somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীন বাংলায় ধর্মীয় চরমপন্থার বিকাশ এবং তার অর্থনৈতিক ভিত্তি

২৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের বাংলাদেশে সবচেয়ে আতংকের শব্দ মনে হয় ‘জঙ্গি’। আপনার ধর্মীয় বিশ্বাস যাই হোক, সমাজের যে স্তরেই আপনার বিচরণ হোক না কেন, আপনি নারী কিংবা পুরুষ, সবার ভেতর চাপা একটা ভয়, দিনশেষে ঘরে ফিরতে পারব তো? কোন মতে যদি ফিরেও আসি, রাতের ঘুম ঠিকমত হবে তো? নাকি সকাল না হতেই পাশের ঘর থেকে কেউ গ্রেনেড ছুড়বে? অনেকগুলো প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে গেল। প্যারা কমান্ডো বেশিদিন আপনার নিরাপত্তা দিতে পারবে না। আপনার নিরাপত্তা আপনাকেই নিতে হবে। আমি বলব না মার্কিনিদের মত অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করতে। তবে আপনি যদি এদের চিনতে পারেন, অন্যদেরকে চিনিয়ে দিতে পারেন আর তাদের ঘৃণা করতে পারেন, আমার মনে হয় এরা বেশিদিন থাকতে পারবে না

“তুমি যদি তোমার শত্রুকে জানো আর তোমাকে জানো তবে একশত যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে ভাবতে হবে না”
সান জু (খৃষ্টপূর্ব ৫৪৪ – ৪৯৬)

প্রশ্নবোধে ফিরে আসি। ওগুলো জরুরী।

বাংলাদেশ এমনটা ছিলো না। অর্বাচিন আমি যখন ইন্টারনেটে পুরানো ছবি দেখি, সেখানে বাহারি হিজাব দেখি না, স্টাইলিশ চাপদাড়ি দেখি না। তাদের কি ইমান কম ছিলো? ছিলো না। অথচ আজকে আমরা কেমন (বাঙালি) মুসলমান, আমরা অন্যদের সহ্য করতে পারি না! কিভাবে আসলো এই জেনোফোবিয়া? উত্তর পেতে হলে জানতে হবে বাংলাদেশের ধর্মীয় চরমপন্থার রাজনীতিকে, তার বিকাশ, বিশেষ করে তার অর্থনীতির ভিত্তি সম্পর্কে। কারণ অর্থনীতিই ইতিহাস তৈরি করে।

জেনোফোবিকরা নিজেদের আত্নপরিচয় নিয়ে খুব উচ্চ ধারণা পোষণ করে এবং অন্যান্য জাতি বা সংস্কৃতিকে নিম্ন মানের বলে মনে করেন। এই নিম্ন শ্রেনীর সংস্কৃতির সাথে মেলামেশার কারণে তারা তাদের নিজেদের পরিচয় হারানোর আশঙ্কা করে। আর এই আশঙ্কা থেকেই তারা নিজেদের সাংস্কৃতিক মৌলিকতা সংরক্ষণে অধিক সচেষ্ট থাকে। বিশেষ করে ধর্মীয় মূল বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে এবং একসময় তা উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদে পরিণত হয়।

এই ভূখন্ডে পরিচয় হারানোর এই শঙ্কার সূচনা গত সহস্রাব্দের মধ্যভাগে। পলিমাটির এই দেশে প্রাচুর্যের লোভে যুগে যুগে ভিড়েছে ভিনদেশি বেনিয়ারা, মিশেছে রক্ত, সংস্কৃতি আর ধর্ম। বৃটিশ আমলের আগে এ নিয়ে তেমন কারো মাথাব্যাথা ছিলোনা। কিন্তু দুইশো বছরের শোষনের ইতিহাস উপহহাদেশের মানুষদের মধ্যে একধরণের অস্তিত্বের সংকট তৈরি করে। ফলে যে ধর্মের যে পার্থক্য ছিলো সেটা প্রকট হয়ে দাড়ায়। মুসলমান মুঘলেদের হাতে রাজ ক্ষমতা চলে যাওয়ায় একদিকে গোঁরা হিন্দুদের মনে যে ক্ষোভ ছিলো তা তাদের ব্রিটিশদের কাছাকাছি নিয়ে আসে। অন্যদিকে ক্ষমতা হারানো মুসলমানরা আনুগত্যতার অভাবে একটা সময় ব্রিটিশদের কাছ থেকে ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকে। যার ফলে মুসলমান আর হিন্দু সমাজের মধ্যে একধরণের ক্ষমতার দন্দ্ব তৈরি হয় যা জাতিয়তাবোধ কে ছড়িয়ে ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র স্থাপনে তাদের আগ্রহী করে তোলে।

