somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন মার্ডার- ঘাতক শাওন ও মাজহারুল!!

২৭ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ূন মার্ডারহ-
ঘাতক শাওন ও মাজহারুল ॥ নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার অনুসন্ধান

গতকাল নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকায় লেখা হয়েছে ড. হুমায়ূন আহমেদ ক্যানসারে মারা যাননি। রক্তের সংক্রমণই তার অকাল মৃত্যুর কারণ। বাসায় ফেরার একদিন পর তিনি চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। তাৎক্ষণিক হাসপাতালে না নিয়ে জননন্দিত এই ব্যক্তিত্বকে প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় একদিন পর নেয়া হয় জ্যামাইকার কুইন্স মেডিকেল সেন্টারে। এরপরই যত জটিলতা। তার এই অকাল মৃত্যুকে হত্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

অথচ ওই হাসপাতালটিতে হুমায়ূনের চিকিৎসা বা অপারেশন করা হয়নি। এ ছাড়াও নিউইয়র্কে হুমায়ূনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যভাবে রাখা হয় রহস্যজনক কারণে। হুমায়ূনের এ অকাল মৃত্যুকে হত্যার সঙ্গে তুলনা করেছে পত্রিকাটি। এ জন্য দায়ী করা হয়েছে শাওন ও মাজহারুলকে।

জানা গেছে, লেখক হুমায়ূন আহমেদের লাশ গোসল করানোর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে লাশের গোসল নিয়ে তার ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তিকে হেস্তনেস্ত হতে হয়েছে। অন্যের সাহায্য নিতে হয়েছে গোসল করানোর কাজে। ফিউনারেল হোমে হুমায়ূন আহমেদের লাশ পড়েছিল একা, অনাদরে অবহেলায়।

মাতমে অস্থির কাউকে তখন দেখা যায়নি প্রিয় ব্যক্তির কফিনের পাশে। আত্মীয় জামাল আবেদীন ও আনিসুর রহমান ছাড়া কেউ নেই। সাধারণত কেউ মারা গেলে লাশের পাশে সার্বক্ষণিক কাউকে রাখা হয়। দোয়া-কালাম পড়া হয় আত্মার শান্তি কামনা করে। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের লাশের পাশে কেউ না থাকায় গোসলের পর মাত্র চার ব্যক্তিকে প্রথম মোনাজাত করতে হলো।

এসব নিয়ে এখন হাজারও প্রশ্ন সাধারণের মনে। কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের মণি হুমায়ূন আহমেদ কেন এমন উপেক্ষার শিকার হলেন এর জবাব চান তার ভক্তরা। এ বিষয়ে জানতে গিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রমতে, গত ১২ জুন বেলভিউ হাসপাতালে অপারেশন হয় হুমায়ূন আহমেদের। অপারেশনের পর সবাই খুশি। চিকিৎসকরা বললেন, এটা ১০০% সফল অস্ত্রোপচার। মাত্র ৮ দিনের মাথায় ২০ জুন হুমায়ূন আহমেদকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করা হলে তিনি নিজেই পায়ে হেঁটে গিয়ে গাড়িতে চড়ে ওজনপার্কের ভাড়া বাড়িতে ফিরে আসেন।

সূত্রমতে, বাড়ি ফেরার দিনই একটি পার্টি করা হয় হুমায়ূন আহমেদের বাড়িতে। সেখানে সব ধরনের গোশতসহ পানীয় ছিল। ক্যানসার অপারেশনের একজন রোগীকে এসব খাবার দেয়া সঠিক হয়েছে কি না তা নিয়ে রয়েছে অনেকের প্রশ্ন।

২১ জুন দুপুরে হুমায়ূন আহমেদ চেয়ার থেকে পড়ে যান। এটাই হয়েছিল তার জন্য বড় কাল। চেয়ার থেকে কীভাবে তিনি পড়লেন এটা কেউ জানেন না। পড়ে যাওয়ার কারণে অপারেশনস্থল আঘাতপ্রাপ্ত হয় মারাত্মকভাবে। এ নিয়ে সার্বক্ষণিক সঙ্গীরা কোনো ব্যবস্থা নেননি তাৎক্ষণিকভাবে। একদিন পর ব্যথায় কুকরে ওঠেন হুমায়ূন আহমেদ।

