আমজনতা বরাবরই লাথির কাঁঠাল
প্রসঙ্গ : সাম্প্রতীক
পান থেকে চুন খসলেই সবাই জনগণের উপর ঝাল মেটায়। এদেশে পাবলিক বা আমজনতা কতো অসহায় তা ভূক্তভোগীমাত্রই জানেন। সকলের ক্ষোভ প্রকাশ করার ক্ষেত্র যেন আমজনতা, সাধারণ পাবলিক। আমজনতা বরাবরই লাথির কাঁঠাল। যদিও লাথি খাওয়া দক্ষ জনগণ প্রতি পাঁচ বছর পরপর শক্তিমত্তা প্রকাশ করার একবার সুযোগ পায়, কিন্তু কিছুকাল পূর্বে সেই সুযোগও কেড়ে নেয়া হয়েছে গণতন্ত্রকে মুক্ত করার অজুহাতে।
বাজারে গিয়ে দোকানির সাথে দামাদামি করা যাবেনা। দোকানির চোখ রাঙ্গানোকে আজরাইলের চাহনির সাথে তুলনা করা যায়। “ লইলে লন না লইলে ভাগেন” বলার পর আর কিই বা করার থাকে। বাকীতে সদাই কিনবেন? সেখানেও আপনাকে বলির পাঠা বানাবে দোকানি, সুযোগ বুঝে। বাকির খাতায় অনেক সময় গোজামিল করে রাখবে, তবে ভুলেও কম লিখবে না, দু’টাকা বেশী ছাড়া।
পাবলিক বাসে আদর করে উঠাবে হেলপার চালকেরা আর নামানোর সময় ? কে বাঁচল আর কে ভাঙ্গল তা তাদের দেখার বিষয় নয়। কারণ, আপনি আমজনতা, সাধারণ পাবলিক, লাথির কাঠাঁল।
[ প্রথমে আদর করে বাসে উঠায় তার পরে ঠেলা মেরে নামিয়ে দেয়া তাদের বড় সমস্যা]
কিছু থেকে কিছু হলেই ধর্মঘট, হরতাল, ভাংচুর এদেশে পানতা ভাত হয়ে গেছে। পরিবহন সেক্টর, ছাত্র ধর্মঘট, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজগতা আর অতি সম্প্রতী চট্টগ্রামের মেক্স হাসপাতালের চিকিৎসকদের চিকিৎসাজনিত ভুলকে কেন্দ্র করে দেশের আমজনতার অবস্থা নাকাল। সবাই ধমকি দেয়, হুমকি দেয় হত্যা-গুম আর অতি সম্প্রতী যোগ হওয়া হতুড়ীপিটা করার। আপনার কিই বা করার আছে ? আপনি আমজনতা, লাথির কাঁঠাল।
পাড়ার মোড়ের দোকানদার, রিক্সা, বাস চালক আর হেলপাররা শিক্ষার আলো পায়নি বলে তাদের দ্বারা অনৈতিক আচরণ সহ্য করা যায়, কিন্তু চিকিৎসক! ভেবেছেন কখনো ? মানুষ আল্লাহ তায়ালার পরে নাকি ডাক্তারদের বিশ্বাস করে সবচেয়ে বেশী। সেই ডাক্তাররা যখন কথায় কথায় হাসপাতাল বন্ধ করে দেন, বন্ধ করে দেন রোগীদের চিকিৎসা তখন প্রশ্ন জানে এরা কেমন শিক্ষিত। কোন একজন ব্যাক্তির দায় কি গোটা দোশের সকল আমজনতা তাঁদের কাঁধে তুলে নিতে পারে? আচ্ছা, ডাক্তার হলে কি তিনি আইনের উর্দ্ধে? তার কি ভুল হতে পারে না বা তার দোষের কি শাস্তি হতে পারে না? দিন দিন ডাক্তারদের প্রতি মানুষ বিতৃষ্ণা প্রকাশ করছে। সমিতি বা সংগঠনের কাজ কি? শুধুমাত্র দলের নেতাকর্মীদের দোষ ঢাকতে কথায় কথায় আন্দোলন আর ধর্মঘটের ডাক দেওয়া। সংগঠন হতে কি দোষীদের দোষ স্বীকারোক্তিতে বাধ্য করা বা আইনের আওতায় এনে প্রাপ্য সাজার ব্যবস্থা করা যায় না। আবশ্যই যায়, কিন্তু বাংলাদেশ বলে এই ব্যত্ক্রিমটি দৃশ্যমান হচ্ছে না।
[একজন ডাক্তারের সুন্দর আচরণ হতে পারে রোগীর সমস্যার অর্ধেক সমাধান]
আমরা চাইনা কেউ ডাক্তারদের কসাই বলুক, হারামখোর বলুক বা অতি মারাত্বক বিশেষণ প্রয়োগ করুক। আমরা চাই সকল পেশাকে সকলে ভালবাসুক, ভালবাসুক মানুষকে, মানুষের জীবনকে। মানুষ মানুষের জন্য এই বোধ সকলের মধ্যে উদয় হোক। সাংবাদিক, ডাক্তার, উকিল, প্রফেসর বিশেষণগুলো কারো পরিচয় বহন না করুক বরং মানুষ “মানুষ” ই এই পরিচয়ে সকলে পরিচিত হোক। সবখানে, সকলের কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:৪৭