somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালিয়াজুড়ির স্মৃতি

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায় আমার জন্ম বেড়ে ওঠা। কিন্তু আমার পূর্বপুরুষের বসতবাড়ি নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলা। ত্রয়োদশ শতাব্দিতে আমাদের পূর্বপুরুষ লম্বুধর সিং দিল্লী থেকে এই অঞ্চলে আগমন করেছিলেন। তিনি ছিলেন ক্ষত্রিয় সন্যাসী। মোগল আমলে জাহাঙ্গীর বাদশার সময় আমাদের পূর্বপুরুষ লম্বুধর সিংয়ের অধস্থন একজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তখন থেকে হিন্দু বংশধরগণ খালিয়াজুড়ি এবং মুসলিম বংশধরগণ বল্লী গ্রামে বসবাস করতে থাকেন। পূর্বপুরুষ দিল্লী থেকে এসেছিলেন বিধায় দিল্লীর সাথে নাম মিলিয়ে গ্রামের নাম রেখেছিলেন বল্লী। বল্লীর কদমতলা এবং বড়হাটির চৌধুরীগণ একই মায়ের সন্তান। বিখ্যাত মরমী সাধক হাছন রাজার মা হুরমত জাহান চৌধুরী এই বংশের কন্যা। বড় হাটিতেই তাঁর জন্ম। বল্লী চৌধুরী বংশের পুরুষ বংশধর আলম চৌধুরীর ছেলে ইয়াকুব চৌধুরী আমার প্রপিতা। ইয়াকুব চৌধুরীর তিন ছেলে এক মেয়ে, যথাক্রমে- আবুল কাশেম চৌধুরী (আমার দাদা), ইকাবল হোসেন চৌধুরী (নিঃসন্তান অবস্থায় মুত্যুবরণ করেন), মকবুল হোসেন চৌধুরী (তাঁর বংশধরগণ সুনামগঞ্জ সদরে থাকেন), নফল বানু (তাঁর বংশধর নেই)। এই তিন ভাই বোন নাবালক থাকা অবস্থায় তাঁদের পিতা ইয়াকুব চৌধুরী (আমার প্রপিতা) মুত্যুবরণ করেন। এসময় ইয়াকুব চৌধুরীর বাবা আলম চৌধুরী (আমার বৃদ্ধপ্রপিতা/প্রপিতার বাবা) জীবিত ছিলেন। তাই ইসলামি সরিয়তি আইন অনুযায়ী ইয়াকুব চৌধুরীর সন্তানগণ বল্লীর ৭৪ নং লাখেরাজ জমিদারী সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বল্লী বাড়হাটিতে লেংটা শা’র মাজার যে বাড়িতে, সেই বাড়িটি ছিল আমার প্রপিতার। আমার প্রপিতা মুত্যৃর পর আমার প্রমাতা লক্ষিচাঁন চৌধুরী তাঁর নাবালক সন্তানদের নিয়ে এ বাড়ি ছেড়ে তাঁর বাবার বাড়ি দিরাই উপজেলার আলীনগর চলে আসেন। তখনকার সময় তাঁদের বল্লী নেয়ার জন্য আলম চৌধুরী এবং আব্দুল মজিদ চৌধুরী অসংখ্যবার যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয়েছেন। আমার প্রপিতার শ্বশুর সাদির চৌধুরী ওরফে বাবরু মিয়া তাঁর মেয়ে এবং নাতি নাতনীদের যেতে দেননি। এমন কারণেই ধীরে ধীরে বল্লীর সাথে আমাদের দূরত্ব চলে আসে এবং দিরাই উপজেলা আমাদের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে যায়; আত্মীয়তাও হয়েছে এই অঞ্চলেই। পূর্বপুরষদের জন্মমাটি দেখার আগ্রহ আমার ছোটবেলা থেকেই। যদিও বল্লী গ্রামে এ বংশের উল্লেখযোগ্য কেউ থাকেন না। তবুও পূর্বপুরুষের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িতে আছেন আমার প্রপিতামহের আপন ভাইয়ের একমাত্র উত্তরাধিকার আজিল হক চৌধুরী চাচা এবং আমার প্রপিতামহের আপন