আবারো ভিক্ষা নেবার জন্য আমার হাত টা বাড়িয়ে দিলাম। মনে হয় যুবক দেখেই মেয়েটি ভিক্ষা দিতে আপত্তি জানাচ্ছে। কিন্তু আমার উপায় ছিলনা তাই লাক-লজ্জা ভুলে শক্ত হাতে ভিক্ষার থালা পেতে আছি। অধিক সুন্দরী মেয়েদের একটি সমস্যা লক্ষ্য করা যায় আর সেটা হলো এরা অধিক সুন্দর হয় তবে একটু হাব-ভাব কেমন বোকাসোকা। দৃষ্টিকোটুর চোখে মেয়েটি আমায় দেখে নিচ্ছে, হয়ত অধিকতর জল্পনা কল্পনায় কপালের ঘাম জোড় করে হলেও বেড়িয়ে পড়েছে।লক্ষ্য করলাম মেয়েটি সাদা পোশাকের সাথে লাল ওড়না পড়েছে।আমার ভাষা জানা নাই কেমন লাগছে দেখতে তবে গুরু হুমায়ুন হলে হয়ত উপমা দিয়ে কিছু একটা কিছু দাড় করিয়ে দিতেন। যাক গে সে কথা-পায়ে কিছু না হলেও ভিক্ষা নিয়ে ভালই ল্যাংড়ার অভিনয় করে পেছন ফিরে হাটা শুরু করলাম।আমাকে কিছুক্ষণ হেটে গেইট পর্যন্ত পৌছাতে হবে।এতক্ষণ আমার কোন ব্যাপারেই কোন ঝামেলা হয়নি কিন্তু এখন একটু কেমন যেন লাগছে।কেন যেন মনে হচ্ছে আমি খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটব আর মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে পেছন ফিরে দেখব সেটাও করতে পারছিনা লজ্জাবোধ লাগছে।এবার সত্যি সত্যি আমি ঘেমে উঠেছি।নির্দিধায় আমি অভিনয় করতে পারছিলাম কিন্তু এখন সবকিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে গেল। ধীরস্থিরভাবে গেটের কাছে যেতেই গেইট দিয়ে এক মুরুব্বী প্রবেশ করল আমি দাঁড়িয়ে তাকে ঢোকার জায়গা করে দিলাম।বাড়িটা ফাকায় ছিল কোন কোলাহলের চিহ্ন পেলাম না গেট নক করতেই একটা পিচ্চি এসে গেট খুলে দিয়ে গেছে পরে আর তাকে পায় নি। দুই-তিন মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরই মেয়েটি এসেছে ভিক্ষা দিতে।হয়ত উপরতলার বাসিন্দা।কিন্তু এত বড় বাড়িতে কোন কোলাহল থাকবেনা এটা কেমন কথা। আমি ভদ্র লোক কে সালাম জানানোর জন্য হাত উঠাতেয় আমার হাতের লাঠি টা নিচে পড়ে গেল সাথে সাথে আমিও ধপাস। মুরুব্বির সাথে থাকা লোকটি বাজারের ব্যাগ নামিয়ে আমায় টেনে উঠাল। তক্ষন লক্ষ করলাম যে মুরুব্বী আমার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে তার চেহারা দেখে মনে হলো উনি কিছু ভাবছেন। অনেকটা সিনেমায় যখন নায়ক ভিলেনকে দেখে ফ্লাশ ব্যাকে তার বাবা মার মৃত্যুর চিত্র দেখে তেমন।
একটু একটু সন্দেহজনক মনে হলো তাই সে জিজ্ঞাসা করলো তোমার নাম কি? আমি সরল ভঙ্গিতে বললাম শরাফুদ্দিন। এটা আমার আসল নাম না আর কেনই বা শরাফুদ্দিন নামটা বললাম সেটাও জানি না।
-উনি বল্লেন আমি তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি।
আমি মধুর হাসির চেষ্টা করে বল্লাম দেখে থাকবেন হয়তো বাজার ঘাটে ভিক্ষা করি; কত জায়গায় যেতে হয়।
-উনি বল্লেন না ভিক্ষারত অবস্থায় আমি তোমাকে দেখি নি। আমি অন্য কোথাও দেখেছি অন্য পোশাকে।
আমার মনে ভীতির জন্ম হলো আমি ঢোক গিল্লাম, কিন্তু কাউকে বুঝতে দিলাম না। মুরব্বী বল্লো-সালাম দরজা বন্ধ কর আর ওনাকে বসতে বলো আমি ভেতর থেকে আসছি আর বাজার গুলো লতিফাকে দাও।
আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। মুরব্বির কথা বার্তা শুনে শান্ত সভাবের মনে হলো আমি এই ফাকে সালাম কে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই কোন সমস্যা নাকি?
