somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গা ইতিহাস: হাজার বছরের নির্যাতনের সালনামা

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোহিঙ্গা জাতির ইতিহাস
(সংগৃহিত ও সংকলিত)
গোড়ার কথা: নৃতাত্বিক বিশ্লেষ

খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ বছর আগে রাখাইনে প্রথম বসতি গাড়ে, অস্ট্রিক জাতির শাখা, কুরুখ নৃগোষ্ঠী। এরপর বাঙালি হিন্দু, ধর্মান্তরিত মুসলিম, পার্সিয়ান, তুর্কি, মোগল, আরবীয় ও পাঠানরা বঙ্গোপসাগরের উপকূলে বসতি স্থাপন করে। এসব নৃগোষ্ঠীর শংকর জাতকেই বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গা। ঐতিহাসিকভাবে আরাকানী ভারতীয়ও বলা হয়ে থাকে। রোহিঙ্গা ইসলাম ধর্মের অনুসারি যদিও কিছু সংখ্যক হিন্দু ধর্মের অনুসারিও রয়েছে।

রোহিঙ্গা বসতি: নতুন জাতিসত্বার সূচনা
৮ম শতাব্দী:
আরাকানে রোহিঙ্গা বসতির সূচনা। ৮ম শতাব্দীতে আরবদের আগমনের মধ্য দিয়ে আরাকানে (বর্তমান রাখাইন) মুসলমানদের বসবাস শুরু হয়। এই অঞ্চলে বসবাসরত মুসলি জনগোষ্ঠীই পরবর্তিতে রোহিঙ্গা নামে পরিচিতি লাভ করে।

নামকরন (১):
সে সময় চন্দ্রবংশীয় রাজা মহৎ-ইঙ্গ-চন্দ্রের রাজত্বকালে (৭৮৮-৮১০ খ্রিঃ) কয়েকটি আরব মুসলিম বাণিজ্য বহর রামব্রী দ্বীপের পার্শ্বে বিধ্বস্ত হলে জাহাজের আরোহীরা রহম রহম (দয়া করো) বলে চিৎকার করে। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে আরাকানের রাজার কাছে নিয়ে যায়। আরাকান রাজা তাদের বুদ্ধিমত্তা ও উন্নত আচরণে মুগ্ধ হয়ে আরাকানে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপনের অনুমতি দান করেন। আরবি ভাষায় অনভিজ্ঞ স্থানীয় লোকজন তাদেরকে রহম গোত্রের লোক মনে করে রহম বলে ডাকতো। ক্রমশ শব্দটি বিকৃত হয়ে রহম রোঁয়াই রোঁয়াই রোঁয়াইঙ্গা বা রোহিঙ্গা নামে খ্যাত হয়। পরে আরব বনিকরা তাদের দেশে ফিরে গেলেও স্থানীয় লোকদের যে অংশটি ইসলাম গ্রহণ করে এবং যারা আরবদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা রোহিঙ্গা জাতির ধারা বজায় রাখে।

নামকরণ মত (২):
অন্যমতে রোহিঙ্গারা আফগানিস্তানের অন্তর্গত ঘোর প্রদেশের রোহা জেলার অধিবাসীদের বংশধর। মূলত তারা তুর্কী কিংবা আফগানী। কেননা ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীসহ বাংলার মুসলমান বিজেতা ও শাসকগণ ইসলাম প্রচার ও প্রসারের নিমিত্তে আফগানিস্তানের রোহার অঞ্চলের কিছু ব্যক্তিকে আরাকানে প্রেরণ করেছিলেন। উক্ত রোহার অঞ্চলের মুসলমানরা আরাকানের নামকরণ করেছিলেন রোহাং। এ রোহা ও রোহাং শব্দ থেকেই রোহিঙ্গা নামকরণ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

নামকরণ মত (৩):
‘‘রাখাইন’’ শব্দটা যখন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা কিংবা আরাকানী ভাষায় বলা হয় তখন ‘‘খ’’ এর স্থলে ‘‘হ’’ উচ্চারণ হয়। দেখুন শব্দটা হয়ে রাহাইন। রাহাইন শব্দটা আবার চট্টগ্রাম বা আরাকানী প্রভাবে বিকৃতি লাভ করে। যেমন কারো নাম যদি ‘‘রহিম’’ হয় তাকে ‘‘রইম্যা’’ বলে ডাকার একটা প্রবনতা এই ভাষা চর্চার ভেতরেই রয়েছে। এটা ঠিক ব্যঙ্গ বিদ্রুপ নয়। ফলে ‘‘রাহাইন’’ থেকে ‘‘রাহাইন্যা’’ সেখান থেকে ‘‘রোহিঙ্গা’’ হওয়াটা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। এবং ধারণা করা হয় যেসব কারণে ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির তালিকা তৈরী করতে গিয়ে মায়ানমারের মুসলিম জাতির তালিকা করে রাখাইন ও রোহিঙ্গা শব্দটি সমার্থক ধরে রোহিঙ্গাদের নাম তালিকায় অন্তভূক্ত করা হয়নি।

নির্যাতনের সূচনা:
১০৪৪-১০৭৭: রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের সূচনা। বর্মী রাজা আনা ইথ হান এই নির্যাতনের সূচনা করেন।
১০৪৪-১২৮৭ সময়কালে উত্তর আরাকানকে সাময়িকভাবে সামন্তরাজ্যে পরিণত করেছিল। (G.E Harvey, History of Barma, P.138)

