এই বছর বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি পশু কোরবানি হতে যাচ্ছে । স্টকে আছে আরো বেশি । ক্রাইসিস হওয়ার চান্স নেই । প্রতি বছর এদেশে ২ কোটি ৪০ লাখ পশু জবাই করা হয় যার অর্ধেকই হয় ঈদ উল আজহার সময়ে ।
বাংলাদেশে প্রায় ১৬ কোটি লোক যার ৯০% মুসলিম । বাংলাদেশ হলো একটি উন্নয়নশীল(দরিদ্রই বলা চলে) । কোরবানি সামর্থ্যবানদের জন্য ফরজ । তো কোরবানির পশুর সংখ্যা যা দেখতে পাই তাতে এই দেশকে গরিব বা দরিদ্র পীড়িত বলতে ইচ্ছে করে না।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুসলিম প্রধান দেশ হলো ইন্দোনেশিয়া। এর লোকসংখ্যা প্রায় ২৬ কোটি । এদের অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের থেকেও ভালো। এদের বিপুল জনসংখ্যার অধিকাংশই মুসলিম । এই ইন্দোনেশিয়ায় কোরবানির সময়ে ৬ বা ৭ লাখ পশু কোরবানি করা হয়। গত বছরে ওদের ১৪ লাখ পশু রেডি ছিল কোরবানির জন্য ।
সুতরাং আমরা ইন্দোনেশিয়ার চাইতেও বহু গুনে এগিয়ে পশু কোরবানির বেলায় । তার মানে এত টাকা ওয়ালা লোক আছে এদেশে । এই টাকার উৎস কি ? বৈধ হলে অবশ্যই দেশের অবস্থাও আরো অগ্রগতি সম্পন্ন হতো নিশ্চয়ই। কিন্তু তাতো না । তাহলে এত টাকার উৎস বৈধ না অবৈধ ওই প্রশ্ন আমি করতেই পারি ।
ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করে যা দেখলাম বাংলাদেশ হলো কোরবানিতে পশু জবাইয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন । ১১.৪ মিলিয়ন(১ কোটি ১৪ লাখ) পশু আর কেউ কোরবানি করতে পারে না । পাকিস্তান আছে দু'নম্বরে , ১০ মিলিয়ন বা প্রায় ১ কোটি পশু কোরবানি দিয়ে ।
এবার যদি ধর্মীয় দৃষ্টিতে বলি,
মুসলিম সম্প্রদায় কি ভুলে যাচ্ছে কোরবানির আসল কথা ও শিক্ষা ?
আল্লাহ দেখেন তাকওয়া বা আল্লাহর প্রতি ঈমান । কে কতগুলো পশু জবাই করলো, কে কতো দামি আর মোটা পশু কোরবানি করলো এসব আল্লাহ দেখেন না । ইভেন তার থেকেও বড় কথা হলো হারাম বা অবৈধভাবে উপার্জিত টাকায় কোরবানি দিলে কোরবানিই কবুল হবে না আল্লাহর কাছে ।
এনিওয়ে, ধর্মীয় বাদেও
আরেকটা ব্যাপার আছে তাহলো, কোরবানির একটা অর্থনৈতিক দিকও আছে । ওটার আলোকে বললে,
এই ১ কোটি ১০ লাখ পশুর এভারেজ দাম যদি হয় ৩০,০০০ টাকা(আরও বেশি হবে কেননা ৪০ লাখের উপরে গরু মহিষ জবাই হয় এদেশে ঈদের সময়ে) তবে পশু ক্রয়ে মোট টাকা দাঁড়ায় প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা(৩৩ লিখার পর ১০ টা শূন্য দিলে যা হয়) ডলারে এটা ৪.১২৫ বিলিয়ন ডলারের মতো !!! এটা তো আমার হিসাব । আসলে এই টাকা আরো বেশিই হবে ।
কোরবানি ঈদ উপলক্ষে এই বিপুল টাকা ধনীদের পকেট থেকে বের হয় । এছাড়া পশু পালন, মাংস প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া শিল্প এসবে লাখ লাখ লোকের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ হয়। এছাড়া অনেকে দরিদ্র পরিবার হয়তো এই ঈদের সময়টাতেই একবার মাংস খাওয়ার সুযোগ পান । দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে এটি অনেক ভালো অবদান রাখে নিঃসন্দেহে।
সুতরাং কোরবানির মূল শিক্ষা মেনেই আমরা ইদ উদযাপন করি ।
রেফারেন্স
https://www.bdnews24.com/en/detail/economy/1521543?
https://www.independent.co.uk/news/world/asia/eid-2016-indonesia-slaughtered-600000-animals-one-day-to-celebrate-islamic-holiday-a7244611.html
https://www.geo.tv/latest/114495-Pakistanis-to-sacrifice-over-10-million-animals-this-Eid
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:৪৮