somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওড়াওড়ি

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওড়াওড়ি
মানসিক অস্থিরতার কিছুকাল থাকে। এক একজনের এর প্রকাশ এক একরকম হয়।কি সাংঘাতিক বন্য সে সময়, কোনকিছুই প্রাণে লাগে না। আমার সকল অনুযোগ অস্থিরতা ঢেলে দিয়েছি ছোটাছুটি করে। এইচএসসির পরীক্ষার বছর কি অদ্ভূতভাবে যে কেটেছে! আজ আমি এখানে তো কাল সেখানে, এবেলায় এ গ্রুপ তো সে বেলায় সে বন্ধু। ৯৬ তে একটা জায়গা সবার মাঝে খুব পপুলারিটি পেল ঢাকার কাছে ঘুরবার জায়গা হিসেবে সেটার নাম ওয়াটার ফ্রন্ট। এয়ারপোর্ট এর কাছে খুব না কি সুন্দর জায়গা ঘুরবার। এর কাছে শুনি তার কাছে শুনি।বিশেষ করে কাপলরা সেই জায়গার ভূয়সী প্রশংসা করে। আমার বন্ধু সনি ৯৬ এর সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে আমাকে নিয়ে ওয়াটার ফ্রন্টে গেল। একটু পানি, কিছু গাছপালা, আর বিমানের উঠানামা। এখানে কি আছে তেমন আমি বুঝলাম না। গেলাম বন্ধুর মন রক্ষার্থে। কিছুক্ষণ পর আমরা একটা নৌকায় উঠলাম। পানির ভেতর ঘুরেটুরে যখন পাড়ে এলাম নামতে তখন আমি এবং সনি দুজনই কাদায় পড়ে গেলাম। কাদামাখা সনি কাদামাখা আমাকে এখানে বলবে সে আমাকে একটু একটু লাইক করা শুরু করেছে, আমি মনে মনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ব এবং ইয়ে দোস্তি কত তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় তার প্ল্যান করব।

এই একই সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ আমরা আবার ওয়াটার ফ্রন্ট। এবার সঙ্গী মাবরুকা এবং রুবেন্স (নামটা রোমান্স ও হতে পারে, আমার নাম মনে পড়ছে না)। আমাদের তিনজনের ভ্রমণটা কেন যেন খুব আনন্দদায়ক হলো না, হতে পারে গরমে কিংবা ক্ষুধায়। স্বস্তির ব্যাপার একটাই আমরা কেউ কাদায় পড়লাম না।

৯৬ এর মাঝামাঝি পার করে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়। পরীক্ষাটা এত খারাপ হয় যে রেজাল্ট হবার পরে কি আমাকে আত্মহত্যা করতে হয় কি না এই আশংকায় লাট্টুর মতো ঘুরতে থাকি। বিশেষ করে ফিজিক্স পরীক্ষা একেবারে পাশ না করার মতো করে দেয়া। বাসায় থাকলে আম্মু আব্বুকে দেখলেই আমার নিঃশ্বাস আটকে যায় আতংকে। এই আতংক যদি পরীক্ষার আগে কাজ করতো তাহলে পড়ালেখার এমন বেহাল দশা হতো না সে একেবারে হলফ করে বলা যায়। আমার ফুপাতো বোন সিম্মু আপা থাকতো ঘোড়াশাল সার কারখানার কলোনীতে। দুলাভাই (তাহের দুলাভাই কে আমরা The Team Series এর Mr. T নামে ডাকতাম) ওখানে ইঞ্জিনীয়ার। কিভাবে ঘোড়াশাল সার কারখানায় গেলাম বেড়াতে মনে পড়ছে না- বায়তুল মোকাররম থেকে কারখানার বাসে চড়ে গিয়েছি কিন্তু সাথে কে ছিল? একা গিয়েছি না দুলাভাই এর সাথে? মনে পড়ছে না। যাই হোক ঘোড়াশাল সার কারখানা একটা শান্তশিষ্ট এলাকা। ছায়া ঘেরা। নিবিড় প্রসন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ যাকে বলে। আমার ভাইগ্না ইহাম আর ইরাজ। ইহামের গলা তখন ঠান্ডা লেগে একেবারেই ভেঙ্গে গেছে। আমি আর পিচ্চি ইহাম সারাদিন মাইলসের জ্বালা জ্বালা গানটা গাইলাম ঘোড়াশাল থাকার দুদিন। আমার কানে এখনো ইহামের ভাঙ্গা গলায় ডাকা খালামণি ডাকটা ভাসে। ১৭.০৯.৯৬ তে গিয়ে আমি ১৯.০৯.৯৬ এ মাত্র দুদিন থেকে চলে এলাম ঘোড়াশাল থেকে। আসার সময় আমি একা এসেছিলাম এটা আমার মনে আছে।