রোহিঙ্গা মুসলিমদের জাতিসত্তার বিকাশ:
১৪০৬: আরাকানের রাজা নরমিখলা দীর্ঘ ২৪ বছর (১৪০৬-১৪৩০ খ্রিঃ) বাংলার সুলতানদের আশ্রয়ে গৌড়ে অবস্থান করেন। অতঃপর সুলতান জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ শাহ কর্তৃক দু’পর্বে ৫০,০০০ (২০,০০০+৩০,০০০) (পঞ্চাশ হাজার) গোড়ীয় সৈন্য দিয়ে আরাকানের রাজধানী পুনরুদ্ধার করে দিলে নরমিখলা সোলায়মান শাহ নাম দিয়ে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। বলা হয়ে থাকে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। সেসব মগদের বংশধর যারা সরাসরি আরবদের সংস্পর্শে এসেছিলো এবং নরমিখলার সাথে অন্যান্য মগ যারা ধর্মান্তরিত হয়েছে তাদের বংশধর। রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাদের চেহারা মগ বা বার্মিজদের সাথে মিল আছে তারা হয় নরমিখলার বংশধর না মগ থেকে
ধর্মান্তরিত হয়ে অন্য সময়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে।

১৪৩০-১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনবিশিষ্ট রোহিঙ্গা স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল। ১৪৩০ সালে গৌড়ের সুলতান জালালদ্দুীন মহুাম্মদ শাহ (যদু) দুই পর্যায়ে ৫০ হাজার সেনা সহায়তা দিয়ে তাঁকে আরাকানের সিংহাসনে পনুঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। ১৪৩০ সাল থেকে দীর্ঘদিন আরাকান গৌড়ের করদরাজ্য ছিল তবে আরাকানে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসন দুইশ বছরেরও অধিককাল স্থায়ী হয়। সে সময় মুসলমানরা সেই রাজ্যে আধিপত্য বিস্তার করে।

১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজা হিসেবে রাজ্য চালিয়েছেন নরমিখলা। ।

১৪৩৭: ১৪৩৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ শাহর মৃত্যু হলে রাজা নরমিখলার উত্তরসূরিরা ১৪৩৭ খ্রিস্টাব্দে রামু ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম দখল করে নেন। তিনি রাজধানী লংগিয়েতের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ১৪৩৩ খ্রিস্টাব্দে রামু বা টেকনাফ থেকে শত মাইলের মধ্যে লেম্ব্রু নদীর তীরে ম্রোহং নামক স্থানে রাজধানী স্থানান্তর করেন। এটাই ছিল আরাকানের শেষ অবধি (১৭৮৫ খ্রিঃ পর্যন্ত) রাজধানী।

১৫২৪: বার্মিজ রাজা বাইম নোক কোরবানীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। আবার শুরু হয় মুসলমানের উপর আবার নির্যাতন।

১৫৫৪ সালে দিল্লীর সম্রাট শের শাহের জ্ঞাতি শামসদ্দুীন মোহাম্মদ শাহ গাজী সমগ্র চট্টগ্রামসহ ও উত্তর আরাকান জয় করেন আবার। আবার এই এলাকা মুসলিম শাসনে চলে আসে।

১৫৮০ সালে সমগ্র চট্টগ্রাম আরাকানের অধীনে যায় এবং মোগল বিজয় পর্যন্ত (২৭-০১-১৬৬৬ইং) চট্টগ্রাম আরাকানের অধীনে ছিল । এই সময় দক্ষিণ চট্টগ্রাম বা কর্ণপূলী নদীর দক্ষিন পাশের অংশ আরাকান অধীনে ছিলো বলে ধারণা করা হয়।

১৬২১ থেকে ১৬২৪ সাল। এই সময় মগ জলদস্যুরা এই পাঁচ বছরে ৪২ হাজার বাঙালিকে চট্টগ্রাম ধরে নিয়ে গিয়েছিল কৃতদাস হিসেবে বিক্রি করার জন্য।

১৬২৫: সালে ধামা দিয়ে জবাই করে মুসলিম হত্যা করা শুরু হয় বলতে গেলে নতুন করে। হাজার হাজার আরাকানী মুসলিমকে হত্যা করে লাশ নাফ নদী ও সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া হয়। তখনো মগদের সশস্ত্র চলাচল ছিলো। সম্মিলিত নির্যাতন ছাড়াও প্রায় সব সময় কথায় কথায় রোহিঙ্গাদের হত্যা নির্যাতন ধর্ষন করা হতো।

১৬২৯ সালের পর অল্প সময়ের মধ্যেই ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ১৮ হাজার চাটগাঁইয়া মুসলিমকে। মগদস্যুরা তাদেরকে কৃতদাস হিসেবে বিক্রি করতো। মগ দস্যুরা গ্রাম-কে-গ্রাম লুটপাট, হত্যা, লুন্ঠন শেষে অবশিষ্ট সম্পদ আগুনে পুড়িয়ে দিত। গ্রামের পর গ্রাম তাদের আগুনে ভষ্ম হয়েছে। বিয়ে-পূজা-পার্বন বা বড় উৎসবের সময়ও এই দস্যুরা হাজির হতো। লুটপাট আর হত্যা ছিল এদের নেশা।
ধরে নেয়া লোকজনের হাতের তালু ছিদ্র করে তার ভেতর সরু বেত ঢুকিয়ে দিয়ে বেঁধে জন্তুর মতো গাদাগাদি করে ফেলে রাখা হত জাহাজের পাটাতনের নিচে। অন্য দেশের বন্দরে নিয়ে বিক্রি করে দেয়া হত তাদের। বাঙালি বিক্রির একাধিক বাজারও ছিল বার্মায়। এখানে পুর্তগীজ জলদস্যুরাও আসতো।

১৬৩১ সাল থেকে ১৬৩৫ সাল পর্যন্ত আরাকানে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়।

১৬৬০ সালে আরাকান রাজা থান্দথুধম্মা নিজ রাজ্যে আশ্রিত মোঘল সম্রাট শাহজাদা সুজাকে স্বপরিবারে হত্যা করে। এরপর শুরু হয় মুসলমানের উপর তার অমানবিক অত্যাচার আর দমন-নিপীড়ন। প্রায় সাড়ে তিনশ বছর ধরে মুসলমানদের এই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে কাটাতে হয়।