এ সময় মুক্তধারার প্রধান বিশ্বজিৎকে ফোন করেন শাওন। জানতে চান ডাক্তারের ফোন নম্বর। বিস্ময়কর বিষয় হলো, শাওন ও মাজহারুল ইসলামের কাছে জরুরি প্রয়োজনের জন্য ফোন নম্বরটিও ছিল না ড. হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসকের।

পরদিন অর্থাৎ ২২ জুন বিকেলে যখন ব্যথা চরম আকার ধারণ করে তখন একটি প্রাইভেট কারে করে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে তারা রওনা হন হাসপাতালের দিকে। গাড়িতেই তিনি সংজ্ঞা হারান। একপর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলে সংজ্ঞাহীন হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে যাওয়া হয় জ্যামাইকায় অবস্থিত কুইন্স মেডিকেল সেন্টারের ইমারজেন্সি রুমে।

অবস্থা বেগতিক দেখে শেষে তাকে বেলভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে রাতে লেখককে নিয়ে যাওয়া হয় বেলভিউতে। সেখানে যাওয়ার পরপরই অবস্থার ভয়াবহতা দেখে চিকিৎসকরা তাকে আবার অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন ২৩ জুন। এরই মধ্যে ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।

সূত্র জানায়, হুমায়ূন আহমেদ মারাত্মক ইনফেকশনে আক্রান্ত হলেও সব সময়ই এটাকে ঢেকে রাখার একটি প্রবণতা ছিল। এ নিয়ে অনেকের মধ্যেই রয়েছে হাজারও প্রশ্ন।প্রশ্ন উঠেছে, ১২ জুন যখন বেলভিউতে হুমায়ূন আহমেদের অপারেশন হচ্ছিল তখন তার স্ত্রী শাওন ও মাজহারের বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে। ড. হুমায়ূন আহমেদের দীর্ঘ অপারেশনের সময় সেখানে উপস্থিত ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, বিশ্বজিৎ সাহাসহ আরো অনেকে ছিলেন উদ্বিগ্ন। বসে বসে তারা মনিটরে পর্যবেক্ষণ করছিলেন লেখকের সর্বশেষ অবস্থার খবর। কিন্তু শাওন ও মাজহার বেরিয়ে যান। তারা ফিরে আসেন প্রায় দুই ঘণ্টা পর।

উপস্থিত শুভানুধ্যায়ীরা বিষয়টি স্বাভাবিক মনে করেননি।একটি সূত্রমতে, ড. হুমায়ূন আহমেদ বাসায় পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু একদিন পরে প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় রক্তে সংক্রমণ, যা শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে তার মৃত্যুর কারণ। এ গাফিলতির দায়ভার কে নেবে এটাই এখন প্রশ্ন।

বাংলা সাহিত্যের স্রোতধারায় পরিবর্তনের নায়ক হুমায়ূন আহমেদ। নন্দিত এ ভালোবাসার মহানায়ক মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হলেন। বিশ্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসার জন্য খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রে এলেন আরোগ্য হওয়ার প্রত্যাশায়। নিউইয়র্ক আগেও আসা-যাওয়া করেছেন পাঠক নন্দিত এ লেখক। পরিবেশ ও প্রতিবেশকে সদাচঞ্চল রাখা হুমায়ূন আহমেদ লাশ হয়ে ফিরে গেলেন।

নিউইয়র্ক থেকে গত শনিবার রাতে হুমায়ূন আহমেদের কফিন নিয়ে ফ্লাইট উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গে এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে গেল। নিউইয়র্কের কোনো বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদ আর আসবেন না। প্রবাসী কোনো ভক্ত-পাঠক আর কখনো অটোগ্রাফ চেয়ে আবদার জানাবেন না। জীবনের সব হিসাব চুকিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন হুমায়ূন আহমেদ।

চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে এসে প্রায় ১০ মাস ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। দশ মাস নিউইয়র্কে অনেকটা নীরবেই কেটেছে তার। ক্যানসারের স্পর্শকাতর চিকিৎসার কারণেই নিয়ন্ত্রিত ছিল তার চলাচল। বাংলাদেশি অধ্যুষিত নিউইয়র্কের কুইন্সে ঘর ভাড়া করে চিকিৎসা চলছিল। নির্বিঘœ চিকিৎসা অব্যাহত রাখার জন্যই প্রবাসীদের পক্ষ থেকে অহেতুক বিব্রত করা হয়নি প্রয়াত লেখককে। প্রবাসীদের সব আড্ডা-সমাবেশে হুমায়ূন আহমেদের প্রসঙ্গ এসেছে। সবাই কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করেছেন প্রিয় লেখক যেন সেরে ওঠেন। যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন।

সব শুভ কামনা ধুলায় মিশে যায়। ১৯ জুলাই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হুমায়ূন আহমেদ। পাঠকের মনোজগৎ নিয়ে বহু রহস্য সৃষ্টি করে গেছেন ক্ষণজন্মা এ শব্দের কারিগর। মৃত্যুর আগে ও পরে নিউইয়র্কেও তাকে নিয়ে বেশ কিছু রহস্য, বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে।চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল বদল বিখ্যাত ক্লোন ক্যাটারিং মেমোরিয়েল হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের। শারীরিক অবস্থার উন্নতিও ঘটেছিল।

ক্যানসার চিকিৎসার জন্য অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ক্লোন ক্যাটারিং মেমোরিয়েল হাসপাতাল। হঠাৎ করেই জানা গেল বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। বেলভিউর কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে পরিচিতি নেই। এখানেই তার অস্ত্রোপচার হলো। অস্ত্রোপচারের আট দিনের মাথায় বাড়ি ফিরলেন হুমায়ূন আহমেদ। বাড়িতে শরীরের অবস্থার হঠাৎ অবনতি ঘটে।

জ্যামাইকা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ হয়ে আবার বেলভিউ হাসপাতালে গেলেন এবং টানা প্রায় চার সপ্তাহ ওখানে থেকেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।অনেকেরই জিজ্ঞাসা, হাসপাতাল পরিবর্তন করা হলো কেন? লোকজন জানতে চেয়েছেন, কারণটা কী ছিল অর্থনৈতিক?

বলা হচ্ছে ক্যানসারের আক্রমণে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু ঘটেনি। ঘটেছে অজানা ভাইরাসের আক্রমণে। এ আক্রমণটা ঘটল কোথায়? হাসপাতালে না নিজের ঘরে? ক্যানসার চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর জন্য প্রযোজ্য দেখাশোনায় হুমায়ূন আহমেদের বেলায় কোথাও কোনো অবহেলা হয়েছে কী?
নিউইয়র্কে কে ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের অভিভাবক?

হুমায়ূন আহমেদ কোনো সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর জানার জন্য উদ্বিগ্ন থেকেছে বাংলাদেশের লক্ষ্য কোটি মানুষ। চিকিৎসার জন্য লেখকের সঙ্গে আসা প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম ছিলেন সার্বক্ষণিক। নিউইয়র্কে অবস্থানকালীন চিকিৎসা থেকে নানা বিষয়ে দৌড়ঝাঁপ করেছেন মুক্তধারার বিশ্বজিৎ সাহা। লেখকের শারীরিক অবস্থা জানার জন্য এ দুজনের ওপরই সংবাদকর্মীদের নির্ভর করতে হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, দুজনের দেয়া ভাষ্যে ফারাক ছিল বিস্তর।

প্রিয় লেখকের সংকটজনক শারীরিক অবস্থা নিয়ে সংবাদ পরিবেশনে হিমশিম খেতে হয়েছে সংবাদকর্মীদের। অনেকেই বলেছেন, ১৯ জুলাই সকাল পর্যন্ত মাজহারুল ইসলাম লেখকের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেননি। অনেকেরই জিজ্ঞাসা, কোথাও কী কিছু আড়াল করার চেষ্টা ছিল?
আমাদের ব্যর্থতা নিউইয়র্কের বাংলা সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু সংবাদ পেয়েছেন ঢাকা থেকে।
সংবাদ প্রচার হওয়ার পরও দ্রুত নিউইয়র্কের বাংলা সংবাদপত্রের কর্মীরা হাসপাতালে উপস্থিত হতে পারেননি। হাসপাতালের ভেতর থেকে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন এবং মাজহারুল ইসলাম নিউইয়র্কের সংবাদকর্মীদের নয়, ঢাকায় ফোন করে সংবাদ দিচ্ছিলেন।