সালাম বলল মুরব্বী হয়তো আপনাকে কোথাও দেখেছে, ভয় পাবেন না উনি শান্ত মানুষ বসতে বলেছে বসেন।
আমি নিচের বারান্দায় বসলাম পা ঝুলিয়ে এমন ভঙ্গি যেন আমার পা আসলেই ল্যংড়া। মাথা থেকে টুপি খুলে মাথা চুলকাচ্ছিলাম তখন উকি মেরে পূর্বের ঐ সুন্দরী মেয়েটা আমাকে দেখে গেল। এবার সত্যি সত্যি আমার কপাল ঘেমে পানি বের হতে লাগলো। বড় ফুল হাতা শার্ট এর ভিতরে ভিজে গেছে সেটা বুঝতে পারলাম। কেমন ভয় লাগছে আবার একটু ভালোও লাগছে। ভয় লাগার কারণ আছে কিন্তু ভাল লাগার কোন কারণ বুঝতে পারলাম না।
কিছুক্ষণ পরে মুরব্বী সামনে এসে বসলেন। এমন ভঙ্গি যেন, আমি বড় আসামী উনি বড় পুলিশ অফিসার, অনেক দিন কোন কেস টেস পায়নি তাই আমাকে পেয়ে অনেক আনন্দিত।
-নাম জিজ্ঞাসা করলেন আবার
আমি এবার একটু ভয় পেয়ে গেলাম কারণ নাম আমি আগে একবার বলছিলাম। তার মানে উনি এতক্ষনে চিন্তা করে আসছে যে আমাকে চিনে। আমি মিথ্য বলছি সেটা যাচাই করার জন্য আবার আমার নাম জিজ্ঞাসা করছে।
আমি আমার নাম ভুলে গেলাম, হায় আল্লাহ্ নাম ভুলে গেলাম ? ঐ টুকু সময়ের মধ্যে আমি আমার নাম মনে করতে চেষ্টা করলাম যে আগে কি নাম বলছিলাম।
-উনি সালাম কে পানি আনতে বললেন
আমি পানি খেয়ে বললাম আমার নাম আবু হাসান এবং আমি কঠোর দৃষ্টিতে তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আর মনে মনে চিন্তা করলাম উনি আমাকে চিনে কি ভাবে।
-কি কর ?
ভিক্ষা করি
-ভিক্ষা কর সে তো বুঝলাম, আসলে পরিচয় কি?
আমি আর ভয় পেলাম না, কোথ থেকে যেন সাহস চলে এলো
পড়াশুনা শেষ করেছি
-তাহলে ভিক্ষা কর কেন?
টাকার দরকার তাই
-চাকুরি করছ না কেন?
আমি হা হা করে হাসলাম আর বল্লাম চাকুরী পাব কোথায়?
-তাহলে ভিক্ষা করছো এতে লজ্জা করছে না?
আমি মিট মিট করে হাসলাম আর বললাম যে বড় বড় অফিসার’রা চাকুরী দেবার জন্য যখন লাখ লাখ টাকা দাবি করে তখন তাদের লজ্জা করে না আর আমি সামান্য অধম।
আমি কথাটা বলে উঠে দাড়াবার ভঙ্গি করলাম
মুরব্বী উঠে আমার কলার চেপে ধরে আমাকে ধমক দিয়ে বসালেন, এই দিকে সালাম, কাজের বুয়া ও সুন্দরী মেয়েটি হাজির হয়ে গেল।
আমি বসে পরলাম আবার পানির গ্লাস টা নিয়ে পানি খেলাম কিন্তু পিপাসা লাগছে বার বার
-তোমার বাসা কোথায় শান্ত সুরে মুরব্বী
বগুড়া
পড়াশুনা কতদূর করেছো?