১৬৬০ সালে, আরাকান রাজা সান্দথুধম্মা মোগল শাহজাদা শাহ সুজাকে সপরিবারে হত্যা করেন। ওই সময় থেকেই আবার নতুন করে, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। মুঘল সম্রাট শাহ সুজা পাহাড়ী রাস্তা ধরে আরাকান যাওয়ার পথে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন এবং এখানেই ক্যাম্প স্থাপনের আদেশ দেন। তার আগমের পর কক্সবাজারে যাওয়ার স্থলপথ তৈরী হয় জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এবং কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যের কথা জানাজানি হয়।

১৬৬৩ সালে সুবেদার শায়েস্তা খাঁ ক্ষমতায় আমলে মগ দস্যূদের বিতাড়িত করা হয় চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে।

১৬৬৫ এর ডিসেম্বরে শায়েস্তা খাঁ এক গুরুত্বপূর্ণ সেনা প্রেরণ করেন পর্তুগিজদের সহায়তায় মুঘলরা জয় লাভ করে। যুদ্ধে হেরে গিয়ে আরাকানী নৌবাহিনীর কিছু সৈন্য পালিয়ে যায় এবং কিছু দূর্গে আশ্রয় গ্রহণ করে। কিন্তু দূর্গটি ১৬৬৬ সালের ২৬শে জানুয়ারি শায়েস্তা খাঁ দখল করেন। এবং স্থায়ীভাবে মগ দস্যুদের আরাকান থেকে বিতিাড়িত করেন।

১৬৬৬ সালে মুঘল অধিগ্রহণের আগে পর্যন্ত কক্সবাজার-সহ চট্টগ্রামের একটি অংশ আরাকান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

১৬৬৬ সাল থেকে ১৭৮৫ সালের মধ্যে আরাকানের করদরাজ্য ‘চকোমা’ (বর্তমান মিজোরাম) থেকে বর্তমান চাকমা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে এসে বসতি স্থাপন করে। কারণ তখন এলাকাটি ছিলো নিরাপদ ও সম্পদশালী।

১৭১৮ সালে বার্মার রাখাইন রাজা দক্ষিণ বঙ্গ তছনছ করে অন্তত ১৮০০ জন সাধারণ অধিবাসীদের ধরে নিয়ে যায়। বন্দীদের অমানুষিক উপায়ে রাজার সামনে হাজির করা হয়। রাখাইন রাজা সেখান থেকে বেছে বেছে একদলকে তার নিজের দাস বানায়, অবশিষ্টদেরকে গলায় দিড় বেঁধে ক্রীতদাসের বাজারে বিক্রি করা হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া ক্রোনিক'স'-এর বর্ণনায় জানা যায়।

১৭৬১ সালে প্রকাশিত রেসলের ম্যাপে দক্ষিণ বঙ্গে বেশ কয়েকটি জনবিরল এলাকার কথা বলা হয়। এতে কারণ হিসেবে 'মগদের দ্বারা উৎসন্ন' লেখা হয়েছে। মগেরা আবার এই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব বা মুগের মুল্লুক কায়েম করে। মূলত মগেরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত থাকতো আবার হত্যা লুণ্ঠণ ছিলো তাদের পেশা। অস্ত্র ছিলো তাদের সার্বক্ষনিক সঙ্গী। বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পর তাদের দল ভারী হয়ে একদল হয়ে গেলো। কিন্তু তাদের পুরনো জীবনযাত্রা তারা ধরে রেখেছিলো। এতেকরে মগদর শক্তি বৃদ্ধি পায় কিন্তু দস্যুবৃত্তি ও হত্যাযজ্ঞের কারণে মগের রাজ্য বা মগের মুল্লুকের কথা সারা ভারতবর্ষ এমনকি এশিয়া ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। ‘‘মগের মুল্লুক’’ শব্দটার উৎপত্তি হয় এই কারণেই।

১৭৩৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধ্যাদেশ, ১৭৭৩ জারি হওয়ার পর ওয়ারেন্ট হোস্টিং বাঙলার গভর্ণর হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তখন হিরাম কক্স নামের কোম্পানীর এক ক্যাপ্টেনকে পালংকির (বর্তমান কক্সবাজার) এর মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন কক্স আরাকান শরণার্থী এবং স্থানীয় রাখাইনদের মধ্যে বিদ্যমান হাজার বছরেরও পুরানো সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করেন। নির্যাতিতদের জন্য কক্সবাজারের পাহাড় বন ও সৈকত সংলগ্ন উন্মুক্তস্থানে তাঁবু স্থাপন করেন। তখন স্থানীয় কিছু উপজাতি ছাড়া বাঙালী বসতি ছিলো না বললেই চলে। কক্সবাজারের আদীবাসীরা গত কয়েকশ বছরে আরাকান থেকে আসা লোকরাই নগর ও গ্রাম পত্তন করেছেন। যেসব রোহিঙ্গা গত কয়েকশ বছরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছেন। এদেরমধ্যে শান্তিকামিতা ও অতিথিপরায়নতাই বেশী দেখা যায়।

