অন্তত রাষ্ট্রীয় কিছু দিবস ছিল বলেই বিলাসিদের টুকটাক কেনাকাটা করা হয়, ফ্রি ফ্রি সরকারী ছুটি ছাড়াও ক্ষেত্র বিশেষ প্রাইভেট কোম্পানীগুলোর থেকেও ছুটি পাওয়া যায়, ছুটি অর্থাৎ কাজ ছাড়া পে।
ধরা যাক, একুশে ফেব্রুয়ারী। ভাষার মাস, বাংলা ভাষার জন্য শহীদ হয়েছে আমাদের সালাম দাদা, জব্বার দাদা, রফিক দাদা ছাড়াও নাম না জানা আরও অনেকে। সেই উপলক্ষ্যে আমরা প্রতিবছর এই দিনে ছুটি পায়। তবে ছুটি পায় শুধু নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক মানুষ, শুভেচ্ছাও জানায় শুধু কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ।
১০০ জন ছুটি পেলে ৬০ জন ছুটি টা উপভোগ করি যে কারণে ছুটি টা পেলাম বাকি ৪০ জন অন্যান্য কাজে। সরকারী চাকুরীজিবীদের ক্ষেত্রে, যদি ছুটি টা রবিবার অথবা বৃহস্পতিবার হয় তাহলে পুরা বাম্পারে ভীড়। টানা ৩দিন ছুটি। সাধ্য অনুযায়ী ভ্রমণ এবং বাচ্চাদের নানুবাড়ী -দাদুবাড়ী অথবা পার্ক। তাছাড়া ঘুম আয়েশ করে খাওয়া এমন ব্যাপার তো আছেই।
সাধারণ মানুষের ছুটি, যে ছোটখাট প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করে, হয়ত সকাল বেলা ছোট মেয়েটা অথবা ছেলেটাকে নিয়ে একটু ছুটিকে উপভোগ করার প্রচেষ্টা তারপর সাংসারিক কিছু কাজ কর্ম।
“ছুটি এদের ই আছে” যারা চাকুরী করে, কেননা তারা অনেক টাকা পয়সা খরচ করে পড়াশোনা করেছে, তদবীর আর হাটাহাটি করে জুতোর তলা ক্ষয় করে চাকুরী পেয়েছে, অথবা ৫/৭ অথবা এর বেশী অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে চাকুরী নিয়েছে। এরাই যেকোন সরকারের প্রিয় বান্দা, এরাই গণতান্ত্রিক সরকারে গণতন্ত্র। এরাই ছুটি পেলে আরাম আয়েশ করে খায়-দায়-আর ঘুমাই, আর এদের কাছে সাধারণ মানুষ কোন কাজ নিয়ে গেলে ঘুরতে হয়, ফাইল সই করাতে গেলে বাড়তি পয়সা দিতে হয়, এরাই সব।
“ছুটি এদের নাই” যারা চাকুরী করে না, যারা মুর্খ অথবা অল্প শিক্ষিত, তাদের রিযিকের সিস্টেম আলাদা, হতে পারে রিক্সা চালক, হতে পারে দিনমজুর, হতে পারে বাসের হেলপার, হতে পারে মাটি কাটা শ্রমিক অথবা হতে পারে আরও অন্যান্য কাজের শ্রমিক যে সকালে বের হয়ে সারাদিন উপার্জন করে আহার যোগায়। এরা গণতন্ত্রের কোন অংশ না, আরা কাজ করে পে আছে না করলে নাই, এদের কোন ছুটি লাগেনা তবুও কাজের ফাকে এরা বিনোদন করে আর ওর মাঝেই সকাল বেলা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আবার জীবিকার সন্ধানে বের হয়।
মূলত যে আক্ষেপের প্যাচাল গুলো পারলাম....ভাষার মাস, বাংলা ভাষার জন্য যত যুদ্ধ, বাংলা ভাষা নিয়েই যে শহীদ, মায়ের বুক খালি করা সেই একুশে ফেব্রুয়ারী প্রতি বছর আছে। সব জায়গায় বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার নানা কর্মসূচীও করে কিন্তু বাস্তবে তা শূন্যই থেকে যায়। সারাবছর বাদ দিলাম অনন্ত এই মাসে বিশেষ করে মিডিয়াতে বাংলা ভাষার প্রচার টা যদি ১০০% হত তাইলে অন্তত আমরা উৎসাহ পেতাম। খবর পড়া থেকে শুরু করে, নাটকে, সিনেমায়, টকশোগুলোতে, দোকানের নাম, গাড়ির নাম্বার প্লেট ছাড়াও যেগুলো প্রচার এবং ব্যবহার হয় সব জায়গাতে সেগুলোতে বাংলাটা পুরোপুরি প্রকাশের সুব্যবস্থা করলে কি বেশি ভাল হয় না?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৫৮