কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রী দায়রায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর মান দেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই ।
এটি কখনই আপোষের রাজনীতি নয়, বরং দীর্ঘদিনের চরম বঞ্চনার শিকারদের প্রতি ছায়া প্রদানের সিদ্ধান্ত মাত্র ।
কওমী মাদ্রাসাই হল প্রকৃত ইসলাম শিক্ষার ক্ষেত্র । আলীয়া মাদ্রাসাতে আর কয়টা হাদিস শিক্ষা দেয়া হয়, কওমী মাদ্রাসাতেই কোরান ও হাদিসের প্রকৃত রূপে শিক্ষা প্রদান করা হয় । আলীয়া কোন মাদ্রাসাই নয়, বরং এটি জেনারেলের সাথে সামান্য ইসলাম শিক্ষা মাত্র । কওমীদের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ, প্রকৃত ইতিহাস না জানলে মনে হতে পারে সরকার মৌলবাদিদের সাথে আপোষ করছে ।
বৃটিশ বিরোধী যে আন্দোলন হয়েছিল তার মধ্যে সিপাহী বিদ্রোহ নামের তূমুল আন্দোলনের মূলে ছিল এই কওমি হুজুরগণ । যারা এই উপমহাদেশকে স্বদেশীদের দ্বারা শাসন ও স্বাধীনতার জন্য হিন্দু মুসলীমদের একতাবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছিল । সেই সিপাহী বিদ্রোহ হল আসলে দেওবন্দী বিদ্রোহ, যা জওহর লাল নেহরুর ডিসকোভেরি অব ইন্ডিয়া বইতে বিস্তারিত লিখা আছে ।
বিভিন্ন ইতিহাস সাক্ষী, কওমীদের বা দেওবন্দী আন্দোলন রূখতে ব্যাপক দম নিপিড়ন চালানো হয় বৃটিশদের পক্ষ থেকে । সে সময় একদিকে দেওবন্দী আলেম ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বড় বড় আলেমদের উপর অত্যাচার করা হল, অপরদিকে সাধারণ মানুষের চোখে ইসলাম বিদ্বেশী নয় সরকার এমন প্রমাণ করতে 'জামায়াতে ইসলামী' বা মওদুদীবাদ সৃষ্টি করে তাদের পৃষ্টপোষকতা দেয়া হচ্ছিল বৃটিশদের সহায়তায় ।
সে সময়ে মওদুদীবাদীদের ভীত শক্ত করে দিতেই দেওবন্দী মাদ্রাসাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হল আর ভারতের বিভিন্ন এলাকাতে আলীয়া মাদ্রাসা যা সরকার নিয়ন্ত্রিত তা প্রতিষ্ঠা করা হল । সেই থেকে সরকার নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসাতে মওদুদীবাদ চরম ভাবে বিস্তার লাভ করতে থাকল ।
দেওবন্দিরা এক সময় আদালতে আলীয়া মাদ্রাসার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল, যে আলীয়া প্রকৃত শিক্ষা নয় বরং দেওবন্দই হল প্রকৃত ইসলাম শিক্ষার মাধ্যম কিন্তু বৃটিশ নিয়ন্ত্রীত আদালত দেওবন্দের মামলা খারিজ করে দিয়ে আলিয়ার পক্ষেই রায় দিল । সেই একটি রায়েই জামায়াত ইসলাম ও মওদুদীবাদ দেশের ধর্মের মাথায় চড়ে বসেছে । আজও দেশে আলিয়া মাদ্রাসাগুলই হল জামায়াত শিবির তৈরির কারখানা ।
সেই থেকে এখন পর্যন্ত আলীয়া মাদ্রাসা থেকে মওদুদীবাদ চিন্তা চেতনা ও জামায়াতি করণ উঠিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি ।
এতদিনে হয়তো জননেত্রীর সু নজরে এসেছে দেওবন্দীদের শাখা কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেবার জন্য । নেত্রীর নজর সর্ব দিকেই ।
আজ যারা ভাবছেন মৌলবাদীতা বৃদ্ধি পাবে, প্রশাসনের শাখায় শাখায় ধর্মপ্রাণের আবির্ভাব ঘটে যাবে তাদের বলতে চাই । যারা বৃটিশ থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত মওদুদীবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজেদের আকিদাহগত সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের বঞ্চিত করার অধিকার কে দিয়েছে আমাদের ?
তারাও দেশের জাতির সেবা করার সুযোগ পাবে এটাই সবার কামনা হওয়া উচিত । তারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করবে অথচ কোন অধিকার পাবেনা এজন্য ত দেশ স্বাধীন হয়নি ।
কেউ কেউ বলেন তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সেকেলে ! হতে পারে, কারণ তারা ত ইহকালের জন্য শিক্ষা নেয় না, তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাই হল ১৫ শত বছরের ঐতিহ্যগত হাদিস কোরানের ভিত্তিতে, তারা যে সনাতনী পদ্ধতিতে টিকে আছে এটাই প্রমাণ করে তারা রূপ পাল্টিয়ে চলেনা ।
উপমহাদেশে যারাই দেওবন্দী বা কওমী শাখাতে লেখাপড়া করেছে অথবা দীনি তাবলীগ গ্রহণ করেছে তাদের মধ্যেই আদর্শবান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়েছে ।
উদাহরণ স্বরূপ, দেখবেন বহু এসপি ডিসি, ম্যজিস্ট্রেট , ডাক্তার আছেন যারা দাওয়াতে তাবলীগে সময় দেন, তারা দেওবন্দী পন্থী । এরা সবাই সৎ, এরা কেউ দূর্ণীতি করেনা । এই তাবলীগ পন্থী উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের দ্বারা প্রশাসন সহ বহু ক্ষেত্রে দেশ সেবা করানোর প্রয়োজন, তাহলেই দেশে দূর্ণীতি রোধ সম্ভব হবে ।
আসুন আমরা সবাই জননেত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৪৯