১৭৭৫ সালে মগ দস্যুরা আরাকান আক্রমণ করে। মগরা প্রায় সবকটি মসজিদ ধবংস করে ফেলে। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে এবং শত শত লোককে দাস হিসেবে বিক্রি করে। ।
১৭৮২: মগরাজা বোধাপায়া ৪ জন বিখ্যাত মুসলিম ইমামকে হত্যা করেন। ১৭৮২ সালে বর্মী রাজা বোধাওপায়ার আরাকান রাজ্য দখল করে নেন। তিনি ছিলেন ঘোর মুসলিম বিদ্বেষী। দখলের পর বোধাওপায়ার ঢালাওভাবে মুসলিম নিধন করতে থাকেন। শুরু হয় অত্যাচার আর শোষণের আরেক অধ্যায়।
১৭৯৯ সালে পঁয়ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ বার্মিজদের গ্রেফতার এড়াতে এবং আশ্রয়ের নিমিত্তে আরাকান থেকে নিকটবর্তী চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলে আসে। যেটাকে আমরা বলছি কক্সবাজার। পরে আরো লক্ষাধিক লোকের আগম ঘটে। তারও আগে আসে আরো অর্ধালক্ষাধিক আরাকানী মুসলিম।
১৭৯৯ হিরাম কক্স মারা যান। যিনি ছিলেন কক্সবাজারের প্রতিষ্ঠাতা। আজকের কক্সবাজার এলাকাটি ছিলো প্রায় বিরান। আরাকান থেকে আসা শরনার্থীরাই কক্সবাজারের গোড়া পত্তন করেন। হিরাম কক্স (১৭৬০-১৭৯৯)শরণার্থীদের পুণর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেন কিন্তু কাজ পুরোপুরি শেষ করার আগেই মারা মাত্র ৩৯ বছর বয়সে এই চৌকষ নাবিকের জীবনাবসান ঘটে। তার মৃত্যুর কারণ ছিলো ম্যালেরিয়া। শুধু কোম্পানীর লোকজন নয়। েএসময় শত শত উদ্ধাস্তু রোহিঙ্গাও ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

১৭৯৯ সালে প্রকাশিত "বার্মা সাম্রাজ্য"তে ব্রিটিশ ফ্রাঞ্চিজ বুচানন-হ্যামিল্টন উল্লেখ করেন, "মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ) - এর অনুসারীরা", যারা অনেকদিন ধরে আরাকানে বাস করছে, তাদেরকে "রুইঙ্গা" (Rooinga) জাতি কখনই নিজেদেরকে "আরাকানের স্থানীয় বাসিন্দা" বা "আরাকানের মুলনিবাসী" (Native of Arakan) উল্লেখ করে নাই । কারণ তখন রোহিঙ্গারা নিজেদেরকে শুধু মুসলিম বলে পরিচয় দিয়েছিল। রোহিঙ্গারা তখন নিজেদেরকে রোহিঙ্গা বলার চেয়ে মুসলিম বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতো। তখনো ক্ষুদ্র বা স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে তাদের রোহিঙ্গা নামের গুরুত্ব তারা বুঝে উঠেনি।

১৮০২: এ বিষয়ে হেয়াল্টার হেমিল্টন লিখেছে যে, সে ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে রামুর শরণার্থী শিবিরে লক্ষাধিক আরাকানী শরণার্থীর অবস্থান দেখেছে । যদিও ইতোমধ্যে তিনভাগের একভাগ রোহিঙ্গা ম্যালেরিয়া ও রোগে শোকে মৃত্যু বরণ করে।

১৮২৬ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে এক যুদ্ধের ফলে বার্মা সরকার আরাকান, আসাম এবং মনিপুরের ওপর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেয়।

১৮২৬ সাল থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসন। ১৮২৫ সালে ব্রিটিশরা বার্মা দখল করলেই মূলত বার্মিজরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে রোহিঙ্গাদের উপর।

১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে বার্মার সঙ্গে ব্রিটিশের যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ব্রিটিশরা বার্মাকে ব্রিটিশ ভারতের অধিকারে নিয়ে আসে এবং এ বার্মা অঞ্চল ব্রিটিশ ভারতের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। তখন আরাকানও এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধে আরাকান ইংরেজদের অধিভুক্ত হয়।

১৮২৮ সালে বার্মা (মায়ানমার) ইংরেজদের শাসনে চলে যায়। এরপর ১৯৩৭ সালে বার্মা স্বায়ত্ত্বশাসন লাভের পর উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। কত নারী পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে কত মানুষকে এসময়ে হত্যা করা হয় তার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়না। নির্যাতিত মুসলিমরা কোনঠাসা হতে হতে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়। মূলত এই সময় এত রোহিঙ্গা ও অন্যন্য মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ব্যাপক রোহিঙ্গারা প্রাণহানি ও পলায়ন করে ফলে আদশ শুমারীর আগে তাদের সংখ্যা কত ছিরো তা জানা যায়না। ধারণা করা হয় এই সংখ্যা ৫ লাখও হতে পারে।

১৮৯১ সালে ব্রিটিশদের করা এক আদমশুমারীতে দেখা যায়, আরাকানে তখন ৫৮,২৫৫ জন মুসলমান ছিল।
১৯১১ সালে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৭৮,৬৪৭ জন হয়। ব্রিটিশরা বার্মায় ১৩৯টি জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করে কিন্তু তার মধ্যে এ রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ব্রিটিশ শাসকদের এ ভুলের খেসারত আজও দিচ্ছে আরাকানের রোহিঙ্গারা। ফলে বার্মা সরকার ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও রোহিঙ্গা এর মধ্যে নেই। অনেকে মনে করেন ভুলটা রোহিঙ্গা মুসলিমরাই করেছে তারা তাদের মুসলিম পরিচয়টাকে বড়ো করে দেখানোর জন্য রোহিঙ্গা পরিচয় বাদ দিয়েছে। তারা বার্মার কিংবা ভারত বর্ষের বৃহত্তর মুসলিম সমাজের অংশ হতে চেয়েছিলো। আবার অনেকের মতে রাখাইন এবং রোহিঙ্গা দুটো শব্দকে সমার্থক বিবেচনা করে রাখাইন মুসলিমদের রোহিঙ্গা মনে করে তাদের নাম আলাদাভাবে অন্তর্ভূক্ত করার প্রয়োজন মনে করেনি সরকার। যেকারণে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দাবী রোহিঙ্গা বলতে কোনো জাতিসত্তার অস্তিত্ব মিয়ানামরের ইতিহাসে নাই।