হুমায়ূন আহমেদকে হাসপাতালে মৃত ঘোষণার পাঁচ ঘণ্টা পর ফিউনারেল হোমে পাঠানো হয়। এ পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে সংবাদকর্মীরা ছাড়া মাত্র তিনজন সাধারণ প্রবাসীকে হাসপাতালের গেটে ভিড় করতে দেখা গেছে।
জ্যামাইকার রকওয়ে বুলেভারের ইসলামিক ফিউনারেল হোমে রাখা হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম রোজার প্রস্তুতি এবং তার জানাজার ব্যস্ততা ছিল, ফিউনারেল হোমের মূল ফটকসহ কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল।
রাত ১২টা পর্যন্ত ফিউনারেল হোমে কোনো প্রবাসীকে ছুটে আসতে দেখা যায়নি।
জ্যামাইকার রকওয়ে বুলেভার এবং ১১৬ স্ট্রিটের ঘরে হুমায়ূন আহমেদের পরিবার ছিলেন। সেখানে মধ্যরাত পর্যন্ত মাত্র জন বিশেক মানুষের আগমন ঘটেছে।শুক্রবার সকালে ফিউনারেল হোমে মরদেহ দেখার ব্যবস্থা থাকলেও কোনো প্রবাসী বাংলাদেশিকে সেখানে দেখা যায়নি। শুক্রবার জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের জানাজায় লোকসমাগম নিয়েও কথা উঠেছে।

রমজানের প্রথম জুমার নামাজে একই ধরনের লোকসমাগম হয়ে থাকে বলে অনেকেই জানিয়েছেন। জানাজার পর মরহুমের কফিন দর্শনার্থীদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু সেখানে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে জানাজার পর কোনো শুভেচ্ছার আয়োজন দেখা যায়নি। যেসব সংগঠন, সমিতির নেতারা অহরহ বিবৃতি দিয়ে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা জানান, তাদেরও দেখা যায়নি। বহু ফুল ফোটানোর মহানায়ক হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ শনিবার দুপুর পর্যন্ত ছিল ফিউনারেল হোমে। প্রবাসী বাংলাদেশি কোনো সংগঠন, নেতা-পাতি নেতাদের সেখানে ফুলের তোড়া নিয়ে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি।

যেসব বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক যোদ্ধা, লেখকের আত্মার আত্মীয় বলে পরিচয় ছিল তাদেরও দেখা মিলেনি। শনিবার রাতে জনাবিশেক লোক ছিলেন জেএফকে বিমানবন্দরে।যারা এখন শোকসভার ডাক দেবেন, ইনিয়ে-বিনিয়ে নানা কথা লিখবেন, তাদের টিকিটিও চোখে পড়েনি হাসপাতাল থেকে ফিউনারেল হোম পর্যন্ত। ফিউনারেল হোম থেকে অস্থায়ী বাড়ি, জানাজা এবং শেষ বিদায়ে জেএফকেতে।

বিমানবন্দরে কমিউনিটির উপস্থিতি ও প্রতিক্রিয়া ছিল লজ্জাজনকঅনেকেই জানতে চেয়েছেন, প্রিয় লেখককে কেন বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল? নানা কারণে সভা-সমিতি করে যারা নিজেদের মোড়লত্ব জাহির করেন তারাই বা কেন এগিয়ে গেলেন না? যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবী দাবি করেন, কুঁজো হয়ে হাঁটেন তারাই বা কোথায় ছিলেন?
নিয়ন্ত্রণহীন অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকেই শেষ দেখা দেখতে পারেননি প্রিয় লেখকের প্রিয়মুখ। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোনো সমন্বয় ছিল না।

জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখেছেন ওয়াশিংটনের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের, জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন।অব্যবস্থাপনা ছিল ফিউনারেল হোমেও শুক্রবার সকাল ৯টায় ইসলামিক ফিউনারেল হোমে গিয়ে মরহুম লেখকের কোনো স্বজনকে পাওয়া যায়নি। ফিউনারেল হোমের পরিচালক ব্রুস বেইটস জানান, মরদেহ গোসল করানোর জন্য স্বজনরা অপেক্ষা করছেন। সকাল সোয়া ১০টায় জামাল আবেদীন ও আনিসুর রহমান ফিউনারেল হোমে উপস্থিত হন।

দুজনই মরহুম লেখকের একান্ত স্বজন, প্রথমপক্ষের স্ত্রী গুলতেকিনের নিকট আত্মীয়। অন্য কারো জন্য অপেক্ষা না করে মরদেহ গোসল এবং ধর্মীয়ভাবে প্রস্তুত করা হয়। ধর্মীয় নিয়ম-কানুন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলেও প্রিয় লেখকের এ অন্তিম পর্বে আমিও যোগ দেই। নিয়মানুযায়ী সাদা কাফনের শেষ পরিচ্ছদে মুড়িয়ে দেয়া হয় মরহুমের দেহ।

ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া
মরদেহ গোসল করানোর আমার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। ফিউনারেল হোমের উন্মুক্ত টেবিলে চিরচেনা লেখকের নিথর দেহ দেখে মুষড়ে পড়ার অবস্থা। আমার থর থর কাঁপ এবং অঝোর কান্না দেখে জামাল আবেদীন আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন। আমরা তিনজন তখন দোয়া-দরুদ পড়ছিলাম। মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই মরদেহ কফিনে রেখে দেয়া হয়।

ফিউনারেল হোমে পারিবারিক দর্শনার্থী
ফিউনারেল হোমে পারিবারিক দর্শনার্থীদের জন্য কফিনে রাখা হলেও দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কোনো স্বজন বা পরিবারের লোকজন আসেননি। এখানে একটি প্রার্থনা কক্ষ থাকলেও ধর্মীয় কোনো আয়োজনও ছিল না ফিউনারেল হোমে। মরহুম লেখকের জন্য ছিল না কোনো দোয়া কালামের ব্যবস্থা।

হলরুমে কফিনের মধ্যে লাশ পড়ে আছে একটা। কেউ নেই কিছু বলার। আমরা মাত্র চারজন বসে আছি। এরই মধ্যে ফিউনারেল হোমে পৌঁছে গোছেন বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের। নীরব নিথর হুমায়ূন আহমেদের কফিন পড়ে আছে। কেউ নেই দেখার। আমরা চারজন পাশে গেলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম দোয়া-দরুদ করার। তারপর তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রথম মোনাজাত করি আমরাই। কেউ নেই। তাই শেষ পর্যন্ত বাংলা পত্রিকা সম্পাদক আবু তাহেরকে অনুরোধ করা হয় মোনাজাত পরিচালনার জন্য। মাত্র চারজন মিলে আমরা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করি।

বেলা সাড়ে ১১টার কিছু পর হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন তার মা তহুরা আলী, দুই পুত্র নিনিত ও নিশাদকে নিয়ে ফিউনারেল হোমে পৌঁছেন।মেহের আফরোজ শাওন মরহুম হুমায়ূন আহমেদের কফিনে ধরে বিলাপ করতে থাকেন ‘জিম জিম-তুমি চলে গেলে/তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো কিভাবে’। হুমায়ূন আহমেদকে সম্ভবত ‘জিম’ নামেই ডাকেন তার স্ত্রী শাওন।

শাওন বলছিলেন, ‘জিম তুমি বলতে কুসুম আমার চোখ বুলিয়ে দাও (শাওনকে হুমায়ূন আহমেদ ‘কুসুম’ বলেই ডাকতেন)’। শাওন বলেন, ‘দেখো জিম, আমি তোমার চোখ বুলিয়ে দিচ্ছি।’ শাওন বিলাপ করতে থাকেন, ‘জিম আমি রাখতে পারলাম না।’ এ সময় শাওনের মা তহুরা আলী মেয়েকে সান্ত¡না দিয়ে বলছিলেন, ‘দুই সন্তানের জন্যই তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে। মন শান্ত করো মা।’