চাচা আব্দুল মজিদ চৌধুরীর প্রপৌত্র নুরুল হুদা চৌধুরী জুয়েল চাচা। আজিল হক চাচার বিশেষ অনুরোধ আর আমার আগ্রহের কারণে ২০১২ সালে আব্বা আমাকে নিয়ে বল্লী গিয়েছিলেন। দুই দিন ছিলাম সেখানে। তখন জুয়েলনূর চাচার সাথে তেমন ভাবে পরিচয় না হলেও আজিল হক চৌধুরী চাচা আর চাচাতো ভাই বোনদের আদর আপ্যায়ন ছিল মনে রাখার মতো। কিন্তু সে যাত্রায় খালিয়াজুড়ি সদর দেখার সৌভাগ্য হলো না। আমি ইউ এন ও অফিসে চাকরী করি। চাকরীর সূত্রধরে আমার সহকর্মী কালাম ভাইয়ের সাথে পরিচয়। ২০১৬ সালে খালিয়াজুড়ি যাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছে হলো। সময় সুযোগ থাকায় তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। খালিয়াজুড়ি সদরে পরিচিত কেউ নেই। তাই ফোনে যোগাযোগ করলাম একমাত্র পরিচিত সহকর্মী কালাম ভাইর সাথে। খালিয়াজুড়ির ব্যাপারে আমার আগ্রহের বিষয়ে কালাম ভাই অবগত ছিলেন। তাই তিনি যাওয়ার জন্য সম্মতি দিলেন। কালাম ভাইর সম্মতি পেয়ে উৎসাহ আরো বেড়ে গেলো। সাথে সাথে দুই দিনের জন্য মোটর সাইকেল ভাড়া নিয়ে দুপুর একটায় বাসা থেকে যাত্রা করলাম খালিয়াজুড়ির উদ্দেশ্যে। আমি রাস্তা চিনি না। তাই মোটর সাইকেল চালকের পরামর্শে শ্যামারচর বাজার, মামুদনগর বাজার, শশাকান্দা, কৃষ্ণপুর ইত্যাদি হয়ে খালিয়াজুড়ি অভিমুখে যাত্রা করলাম। হাওরের আকাবাঁকা মেটো পথ পরিয়ে শশাকান্দা যেতেই মোটর সাইকেলের টায়ার পামচার। এ যেন মরার উপর খড়ার ঘা। শশাকান্দা থেকে প্রায় দুই মাইল দূর মামুদনগর বাজার। সেখানে টায়ার কাজ করা যাবে। সে পর্যন্ত পায়ে হাটা ছাড়া অন্য কোন ব্যবস্থা নেই। মোটর সাইকেল চালক আমাকে রেখে চলে গেলো মামুদনগর বাজারে। আমি অপরিচিত এই রাস্তায় একাএকা হাটতে লাগলাম মামুদনগর উদ্দেশ্যে। চার পাশে সমুজ শ্যামল বোরো ধানের জমি। গ্রামের পাশে বিভিন্ন ধরণের সবজি বাগান। মাঠের পাশে ১০/১৫টি ছেলে একত্রে খেলা করছে। তাদের ডেকে কাছে আনলাম। জানতে চাইলাম শশাকান্দার পার্শ্ববর্তী গ্রামের নাম, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর নাম, হাওরের নাম, গ্রামের মাতব্বরে নাম ইত্যাদি। একপর্যায়ে জানতে চাইলাম গ্রামের নাম শশাকান্দা কেন হয়েছে। কেউ বলতে না পারলেও তাদের মাঝখান থেকে ১২/১৩ বছরের একটা ছেলে বলে উঠল- এখানে নাকি একসময় জনবসতি ছিল না। দূর গ্রাম থেকে লোকজন এসে হাওরের উচু কান্দিতে শশা চাষ করতেন। শশা চাষের সূত্রধরেই গ্রাম পত্তন। তাই গ্রামের নাম হয়েছিল শশাকান্দা। উপস্থিত অন্যান্য ছেলে বিষয়টি অবগত হয়ে গেলো। তাদের সবাইকে বল্লাব নামকরণের ইতিহাস একজন একজন করে বল। ছেলেগুলো বেশ আগ্রহের সাথেই বলতে থাকল। মুহুর্তটা ছিল বেশ উপভোগ করার মতো। অনেক্ষণ কথা বলার পর ছেলেগুলোর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাটতে হাটতে চলে গেলাম মামুদনগর বাজারে।