১৯৩০ সালে: ইয়াঙ্গুন তৎকালীন রেঙ্গুনে প্রতিষ্ঠিত ২০০ মুসলিম রোহিঙ্গাকে জবাই করে হত্যা করে তাদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।
১৯৩৬: এই সময় বার্মার অন্যান্য মুসলিমদের মতো রোহিঙ্গারা অভিন্ন ও স্বাধীন বার্মার দাবীতে সোচ্চার হতে থাকে। এই সময় রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে তোলা অল বার্মা স্টোডেন্টস ইউনিয়ন এর কার্যকরী কমিটির সদস্যদের তোলা একটি ছবিতে দেখা যায় সভাপতির চেয়ারে বসে আছেন রোহিঙ্গা মুসলিম আব্দুর রশিদ । ছিলেন অল বার্মা স্টোডেন্টস ইউনিয়ন এর সভাপতি ছিলেন । তার ডান পাশে বসা অং সাং ( অং সাং সুচির বাবা ) যিনি ছিলেন ঐ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক । তার বাম পাশে বসা ছিলেন আরেক আরাকানী মুসলিম আব্দুর রাজ্জাক । ছিলেন বার্মা মুসলিম লীগ এর সভাপতি । আর এদের হাত ধরেই এসেছিল বার্মার স্বাধীনতা ।

অল বার্মা স্টোডেন্টস ইউনিয়ন এর সভাপতি রোহিঙ্গা আব্দুর রাশিদ ছিলেন আজকের মিয়ানমারের সংবিধানের খসড়া প্রণয়নকারী । তারা একীভূত মিয়ানমারের পক্ষে ছিলেন। ধারণা করা মুসলিম লীগ সভাপতি জনাব আবদুর রাজ্জাক পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। যদিও এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়না। তবে রোহিঙ্গা ইমামদের একটি দল পরে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে দেখা করে পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলেও। আবদুর রশিদ ও শাহ সুফি নামক আরেক রোহিঙ্গা নেতার অনিচ্চায় কিংবা ব্রিটিশ সরকারের নীতির কারণে সেটা আর হয়নি।

১৯৩৭ সালে বার্মার স্বায়ত্তশাসন লাভের পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ব্যাপক রূপ নেয় এবং বহু মুসলমান নিহত হয়।

১৯৩৮: আবারো উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা রেঙ্গুনে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য এলাকার ২শএর বেশী মুসলিম হত্যা করে। প্রকৃতপক্ষে এর সংখ্যা আরো অনেক বেশী।

১৯৩৯ সালে, রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যকার দীর্ঘ শত্রুতার অবসানের জন্য ব্রিটিশ প্রশাসন জেমস ইস্টার এবং তিন তুতের দ্বারা একটি বিশেষ অনুসন্ধান কমিশন গঠন করে।

১৯৪২ সালে জাপান যখন বার্মাকে দখল করে তখন বার্মিজরা আবার রক্তের হোলিখেলায় মেতে উঠে এবং তিনলক্ষ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা আবারও দেশ ও ভিটেমাটিছাড়া হয়।

১৯৪২ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানি শাসন। জাপানীরা হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যা করেছিল। এই সময়ে প্রায় ২২,০০০ রোহিঙ্গা সংঘর্ষ এড়াতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলায় চলে গিয়েছিল। জাপানী এবং বার্মাদের দ্বারা রংবার গণহত্যার শিকার হয়ে পরে প্রায় আরো ৪০,০০০ রোহিঙ্গা স্হায়ীভাবে চট্টগ্রামে চলে আসে। এটা উইকিপিডিয়ার তথ্য অনেকের মতে, ১৯৪২ সালে জাপান বার্মা দখল করলে স্থানীয় মগরা জাপানি সৈন্যদের সহায়তায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। ইতিহাসে এটি ১৯৪২-এর গণহত্যা নামে খ্যাত। এই সময় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। এবং ৫ লাখ রোহিঙ্গা ভারত ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

১৯৪৫: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, জাপানীরা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনস্হ বার্মায় আক্রমণ করে। ব্রিটিশ শক্তি পরাজিত হয়ে ক্ষমতা ছেড়ে চলে যায়। এর ফলে ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে। এর মধ্যে বৌদ্ধ রাখাইন এবং মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যকার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল উল্লেখযোগ্য। এই সময়ে ব্রিটিশপন্হীদের সাথে বার্মার জাতীয়তাবাদীদেরও সংঘর্ষ হয়। জাপানীদের আক্রমণের সময় উত্তর আরাকানের ব্রিটিশপন্হী অস্ত্রধারী মুসলমানদের দল বাফার জোন সৃষ্টি করে। রোহিঙ্গারা যুদ্ধের সময় মিত্রপক্ষকে সমর্থন করেছিল এবং জাপানী শক্তির বিরোধিতা করেছিল, পর্যবেক্ষণে সাহায্য করেছিল মিত্রশক্তিকে।

১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান সৃষ্টির সময় বার্মার মুসলিম লীগের কিছু সদস্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিন্নাহের সাথে একাধিক বৈঠক করে পাকিস্তানের সাথে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। তবে এই গঠনার ঐতিহাসিক দলিল এখনো পাইনি। অনেকে দ্বিমত রয়েছে। তবে এটা তখন সমস্ত ভারতবর্ষের মুসলমানদের ইচ্ছে ছিলো। কারণ জাতিগত দাঙ্গার কারণে মুসলমানরা অন্যকারো সাথে নিজেদের নিরাপদ মনে করছিলনা। যদিও কিছু লোক মনে করে থাকেন এটাই ছিলো রোহিঙ্গাদের ভুল। কথাটা ঠিক নয়। কারণ তখন সব মুসলমানরাই পাকিস্তান রাস্ট্র চেয়েছিলো। দ্বিতীয়ত মুসলমানদের উপর হত্যাযজ্ঞ চলছে এক হাজার বছর ধরে। তাছাড়া তখনো বিপল সংখ্যক মুসলিম বিশেষ করে রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রশিদ এর নেতৃত্বে অখন্ড বার্মার পক্ষে ছিলো। এবং স্বাধীন বার্মা আন্দোলনের অন্যতম নেতা শাহ ছু নতুন বার্মা প্রতিষ্ঠার অগ্রনায়ক। তিনি একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন রোহিঙ্গা। অনেকের মতে এটাই রোহিঙ্গাদের ভুল ছিলো তারা কেন পাকিস্তানের সাথে আসেনি।

