বাংলাদেশ অবশ্যই নামে মুসলিম দেশ হিসেবেই খ্যাত আমার জানা, কাজে কর্মে কতটুকু সেটা পরের ব্যাপার। আমরা বাংলাদেশী এতটাই ধর্ম পরায়ণ যে বছরে সিজেনাল বেশ ভালই ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকিরের আয়োজন করি। বলা যায় এটা কর্মাশিয়াল হয়ে গেছে। প্রতি বছরের নির্দিষ্ট কিছু জায়গার ওয়াজ মাহফিলে আমাদের নিজেদের কোন উন্নতি সাধিত হয় কিনা আমার সন্দেহ আছে। আমরা যা তাই থাকি, দোষ হয়ত আমাদের অথবা যারা ওয়াজ মাহফিলের বক্তা তাদের, কারও না কারও তো বটেই। বক্তা রাত অবধি তার নিজের ভঙ্গিতে বয়ান দিয়ে চলেন আমরা হয়ত ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শুনি তারপর বাড়ি গিয়ে ফজর মিস করে ঘুম আবার সকালে যা তাই। হয় আমরা বুঝিনা বা বোঝারা চেষ্টা করিনা অথবা তারা সঠিক ভাবে আমাদের বোঝাতে পারেনা ফ্যাক্ট কর্মাশিয়াল। কিন্তু প্রকৃতি মুসলিম দেশগেুলো হিসেবে আমরা যেগুলোকে বুঝি সেখানে আমার দেখা মতে এমন ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকির টাইপের কোন প্রোগ্রাম চোখে পড়েনি।
সম্ভাব্য কিছু লাভ-
* বক্তাকে একটা বড় সম্মানী দিয়ে নিয়ে আসতে হয়। ভাল বক্তা সিজেনাল টাইমে অনেকটা বেশি ব্যস্ত থাকে তাই তাকে অনেক আগে থেকে বুকিং দেওয়ার ব্যাপার ও চলতে পারে অথবা সম্মানী দরদামের ও ব্যাপার থাকতে পারে।
* কমিটি বেশ পরিশ্রম করে এদিক সেদিক থেকে টাকা-পয়সা তুলে, রাস্তার উপর দাড়িয়ে বিভিন্ন যান থেকে মাহফিলের টাকা তুলে আয়োজন করে। সেক্ষেত্রে শেষমেষ কিছু টাকা বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
* মাজার শরীফ জায়গা গুলোতে বেশ খাওয়া দাওয়ার আয়োজন হয় কেননা সাদকা অর্থে জায়গা ভেদে অনেকেই গরু-ছাগল-মোরগ মাজারে দেয়। পানি পড়ানো বা অন্য অর্থেও টাকা প্রদানের ব্যবস্থা থাকে।
* এখন দেখা যায় একটু বড় পরিসরে আয়োজন হলেই সেখানে বিভিন্ন খাদ্যের দোকান গড়ে উঠে, জিলাপী, বাদাম, ছোলা, পাপড়, বাচ্চাদের বেলুন এগুলো খুবই কমন, তবে ইদানীং হালকা পাতলা চুড়ি বা কসমেটিক্স পণ্যের সরগম দেখা যাচ্ছে।
* ডেকোরেটর ব্যবসাটাও সেক্ষেত্রে জমজমাট কেননা বিশাল আকারে প্যান্ডেল, রাস্তার উপর ভাল বড় বড় গেইট আর ভাল সাউন্ড সিস্টেম এর পাশাপাশি লাইটিংও বিদ্যমান থাকে যেন মানুষ দুরে থেকে শুনতে পায়, ভালভাবে বসতে পারে এবং আলোকসজ্জার কারণে যেন দেখতে ভাল লাগে।
* লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইদানীং বড় সাইজের আকর্ষণীয় পোস্টারগুলো, প্রেস প্রতিষ্ঠানগুলোরও সুষ্ঠ রিযিকের ব্যবস্থা, উল্লেখ থাকে যে প্রতিবছর একই প্রতিষ্ঠান থেকেই একই কমিটির ওয়াজ মাহফিলের পোস্টার ছাপা হয়।
* ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে এখন আরও একটু নতুন উদ্ভাবন যুক্ত হয়েছে, পুরো ওয়াজ মাহফিলের ভিডিওচিত্রটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করে নিজের/কমিটির চ্যানেলে আপলোড করলে হয়ত কিছু ইনকামের সোর্স অথবা নিজের চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বেশি বাড়ানো যায়
* মাহফিলে সভাপতির পদগুলো পায়ে মেম্বর চেয়ারম্যান অথবা রাজনৈতিক কোন বড় ব্যক্তি এতে তাদের নিজেদের একটা পরিচিতিও ফুটে ওঠে।
ভেতরে ভেতরে আরও হয়ত অনেক লাভ থাকতে পারে যা সম্পূর্ণ আমার জানা নেেই কিন্তু যে উদ্দেশ্যে মাহফিল অনুষ্ঠিত সে উদ্দেশ্য কিন্তু সফল হয়না এটা বলা যায়।
বিঃদ্রঃ কোন পীর টাইপ জায়গা নিয়ে কোন মন্তব্য করা হয় নি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫২