পাত্র চাই
পাত্রী শর্ট ডিভোর্সড
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত
বয়স ২৩( ৫'২" )
সুযোগ্য পাত্র আবশ্যক, ডিভোর্সড পাত্র অগ্রগন্য
যোগাযোগ: ০১৭১১-******
ছোট্ট বিঙ্গাপণ টাতে চোখ আটকে গেল আমার। নীচে যোগাজোগের জন্য দেয়া ফোন নাম্বার টা আর কারও নয় আমার বাবার!!! সেল ফোন টা নিয়ে ডায়াল করলাম...............
: হ্যা, জয়ী বল্।
: তুই কি ব্যাস্ত আছিস শ্রাবণ?
: কেন বল তো?
: একটু আসতে পারবি আমার বাসায়?
:বাসায় না গিয়ে বরং এক কাজ কর্। তুই টি এস সি তে চলে আয়।
: উমমমমমম, আচ্ছা।
:জয়ীতা??????????????????
বাবা ডাক দিল। আমি দৌঁড়ে গেলাম। বাবা বললেন "একটু বোস তো আমার পাশে মা"। আমি একটু ইতস্তত ভঙ্গীতে বললাম " বাবা, আমি একটু বেরুবো"। বাবা বললেন " ৫ মিনিট মা"। আমি বসলাম। বাবা কিছুক্ষন চুপ করে থাকলেন। মুখটা নীচু,যেন কোন খুনের আসামী হাকিমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যখন মাথা টা তুললেন আমি স্পষ্ট দেখলাম বাবার চোখ দুটো ছল ছল করছে। বাবা একটু হাসার চেষ্টা করলেন।হাসিটা এত কষ্ট দিল আমাকে,মনে হল এর চেয়ে যদি বাবা বাচ্চাদের মত চিৎকার করে কেঁদে উঠতেন!! বাবা বললেন " মা, পত্রিকা দেখেছিস আজ? ঐ খবর টা দেখেছিস? কি যে করে এরা!!" ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব খবর বাবা নিজেও দেখেছেন অনেকবার, তার জানতে চাওয়া খবর টা আসলে পাত্র খোঁজার খবর। আমি বললাম "বাবা, আমি দেখেছি" বাবা তাতেই বুঝে নিলেন আমি কি দেখেছি! " আমাকে ভুল বুঝিস না মা, বড্ড অপরাধী লাগে নিজেকে, তোর জীবন টা যে আমি নিজ হাতে ধ্বংস করে দিলাম। তোর কাছে মাফ চাইতেও আমার লজ্জা লাগে। আরেকটা বিয়ে কর মা। এবার তোর মত করেই যাচাই করে নিস" আমি বাবার হাত ধরে বসে রইলাম। কিছুই বলতে পারলাম না। এতটুকুও বলতে পারলাম না "এই বেশ আছি"। বাবা চোখ মুছলেন। আমি চুপটি করে বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে পড়ে থাকলাম,ছোটবেলায় মা বকলে যেমনি করে বাবার বুকে মুখ লুকাতাম। আজকের অভিমান টা মায়ের উপর নয়, কার উপর যে তাও জানি না! " কোথায় না বেরিবি বললি? যা মা" আমি উঠে এলাম।
রেডী হতে হবে। কি যে পোরবো?! শ্রাবণ টা বড্ড খুৎখুতে। "এটা পরলি ক্যান, এটা এমন ক্যান?" বেছে বেছে সাদা রং এর উপর হাজার বুটিকের কাজ করা ড্রেসটাই পরলাম। রিকশায় উঠে মন টা একরকম অকারনেই ভাল হয়ে গেল! ফুরফুরে একটা হাওয়া। মেঘ করেছে একটু,খুব সামান্য কিন্তু বোঝা যায় তার উপস্থিতি। ফুলার রোডে দেখলাম জুটি গুলা বিকেলের রোদে ভেজা মন টা শুকাতে বসেছে! স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশে, এস এম হলের পেছনে, ব্রিটিশ কাউন্সিলের সামনে একই অবস্থা! কেউ হাত ধরে, কেউ আলতো শরীর টা ছুঁয়ে, কেউ আবার দিব্যি জড়িয়ে! টি এস সি তে নেমেই শ্রাবণ কে পেলাম।
:কি হয়েছে রে?
আমি পত্রিকাটা বের করে দেখালাম ওকে।
:তো কি করবি ভাবছিস?
:জানি না।
:নির্ঝর কে বলেছিস?
:না,কি বোলবো? সে কিছুদিন যাবৎ খুব বাজে ব্যবহার করছে আমার সাথে। বলে কি লাভ!
শ্রাবণ একটু চুপ করে থাকলো। বললো "চল বসি কোথাও"।আমরা দাদা চত্তরে গিয়ে বসলাম।
:জয়ী???
:হুম
:খুব ভালবাসিস না নির্ঝর কে?
উত্তর দিলাম না। এর কি জবাব হয়?আবার বোললো
: নির্ঝর কেন এমন করছে তোর সাথে?:
:জানি না।
:তুই তোর এই মাতাল ভালবাসা টা ওর কাছে প্রাকাশ করলি কেন?
: জানিনা।
: আর এ কারনেই ও তোকে এমন অবহেলা করছে।ও কখনও তোর মূল্য বুঝবে না। আমি তোকে সবসময় বুঝিয়েছি,অথচ তুই.............
আমি মুখ নীচু করে ঘাস ছিড়তে থাকলাম, যেন ঘাস ছেড়ার মত এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর জগতে নেই!
:কি হল কথা বল???
:কি বোলবো?
:মাত্র কদিন হল তোদের সম্পর্ক। এর মধ্যেই সে এমন করা শুরু করেছে,পরে কি করবে??!! যে মেয়েটির চাহিদা শুধু ভালবাসা তাকেই যে সুখে রাখতে পারেনা সে কি পারবে জীবনে??!!
আমি হাসলাম। কিই বা বোলবো! হঠাৎ মনে হল আজ একটু হাঁটা উচিৎ, উদ্দেশ্যহীন। শ্রাবণের হাত ধরে টান দিয়ে বললাম "চল"।"কোথায়?" বললাম "জানি না কোথায়"। তারপর হাঁটতে থাকলাম দূজন।হাঁটতে হাঁটতে জগন্নাথ হলের সামনে গিয়ে বললাম "চল সোহরাওয়ার্দী পার্কের লেকে যাব।পা ডুবিয়ে বসে থাকবো"। সে কখনও আমার কোন কিছুতেই না করেনা। উল্টো আবার হাঁটা শুরু করলাম সোহরাওয়ার্দীর দিকে। লেকের পাড়ে বসে পা ডুবিয়ে বসে থাকলাম। চকচকা পানিতে মাছ গুলা কি সুন্দর খেলছে!! যদি আমি ওদের মত হতাম!
দুজন ঝাল মুড়ি খেলাম, অনেক ঝাল দিয়ে। তারপর সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে দেখে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম ঘাসের উপর বসে কিছু মেয়ে আয়না ধরে খুব করে সাজছে, ঠোঁটে লিপস্টিকের পরতে কালচে রং ঢেকে গেছে।কারও কারও ছোট বাচ্চা আছে, শুইয়ে রেখেছে ঘাসের উপর,নোংরা বালিশ মাথায়। সন্ধ্যা নামলেই শুরু হবে বিকিকিনি! মনে পড়ে গেল বছর খানেক আগের সেই দিন গুলো। খুব কি আলাদা ছিল দিন গুলো??!
বাসায় ফিরে বন্ধ সেল ফোনটা খুললাম। পর পর ৫ টা এস এম এস। ফোন দিলাম।
:কি ব্যাপার কোথায় ছিলে? গত ৪ ঘন্টা যাবৎ ফোন বন্ধ পাচ্ছি?
: ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম।ভুল করে বাসায় রেখে গিয়েছিলাম ফোনটা। এসে দেখি চার্জ নাই,বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।
মিথ্যা বললাম নির্ঝর কে,প্রথম বারের মত। না বলেই বা কি কোরবো? ও কি বুঝবে আমার কষ্ট গুলো? কতদিন হল দেখা হয়না দুজনের। কই একটি বারও তো বলে না "দেখতে ইচ্ছে করছে"। ইচ্ছে না হলে বলবে কি করে??!! কিন্তু আমার যে বড্ড ইচ্ছে করে। একটিবার দেখতে, হাত টা ধরে কিছুক্ষন বসে থাকতে!
বাবা ডাকলো,ফোন রেখে ছুটলাম আবার। রাতে খেয়ে শুয়ে পড়লাম,একটু জলদি। ঘুম নেই চোখে। তবুও শুয়েই থাকলাম। আচ্ছা নির্ঝর কি খুব বদলে গেছে? আর কি কোন সুখই অবশিষ্ট নেই আমাতে ওর? ইস্, কেন আবার স্বপ্ন দেখলাম আমি? আমার যে স্বপ্ন দেখতে মানা! নির্ঝর আমাকে বলতে পারছে না,লজ্জায়। হয়ত ভাবছে কষ্টে পোড়া এই মেয়েটাকে কিভাবে বোলোবো "তোমার জন্য সব টুকু মোহ আমার কেটে গেছে"। কিন্তু এভাবেই বা কত দিন?! কিন্তু ও না থাকলে বাঁচবোই বা কি করে? নাহ,মোরবো না। সৃস্টিকর্তা মরার সুখ টাও লিখে রাখেননি আমার জন্য! নাবিল কেও তো ভালবেসেছিলাম। ডিভো্র্স হল।মরে তো যাইনি!!