সেই কোনকালে টিভিতে আমি সোনারগাঁ তে লোকজ উৎসবের টিভি কভারেজটা দেখেছিলাম, সেই প্রোগ্রামে একজন তরুণী মাথায় গামছা বেঁধে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে আর চোখ বন্ধ করে গান গাচ্ছে। হায় সেই দৃশ্য মাথায় এমনভাবে গাঁথলো! আজ এতবছর পরও স্বপ্ন দেখি আমি গান গাইছি সেইভাবে। পরবর্তী জীবনে আমি ক্লাসিক্যাল সংগতি ছেড়ে স্প্যানীশ গীটার বাজানো শিখেছিলাম সেই ছবিটা মাথায় নিয়ে। তেপান্তরের মাঠ পেরোনো হয়নি, হয়নি বাউল হওয়া, কি সংগীত সাধকের মগ্নতায় সঙ্গীত ধারণ করা, করণিক মন এখনো বেহুল হয় ঐ ছবিটা চোখের পেছনে নিয়ে। এমন স্বপ্ন আমাকে সোনারগাঁ দেখতে উদ্বেল করে তুললো। ২০.১০.৯৬ সনি, লিমা, রানা, আমি বেব ট্যাক্সিতে করে সোনারগাঁ গেলাম। কি আশ্চর্য সব দল যে গঠন ঘুরবার জন্যে! এই রানা মাবরুকার জুডো ক্লাবের ক্লাসমেট, পান খায় – সে যে কিভাবে আমাদের সাথে সেদিন জুটেছিলো আমার কিছুতেই মনে পড়ছে না। সোনারগাঁ গিয়ে দেখি পূজোর মৌসুম। হেঁটে হেঁটে জাদুঘর, বিভিন্ন কারুপণ্য দেখলাম। প্রাচীনতার ছোঁয়ায় নিজেরা কেমন কলকল ছেড়ে একটু মগ্ন হয়ে গেলাম। আমাদের চিয়ার আপ করতে সনি বললো চলো ভেতরে লোকালয়ে যাই, ঐখানে অনেক পুরানো বাড়িঘর আছে, ঐখানে আমার আব্বার এক আর্টিস্ট বন্ধু আছে। কেমন এখনই ভেঙ্গে পড়বে এমন সব বাড়ি। আমরা হাঁটছি, পূজোর মেলা থেকে গজা কিনেছি, কিনেছি হাওয়াই মিঠাই, আইসক্রীম। আমরা হাঁটছি, সনি কিছুতেই তার বাবার বন্ধুর বাড়ি খুজেঁ পাচ্ছে না। যাওবা পেলাম ঘামে ভিজে, কুকুরের মতো ক্লান্ত জিভ্‌ বের করে, আমাদেরকে বাসায় ঢুকতে দেয়া হলো না-তিনি এখন ব্যস্ত আছেন এই অজুহাতে। ফেরার সময় আমাদের কাছে বেবী ট্যাক্সিতে আসবার মতো অর্থযোগ নেই। আমরা বাসে করে গুলিস্তান এলাম, গুলিস্তান থেকে ডাবল ডেকারে করে মীরপুর যার যার বাসায়।

আমাদের মীরপুরের এখন আলোকদি গ্রাম সবাই চেনে কসাই কাদেরের কারণে। এই মীরপুরে (মীরপুর ১২ নম্বর) একটা সিরামিক ইটের কারখানা আছে। তার দেয়াল একদিক দিয়ে ভাঙ্গা। সেই ভাঙ্গা দিক দিয়ে কিছুদূর হেঁটে গেলেই নৌকা করে কিছু গ্রামে যাওয়া যায়। এই গ্রামগুলো হিন্দু অধ্যুষিত। ২১.১০.৯৬ এদিন বিসর্জনের দিন আমি আমার বড় ভাই এর বন্ধু পবনের গ্রাম চান্দুরাতে গেলাম পূজো দেখতে।

৯৬ যেন এক চর্ক্বিবাজির দিন, পায়ের নীচে সর্ষের বছর, মন চাইলো ছুট, বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে, কোথাও যেতে পারিছ না বেশি টাকা নেই হেঁটে চলে গেলাম, বাসে ২টাকা দিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন চলে গেলাম, কাউকে পেলেই হলো, ঝুম বৃষ্টি বন্ধু বান্ধবীরা মিলে ভিজলাম, শুকালাম সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখে আমি এমন এক ভেজাই ভিজলাম, তার আগের দিন কেনা নতুন স্যান্ডেল বৃষ্টিতে অক্বা পেল। ৯৬ পার করে কেমন করে ৯৭ তে পা দিলো। ১৫দিন ঘোরাঘুরি করে মণিপুর স্কুলের ৯৪ ব্যাচের মেয়েদের পিকনিক করলাম এই বোটনিক্যাল গার্ডেনে। একমাত্র বন্ধু ছিল লিপু, আমাদের সব মেয়ের মাঝে গোল হয়ে বসা। আমার সবচাইতে প্রিয় বন্ধু লিপু যার কোন জেন্ডার পরিচয় আমাদের কাছে ছিল না আমার এখনো মনে হয় বাবু হয়ে বসে আছে আমাদের সব বান্ধবীদের মাঝে। ৯৭ এর ৫ জানুয়ারী সেই পিকনিক, সেই হুল্লোড়, লিপুর অযাচিত এক বন্ধু আনোয়ারকে পঁচানো, একটা টুইন ওয়ানে মিউজিক বাজিয়ে আমাদের ফ্যাশন শো করা সেই খোলা গাছ তলায় সব ই আজ শুধু স্মৃতির অংশ। লিপু আমাদের ছেড়ে এত অল্পবয়সে না ফেরার দেশে চলে যাবে এ আমি কঠিনতম দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×