সাম্প্রদায়িকতার এই বীজ এতটাই গভীর ছিলো যে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধও তা অস্বীকার করতে পারেনি। কালক্রমে তা আরো আগ্রাসী রুপ ধারণ করে চরমপন্থায় পরিণত হয়েছে। এই দেশে ধর্মীয় চরমপন্থার সূচনা তখনই যখন সদ্য স্বাধীন দেশ তার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক ধারার ক্রমপরিবর্তনের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার সাংবিধানিক মূলনীতি থেকে সরে এসে সূচনা হয় রাজনৈতিক ইসলামের। এরপর সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজনের দ্বারা সাংবিধানিকভাবে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির বৈধতা দান (৫ম সংশোধনী, ১৯৭৯), মূলনীতিতে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দিয়ে ‘রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ইসলাম’ প্রতিস্থাপন (৮ম সংশোধনী, ১৯৮৮), সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, ক্রমবর্ধমান সামাজিক বৈষম্য, বেকারত্ব, সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি এবং শিক্ষার বিকাশ, মূলধারার (গনতান্ত্রিক) রাজনীতিতে জনগণের অনাস্থা, বহিঃশক্তির প্রভাব, ইত্যাদি বাংলাদেশে ইসলামিক চরমপন্থার বিকাশে সাহায্য করেছে।

গত শতাব্দীর ৮০ ও ৯০এর দশকে এই চরমপন্থীদের মূল লক্ষ্য ছিলো সংগঠিত হওয়া, তহবিল সংগ্রহ এবং দেশী ও আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করা। পরবর্তীতে গনতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৯১ সালে এই ইসলামী গোষ্ঠীগুলোর আদর্শিক সতীর্থ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সরকারে আসার পর তারা তাদের কৌশল পরিবর্তন করে আরো সক্রিয়ভাবে কাজ করতে শুরু করে। একটা সময় অনেকটা প্রকাশ্যে সরকারী দলের সমর্থনে দেশের উত্তরাঞ্চলে সমাজতান্ত্রিক সর্বহারা আন্দোলনকে প্রতিহত করতে তারা মাঠে নামে।

এই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো মৌলবাদী চিন্তাভাবনার অনুসারী এবং যেকোন ধরণের প্রগতিশীল চিন্তাধারার বিরোধী। প্রগতীশীল কবি দাউদ হায়দার থেকে শুরু করে নারীবাদী লেখক তসলিমা নাসরীন, এই ইসলামী চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো সবসময়ই সাংস্কৃতিক কর্মী, লেখক, বুদ্ধিজীবীদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে এবং সবচেয়ে বড় হুমকিটি এসেছিলো ১৯৯৯ সালে যশোরে উদিচী সম্মেলনে হুজির বোমা হামলার পর। এই ঘটনায় দুই শতাধিক মানুষ আহত হয় এবং প্রাণ হারায় ২০ জন সাংস্কৃতিক কর্মী। এই জঙ্গীরা সবাই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পার্বত্য একালাগুলোতে প্রশিক্ষণ পায়। পরবর্তী বছর তারা হামলা চালায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপর। সৌভাগ্যজনকভাবে এবার তিনি বেচে যান। ২০০১ সালে হুজি রমনার বটমূলে হামলা চালায়, মারা যায় ১০ জন। এইপর্যন্ত তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো সাংস্কৃতিক কর্মীরা। কিন্তু এরপর তারা তাদের কৌশল পরিবর্তন করে এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্টানগুলোকে আক্রমন করা শুরু করে। তারা বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয়ে বোমা হামলা চালায়। এছাড়া হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ব্রিটিশ হাইকমিশনার এবং বংবন্ধু এভিনিউতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার উপর গ্রনেড হামলা চালায়।