মোটর সাইকেলের চাকা মেরামত হয়েছে। এবার খালিয়াজুড়ির উদ্দেশ্যে যাবার পালা। বিশাল বিশাল হাওরের বুকচিড়ে আকাবাঁকা মাটির রাস্তা আর অসাধারণ প্রকৃতির মাঝে মুক্ত বাতাস থেকে বুক ভরা অস্কিজেন নিতে নিতে সন্ধায় পৌছলাম খালিয়াজুড়ি উপজেলা সদরে। কালাম ভাই আগ থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। ডাকবাংলার সামনে তার সাথে দেখা। বহুল প্রতিক্ষিত খালিয়াজুড়ি দেখে খুশিতে মনটা ভরে গেলো। যদিও হাওরাঞ্চল, সড়ক যোগাযোগ নেই, নেই কোন উন্নত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তবুও এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত চমৎকার। বাড়ি ঘরের আঙিনা, রাস্তা ঘাট, খেলার মাঠ বেশ পরিচ্ছন্ন। মানুষগুলো আন্তরিক। প্রথম দর্শনেই খালিয়াজুড়ির প্রতি অন্যরকম একটা প্রেম জন্ম নিলো। মনে হচ্ছে এ যেন আমার চির আপন শহর। কালাম ভাইর সাথে চা খাচ্ছি। এসময় দুরুদ ভাই (এলজিইডিতে কর্মরত) এবং আমিনুল ভাই (কৃষি অফিসে কর্মরত) এসে হাজির। কালাম ভাইর মাধ্যমে তাঁদের সাথে পরিচয়। তিনজন মিলে উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায় জমিয়ে আড্ডা দিলাম। হঠাৎ আমিনুল ভাই এবং কালাম ভাই কি যেন ফিসফিস করছেন। বুঝতে পারলাম আমার থাকার বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। স্থানীয় ডাকবাংলাতে রুম খালি নেই। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কাজ চলছে। জেলা পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ রুমে অবস্থান করেছেন। বিষয়টি কালাম ভাইর জানা ছিল না। খালিয়াজুড়িতে থাকার হোটেল নেই। ডরমিটরিতেও থাকার সুযোগ নেই। তাই আমাকে নিয়ে আমিনুল ভাইর বাসায় চলে গেলেন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার পর কালাম ভাই এবং দুরুদ ভাই এসে হাজির। রাতের খাবারের জন্য কালাম ভাইর বাসায় যেতে হবে। ঘন কুয়াশা, প্রচন্ড শীত, ঠান্ডা হাওয়া বইছে। আমরা হাটতে হাটতে চলে গেলাম কালাম ভাইর বাসায়। অনেক প্রজাতির মাছ, মাংসের একাধিক আইটেম রান্না করেছেন কালাম ভাবি। বাহারি আয়োজন দেখে জানতে চাইলাম- কালাম ভাই এতো আয়োজনের মানে কী ? কালাম ভাই মিষ্টি হেসে উত্তর দিলেন- পূর্বপুরুষের জন্মমাটি দেখতে এসেছেন। এখানে বংশধর কেউ নেই তাতে কি হয়েছে, এলাকার মানুষ তো আছে; আদর আপ্যায়ন কম হলে কেমনে হবে ? উপস্থিত মুহুর্তে এসেছেন, তাই বেশি কিছু করতে পারিনি। পরবর্তীতে আসলে দু’চারদিন আগে জানাবেন। কালাম ভাইয়ের উত্তর শুনে তার মুখের দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলাম। শুরু হলো খাবারের পালা। কালাম ভাই একে একে সবগুলো আইটেম প্লেটে তুলে দিচ্ছেন। কোন নিষেধ মানা শুনতে নারাজ। অবশ্য এজন্য দায়ী ভাবীর রান্না। বাংলাদেশের মধ্যে বিক্রমপুর এলাকার মেয়েরা অত্যন্ত ভালো রাধুনী। ভাবীর দাদা বিক্রমপুর এলাকা থেকে ময়মনসিংহে এসেছিলেন। হয়তবা এ কারণেই ভাবী এতো ভালো রাধতে জানেন।