নিশাদ ও নিনিত
দুই সন্তান নিশাদ ও নিনিত শেষ দেখা দেখেছে ওদের বাবা কোটি জনতার প্রিয় মানুষ হুমায়ূন আহমেদকে। ফিউনারেল হোমে মা ও নানীর সঙ্গে নিয়ে এলে তারা শুধু দেখছিল। বাবাকে ‘বাই বলো, বাবার কাছ থেকে বিদায় নাও’বলছিলেন মা মেহের আফরোজ শাওন। পলকহীন অবুঝ দুই শিশুপুত্র তখন কেবল এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল।

ছবি ওঠানো বারণ
হুমায়ূন আহমেদের কফিনে বিলাপরত তার স্ত্রী ও স্বজনদের ছবি গ্রহণের উদ্যোগ নেই। ফিউনারেল হোমের পরিচালকের কাছ থেকে প্রথম জেনে নেই ছবি তুলতে কোনো বাধা আছে কি না। ক্যামেরায় ছবি ধারণ করতেই ক্ষুব্ধ মেহের আফরোজ শাওন ছুটে এসে আমার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন। তার মা তহুরা আলী উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ নিষেধ করে গেছেন কোনো ছবি যেন ওঠানো না হয়।’ প্রয়াত লেখকের নিষেধের কথা আমার জানা নেই বলে তাৎক্ষণিক দুঃখ প্রকাশ করা হয়। ধারণ করা সব ছবি মুছে ফেলে আমার ক্যামেরা ফেরত দেয়া হয়।

অসুস্থ অবস্থায় প্রয়াত লেখকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকা মুক্তধারার বিশ্বজিৎ সাহা জানিয়েছেন, ছবি ওঠানোর ব্যাপারে নিষেধের কথা হুমায়ূন আহমেদ বলে যাননি। মৃত্যুর তিন সপ্তাহ আগে থেকেই তো তিনি কিছু বলতে পারছিলেন না।
মরদেহ ফিউনারেল হোমে রেখে অপ্রীতিকর আচরণ
মাত্র সাতজন পারিবারিক দর্শনার্থীদের সুশৃঙ্খল থাকার জন্য বলছিলেন সকাল থেকে ফিউনারেল হোমে উপস্থিত জয়নাল আবদীন। তার দিকে হঠাৎ তেড়ে আসেন প্রয়াত লেখকের বন্ধু বলে পরিচিত ফানসু ম-ল। স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে আসা ফানসু ম-ল এবং জয়নাল আবেদীনের মধ্যে ‘তুমি কে, তা আমি দেখে নেবো’ ইত্যাদি বাক্যবিনিময় শুরু হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ফিউনারেল হোম কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়।

মরদেহ দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে জানাজা শেষ হওয়ার পরও মরহুম দেশে ফেরার সময় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসা করা হলে সবাই বলছিলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চলছে, শুক্রবার রাতেই যেন ফ্লাইট ধরানো যায়। সমন্বয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মুক্তধারার বিশ্বজিৎ সাহা জানান, কার্যত সব টিকিট প্রথম শ্রেণীর না পাওয়ায় বিলম্ব হচ্ছিল।
মরদেহের সঙ্গে যারা ঢাকা যাবেন তারা নাকি প্রথম শ্রেণী ছাড়া ভ্রমণ করবেন না। অথচ হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই ড. জাফর ইকবাল ইকোনমি ক্লাসে ওইদিন ঢাকার উদ্দেশে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন।
জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ তখন ফিউনারেল হোমের হিমাগারে। জীবদ্দশায় তার ভ্রমণে প্রথম শ্রেণীর চাহিদা সবসময় ছিল কি না জানি না। তবে লাখো জনতার অপেক্ষা ও উৎকণ্ঠায় স্বদেশ তখন প্রিয় লেখকের কফিনের অপেক্ষায়।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×