সাগরের পানি
আমরা সবাই মোটামুটি জানি যে সাগরের পানি লবণাক্ত , এটা খেতে বিস্বাদ । নোনা পানি পান করা অনেক অরুচিকর ।
কিন্তু ধরা যাক, কেউ কোনভাবে সাগরের পাড়ে একা কোন দ্বীপে আশ্রয় পেল বা বাস করতে গেলো কোন কারণে । ধরা যাক, ঝড়ে জাহাজ ডুবির ফলে কেউ একাকী ভাসতে ভাসতে সাগরের পাড়ে কোন দ্বীপে এসে পৌঁছলো। এখন তার পানির তৃষ্ণা পেয়েছে এবং পাওয়াটাই স্বাভাবিক । এখন সে কি করবে বা কি করা যায় !!!
আসুন আগে দেখি আমাদের তৃষ্ণা কখন পায় আর পানি কি করে তৃষ্ণা নিবারণ করে ।
মূলত মানবদেহের ৬০-৭০% এর উপরে হলো পানি। দেহের ভিতরে আছে কোষ । কোষের ভিতরে ও বাইরে থাকে পানি যাতে লবণ থাকে । কোষগুলো যে ঝিল্লি বা পর্দা দিয়ে আবৃত তা অর্ধভেদ্য মানে ওটা দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারবে তবে অন্যান্য পদার্থ যেমন লবণ এসব সহজে যেতে পারবে না।
পানির ধর্ম হচ্ছে কম ঘনত্বের থেকে বেশি ঘনত্বের দ্রবণে প্রবাহিত হওয়া। যেমন মনে করেন একটা পাত্রে পাঁচ লিটার পানিতে ১ কেজি লবণ আরেকটা পাত্রে পাঁচ লিটার পানিতে ১/২ কেজি লবণ গুলিয়ে নেয়া হলো। তার মানে ১ কিলোগ্রাম লবণ গুলিয়ে নেয়া পাত্রের লবণ-পানির দ্রবণের ঘনত্ব বেশি।
এবার যদি এই দুই দ্রবণকে অর্ধভেদ্য কোন ঝিল্লি দিয়ে আলাদা করা হয় তবে পানি ১/২ কেজি লবণের দ্রবণ থেকে বের হয়ে ১ লবণের দ্রবণের দিকে যেতে থাকবে । এই প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত না উভয় দ্রবণে লবণের মাত্রা সমান হয় । এই প্রক্রিয়াকে বলে অসমোসিস(osmosis)
একইভাবে মানবদেহের কোষের ভিতরে ও বাইরে স্বাভাবিক ভাবে সমান ঘনত্ব বিশিষ্ট পানি থাকে । রেচন প্রক্রিয়ায়(মূত্র ত্যাগ) বা ঘামের কারণে আমাদের দেহ থেকে যখন পানি বের হয়ে যায় তখন কোষের ভিতরের পানির লবণাক্ততা বাইরের চেয়ে বেশি হয়ে ফলে কোষ পর্যাপ্ত পানির অভাবে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে অসুবিধার সম্মুখীন হয় এবং সে মস্তিষ্কে সিগন্যাল পাঠায়। মস্তিষ্ক তখন তৃষ্ণার অনুভূতি তৈরি করে যাতে মানুষ পানি পানের জন্য ধাবিত হয় । এর ফলেই আমাদের তৃষ্ণা লাগে। পানি পান করলে দেহের কোষের ভেতর ও বাইরের পানির লবণাক্ততা সমান হয়ে যায়। অর্থাৎ আমরা স্বাভাবিক থাকি।
এখন তৃষ্ণার্ত অবস্থায় যদি সাগরের পানি তথা অতিরিক্ত লবণযুক্ত লবণ পানি পান হয় তবে ওই পানি দেহে প্রবেশ করার পর দেহ কোষের থেকে ওই সাগরের পানির ভিতরেই লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে পানি দেহ কোষের ভিতরে ঢোকার বদলে উল্টো দেহ কোষ থেকে বের হয়ে যায় ফলে মানুষ আগে যা তৃষ্ণার্ত ছিল তার থেকেও বেশি তৃষ্ণা তথা ডিহাইড্রেশনে ভোগে। মানে হলো তৃষ্ণার্ত অবস্থায় সাগরের পানি পান করলে তৃষ্ণাতো মিটবেই না উল্টো তৃষ্ণা বেড়ে যাবে বহুগুণে যা মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
তাই প্রচন্ড তৃষ্ণার্ত অবস্থায় সাগরের পানি সরাসরি পান করা মৃত্যু ডেকে আনার সামিল । সাগরের পানিকে ফুটিয়ে বা রৌদ্রতাপে বাষ্পীভূত করে সেই বাষ্পকে ঘনীভূত করে পান করা যেতে পারে। কিন্তু সরাসরি সাগরের পানি পান করলে উপায় নেই ।
অনুরূপভাবে প্রয়োজনের চাইতে বেশি স্বাদু পানি পান করলে দেহ কোষে অধিক পরিমাণে পানি প্রবেশ করে কোষ ফুলে যায় এবং ফেটে যায় । এর থেকে বমি এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৮ রাত ৯:০০