রাত দশটায় রুমে গিয়ে ফেইসবুক ব্রাউজিং করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম ভাংতেই কালাম ভাই এবং দুদুর ভাই এসে হাজির। তড়িঘুরি করে ঘুম থেকে উঠে গোসল করলাম। দুরুদ ভাইর সাবায় নাস্তা খেতে হবে। ষ্টাফ কোয়ার্টারেই থাকেন। যেতে যেতে উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। বিশাল হাওরের বুকে উপজেলা সদর। কমপ্লেক্স এলাকার প্রায় বিশ ইঞ্চি প্রটেকশন ওয়াল ঢেউয়ের আঘাতে এদিক ওদিক ভেঙ্গে গেছে। বর্ষামৌসুমে নাকি বিশাল বিশাল ঢেউ হয়। ঢেউয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উপজেলা সদর হসপিটালে দেওয়া হয়েছে বিশাল প্রটেকশন ওয়াল। দেখলে মনে হয় মগ ও পুর্তিগীজ জল দস্যুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশাল যোদ্ধ-দূর্গ তৈরী করা হয়েছে। নবনির্মিত হসপিটাল, ‍উপজেলা ষ্টাফ কোয়ার্টার ইত্যাদি দেখতে দেখতে চলে গেলাম দুরুদ ভাইর বাসায়। বাসার সামনেই দুরুদ ভাই নিজ হাতে তৈরী চমৎকার একটি সবজি বাগান। বাগানের প্রেমে মুগ্ধ না হলেই নয়। কথা বলতে বলতে দুরুদ ভাইর বাসায় প্রবেশ করলাম। টেবিলে নাস্তার কসরত দেখে আমি চমকে উঠলাম। হা করে তাকিয়ে রইলাম দুরুদ ভাইর দিকে। হাতের তৈরী হরেক রকমের নাস্তা। এগুলো নাকি ভাবী সাহেবা নিজ হাতে তৈরী করেছেন আমার জন্য। প্রথম পরিচয় অথচ আদর আপ্যায়ন দেখে আমি বোকা হয়ে গেলাম। ক্ষণিকের পরিচয়ে কেউ কাউকে এভাবে আদার আপ্যায়ন করতে পারে আমার জানা ছিল না। তাঁদের আদর আপ্যায়ন প্রামাণ করে খালিয়াজুড়ি এলাকার লোকজন অত্যন্ত আন্তরিক এবং অতিথি-পরায়ন।

দুরুদ ভাইর বাসা থেকে সবাই মিলে আবারও ঘুরতে বের হলাম। উপজেলা সদরে প্রাচীন মঠ (প্রকাশিত ওয়াচ টাওয়ার) দেখতে গেলাম। এটি কবে নির্মান হয়েছে তা কেউ বলতে পারে না। তবে একসময় নাকি খালিয়াজুড়ি এলাকায় ডাকাতদের উৎপাত ছিল। ডাকাতদের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্যই নাকি এই মঠ বা ওয়াচ টাওয়ার নির্মান করা হয়েছিল। তবে সেটা কত শত বছর পূর্বে কে নির্মাণ করেছিলেন এ বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। মঠের পাশের বাড়িটি প্রশন্ন দেব রায়ের। তিনি একজন সম্নানী ব্যক্তিত্ব; ইতিহাস সচেতন মানুষ। তাঁর সাথে দেখা করে খালিয়াজুড়ির প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে নিলাম। প্রশন্ন দেব রায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম আমিনুল ভাইর রুমে। এ পর্যায়ে বিদায় নিতে চাই। কিন্তু কালাম ভাইর কড়া নির্দেশ; ভাবী রান্না করেছেন, না খেয়ে যাওয়া যাবে না। কালাম ভাইর আদেশ অমান্য করার সাধ্য নেই। নিজের ইচ্ছার কাছে পরাজিত হয়ে আবারও যেতেই হলো কালাম ভাইর বাসায়। ভাবীর রান্না করা বাহারি খাবার খেয়ে ধন্য হলো বিদায়ি মুহুর্ত। এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল। আমাদের দিরাই উপজেলার শ্রীনারায়নপুরের পিংকু দাদার শ্বশুর বাড়ি খালিয়াজুড়ি সদরে। তিনি শ্বশুর বাড়ি অবস্থান করছেন। ফেইসবুক থেকে জেনেছেন আমি খালিয়াজুড়ি সদরে অবস্থান করছি। সুতরাং সেখানে যেতেই হবে। পিংকু দাদার জোর অনুরোধে যেতেই হলো।পিংকু দাদা এবং বৌদির সাথে দেখা শেষে দুপুর বারটা সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। এবার দিরাই ফিরার পালা।

