somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাপ্পান্ন দিন পর গলিত দেহ নিয়ে বন্ধুর বাসা থেকে বেরিয়ে এলো আরেক বন্ধুর লাশ

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাশের চেহারা এত বিকট হয়! বোটকা পঁচা গন্ধে পেট গুলিয়ে আসছে। তার চেয়েও বড় কথা, একটা মানুষ লাশের সাথে একই ঘরে ঘুমালো্ইবা কিভাবে? একদিন নয় দুই দিন নয়, গুনে গুনে ছাপান্ন দিন ধরে ঘরের মেঝের নীচে লাশটা লুকিয়ে রাখা সহজ কথা নয়। তাও আবার নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধুর লাশ। কৌতুহল জাগলে পড়তে থাকুন.......

২০/৯/১৭ তারিখে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার উলট গ্রামের রবিউল। বৃদ্ধ বাবা সকালে ঘুম থেকে উঠে খুঁজতে থাকে রবিউলকে। কিন্তু, ঘরে তাকে খুঁজে পায় না। ভাবে, কোথাও বেড়াতে গেছে বুঝি। পরদিনও ঘরে ফেরে না রবিউল।

হঠাৎ রবিউলের ভাইয়ের ফোনে একটা এসএমএস আসে। ‘ভাইকে বাঁচাতে চাইলে ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা পাঠাও’।

এইবার সবাই নড়েচড়ে বসে। রবিউলের বাপ-ভাই কি করবে বুঝতে না পেরে রবিউলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু মামুনের কাছে যায়। সেও তাদের তাদের সাথে তার বন্ধুকে খুঁজতে থাকে। মাঝখানে আরও একটা দিন কেটে যায়। কোন উপায় না দেখে সুজানগর থানায় জিডি করে রবিউলের বড় ভাই। জিডি নং-৯৩৬ তাং-২২/৯/১৭ খ্রিঃ। দায়িত্ব বর্তায় এসআই বেলালের উপর। বিভিন্ন সূত্র ধরে তিনি এগুতে থাকেন। এক পর্যায়ে বাদী পক্ষ অধের্য্য হয়ে যান। হৃদয় নামের এক জনকে আসামী করে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১১, তাং- ৫/১০/১৭ খ্রিঃ। পুলিশ হৃদয়কে গেপ্তার করে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক গ্রেপ্তার হয় আরো পাঁচ জন। তারা টাকা চাওয়ার কথা স্বীকার করলেও রবিউলের কোন হদিসই দিতে পারে না। তীরে এসেও তরী ডোবার মত ঘটনা। সব যেন গোলমেলে লাগছিল। তাহলে রবিউল গেল কই।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) জনাব গে্ৗতম কুমার বিশ্বাস ও সুজানগর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জনাব রবিউল ইসলামও কোমর বেঁধে নামলেন কাজে।সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেল আইটিতে দক্ষ কাউকে কাজে লাগাতে হবে।দায়িতত্ব দেয়া হয় ডিবির এসআই অসিতকে। অদম্য কৌতুহলী অসিত সব শুনে মনোযোগ দিলেন রবিউলের জীবন যাপনের উপর। ঘটনা ঘাটাঘাটির এক পর্যায়ে জানতে পারলেন, রবিউলের সাথে সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছিল মামুনের।

মামুন কোথায়?

ঘটনার ১০/১৫ দিন পরই ঢাকায় চলে গেছে চাকুরির খোঁজে।নানা প্রলোভনে ডেকে আনা হল তাকে। কি নিষ্পাপ নুরানী চেহারা। শশ্রুমন্ডিত মুখ। ২০/২২ বছরের টকবগে যবক মামুন। কি হাসি-খুশি ছেলেটা। কোরআন হাসীসের জ্ঞান অগাধ। শুধু একটা বিষয় তার জানা ছিল না। আর সেটা হল-পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ। রবিউল যেদিন হারায় সেই দিন তার মোবাইলের শেষ কলে সে মামুনকে কি বলেছিল, আর তাকে পাঠানো এসএমএসটা কি ছিল এই দুই প্রশ্নের জালেই ফেঁসে গেল মামুন। তাকে বলতেই হল সেই ভয়ঙ্কর রাতের কথা।

২০/০৯/২০১৭ তারিখ রাত প্রায় এগারটা। প্রেম ঘটিত একটা ব্যাপারে রবিউলকে মামুন তার বাসায় ডেকে আনে। এরপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে কৌশলে রবিউলকে কড়া ঘুমের ওষুধ মেশানো পানি খাওয়ায় সে। এরপর পরিকল্পনা মত শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় রবিউলকে। তারপর যা ঘটেছে তা কল্পনারও অতীত। মামুন ঘরের মধ্যে একাই লাশের জানাযা পড়েছে। বন্ধুকে তার শোওয়ার চৌকির পাশে মেঝের মাটিতে কবর দিয়েছে। তাহাজজতের নামাজ ও পড়েছে। পরের দিন খুব স্বাভাবিকভাবে রবিউলের বাপ-ভাইদের সাথে মামুনকে খোঁজাখুঁজি করেছে। আবার ফাঁকে ফাঁকে পরিচয় গোপন করে মোবাইল ফোনে রবিউলের ভাইয়ের কাছে মুক্তিপণের টাকাও চেয়েছে। এর কিছু দিন পর চলে যায় ঢাকায়। কেউ ঘুনাক্ষরেরও জানতে পারে না কি হয়ে গেছে।

কে জানতো কোন এক এসআই অসিত বা বেলালের মত কোন পুলিশ তার সবটুকু ঢেলে দিয়ে বের করে আনবে ঘটনার ভেতরের ঘটনা।

৫৬ দিন পর ১৭/১১/২০১৭ তারিখের কোন এক সকালে শত শত গ্রামবাসীর উপস্তিতিতে মাটি খুঁড়ে তারই দেখানো মতে বের করে আনবে হতভাগা রবিউলের লাশ।

সত্য প্রকাশ পাবেই।

স্যালুট পাবনা জেলা পুলিশ.....

জয় হোক পাবনা জেলা পুলিশের। জয় হোক পেশাদারিত্বের। আল্লাহ আমাদের নিরাপদ রাখুন।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩৫
১৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×