somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাবিশ্বের তুলনায় আমরা | বিজ্ঞান পোস্ট সিরিয়াল ৪

২৩ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা ও পৃথিবী কতো ছোট ?


বড় পোস্ট। সময় নিয়ে পড়ুন




বর্তমানে পৃথিবীতে জীবিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭৫০+ কোটি !!!

অনেক বেশি শোনালেও এই ৭৫০ কোটি লোক পাশাপাশি দাঁড়ালে ফিলিস্তিনের সমান আয়তন হবে । বাংলাদেশ এর সাথে যদি তুলনা করি তবে বর্তমান পৃথিবীতে সকল জীবিত মানুষ পাশাপাশি দাঁড়ালে সিলেট বিভাগের অর্ধেক পূরণ করতে পারবে ! কাঁধে কাঁধে দাঁড়ালে পৃথিবীর সব মানুষকে ১৩০০ বর্গ কিলোমিটার জায়গায়ই আটানো যাবে !!!


এতো গেলো জীবিত মানুষ । ধরা যাক যত মানুষ পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছে সবাইকে নিয়ে হিসাব করি । এই পর্যন্ত এস্টিমেটেড জন্ম নেয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০৭ বিলিয়ন বা প্রায় দশ হাজার সাতশো কোটি লোক । এই সব মানুষকে পাশাপাশি দাঁড় করালে বাংলাদেশের ৫৫-৬০% ভূমি পূরণ করা যাবে মাত্র !!!

এতোই ছোট আমরা !!!


এবার দেখা যাক আমাদের পৃথিবীর কি অবস্থা !

পৃথিবী হলো সৌরজগতের মিডিয়াম সাইজের একটি গ্রহ । এটি সূর্যের চারিদিকে ঘন্টায় ১০৭০০০ কিমি (এক লক্ষ সাত হাজার কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা) গতিতে ঘুরছে । এই স্পিডে ঘুরেও একটি পূর্ন ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে পৃথিবীর ৩৬৫ দিন বা একবছর লাগে । সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ জুপিটার বা বৃহস্পতি ।

বৃহস্পতি এতই বড় যে আমাদের নিকটবর্তী তারা প্রক্সিমা সেন্টাউরির থেকে কিঞ্চিৎ ছোট বৃহস্পতি । প্রায় ১৪০০ পৃথিবী বৃহস্পতির ভেতরে আঁটানো যাবে !


পৃথিবীর হোম স্টার হলো সূর্য । সূর্য এতোই বড় যে, এর ভিতর ১৩ লক্ষ পৃথিবী এঁটে যাবে !!! বৃহস্পতির সাথে তুলনা করলে ১০০০ বৃহস্পতি এঁটে যাবে সূর্যের ভেতর !

সূর্য হলো একটি তারা যেটি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে অবস্থিত । মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে মোট তারার সংখ্যা প্রায় ৩০০ বিলিয়ন !!! যা এর চেয়েও কয়েকশ বিলিয়ন বেশিও হতে পারে !!! আচ্ছা গ্যালাক্সি কি ওটা জেনে নেই। রাতের আকাশে তাকালে আমরা তারা দেখতে পাই । দিনের বেলাতে সূর্যের আলোর তীব্রতার কারণে মৃদু আলোর তারা দেখা যায় না । সে যাই হোক গ্রহ গুলো যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে তেমনি তারারাও দলগতভাবে(ক্লাস্টার) থাকে । এই তারার গুচ্ছ বা ক্লাস্টারকে হলে গ্যালাক্সি বা বাংলায় ছায়াপথ। সূর্য যে ছায়াপথে অবস্থিত তার নাম মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ।

তো এই যে এত এত তারা এরা পরস্পরের সাথে সংঘর্ষ হয় না কেন সহসা ? কারণ হলো এগুলো একটার থেকে আরেকটা ব্যাপক দূরত্বে অবস্থিত। এগুলো এতই দূরত্বে যে এদের মধ্যকার দুরত্ব কিলোমিটার এককে মাপা যায় না । এই দূরত্ব মাপতে হয় আলোকবর্ষ এককে । আমরা জানি মহাবিশ্বে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে চলা শক্তি হলো আলো । এর গতি সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার । তাহলে একবছরে আলো যেই দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোকবর্ষ বলে । এক আলোকবর্ষ সমান ৯.৪৬১ × ১০^১২ কিলোমিটার !!!

যেমন সূর্যের নিকটবর্তী তারা হলো প্রক্সিমা সেন্টাউরি । এটি পৃথিবী থেকে ৪.৩ আলোকবর্ষ দূরে। শুনতে কম শোনালেও এটা কিন্তু ব্যাপক দুরত্ব !!! মানুষের তৈরি এপর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুতগামী মহাকাশযান হলো আমেরিকার তৈরি ভয়েজার ওয়ান(Voyegar-1) এটি ১৯৭৭ সালে প্রেরণ করে ইউএসএ । এটির গতিবেগ সেকেন্ডে ১৭ কিলোমিটার । এই গতিতে চললেও পৃথিবীর তথা সূর্যের নিকটবর্তী তারা প্রক্সিমায় সেন্টাউরিতে পৌঁছতে এর প্রায় ৪০০০০ (চল্লিশ হাজার) বছর লাগবে !!!