এম এ পাশ করেছি
-চাকুরির চেষ্টা করেছো ?
অনেক যায়গায় চেষ্টা করেছি
-চাকুরী বাদেও তো অনেক কাজ আছে সেটা না করে তুমি ভিক্ষা করছো কেন?
আসলে ভিক্ষা শুরু করার মুল কারণটা হল “যখন বড় অফিসার চাকুরী দেবার লোভ দেখিয়ে টাকা চাই তাদেরকে কেমন লাগে এই অনুভুতি নেবার জন্যই ভিখা করা।
-ভিক্ষা করে কি কোন কিছু হয়?
হবে না কেন তিন মাস ধরে তো তাই করছি; দিব্বি ম্যাচ ভাড়া চলে আবার বাসায় কিছু টাকা পাঠাতে পারি
-তুমি কি জান আমি তোমায় পুলিশে দিতে পারি
-হ্যা পারেন হয়তো। কিন্তু পুলিশকে কিছু ভিক্ষা দিলে আমাকে ছেড়ে দেবে আমি আবার সেই কাজ শুরু করতে পারব
মুরব্বী ভুরু কুচকালো। আমি একবার সুন্দর মেয়েটির দিকে তাকালাম সে মিটমিট করে হাসছে
মুরব্বী আমাকে একটা প্রস্তাব করলো-আমি যদি তোমাকে কাজ দেই তুমি কি করবে ?
করবো কিনা বলতে পারছি না তবে প্রথমত শুনতে পারি
-মুরব্বী আমাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখালেন এই হলো আমার নিজস্ব পাঁচতলা বাড়ি, দ্বিতীয় তলায় আমি, আমার মেয়ে, সালাম ও তার বউ থাকে; নিচতলা আর তৃতীয় এবং চতুর্থ পড়ে আছে
আমি তাকিয়ে দেখলাম ভালয় বাসাটা, আমি বললাম ভাড়া দিয়ে দিন অনেক টাকা পাবেন
-মুরব্বী হাসলেন হয়তো বুঝলেন আমার আউট বুদ্ধিটা একটু ভালো
বলল সেটাই আমার সমস্য, আমি ব্যস্ত মানুষ আমার একটা পানের দোকান আছে সেটাতে সময় দিতে হয়
এবার আমি অবাক হলাম ! বললাম পানের দোকান?
উনি বল্লেন হ্যা আমার শখের একটা পানের দোকান আছে ওখানে মসলাদী মিষ্টি পান বিক্রি করি। আমি ওখানেই বসি ওটা নিয়ে অনেক ইতিহাস আছে তাই ওটা আমি ছাড়তে পারি না তাই বাসা ভাড়া দিতে পারি না, বাসা ভাড়া দিতে গেলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।
আমি আপনার জন্য কি করতে পারি?
তুমি এই বাসার কেয়ার টেকার থাকবা আর বাসা ভাড়ার ব্যবস্থা করবে, টাকা পয়সা সংগ্রহ করবে, কোথায় কি লাগে দেখবে এবং মাস শেষে আমাকে ভাড়া বুঝিয়ে দিবে।
আমি কোন কথা বললাম না কিন্তু চাকরীটা আমার অনেক দরকার ছিল, আর অনেক লোভনীয় চাকরী এটা, মারিং কাটিং ভালই করা যাবে আবার সাথে সুন্দরী মেয়েটি ও আছে।
আমি ভাবলাম কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে উপনিত হলাম না। আমি উঠে দাড়ালাম আমার কোনই ভাবান্তর হল না হয়তো উনি ভেবেছিলেন আমি কোন জবাব দিব উনার প্রস্তাবের।
মেয়েটির দিকে তাকালাম একটা মিষ্টি হাসি দিলাম এবং হাতের লাঠিটা ফেলে বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে। বাহিরে এসে বাড়িটির দিকে ভালো করে তাকালাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম আমিও কাল থেকে বাদাম বিক্রি করবো কারো কাছে চাকুরীর জন্য ঘুরবো না আর ভিক্ষাও করবো না, রিযিকের মালিক মহান আল্লাহ।