ভাইস পিন্সিপাল বললেন- এ দোষ কি আমাদের ?
মোঃ খুরশীদ আলম
গত বছর সমাপনী পরীক্ষার পূর্বে আমার ছেলের পেটে ব্যথার সমস্যা খুব প্রকট আকার ধারন করে। তাকে নিয়ে চিকিৎসকের সম্মরনাপন্ন হই। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে বললেন, তাকে পড়ার জন্য বেশী চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। পড়াশুনার চাপ বেশী হওয়ার কারণেই তার এই সমস্যা। আশ্বাস দিলেন, ওর উপর ওকে ছেড়ে দিন। সব ঠিক হয়ে যাবে। যা হোক, যতটুকু সম্ভব চাপ কমিয়ে দিলাম। পাশ করল বটে কিন্তুপরীক্ষায় আশানুরুপ ফলাফল হলো না।
এখন সে ষষ্ঠ শ্রেণীতে। চট্টগ্রামের নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রসার ছাত্র। প্রথম সাময়ীক পরীক্ষা শেষ হয়েছে, বের হয়েছে ফলাফল। পনেরটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে সাত বিষয়ে ফেল করেছে। আমার মাথা খারাব, যা উপদেশ দেয়ার দিলাম।
রেজাল্ট কার্ড জমা দেয়ার সময় শ্রেণী শিক্ষক মহোদয় আমার গিন্নিকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিলেন। তার কয়েক দিন যেতে না যেতে ভাইস প্রিন্সিপাল মহোদয় আমাকে ফোন দিলেন। প্রশ্ন করলেন -
ভা: প্রি; মহোদয় - “ আপনার ছেলে এতগুলো বিষয়ে ফেল করলো, এ দোষ কি আমাদের “
আমি – হুজুর, আমরা তো আপনাদের দোষ দেইনি।
ভা: প্রি: মহোদয় – তারপরও তার রেজাল্ট কার্ড নিয়ে আসুন। কথা বলি।
আমি – জ্বি আচ্ছা।
এখন, যে বিষয়টি আমি বলতে চাচ্ছি সেটা হলো - বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে টেনশন, চিন্তা-ভাবনা কারো কোন অংশে কম নয়। বাচ্চাদের আমরা পড়াচ্ছি ঔষধ খাওয়ানোর মতো নাক মুখ চেপে ধরে। আমি অবাক হই কম্পিউটারে দেয়া 20 ওয়ার্ডের পাসওয়ার্ড মাত্র একবার দেখে আমার ছেলে রিকভার করে ফেলেছে অথচ এক ঘন্টা পড়েও সহজ একটি প্রশ্ন সে মুখস্থ করতে বা শিখতে পারে না। এটি কেন হচ্ছে ?
সকাল 7.30 থেকে 9 টা প্রাইভেট টিচার, 10 .30 থেকে 4 টা মাদ্রাসায় ক্লাশ, 5-7 টা আরবী প্রাইভেট এর পর বাসায় 8-10 টা পড়া রেডি করার পর একটা বাচ্চাকে কত চাপ দেয়া যায়। চাপেরওতো একটা চাপ আছে। ফলে যা হবার তা হচ্ছে। পড়া শুনায় তার কোন আনন্দ আসছে না, সে খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। আমরা তার পিছনে সময় ও অর্থ ব্যায় করছি ঠিকই কিন্তু সে আমাদেরকে আউটপুট সেভাবে দিতে পারছে না।
ষষ্ঠ শ্রেনীতে 15 বা তার অধিক বই কেন থাকতে হবে এটা আমার বুঝে আসে না। আমাদের সময় আমারাতো 6 টি বই পড়েই সময় কাটিয়েছি। আমাদের স্কুল ছুটি হতো দুপুর বার টা বা একটায়। আর এখন বই বেশী হওয়ার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হয় চার টায়। তাদের আমরা খেলা থেকে বঞ্চিত করছি, বঞ্চিত করছি বিনোদন থেকে। শুধু পড় পড় পড় বললেই কি পড়া হয়, জানিনা।
আমার ছেলে হয়তো আবার রেজাল্ট খারাপ করবে। আমার শিক্ষক মহোদয়রা ফোন করে উপদেশ দিবেন। মাদরাসা থেকে হয়তো বের করে দিবেন। কিন্তু আমি কার দোষ দিব। দোষটা কার। আমার ছেলের, আমার ছেলের মতো অন্যান্য ছাত্রদের ? না, তাদের নয়। দোষ বাবাদের, দোষ অভিভাবকদের। কারণ আমরা হতভাগ্য অভিভাবকরা ভাল ফলাফল না হওয়ায় শুধু সন্তানদের উপরই ঝাল মেটাই। যারা আমাদের কচি কাচা সন্তানদের উপর বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে তাদের টিকিটাও ছুঁতে পারিনা। জানিনা, আর কতো কাল আমাদের এভাবে সইতে হবে। শুনতে হবে, “ দোষটা কার ?”