১৯৪৭: বার্মার সংবিধান প্রনয়নে ভূমিকা রাখে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। তারা সংবিধান ইস্যূতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে এবং তৎকালীন রাজা উ নু রোহিঙ্গাদের এই ভোটাধিকার দেন।

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি বার্মা ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। তবে ব্রিটিশরা বার্মা ছেড়ে যাওয়ার সময় এমন পক্ষপাতদুষ্ট নীতি চাপিয়ে দেয়।
এই সময় প্রচুর ভারতীয় নাগরিক বলে বিশেষ করে হিন্দুদেরকে ‘‘কালা’’ নাম দিয়ে মায়ানমার থেকে বিতাড়িত করা হয়।
১৯৫৭ সালের বার্মার জাতীয় নির্বাচনে আরাকানে মোট ৭টি আসনে রোহিঙ্গা মুসলিম সংসদ সদস্যরা বিজয় লাভ করেন। মূলত এই ঘটনায় মাথা খারাপ হয়ে যায় মগদের। অনেকে প্রচার করছে ৪৭ এর পরে রোহ্ঙ্গিাদের জাতীয় বেইমান ঘোষনা দেয়া হয়। কিন্তু ইতিহাসে এর কোনো প্রমাণ নেই। বরং ৪৮ সাল মানে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরথেকে ৫৭ সাল পর্যন্ত এই সময়ে রোহিঙ্গারা তুলনামুলক ভালো ছিলেন। কারণ ছিলো আবদুর রশিদ ও শাহ ছু এর মতো রোহিঙ্গা নেতাদের বার্মার জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বদান। আসল ব্যাপার ৫৭ সালের নির্বাচন।
১৯৫৯ সালে বার্মার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উহু বা। রেহিঙ্গাদের বার্মার আদিবাসী বলে ঘোষনা দেন। এবং এনিয়ে বির্তক নিরসনের আহবান জানান।
১৯৬১: এক সন্ধি প্রস্তাবের পর স্বাধীন আরাকান রাজ্যের দাবী ছেড়ে রোহিঙ্গা মুসলিমরা আত্ম সমর্পণ করে। যারা স্বাধীন আরাকান রাজ্য না পেয়ে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদি তারা পাকিস্তান রাজ্যের সাথে যেতে চাইতো তাহলে তারা নিশ্চয় পাকিস্তানের কাছে সাহায্য পেত।
১৯৬২ সালে সামরিক সরকার বার্মায় ক্ষমতা পেলে রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার বেড়ে যায়। এর পর ৭৮ সাল পর্যন্ত: ১৪টি অভিযানে হাজার হাজার রোহিঙ্গার প্রাণ যায়।
১৯৬২ সালে ক্ষমতা দখলের পর নে উইন সংখ্যালঘুদের সব সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করে।
১৯৬৪ সালে রোহিঙ্গাদের সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয় ।
১৯৬৫ সালে বার্মা ব্রডকাস্টিং সার্ভিং থেকে প্রচারিত রোহিঙ্গা ভাষার সব অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়।
১৯৭০ থেকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সনদ দেয়া বন্ধ করা হয়।
১৯৭১: যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দেখা দেয়। তখন টেকনাফ ও কক্সবাজারে পাকিস্তানী সেনারা হানা দিলে অনেক বাঙালী ও মুক্তিযোদ্ধা মংডুতে আশ্রয় নেয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের বাড়ীতেই তারা আশ্রয় নিয়েছিল। যদিও একটি মসজিদে নামাযের সময় প্রথমসারিতে বাঙালীরা দাঁড়াবে কিনা এই নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। বিষয়টি পরে সুরাহা হলেও উপস্থিত বাঙালীদেরকে বিষয়টি পীড়া দেয়। যদিও এই ঘটনা কবে কোথায় সংঘঠিত হয়েছে এর সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়না।
১৯৭৪-এ কেড়ে নেয়া হয় ভোটাধিকার এবং রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। ফলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা জীবন রক্ষার্থে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তৎকালীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় অবস্থান ও চরমপত্রের কারণে বার্মা সরকার বিতাড়িতদের অনেককে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
১৯৭৭: তারপর তিন বছর যেতে না যেতেই সামরিক জান্তা ‘কিং ড্রাগন অপারেশন’ নামে ভয়াবহ রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে।
১৯৭৮: আর জেনারেল নে উইং রোহিঙ্গাদের সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করেন। তারপূর্ব পর্যন্ত হিঙ্গারা আইনপ্রণেতা ও সংসদ সদস্য হিসেবে মায়ানমারের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৭৮: সাল থেকে নতুন করে মায়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গারা চরমভাবে মানবাধিকার লংঘনের শিকার হচ্ছে এবং তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে। সেবছর ২ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে বাংলাদেশে।
১৯৭৮: রোহিঙ্গা লিবারেশন ফ্রন্ট নামে সশস্ত্র সংগঠন তৈরী হয়। ১৯৭৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত বিশ্বের কাছে রোহিঙ্গা ইস্যুটি কেবল বার্মা বা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ইস্যু ছিল। ১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য গোদের উপর বিষফোড়ার মতো একটি নতুন সমস্যা হয়েছে।
১৯৭৯ সালে মিয়ানমারের ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক ওই সময় ৩ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত নিয়ে যায়।
১৯৮১ সালে মায়ানমারের সামরিক শাসনকর্তা ‘আরাকান’ রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে ‘রাখাইন’ প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করেন। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য এটা বুঝানো যে; এই রাজ্য বৌদ্ধ রাখাইন সম্প্রদায়ের, রোহিঙ্গা মুসলমানদের নয়।
১৯৮২ :বার্মিজ নাগরিকত্ব আইন অনুসারে তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের আন্দোলনের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা এবং সরকারি চাকুরীর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১৯৮২: রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন। আরএসও গঠিত হয়। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ঘটনার সাথে এই সংগঠনটির নাম উঠে আসছে।
১৯৯১: টাঙ্গুতে হত্যা করা হয় ২০০ রোহিঙ্গাকে নারী শিশুসহ। জালানো হয় ঘরবাড়ী, জ্বালিয়ে দেয়া হয় ১১টি মসজিদ।
১৯৯২ সালে দুইবার তাদের উপর সামরিক অভিযান চালানো হলে ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
২০০১ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষু আশ্বিন উথুরাই মুসলিম-বিরোধী এবং জাতীয়তাবাদী একটি গ্রুপ গঠন করেন, যার নাম ছিল ৯৬৯ গ্রুপ। এ সংগঠনটিকে উগ্রপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২০০৩ সালে উগ্রপন্থী সন্ত্রাসবাদী ও নিজেকে মায়ানমারের স্বগোষিত লাদেন ঘোষনাকারী আশ্বিন উথরাইকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। যদিও ৭ বছর পর মুক্তি পেয়ে যায়। আশ্বিন উথরাই হলো সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব গঠনের মূল নায়ক। তার থিয়রী অনুসারে ‘‘তুমি একজন জাতীয়বাদী হিসেবে হত্যা সন্ত্রাষ লুন্ঠন যা করবে সবই গ্রহনযোগ্য’’
২০০৫ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনের কমিশনার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মায়ানমারে প্রত্যাবাসনের চেষ্ঠা করেছিলেন।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালাক্কা প্রণালীতে ২১ দিন সাগরে ভাসার পর অনেক রোহিঙ্গাকে সেসময় স্থানীয় জেলারা উদ্ধার করেছিল। বার্মার কুটনীতিকদের সাথে এক বৈঠকের পর ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করে তারা শরণার্থী শিবিরে বসবাস করা ৯,০০০
২০১০ সালে অন্যান্য রাজবন্দীর সাথে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয় টাইম ম্যাগাজিন কতৃক ঘোষিত সন্ত্রাসী বৌদ্ধভিক্ষু আশ্বিন উথরাইকে। তারপর ভিক্ষুদের ইন্ধন সেনাবাহিনী আর রাখাইন যুবকদের দ্বারা সংঘঠিত হতে থাকে। একের পর এক ইতিহাসের বর্বরতম সব হত্যালীলা। প্রযুক্তির কল্যাণে যার একশভাগের একভাগ হলেও ছবি ও ভিডিওতে ধারণ করা আছে। যা আগামীদিনের বার্মিজ জাতির উত্তরাধিকারীদের বিব্রত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
২০১১ সালের ১৬ই অক্টোবর মায়ানমারের নতুন সরকার নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে স্বীকৃতি জানায়।
২০১২: একজন রাখাইন নারীকে তিনজন রোহিঙ্গা পুরুষ ধর্ষণ ও হত্যা করে-- এই গুজবের উপর ভর করে ২০১২ সালের দাঙ্গা শুরু হয়। ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে বৌদ্ধরা একটি বাস থামিয়ে ১০ জন মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যা করে সেনাবাহিনীর চোখের সামনেই। ২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যে মুসলমান এবং বৌদ্ধদের মধ্যে যখন তীব্র সংঘাত শুরু হয়। সে সময় আশ্বিন উইরাথু তাঁর জ্বালাময়ী বক্তব্য নিয়ে জনসমক্ষে আসেন। তাঁর একটি পরিচিত উক্তি ছিল, " তুমি যাই করো, সেটা একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে করবে।" রাখাইন নারী ধর্ষনের প্রমাণ না হলেও। হাজার হাজার মুসলিম নারী ধর্ষণ এবং রোহিঙ্গারা হত্যা নির্যাতন ও লুন্ঠনের শিকার হলো।
২০১৩ : জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেছে।
২০১৩ সালের ১ জুলাই টাইম ম্যাগাজিন বৌদ্ধ ভিক্ষু আশ্বিন উইরাথুকে নিয়ে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছিল। সেটির শিরোনাম ছিল, "একজন বৌদ্ধ সন্ত্রাসীর মুখ"। সেখানে উথুরাই বেশ গর্ব করে বলেছিলো যে, মুসলিমদের ভোটাধিকার থেকে বাদ দেয়ার সব কৃতিত্ব আমারই। তিনি নিজেকে বার্মার ওসামা বিন লাদেন বলেও মনে করেন। তাঁর বক্তব্য হিংসা ছড়িয়েছিল এবং সেগুলোর মূল টার্গেট ছিল রোহিঙ্গা মুসলমানরা। ফলে শুরু হয় হত্যাযজ্ঞের নতুন অধ্যায়।

২০১৪ সালের ২৯ মার্চ বার্মা সরকার “রোহিঙ্গা” শব্দটি নিষিদ্ধ করে।
২০১৪ সালের ৭ মে, যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ একটি বিল পাশ করে যেখানে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বন্ধে মায়ানমার সরকারকে আহ্বান জানানো হয়।
লন্ডনের কুইন ম্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক স্টেট ক্রাইম ইনিশিয়েটিভ কমিটির গবেষকরা বলেন, মায়ানমার রোহিঙ্গাদের গণহত্যা করে দেশ থেকে বিতাড়িত করার শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

২০১৫ সালের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং ২০১৬ ও ২০১৭ সালের সেনাবাহিনীর অভিযানের পূর্বে মায়ানমারে ১.১ থেকে ১.৩ মিলিয়ন রোহিঙ্গা বাস করতো।
২০১৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূল করা হচ্ছে বলে মায়ানমারের বিরোদ্ধে অভিযোগ করেন।
২০১৬: মায়ানমারে অব্যাহত হত্যাযজ্ঞে সেদেশের রাস্ট্রদূতকে বাংলাদেশ সরকার তলব করে তার প্রতিবাদে প্রায় ২ হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু বাংলাদেশ দূতাবাস ঘেরাও করে।
২০১৬: এক নারী সাংবাদিকের নেতৃত্বে রেঙ্গুনের বিভিন্ন পত্রিকার ১২ জন সাংবাদিক তাদের কাজে ইস্তফা দেয়। কারণ তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে তাদের পত্রিকার মিথ্যা সংবাদের সাথে তাল মেলাতে পারছিলনা।