পিচ্চি তারা বাদ দিলাম এবার আসি বড় তারার সাথে তুলনায় । সবচেয়ে বড় জ্ঞাত তারা হলো ভিওয়াই ক্যানিস মেজরিস (VY Canis Majoris) । এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৪৯০০(চার হাজার নয়শ) আলোকবর্ষ দূরে !!!
এর ব্যাসার্ধ সূর্যের ব্যাসার্ধের ২৬০০ গুন বড় । এটি এতই বড় তারা যে এর ভিতরে যে প্রায় ৯.৩ বিলিয়ন বা নয়শো ত্রিশ কোটি সূর্যকে আটানো যাবে !


সে যাই হোক, আগে যা বলছিলাম; মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে মোট তারার সংখ্যা তিনশ বিলিয়ন বা ত্রিশ হাজার কোটি । এই সংখ্যা এর চাইতেও বেশি হতে পারে !!! এই সব তারা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে তাদের যার যার নির্দিষ্ট গতিতে পরিক্রমণ(ঘুরছে) করছে । উদাহরণস্বরূপ আমাদের সূর্য(অবশ্যই তার সব গ্রহ উপগ্রহ সহ) প্রতি ঘন্টায় ৮,২৮,০০০ কিমি (আট লক্ষ আটাশ হাজার কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা) গতিতে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সেন্টারকে কেন্দ্র করে ঘুরছে । এভাবে এত গতিতে ঘুরেও সূর্যের প্রায় ২৩০ মিলিয়ন বছর লাগে একটি পূর্ন সার্কেল(চক্র) সম্পন্ন করতে !!!

সূর্য যেমন তার গ্যালাক্সি মিল্কিওয়েকে কেন্দ্র করে ঘোরে , সূর্যকে কেন্দ্র করে যেমন গ্রহ ঘোরে, গ্রহকে কেন্দ্র করে যেমন উপগ্রহ ঘোরে তেমনিই মিল্কিওয়ে বা প্রতিটা গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করেও কিছু ছোট গ্যালাক্সি ঘোরে । এদেরকে স্যাটেলাইট গ্যালাক্সি বলে । আমাদের মিল্কিওয়েরও এরকম স্যাটেলাইট গ্যালাক্সি আছে । যেমন স্যাজেটেরিয়াস হলো মিল্কিওয়ের একটি স্যাটেলাইট গ্যালাক্সি ।

এনিওয়ে, মিল্কিওয়ের মতো এরকম বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি এই মহাবিশ্বে আছে । আমাদের নিকটবর্তী মেজর গ্যালাক্সি হলো এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি । এটি মিল্কিওয়ের থেকে ২৫ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে ! এটি বড় গ্যালাক্সি । মিল্কিওয়েতে ৩০০ বিলিয়ন বা ৩০ হাজার কোটি তারা থাকলেও এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে আছে প্রায় ১ বিলিয়ন বা ১ লক্ষ কোটি তারা !!!!



মেজর গ্যালাক্সির বাদে যদি স্যাটেলাইট গ্যালাক্সি বলি তবে পৃথিবীর থেকে নিকটবর্তী গ্যালাক্সি হলো(হোম গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ে বাদে) ক্যানিস মেজরিস যা সূর্যের থেকে ২৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে ।

এই গ্যালাক্সি আবার একা নয় । অনেক গুলো গ্যালাক্সি একত্রে একটি একটি ক্লাস্টার গঠন করে । একেকটি ক্লাস্টারে ১০০ বা তারও অধিক গ্যালাক্সি থাকে । পৃথিবীর গ্যালাক্সি বা মিল্কিওয়ে হলো ভিরগো(Virgo) ক্লাস্টার বা সুপার ক্লাস্টারের অন্তর্ভুক্ত । এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিও এই ক্লাস্টারের গ্যালাক্সি ।

বর্তমান যুগে আধুনিক যন্ত্রপাতির দ্বারা আইডেন্টিফাই করা এরকম ক্লাস্টারের সংখ্যা প্রায় ১০ মিলিয়ন বা ১ কোটি !!!


এই ক্লাস্টারের পর কি হতে পারে বা আছে সেটা এখনো আমাদের অজানা !!! আমাদের টেকনোলজি এখনো এটি সেভাবে বের করতে সক্ষম হয়নি ।


একটি প্রশ্ন হতে পারে মানুষ এত জিনিস জানলোবা বের করলো কি করে । সংক্ষেপে বললে, মহাবিশ্ব থেকে আসা রেডিয়েশন(তেজস্ক্রিয়তা) , স্পেকট্রাম এনালাইসিস(বর্ণালী বিশ্লেষণ) , ও গ্র্যাভিটি(আকর্ষণ) ইত্যাদি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে । এগুলো নিয়েও লিখবো পরে।



শেষে বলি,

নিজেকে বড় ভেবে অহংকার করার আগে জাস্ট একবার ভাবুন এবার, আপনি বা আমরা কি আসলেই বড় !!!








সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×