somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ "কুয়েট" এর জন্মদিন-এলো মেলো স্মৃতি

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ "কুয়েট" এর জন্মদিন! আরে ভাই কি বলেন, নিজের জন্মদিন'ই মনে থাকেনা আর "কুয়েট" এর জন্মদিন। "কুয়েট" এর জন্মদিন তো কি হইছে, কথা হবে আমি সর্বস্ব, কারণ আমি ছাড়া আমার কাছে কুয়েটের কোনো অস্তিত্ব নাই।
১ম বর্ষ- ট্রেনে চেপে বাড়ি যাচ্ছি খুলনা থেকে রংপুর, (রুপসা টু সৈয়দপুর)।
পাশের ভদ্রলোক-কোথায় পড় বাবা,
বুক ফুলিয়ে বলে দিলাম কুয়েট'এ। তাই কুয়েতে পড়। না আংকেল B:-) ব্লা ব্লা ব্লা...বুঝিয়ে দিলাম কুয়েট হল খুলনায়, যেখানে এটা-সেটা হয়, এইখানে পড়া বিশাল ব্যাপার। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। দেশের বেশির ভাগ মানুষ কুয়েট-ই চেনেন, Khulna-BIT বললে কেউ কেউ চেনে।

আবাসিক হলে এখনও সিট পাইনাই--থাকি ঝরনা মন্জিল এ। জীবনে এই প্রথম বাড়ির বাহিরে, সদ্য দাড়িগোফ কামানো হরেকরকম তাগড়া আবেগী যুবকেরা। একজন আরেকজন কে টিজ করতাম, একসাথে ঘুরতে যেতাম, খেতে যেতাম, ক্রিকেট খেলতাম। সবার নামের সামনে বিশেষন লাগানো হত; যেমন পিচ্চি শাওন, ভোডা শাওন, ফুটা আদনান, হুড়কা নুশান, নায়িকা মনির ইত্যাদি। কেউ ওয়াকম্যান গান শুনতাম, কেউ কম্বল মুড়ি দিয়ে ডিজুস দুনিয়ায় হারায় যাইতাম, কেউ পরিবার থেকে দুরে থাকায় একটু-আধটু কাঁদতাম আবার কেউ পরিবার থেকে দুরে থাকার স্বাধিনতা ভোগ করতাম, কেউ আবার একটু কবি হওয়ার চেষ্টা করতাম, কেউ মেয়েদের মোবাইল নম্বার জমাতাম, কেউ জীবনে সিগেরেটকে স্থায়ীভাবে প্রবেশাধিকার দিলাম, কেউবা পর্টাইম। কেউ কেউ মেয়েদের সাথে ফোনে একটু কথা বলতে পারলে জিবন-টা ধন্য হয়েছে মনে করতাম। শুধু পড়া লেখা বাদে সবই করা হত, ১ম সেমিস্টার এ HSC-এর বেসিক দিয়েই সবাই পার পেয়ে গেল।
সকালে একটা বালু-শা আর রফিক ভাইয়ের দোকানের চা - তারপর দুপুর- রসনা বিলাসে কখনও ভাতের সাথে একটা ডিম, মুরগী সাথে ঝোল আর এটা ওটা। পিচ্চি শাওনের খাওয়ার ধরণ ছিল সবার থেকে আলাদা, ও এমনও করত যে বিস্কুটে এক কামড় বসিয়ে দিয়ে বলল এবার ভাত খাই, একটা ডিম দেন, ভাজি নাই, একটু মাছ খাই, না এটা ভাল লাগছে না ভাই একটু মাংস খাই, দুর এটাও ভাল না, ভাই একটা কোকাকোলা দেন, আহা--একটা চা দেন-সাথে সিগারেট দেন--এই টাইপের। আশেপাশের মোটামুটি সব মেস আমাদাের কাছে ক্রিকেট খেলে হারত আর আমরা পুরো ১ম বর্ষ এভাবেই খেলেছি, কখনও টি.টি.সি আবার কখনও কুয়েটে'এর কর্মচারী কোয়াটার মাঠ। র‌্যাগ এর ভয় ছিল, বড় ভাইদের শেষ বর্ষের ট্যুর বাবদ গেন্জি কেনার টাকা দিতে ভয় ছিল, পাশ করার টেনশন ছিল, কেউ ব্যকলগ খেয়ে দমে গিয়েছিল, কেউ ওভারকাম করেছিল। কেউ মেয়েদের মোহনীয় ফাঁদে পড়েছিল, বেশিরভাগ ফাঁদে না পড়ার যন্ত্রনায় ছটপত করত। সব শেষে কুয়েট তো অনেক কিছুই দিল।

এই কুয়েট কিছু চমৎকার বন্ধু দিয়েছে যাদের আমি এখনও মিস করি।
এই কুয়েট আমাকে ড. মিজান সারের মত পাংচুয়াল সুপারভাইজার দিয়েছিল যার এক ধমকে আমর এক সহপাঠি জ্ঞান হারিয়েছিল।
এই কুয়েটে থাকা অবস্থাতেই আমি আমার অর্ধাঙ্গিকে খুঁজে পেয়েছিলাম। আমাদের অর্ধশত চিঠি হলের কেয়ারটেকার এর হাত ঘুরে আসত আমার হাতে।
এই কুয়েটই শেষ পর্যন্ত ইন্জিনিয়ারিং ডিগ্রী দিয়েছিল।
এই কুয়েট কে ভুলি কি করে।