খালিয়াজুড়ি থেকে বিদায় নিয়ে বল্লী, রাহুতলা, আটগাঁও, শ্যামারচর হয়ে দিরাইর যেতে চাচ্ছি। উদ্দেশ্যে, আমার প্রপিতামহেরর আপন ভাই একদিল চৌধুরীর ছেলের দিকের নাতি বল্লী গ্রামে অবস্থানরত আজিল হক চৌধুরী চাচাকে একপলক দেখা। কোন প্রকার খবর না দিয়ে হঠাৎ বল্লী গিয়েছি দেখে চাচা, চাচি-আম্মা চমকে উঠলেন। আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন আজিল হক চাচা। কাপা কন্ঠে বল্লেন- আমার দুই দাদার মধ্যে এক দাদার পুরুষ বংশধর আমি একা। আরেক দাদার বংশধর তোমরা সুনামগঞ্জ থাক। যতদিন সুস্থ চিলাম বছরে একবার তোমাদের দেখতে যেতাম। আমাকে দেখলে তোমরা দৌড়ি গিয়ে জড়িয়ে ধরতে। আমি এখন অসুস্থ; বয়সের ভাড়ে যেতে পারি না। তোমরাও কেউ আসনা। এই বংশের সবাই শহরে থাকে, কেউ ঢাকা, কেউ মোহনগঞ্জ, কেউ সিলেট, কেউ ময়মনসিংহ। তোমাদের যোগাযোগ না থাকায় অনেকেই তোমাদের কথা ভুলে গেছে। পূর্বপুরুষের ভিটেমাটিতে মাঝেমধ্যে আসতে হয়। বল্লী তোমাদের আসল ঠিকানা।

আজিল হক চাচার কথা শুনে চোখে পানি চলে আসল। চাচার সাথে কথা বলতে বলতে বেলা গড়িয়ে বিকাল চারটা। চাচাতো ভাই হিরা মিয়া বিল থেকে বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ নিয়ে এসেছে। কিন্তু আমাকে বিদায় নিতেই হবে। চাচা চাচিআম্মাকে বুঝিয়ে অনেক কষ্টে বিদায় নিলাম। রাহুতলা আটগাঁও শ্যামারচার হয়ে দিরাই যাব। হাওরের উচুনীচু কান্দি, ধান খেতের আইল, বিস্তীর্ণ মাঠ, নদীর পাড় দিয়ে বয়ে গেছে মাটির রাস্তা। বর্ষায় এই এলাকা অন্তত ১৫ ফুট পানির নীচে চলে যায়। চার পাশে বিশাল বিশাল হাওর। সবুজ শ্যামল ধানগুছাগুলো হৃদয়ে দোলা দিচ্ছে। মোটর সাইকেল থেকে বারবার ফিরে তাকাচ্ছি খালিয়াজুড়ি আর বল্লী গ্রামের দিকে। পূর্বপুরুষের ভিটেমাটির প্রতি কেমন যেন একটা মায়া হচ্ছিল। ইচ্ছে করছে কয়েকটা দিন থেকে আসি। কিন্তু সময়ের বড্ড অভাব। খালিয়াজুড়ি, বল্লী আবার কবে যাব কিংবা আর কোনদিন যাওয়া হবে কি না জানি না। তবে এটুকু জানি যতদিন বেচে থাকব, মনের ভিতর পূর্বপুরুষের জন্মমাটির প্রতি অন্যরকম একটা ভালোবাসা থাকবে। ভুলা যাবে না আমার কালাম ভাই, আমার দুরুদ ভাই, আমার আমিনুল ভাইকে। ভুলা যাবে না আমাদের রক্তের বন্ধন আজিল হক চাচাকে। যতদিন বেঁচ থাকব হৃদয়ে বারবার দোলা দেবে খালিয়াজুড়ির স্মৃতি।

(ফারুকুর রহমান চৌধুরী, গীতিকার, সংগ্রাহক ও লেখক।)



[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/mazumiah/mazumiah-1506188954-6ff2a97_xlarge.jpg


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৪৫
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×