সময়ের বিবর্তনে বিভিন্ন সময়ে গোয়েন্দা নজরদারী থেকে বাঁচতে এই জঙ্গীগোষ্ঠীগুলো তাদের সাংগঠনিক কাঠামোরও পরিবর্তন করে। হুজির পর ১৯৯৮ সালে এক নতুন জঙ্গীগোষ্ঠীর আবির্ভাব হয় যার নাম জেএমবি। জেএমবির শীর্ষ সাত নেতার মধ্যে পাঁচ জনই ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রান্তন কর্মী। ২০০৪ সালে সর্বহারা দমনের নামে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে রাজশাহীর বাগমারায় মূর্তিমান বিভিষিকা হিসেবে আবির্ভূত হয় জেএমবির দ্বিতীয় শীর্ষনেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে ‘বাংলা ভাই’। সে সময় সরকার জেএমবির অস্তিত্বকে অস্বীকার করলেও ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট মাত্র তিরিশ মিনিটের ব্যবধানে সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে তারা তাদের ক্ষমতা প্রকাশ করে। সিদ্দিকুল ইসলাম ছাত্র জীবনে ইসলামি ছাত্র শিবিরের একজন কর্মি ছিলো। কিন্তু পরবর্তিতে জাতীয় রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব মেনে নেয়ার ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর সমঝোতা ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে জামায়াতের রাজনীতির প্রতি সে আনুগত্য হারিয়ে ফেলে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী থেকে জানা যায়। জেএমবির হাতে মারা যায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশসহ সাধারণ মুক্তচিন্তার মানুষেরা।

২০০৫ সালে পর থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পটপরিবর্তন এবং বিশেষ নিরাপতা বাহিনীর কার্যক্রমের কারণে দেশে জঙ্গী তৎপরতা কিছুটা কমে আসে। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাত্তর সালের যুদ্ধাপরাধী যাদের অনেকেই জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন তাদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার পর অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এই বিচারের বিরুদ্ধে জনসমাবেশ ঘটে। অন্যদিকে ৫ই ফেব্রুয়ারী যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যখন যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় শোনানো হয় তারপর দেশের সাধারণ মানুষরা এই রায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। এই বিশাল জনসমাগমকে ভয় পেয়ে শাহবাগ আন্দোলনের সূচনাকারী অনলাইন ব্লগারদের টার্গেট করা শুরু করে এবং ফেব্রুয়ারীর ১৬ তারিখ এই ব্লগারদের অন্যতম রাজীব আহমেদকে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যারা ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রাক্তন কর্মী তার বাসার সামনের রাস্তায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। দিন দিন এই ধরণের আক্রমন বাড়তেই থাকে। নভেম্বরের ১৬ তারিখ চাপাতির আঘাতে খুন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকি।

এই জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোর কৌশলের মধ্যে একধরণের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথম ধারার জঙ্গীগোষ্ঠীগুলো তালিবানদের অনুসরণ করত। দ্বিতীয় ধারার জঙ্গীগোষ্ঠীগুলো আল কায়দাকে এবং তৃতীয় বা বর্তমান ধারার জঙ্গীরা অনুসরণ করছে ইসলামীক স্টেটকে। শাহাবাগ আন্দোলনের পর কৌশলগত দিক দিয়ে জামাত একটু পিছিয়ে পরে। তাদের অনেক নেতা-কর্মী আত্মগোপনে চলে যায় এবং একটি বড় অংশ এইসব জঙ্গীগোষ্ঠীদের সাথে জড়িয়ে পরে। ২০১৫ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি আল কায়দা মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ বিশ্বাসকে হত্যা করে। একে একে হত্যা করা হয় ব্লগার ওয়াশেকুর রহমান, অনন্ত এবং নীলাদ্রীকে। একপর্যায়ে তারা আরো আক্রমনাত্বক হয়ে ওঠে আর বিদেশী নাগরিকদের উপর হামলা চালাতে শুরু করে। মারা যান ইতালিয়ান নাগরিক তাবেলা সিজার এবং জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি, আহত হন ইতালিয়ান পাদ্রী পিয়ারে পিচম। অক্টোবরে হামলা চালানো হয় ঢাকার পবিত্র আশুরার মিছিলে, রংপুরের বাহাই নেতার উপর, রাজশাহীতে আহমেদিয়া মসজিদে। সবচেয়ে আতংকের ঘটনাটি ঘটে গত ১লা জুলাই রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায়। গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারীর সেই আইএস এর সেই পাঁচ আত্মঘাতীর সশস্ত্র আক্রমনে মারা যান দুইজন পুলিশ সহ বাইশজন বেসামরিক নাগরিক যাদের অনেকেই ছিলেন বিদেশী। এরপর থেকে নিয়মিত পুলিশি অভিযান চলছে। কিছু জঙ্গি ধরা পড়ছে, কিছু মারা পড়ছে। কিন্তু থামছে না তাদের দৌরত্ব।

