ফেসবুক ও ইন্টারনেট
ফেসবুক হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আর জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম । এর প্রায় তিনশ বা সাড়ে তিনশ কোটি ইউজার আছে । এই ফেসবুক ব্যবহার করার ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে । বর্তমানে যা অবস্থা দেখছি, তাতে খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান ইত্যাদির মতো ফেসবুকও একটা ফান্ডামেন্টাল জিনিস হয়ে গেছে । ফেসবুক কিন্তু ফ্রি । একাউন্ট খোলা ও ব্যবহার করতে এক পয়সাও লাগে না । হয়তো সরাসরি লাগে না কিন্তু ফ্রি বলতে আসলে কিছুই নেই । যখন কোন কিছু ফ্রি তখন আমরাই(ইউজার) হলাম কোম্পানির প্রফিট।
পুরো ইন্টারনেট নামের জিনিসটির ডেফিনেশন বদলে দিচ্ছে ফেসবুক । এখন অনেকেই ফেসবুক বলতেই ইন্টারনেট বোঝেন । প্রথম আলোর একটি রিপোর্টে পড়লাম বাংলাদেশের মোবাইল ডাটার সিংহভাগই যায় ফেসবুক চালাতে। ফেসবুকও তাদেরকে এখন ইন্টারনেটের বিকল্প বানানোর ধান্দায় আছে । মেসেজ, লাইভ ভিডিও, এমনি ভিডিও, ভিডিও কল, অডিও কল, নিউজ পেপার, অনলাইন বিজনেস, পেজ/গ্রুপ , গেমস এসব করে করে পুরো ইন্টারনেট নামের বিশাল জিনিসটাকে তারা তাদের নিজেদের ভিতর নিয়ে আসার চেষ্টা করছে । ফেসবুক আবার ফ্রি কিছু ওয়েবসাইটও ব্রাউজ করতে দিচ্ছে । কিন্তু এসব ওয়েবসাইটে যেতে হলে ফেসবুক এপের মাধ্যমে যেতে হবে। এছাড়া তারা এশিয়া ও আফ্রিকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য ফ্রি ইন্টারনেট দেয়ার জন্য স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে । আদতে এসব ভালো মনে হলেও এগুলো সব হলো তাদের ইন্টারনেট মনোপলি । ফেসবুক এখন নিজেকে ইন্টারনেটের বিকল্প বানাতে মরিয়া । দিন রাত মানুষ এখানেই পরে থাকছে । গুগল আর ফেসবুক এই দুই ওয়েব জায়ান্ট এখন ইন্টারনেট নামের জিনিসটাকে গুগল ডট কম আর ফেসবুক ডট কমের ভেতরে সীমাবদ্ধ করে ফেলতে চাইছে ।
বর্তমানে দেখি ফোনে মেসেজ আসে অপারেটর থেকে, যেমন আমি আমার অপারেটর রবি থেকে মাঝে মাঝে "ইন্টারনেট" অফার পাই মেসেজে । তবে ব্যাপার হলো ওই "ইন্টারনেট" অফার বা ডাটা দিয়ে কেবল ফেসবুক চালানো যাবে । তার মানে কি "ইন্টারনেট মানেই ফেসবুক" !!!
আদতে এটা ভালো মনে হলেও এর রয়েছে সুদূরপ্রসারী বাজে প্রভাব । মানুষকে যখন কোন একটা জিনিসে নির্ভরশীল করে ফেলা যায় তখন সে এর বাইরে কিছু ভাবতে পারে না । ভাবতে পারে না তো তাও কম হয়ে গেল, এর অভাবে মানুষ উতলা হয়ে পরে । এটাই হলো ক্ষতি ।
যেমন, ফেসবুকের কারণে ব্যাক এন্ড ফোর্থ কমিউনিকেশন(সরাসরি/মুখোমুখি যোগাযোগ) প্রভাবিত হচ্ছে । মানুষ কথা বার্তা চ্যাটেই বলাবলি করছে এতে করে সামাজিকতার(Socialization) স্বরূপে পরিবর্তন ঘটছে।
সে যাই হোক, এছাড়া অতিরিক্ত আসক্তির কারণে লেখাপড়া, অন্যান্য কাজ কারবার ভুলে মানুষ সময় নষ্ট করছে । এছাড়া ইন্টারনেট নামের জিনিসটার থেকে বেরিয়ে এসে কেবল ফেসবুকের মধ্যে আটকে যাচ্ছে ।
ফেনসিডিল হলো কফের ওষুধ । মাত্রানুযায়ী সেবনে এটা উপকারী রোগ সারাতে । কিন্তু বেশি খেয়ে ফেললেই তা মাদকদ্রব্য ও ক্ষতিকর একটা জিনিস হিসেবে পরিগণিত হয় ।
তেমনি,
ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অবশ্যই দরকার । কিন্তু এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও ইন্টারনেটের বিকল্প হিসেবে গরীব ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের কাছে উপস্থাপন মোটেও সুখকর কোন খবর নয় । উন্নত দেশসমূহে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা বা বহুল ব্যবহার পড়তির দিকে থাকলেও গরিব ও উন্নয়নশীল দেশসমুহে এটা বেড়ে চলেছে । তারা স্যাটেলাইট ও নানা অফার টফার দিয়ে ফেসবুককেই ইন্টারনেটের বিকল্প দাঁড় করাতে চাইছে । অনেকেই আছে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে কোন তথ্য বের করতে না পারা বা কোন সমস্যার সমাধান বের করতে না জানলেও ফেসবুকে খুবই সক্রিয় । এটা খুবই আশঙ্কাজনক ঘটনা । এই "ইন্টারনেট মানেই ফেসবুক" এই গন্ডি থেকে বেরুতে না পারলে বা এর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নিলে জাতি হিসেবে আমাদের ক্রিয়েটিভিটি ও সোশ্যালাইজেশন এর তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটবে অদূর ভবিষ্যতে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৬