খুব মজার কিছু ঘটনা ছিল--
-- ২য় বর্ষে সুন্দরবন ভ্রমন অতপর আমার বলিষ্ট রুমমেট রুবেল ও মামুনের পাতলা পায়খানা এবং কুয়েটের হসপিটাল এ বিষেশ সময়। সে সময় আরও অনেকে আক্রান্ত হয়েছিল মামুনের পাশেই ছিল রোকেয়া হলের কেউ কেউ।
--মারিয়া শারাপোভার অর্ধনগ্ন ছবিটা পেপার থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছিল। আমার রুম-মেট সেটা সব হল তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আর পায়নি।
--আমি জোর করে কবিতা শুনিয়ে মানুষকে বিরক্ত করি, এই কথা শাওন আমার মাননীয়া আম্মার কাছে বলেছিল।
--আমার রুমমেটের আন্ডার-গার্মেন্টস এ আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলাম, আসলে ধরাই নি, রুম-মেট আন্ডারওয়ার টাকে বাঁচানোর জন্য রকেট বেগে ছুটে এসেছিল। (৫১১ রুম নং)
--এক সহপাঠির সাথে চ্যালেন্জ করে সাঁতরে পুকুর পাড়ি দিতে যেয়ে অল্পের জন্য মরতে বসেছিলাম। সেই সহপাঠি আর আমাকে সেদিন EEE এর সালাউদ্দিন স্যার কয়েক মিনিট দেরি হওয়াতে সেশনাল ক্লাসে ঢুকতেই দিল না, সেই দুঃখে পুকুর পাড়ে গিয়েছিলাম।
--একদিন তো ক্লাস থেকে ফিরে গোষলে যাব, কাপড় চেন্জ করলাম কিন্তু কোথাও গামছা/তোয়ালে খুঁজে পাচ্ছি না, এক ঘন্টা পর সেশনাল ক্লাস। সেশনাল রিপোর্ট এখনও লেখার বাকি, সব রুমমেট একাডেমিক কাজে ব্যস্ত। মাথা খারাপ ২০ মিনট হয়ে গেলো কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। তোয়ালে না নিয়েই গোসলে গেলাম। যেয়ে দেখি, তোয়ালে আমার পরোনে।
-- শুভ্র-এর সাথে হাওয়াইন (ল্যপ-স্টিল) গিটার বাজানোর বিশেষ চেষ্টা। কয়েকটা গানতো চমৎকার বাজাতাম। শেষমেশ সব ক্ষুদ্র চেস্টাই সোনার অতীত হয়ে যায়।
--আমার প্রেয়সীর সাথে মন-মালিন্য, মোবাইল বন্ধ, সেই রাতেই বাস ধরে ঢাকা। পকেট আগে থেকেই ফাঁকা, প্রেয়সীর টাকায় সারাদিন ঘোরাঘুরি করে, উনি মোবাইল বন্ধ রাখার জরিমানা সরুপ টিকেট কেটে দিলেন, বাসে করে চলে এলাম আবার খুলনা।
--মাযহাব তোমাকে যে কারণে তৎকালিন সময়ে ৪০ টাকা খরচ করিয়ে মোগলাই টা খাইয়েছিলাম সেটা কি কেউ জানে? তোমার মত শান্ত ছেলের মুখ দিয়ে অমন শব্দ উচ্চারিত হবে আমি মরনেও ভাবতে পারি নাই। এখনও মনে করে হাসি।
-- সেই যে হারুনের হোটেল-- ভ্যান এর পিছহনে পা দুলিয়ে যাওয়া। ইলিশের দো-পেয়াজো আর সাদা ভাত। আর একটা মিস্টি-খিলি পান। এত বড় সাইজের পিস আর তো খাওয়া হল না। হারুন তুই বেটা কি খাওয়ািলি আজ নয়-দশ বছর পরেও ভুলতে পারলাম না।
-- ইমরান আমার অনেক গানের দুটি গান তোমাকে উৎসর্গ করা, সেটা কি তুমি জান, খুব ভাল শ্রোতা ছিলে।
-- মামুন মাঝরাতে রেল-লাইন ধরে হাটা আর পুকুর পাড়ে শুয়ে থাকার দিন গুলি এখনও বেঁচে আছে। ইচ্ছেটা মাথা চাঁড়া দিয়ে ওঠে।
-- বন্ধুবর সবাই ইন্জিনিয়ার হয়ে চলে যাচ্ছে, আমি সহ কয়েকজন আটকে গেছি। মিজান স্যার শেষপর্যন্ত ছাড়েন নি। সবার চেয়ে আরও দুই মাস বেশি কাজ করিয়ে নিয়েছেন। এইটা তো ভোলা যাবে না কারণ এজন্য এই গরীবের কোন মামা-চাচা না থাকার পরও একটা জব হয়ে যাচ্ছিল। ঐ সময় প্রত্যেকটা দিন ছিল স্বপ্ন ভাংগার দিন। মামুন ও মাযহাব তখনও ছিল। দেয়াল ডিঙ্গিয়ে প্রত্যেক সকালে পরাটা আর ডিম আমরা তখনও খেতাম।
-- শেষ যখন দেখা হয় (কনভোকেশনে), মামুন, মাঝহাব মিলে প্রায় ১২০ টা ডালপুরি খেয়েছিলাম। বিশেষ দিনে পেটের পরিধি কত বড়ই না হয়।

কুয়েট তুমি সব দিয়েছ-- তোমার জন্ম না হলে আমাদের না বলা হাজারো অতীত জন্মই নিত না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×