নসমর্পণকারী বা মুসলিম বা মুসলমান ।

মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলাম কিংবা শুধু বিশ্বাস করলাম আল্লাহ্‌ আছে, ঐ জিনিস একজন মানুষকে মুসলিম বা মুসলমান বানায় না । কেউ যখন আমাকে এখন জিজ্ঞেস করে আমি মুসলিম কিনা, তখন নিজের মাঝেই চিন্তা আসে যে, আমি আসলেই আত্নসমর্পণকারী কিনা ? তাই, উত্তর দিতে অনেক ভাবতে হয় । মুসলিম শব্দের অর্থ না জেনে আগে যখন বোকার মত নিজেকে মুসলমান বলতাম, এখন অত সহজে নিজেকে মুসলমান বলতে পারি না !
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০০৮ রাত ৯:৩৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×