আজকে সরকারের অন্যতম দুশ্চিন্তার বিষয় এই ইসলামিক চরমপন্থা বা জঙ্গিবাদ বিস্তার এবং তার প্রাথমিক লক্ষ্য হল এদের অর্থনৈতিক উৎসগুলোকে থামানো। জঙ্গি অর্থায়ন বলতে সাধারণত সেই সমস্ত কর্মকান্ডকে বুঝায় যা জঙ্গি বা জঙ্গি গোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। এই আর্থিক সহায়তার মধ্যে রয়েছে জঙ্গি কর্মকান্ডের উদ্দেশ্যে সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে আইনগত কিংবা বেআইনি টাকা, সেবা অথবা কোন সম্পত্তির ব্যবহার, গ্রহণ, সংগ্রহ কিংবা সংগ্রহে সাহায্য করাকে। ইসলামিক চরমপন্থিদের পেছনে আছে এদেশের মৌলবাদী রাজনীতির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন। তারা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির একটি সংগঠিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত সফলতার সাথে সাধারণ মানুষের ধর্ম বিশ্বাসের সাথে বাস্তব জীবনের রাজনৈতিক ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষার মিল ঘটিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে রাজনৈতিক সংগঠনকে সুদৃঢ় করতে তারা তৈরি করেছে ‘অর্থনীতির মধ্যে আরেকটি অর্থনীতি’ আর ‘রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি রাষ্ট্র’। গৃহস্থালির ক্ষুদ্র ঋণ থেকে বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে হাসপাতাল, ব্যাংক থেকে গণমাধ্যম, তথ্যপ্রযুক্তি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পর্যন্ত তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতার উৎস।

এপর্যন্ত বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়নের উপর কোন সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। অর্থনীতিবীদ আবুল বারকাতের মতে জঙ্গিদের আয়ের অন্যতম উৎস এইসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক নিট মুনাফার পরিমান ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। এই অর্থের মাত্র ১০% দিয়ে ৫০০,০০০ জঙ্গিকে রিক্রুট করা সম্ভব। এদের প্রবৃদ্ধির হারও ও আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি। কারণ তারা খুব সহজেই ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারে। এছাড়া বিদেশি অনুদানের একটি বড় অংশ আসে প্রবাসি বাঙালি, দেশের বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান আর রাষ্ট্রীয় অনুদান থেকে। জামায়তুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকতুল জিহাদ (হুজি) সহ বাংলাদেশের অধিকাংশ জঙ্গি গোষ্ঠীর তালিবান অথবা আল কায়দা সংযোগ রয়েছে। তাছাড়া ওসামা বিন লাদেনের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্ট (আইআইএফ), সৌদি ভিত্তিক ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি অফ মুসলিম ইয়ুথ (ডাব্লিউএএমওয়াই), রাবেতা-আল-আলম-আল-ইসলামি, কুয়েত ভিত্তিক রিভাইভ্যাল অফ ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি, ইন্টারন্যশনাল ফেডারেশন অফ ইসলামিক অর্গানাইজেশন, ইসলামিক ওয়ার্ল্ড কমিটি, বৃটেন ভিত্তিক মুসলিম এইড সহ বিশটি দেশি-বিদেশি এনজিও বাংলাদেশের চরমপন্থি ইসলামিক গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়ন করে আসছে।

জঙ্গি অর্থায়নের এই উৎসগুলো বন্ধ করতে সরকার বেশকিছু আইন ও কার্যক্রম গ্রহণ করলেও থামেনি জঙ্গি তৎপরতা। চরমপন্থি আদর্শের প্রতিরোধ করতে হলে তা করতে হবে পাল্টা আদর্শের মাধ্যমে। জনগনের মধ্যে জঙ্গি বিরোধি সচেতনতা তৈরি করতে হবে। গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের বিকাশ এবং সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করার মাধমেই কেবলমাত্র এই ভয় থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৫১
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×