somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুজুর কেন্দ্রিক মুসলিম সমাজ ও দায়সারা মুসলিম | বিবরণ পোস্ট

২৫ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আল্লাহ কুরআনের প্রথম যে আয়াতটি নাজিল করেছিলেন সেটা ছিল সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত , যার প্রথম শব্দটিই ছিলো পড় !

আব্রাহামিক তথা ইহুদি খ্রিস্টান মুসলিম এই তিন ধর্ম অনুযায়ী প্রথম মানুষ হলেন আদম আ.
আদম আ. কে বানানোর পর ফেরেশতা ইভেন তৎকালীন সবচেয়ে ধর্মপ্রাণ আল্লাহওয়ালা জীব জীন আজাজিলকেও(পরবর্তীতে কালে শয়তান) আদেশ দেয়া হয়েছিল আদমকে সিজদাহ করার জন্য !
এই ঘটনা সমূহ যদি আমি হুবুহু কোরআন থেকে উদ্ধৃত করি তবে, সূরা আল বাকারার ৩১-৩৪ তম আয়াত আমাদেরকে পড়তে হবে । যেখানে আল্লাহ আদম আ. জ্ঞান শিক্ষা দেয়া , সেই জ্ঞানকে অসম্মান ও আল্লাহর আদেশকে অমান্য করায় পুণ্যবান থেকে আজাজিলের শয়তান হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে বর্ণনা করেছেন । আরো পড়া যেতে পারে কুরআনের সূরা আল আরাফের ১১ ও ১২ নাম্বার আয়াত ।


কেন এই সম্মান ????

উত্তর হলো জ্ঞান !
আদম আ. কে আল্লাহ জ্ঞান দিয়েছেন যেটা মানুষকে করেছে সৃষ্টির সেরা ।

আল্লাহ কুরআনে অজস্রবার পড়াশোনার কথা বলেছেন, যেমন আমি যদি উল্লেখ করি, কুরআনের ৩৯ নাম্বার সূরা অর্থ্যাৎ সূরা আল যুমারের ৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন , "যারা জানে আর যারা জানে না তারা সমান নয় । জ্ঞানীরাই পড়াশোনা ও অনুসন্ধান করে । "

অর্থ্যাৎ স্পষ্ট আল্লাহ পড়াশোনার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন।

আরো আয়াত যদি আমি বলি, যেমন কুরআনের ২০ নাম্বার সূরার ১১৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাসূল স. কে শিখিয়ে দিয়েছেন একটি দোয়া "রাব্বি জিদনি ইলম" অর্থাৎ হে আল্লাহ আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দাও !!!


এরকম আরো অসংখ্য প্রমাণ আছে কুরআন থেকে পড়াশোনাও জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে ।

কিন্তু বর্তমানে মুসলিমদের ভিতর এই পড়াশোনা ও গবেষণায় আগ্রহ কাজ করছে না । তারা সব ছেড়ে দিয়ে এখন কেবল মরলে কি পাবে আর না পাবে ওই হিসাব করছে । বর্তমানে কমন কথা খালি মাদ্রাসা বানাও টাকা দান করো আর বেহেশতের টিকেট কনফার্ম করো । পড়াশোনা করার বা জানার কোন দরকার নেই !!!

এই যুগটা হলো বিজ্ঞান ও গবেষণার যুগ ।এই যুগে মানুষকে আকৃষ্ট করতে হলে সেটা পড়াশোনা বা বিজ্ঞান চর্চা দিয়েই করতে হবে । কুরআনে আল্লাহ বার বার পড়াশোনা ও গবেষণার কথা বললেও এখন মুসলিমদের তাতে অনীহা । অনীহা বলাটা ঠিক হবে না, আমি বলবো অজ্ঞানতা !

একজন মুসলিম জানেই না কোরআনে কি বলা আছে আর না আছে । বর্তমানে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, ইসলামি জ্ঞান অর্জন আর কোরআন বুঝে পড়ার দায়দায়িত্ব কেবল মাদ্রাসায় যারা পড়বে তাদের আর বাকিরা টুকটাক নামাজ রোজা , মাঝে মধ্যে দান খয়রাত আর শেষ বয়সে সৌদিতে হজ্বে যেয়ে নিজের ইসলামি দায়িত্ব পালন করে ফেলবে !!!

কি এক ভয়াবহ অবস্থা ! যেখানে প্রত্যেকটি মুসলিমের দায়িত্ব কুরআন পাঠ করে এর জ্ঞান অর্জন ও গবেষণা করা সেখানে আমরা নিজেরা এর থেকে অব্যাহতি নিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি কেবল হুজুরদের উপর। এতে করে হুজুররা ভালো খারাপ মনগড়া কিংবা সঠিক যাই বলুক আমাদের সেটাই মেনে নিতে হচ্ছে । কেননা আমরা তো জানিই না কোনটা সঠিক কোনটা ভুল । যদি নিজেরা কোরআন হাদীস পড়তাম তবেই না জানতে সক্ষম হতাম আসলে সঠিক কোনটা । এক বাংলাদেশেই কতগুলো ইসলামি আকিদা। যেমন, আটরশি , চরমোনাই , মাইজভাণ্ডারী হাবিজাবি !!!
কারণটা কি ??
কারণ হচ্ছে কেউ আমরা নিজেরা কোরআন হাদীস পড়ে কিছু না জানায় এই সুযোগে কিছু ধুরন্ধর ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইসলামকে ব্যবহার করছে । নয়তো এত বিভাজন হবে কেন !!!