৯ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে। ওই দিন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বাংলাদেশ সীমান্ত চৌকির সন্নিকটে মংডু শহরের কাছে প্রায় ৩০০ জন সংগঠিত চরমপন্থির একটি সশস্ত্র দল মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী সেনাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ৯ জন বিজেপি (মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী সেনা) নিহত হয়। আতাউল্ল্যাহ নামে এক পাকিস্তানী রোহিঙ্গা যিনি সৌদি আরবে লেখাপড়া করেছেন। তিনি আরাকানে ফিরে এসে একটি সশস্ত্র দল গঠন করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে তার দলটিই সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী। তার সংগঠন এর সাথে আইএস, আলকায়েদার যোগাযোগ আছে বলে মিয়ানমারের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেলেও তিনি নিজে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এবং তাদের সংগঠনের ইউটিবে পোস্ট করা বিভিন্ন ভিডিও থেকে দেখা যায়। অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও সংগঠনে এরা বেশ দূর্বল। তবে বিনাকারণেও রোহিঙ্গা যুবকদের প্রাণ যাচ্ছে সেনা ও মগদের হাতে একরকম প্রাণ বাঁচাতে তার দলে যোগ দিয়েছে সেনা হত্যাযজ্ঞ থেকে পালিয়ে বাঁচা কতিপয় যুবক।
১১ অক্টোবর ২০১৬: তটমাদৌ অঞ্চলে একই ধরনের হামলায় আরো ৪ বার্মা সেনা নিহত হয়। ধারণা করা করা হয়, হামলাকারীরা রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশান (আরএসও) নামক একটি মুসলিম রোহিঙ্গা জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য। এরা নিজেদের ফেইথ মুভমেন্ট অব আরাকানের (এফএমএ) সদস্য হিসেবে পরিচয় প্রদান করছে।
এই হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর অভিযান শুরু করে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার সেনাবাহিনী একহাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। যদিও এই সংখ্যা ২০ হাজার হতে পারে বলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান।

২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ১২ জন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হওয়ার পর মায়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরোদ্ধে “ক্লিয়ারেন্স অপারেশ” শুরু করে।
২০১৭: তিব্বতের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা দালাই লামা ঘোষা করে। এই গণহত্যার সাথে গৌতমবুদ্ধের শিক্ষার কোনো মিল নেই। গৌতমবুদ্ধ বেঁচে থাকলে এর বিরোধিতা করতেন।
২০১৭: রাশিয়া ঘোষনা দেয়যে রোহিঙ্গা প্রশ্নে তারা মিয়ানমারের সাথে রয়েছে।
২০১৭: রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা মরিচের গুড়া ব্যবহার করে।
২০১৭: রোহিঙ্গাদের কষ্টের কথা শুনতে তুরস্ক থেকে ছুটে আসেন সেদেশের ফাস্টলেডি। তিনি ১ হাজার টন খাদ্য সহায়তা দেন।
২০১৭: রোহিঙ্গাদের কাছে ছুটে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৭: রোহিঙ্গাদের ব্যাপক সহায়তা দিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ শুরু করে।
আজ অবধি ৫ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যাদের বেশীরভাগ নারী ও শিশু। ২ হাজার শিশু রয়েছে। যাদের পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী ও মগেরা। ধারণা করা হচ্ছে। লক্ষাধিক লোককে হত্যা করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরো বেশীও হতে পারে। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় একলক্ষ পরিবার। এদের পরিবারে গড়ে ২ জন করে প্রাণ হারালেও এই সংখ্যা ভয়ানক।
ঘরে আগুন লাগিয়ে। জ্বলন্ত আগুনে শিশু ছুড়ে মেরে। শিশুদের ঘাড় মটকে। গলায় রশি বেঁধে টেনে নিয়ে, পানিতে ডুবিয়ে বিভিন্ন ভাবে হত্যা করা হচ্ছে। নারীদের ধর্ষনের পর জবাই করে। বস্তাবন্ধী করে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। অনেককে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। জীবনে আগুনে দগ্ধ করা হচ্ছে পুরুষদের। বাংলাদেশের শাহপরীর দ্বীপে প্রতিনিয়ত ভেসে আসছে বস্তাবন্ধী কিংবা গুলি খাওয়া রোহিঙ্গা নারী পুরুষের লাশ।
বিশেষ কায়দায় পেছন দিক থেকে ধরে জবাই করে হত্যা করা হচ্ছে যুবকদের। পুরুষদের লাঠির সাথে হাত পা বেঁধে জীবন্ত সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়ে মারা হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিনই চলছে হত্যা ধর্ষণ ও নির্যাতন। গ্রামের পর গ্রাম জ্বলিয়ে দিয়ে পৈষাচিক খেলায় মেতেছে। সেখানকার মগরা।

সূত্র: উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, বিবিসি বাংলা ও অন্যান্য।

বি: দ্র: তথ্য সংযোজন বিয়োজন পরিবর্ধন পরিমার্জন এর জন্য মন্তব্য করুন। সাল তারিখ িএর ব্যাপারে যেকোনো দ্বিমত সাদরে গ্রহণযোগ্য তথ্যসহ শেয়ার করুন। রেফারেন্স দিন। ঐতিহাসের তথ্য বিভিন্নন রকম থাকতে পারে। তবুও দূর্বল সূত্রের চেয়ে বিশ্বস্ত সূত্র অনুসরণ করা শ্রেয়। তাই শক্তিশালী রেফারেন্স পেলে সংশোধনযোগ্য)

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×