সেই কখন থেকে ঘুম আসছেনা রুপিকার। মাঝে মাঝে তন্দ্রা যাচ্ছে আবার এর মাঝে চমকে চমকে উঠছে। ল্যাপটপের স্ক্রীনে তার আপন ঠিকানার কিছু ছবি এলোমেলো ভঙ্গিতে পাল্টাচ্ছে।
গড়িমসি করে দিনে সময় কেটে গেলেও রাত যে শেষ হতেয় চায় না। অঘুম রজনী গুলো মনে হয় থেমে আছে, প্রকৃতির শুনশান নিরবতা নিজের মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। ইদানিং রুপিকার এমন হয় যে সে ঘুমিয়ে আছে আর সে সময় মেঝেতে কেউ হাটাহাটি করছে। রুপিকা স্পস্ট বুঝতে পারে তার আপন ঠিকানা মেঝেতে হাটছে। এর আগে যখন রুপিকা ঘুমিয়ে পড়তো তখন তার আপন ঠিকানা এভাবে রাতে উঠে মেঝেতে হাটাহাটি করতো আর কি সব নিয়ে ভাবতো। স্পস্ট বুঝতে পারলেও রূপিকা ঘুম থেকে উঠতে চায় না সে জানে ঘুম ভেঙ্গে গেলেই হাটার শব্দটা সে আর শুনতে পাবেনা তার চেয় ভালো ঘুমিয়ে থেকে হাটার শব্দটা শোনা।
ইদানিং এমন হচ্ছে যে রাতে অনেক পানির পিপাসা লাগে কিন্তু উঠে পানি খেতে খুব কষ্ট হয় । এই সময়টা যদি রূপিকার পাশে কেউ থাকতো হয়তো পানি এনে মুখে ধরে খাইয়ে দিত। এ সব কল্পনাতে রূপিকার মনে পড়ে যায় পেছনের স্মৃতি গুলো। সেই প্রথম সময়ের কথা রূপিকা যখন এই বাড়িতে নতুন আসে নিজেকে এই পরিবেশের সাথে মানাতে পারতো না। ঠিক মত খেতে পারতো না, অল্প খেতো বলে তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর সাথে খেতে বসতে চাইতো না। তারা জোর করে খাওয়ালে রূপিকার কষ্ট হতো। একদিন, দুইদিন, তিনদিন এই ভাবে চলার পর তার বর বুদ্ধি করে তাকে নিয়ে ঘরে খেতে বসে। সবার অগোচরে চালাকি করে রূপিকাকে মুখে তুলে ভাত খাইয়ে দেয়। যখন রূপিকার পেট কানায় কানায় পরিপূর্ণ তখন তার বর তাকে লোভনীয় প্রস্তাব দেয় আর সেই লোভ সামলাতে না পেরে রূপিকা আস্তে আস্তে ভালোই খেতে শুরু করলো।
একদিনের ঘটনা-খাওয়া প্রায় শেষ তবুও আরো কিছু পরিমাণ খাবার রূপিকার বর তার প্লেটে নিল আর বলল যদি এগুলো খেতে পার তাহলে তোমাকে বিকালে ঘুরতে নিয়ে যাবো। এদিকে রূপিকার পেট ভরে গেছে অনেক খেয়েছে এখন আর খাওয়া সম্ভভ না। তবুও রূপিকা ঘুরতে যাওয়ার লোভে সব ভাত খেয়ে তার কিছুক্ষণ পরই সে-কি বমি।সেদনিই তার বর কান ধরেছে আর জোর করে খাওয়াবে না আর এখন মাঝ রাতে এক গ্লাস পানির জন্য উঠতে কষ্ট হয়ে যায় কিন্তু পানি এনে দেবার কেউ নাই।
ইদানিং পেটের বাবুটাও না যা দুষ্টু হয়েছে রূপিকার, মাঝে মাঝে রূপিকার পেটে গুতা দিয়ে ডেকে ডেকে কথা বলতে চাই আর তখন রূপিকা হাত বুলিয়ে সাড়া দেয়। ঠিক এই সময়ে ও যদি থাকতো তাহলে কতো মজাই হতো সেটা ভাবতে থাকে রুপিকা। চিত হয়ে ঘুমাতে পারেনা রুপিকা, তার অনেক কষ্ট হয়। দীর্ঘ রজনী খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে থাকতে হয় আর সেই বসে থাকার মাঝেই এলোমেলো কল্পনায় এক রাশ কষ্ট জমে জমে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। যদি সে থাকতো তাহলে তাকে বুঝতো, এই সময়টা আর পানি এনে খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হত না। সেই পানি এনে খাওয়াতো আর বাড়তি যত্ন করত। সে অনেক ভালবাসে রুপিকাকে আর কতটায় না পাগল তার জন্য।