চোখে আলো লেগে ঘুম ভাঙলো। সকাল হয়ে গেছে?? কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কাল। কেমন জানি ঝরঝরা লাগছে। নির্ঝর কে একটা ফোন দেই........................... (আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা.........আবার ডায়াল করুন।)
হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করলাম। তারপর ছুটলাম ক্লাশে। সারাদিন ওর ফোন বন্ধ।বিকেলে শ্রাবণ এলো বাসায়।
:জয়ী একটা কথা বলি?
:বল
:তোর কি মনে হয়,নিঝুর সাথে তোর সম্পর্কের পরিণতি কি?
:পরিণতি বিচার করে তো ভালবাসিনি রে শানু, ভালবাসি শব্দটির সব থেকে বড় পরিণতি ভালবাসি। এর আগে পরে কিছু নাই। আমার কেন এমন হল রে শানু? কিছু পাইনা বলে কি তার মানে এই কিছু পাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই? কাঙাল এই মনটাকে একটু ভালবাসা দিতে এত কম পড়ে কেন সবার? কেন বাবা আজ আমার সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না? কেন মা খালি কাঁদে? কেন আত্মীয় স্বজনরা বাঁকা চোখে চায়।বারবার বলে বিয়ে দাও মেয়েকে আবার? কেন তাদের মনে হয় যে "পুরুষ ছাড়া আমার চলে না?"
: কাঁদছিস কেন? এই বোকা?
আর কথা বলিনা ওর সাথে। কিছুক্ষন পর শানু চলে যায়। আবার একা হয়ে যাই আমি।
নিঝু দূরে সরে যাচ্ছে একটু একটু করে। আমার সেই নির্ঝর যে আমার সাথে ১ ঘন্টা কথা না বলে থাকতে পারতো না, সেই নিঝু যে "জান" বলে ডাকতো জয়ীতাকে! জান ছাড়া কি মানুষ বাঁচে? তাহলে নির্ঝর কিভাবে বেঁচে আছে? ওর জানটা যে এখানে?!
এমনি করেই দূরে সরে গেল নিঝু। স্মৃতি গুলোও খুব ঝাপসা এখন। বাবা এখনও হঠাৎ হঠাৎ চশমার কাঁচ মুছেন, সেখানে লেগে থাকা কষ্টের ফোঁটা গুলোও! আমি অপেক্ষা করি একটা আলোঝরা দিনের। জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে আমার আকাশ টা খুঁজি, খুঁজি হারিয়ে যাওয়া চাঁদ তারা গুলো। কিছুই পাওয়া হয় না আমার। তবুও স্বপন দেখি।
আজ ক্লাশে যেতে ভাল লাগছে না। আজ আমার জন্মদিন। জরায়ুর জগৎ ছেড়ে এইদিনে জ্বরার জগতে এসেছিলাম। শ্রাবণ এলো।এক তোড়া ফুল হাতে। একটা সি ডি ও। ও গুলা আমার হাতে দিয়ে বোললো কি যেন কাজ আছে। বিকেলে আবার আসবে। ও চলে গেলে গানের সি ডি ভেবে শুনতে বসলাম
" জয়ী, পাঁচ পাঁচ টি বছর ভালবাসলাম তোকে। একাই। কখনও বুঝতে দেইনি তোকে,তুইও বুঝিস নি। শরীরে আর কুলায় না,মনটাও আর পারেনা। একলা আর কত ভালবাসবো বল? অবাক হোস না। তোকে ভাল না বাসার যথেষ্ট কারন আমি খুঁজে পাইনি,তাই বলতে পারিস বাধ্য হয়েই তোকে ভালবাসা। ফিরিয়ে দিয়ে লাভ নেই। আমি ফিরবো না। যদি দরকার পড়ে তো না হয় জোর করেই ছিনিয়ে নিয়ে যাবো তোকে। মারবি? মারিস। কথা বলবি না? বলিস না।নিশ্চুপ তোকেই শক্ত করে বুকে আগলে রাখবো। একদিনও রেধেঁ খাওয়াবি না? না খাওয়ালি। হোটেলে খাবো। কি আর করা! এক কাপ চাও না? ঠিক আছে। চলবে। চা আমি নিজেই খাসা বানাই! তবুও তোকে আমার চাই ই চাই!"
এক ফোঁটা উত্তপ্ত লোনা জল গড়িয়ে নামলো আমার গাল বেয়ে সাথে অস্ফুট একটা শব্দ "ভালবাসি" !!!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:৩৫