এতো গেল ধর্মীয় জ্ঞানের কথা ,এরপর যদি আসি বিজ্ঞানের দিকে তবে মুসলিমদের অবস্থা আরো শোচনীয় । আশাকরি প্রত্যেকের বাসায় সাধারণজ্ঞানের বই আছে । আর না থাকলে এটিলিস্ট ইন্টারনেটতো আছে । তো ওই বইয়ের বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে যদি একটু খুঁজে দেখেন যে আপনার চারপাশের যে জিনিসগুলো দেখছেন যেমন ধরেন টিভি , ফ্রিজ ,এসি , বিমান , সফটওয়্যার , কম্পিউটার , বীজ , কৃষিপ্রযুক্তি , ওষুধ শিল্প , প্রতিষেধক , রোগজীবাণু , মেডিকেল সাইন্সের ইকুইপমেন্ট ইত্যাদি তাহলে তার প্রায় সবই অমুসলিমদের আবিস্কার করা ।

বর্তমান যুগে প্রযুক্তির ও মৌলিকবিজ্ঞান গবেষণার পুরোটাই চলেগেছে অমুসলিমদের হাতে । মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক পিছিয়ে পড়েছে । আসলে বিজ্ঞান প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করার সময় কই । এখনতো আমরা ব্যস্ত শিয়া ভালো না সুন্নি ভালো , আটরশি সহীহ নাকি মাইজভাণ্ডারী সহীহ এসব নিয়ে । আগেকার যুগে মুসলিমরা যেখানে ধর্ম চর্চার সাথে সাথে বিজ্ঞান চর্চায় সময় দিয়েছেন ,জন্ম নিয়েছেন রসায়নের জনক জাবির ইবনে হাইয়ান , আলোক পদার্থ বিজ্ঞানের পথিকৃত আল হাসান , মানুষের রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতির প্রথম বর্ণনাকারী ও ফুসফুসের কার্যপ্রণালী আবিষ্কারক ইবনুন নাফিস , বীজ গণিতের জনক মুসা আর আল খেয়ারিজমি প্রমুখ বিজ্ঞানীরা আর আমরা এযুগে এসে বিজ্ঞান চর্চা ছেড়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছি।


কারণ একটাই, আমরা নিজেরা কোরআন হাদীস পড়ি না তাই আমরা জানিই না কোনটা সঠিক । তাই এক হুজুরের অনুসারী আর আরেক হুজুরের অনুসারীর গ্যাঞ্জাম করতে করতেই আমাদের সময় শেষ।


কি লজ্জার বিষয়, ১৮০ কোটি মুসলিম পৃথিবীতে থাকলেও বিজ্ঞানে নোবেল জয়ী ও আমাদের চারপাশের জিনিস আবিস্কার করা বিজ্ঞানী সমূহের ভিতর মুসলিম নেই বললেই চলে ।


হায়রে, আরব বিশ্ব কোটি কোটি টাকা শালারা বিনোদন করতে উড়ালেও একটা ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তারা বানাতে পারে না । আমেরিকা ইউরোপে কেমব্রিজ , অক্সফোর্ড , এমআইটি , ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি , হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তারা বানাতে পারে না । গুগল , মাইক্রোসফট , কোয়ালকম , ব্রডকম , সান মাইক্রোসিস্টেমস , এডোবি ইনকর্পোরেট , এটমেল, ইন্টেল, এএমডি , এআরএম, টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্টস এর মতো ভালো কোনো টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান আমাদের নেই !

বোয়িং এয়ারক্রাফট করপোরেশন , মিতসুবিসি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ , রোলস রয়েস, স্পেস এক্স , সিমেন্স এজি , তোশিবা সেমিকন্ডাক্টর করপোরেশন , বোস্টন ডাইনামিক্স , গ্ল্যাক্সস্মিথক্লিন , জেনারেল ড্রাগস লিমিটেড এসবের মতো একটিও বড় প্রযুক্তি ও মৌলিক মেডিকেল পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের নেই ।



কুরআন পড়লে এই জানা যায় যে, আগের প্রতিটি যুগে তৎকালীন বহুল চর্চিত বিষয়ের উপরে নবী রাসূলদের এক্সপার্ট ও ক্ষমতা দিয়ে পাঠানো হতো যাতে মানুষকে ইমপ্রেস করা যায় । যেমন মুসা আ. সময়ে জাদুবিদ্যা ছিল মূল আকর্ষণ তাই মুসা আ. কে আল্লাহ আসা নামের জাদুর লাঠি দিয়ে পাঠিয়েছিলেন । তেমনি রাসূল স. সময়ে আরবে কবিতা ও কবির কদর ছিল তাই আল্লাহ কোরআনকে কাব্যিক ভাবে অবতীর্ণ করেছিলেন ।


বর্তমান যুগটা হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির । এই যুগে মানুষকে ইমপ্রেস করতে হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবদান না রেখে উপায় নেই । তাই প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিৎ কোরআন হাদিস নিজেরা অধ্যয়ন করার চেষ্টা করা ও বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে হাত লাগানো ।


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৯
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×