somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাক ইসলামে নবীদের মূর্তি প্রার্থনাগৃহে রাখা হত ।

২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা যারা বাঙালী মুসলমান তারা সাধারণত চিন্তা করি মূর্তি রাখা না জায়েজ যা কঠিন গুনাহ । কথাটি সত্য তখন যখন তা পূজা বা আরাধনার বিষয় হয় । কিন্তু যদি আরাধনার বিষয় না হয় তবে তা হয় ভাস্কর্য় , যা না জায়েজ নয় ।
হেফাজতিদের দাবিকে সম্মান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি আদালতের সামনে থেকে জাস্টিসিয়া বা ন্যায় বিচাররের দেবী থেমিসের মূর্তি অপসারণ করেন । এর পর পর হেফাজতিদের কিছু হুজুরের পক্ষ থেকে একটি আবদার আসে তা হল দেশে যত মূর্তি আছে তার সবগুলোই ভেঙ্গে ফেলতে হবে ।
মনে হচ্ছে ‘নাঙের বাড়ির সিন্নি’ চাইলেই পাওয়া যায়, পয়সা লাগেনা ।
দেশের অভ্যন্তরে যতগুলো ভাস্কর্য আছে তার বেশির ভাগ হল মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত । সেগুলো সম্পর্কে কোন ভাবেই আঙ্গুল তুললে সাধারণ জনগণ তা মেনে নিবেনা ।
জাস্টিসিয়ার মূর্তি ছিল মেইন গেটের সামনে , বাহির থেকে সাধারণ জনগণ আদালতের সম্মুখ মানচিত্র দেখতে পেতেন না, যার কারনে মূর্তিটি সরিয়ে ভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে । শুধু স্থান বদল মাত্র । আদালত প্রাঙ্গনেই আছে । আর আদালতের এমন পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই । যাকে বলে সাপ মরলো লাঠিও ভাঙলো না ।
কিন্তু গতকাল থেকে কিছু সুশীল (ভাল নাপিতের দল) হৈ চৈ আরম্ভ করে দিয়েছে গেল গেল সব গেল । সেকুল্যার এখন বেকারার ।। এত হতাশ হবার কিছু নেই । আস্থা রাখুন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের এই দলটির প্রতি ।
এবার হেফাজতিদের বিষয়ে আসি ।
হেফাজত দাবি করেছে মূর্তি ভাস্কর্য তুলে ফেলতে হবে, দেশে আর কোন ভাস্কর্য নির্মাণ করা যাবেনা ।
যদি তাই হয়, বা মূর্তি যদি এতই জঘণ্য হয় তবে কোরআনুল করীম থেকে আলোচনা করা প্রয়োজন ।
• সুরাহ সাবা আয়াত ১৩-১৪
“আমি সোলাইমানের অধিন করেছিলাম বায়ুকে.... কতক জীন তার সামনে কাজ করতো পালনকর্তার নির্দেশে । ..... তারা সোলাইমানের ইচ্ছানুযায়ী দূর্গ, ভাস্কর্য, গৃহ সাদৃশ্য বৃহদাকার পাত্র .... নির্মান করতো....”
পূর্ণ আয়াত লিখলাম না, পড়ে নিবেন ।
আল্লাহর নির্দেশেই সুলাইমানের ইচ্ছাতে জ্বীনেরা ভাস্কর্য নির্মাণ করতো তার নির্মিত গৃহে ।
আমরা জানি সোলাইমান জ্বীনদের কাজে লাগিয়ে ইবাদতখানা নির্মাণ করেছিলেন । আর সেই ইবাদত খানার ভেতরেই জ্বীনেরা ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিলেন ।
তাফসির মারেফুল কোরান থেকে তুলে ধরা যাক,
তাফসীরটির ৭ম খন্ডের ২৫৩ পৃষ্ঠায লিখা হয়েছে, “শিল্পজীবী মানুষকে হেয় করা গুনাহ”
বলা হয়েছে, “আরবের বিভিন্ন লোক বিভিন্ন শিল্পজীবী ছিল, কাউকেই হেয় করা হয়নি, তারা জিবিকার জন্য অনেকেই ভাস্কর্য নির্মান করতেন, তাদের সেখানে সম্মানের সাথেই দেখা হত । কিন্তু ভাস্কর্য শিল্পিদের হেয় ও ছোট ভাবা ভারত বর্ষের প্রথা, যা মুসলমানের মধ্যে বশ করেছে ।“
তাফসিরটির ৭ম খন্ডের ২৫৯ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে,
“সোলাইমানের গৃহে প্রাণী ও অপ্রাণী উভয় প্রকার ছবিই আঁকা হতো ।..জন্তু, শস্য, প্রভৃতির ছবি পাথর ও মৃত্তিকা দিয়ে তৈরি করা হতো ।“
একই পৃষ্ঠায় নিচের অংশে লিখা হয়েছে,
“ সোলাইমান নবীর জামানা সহ পূর্বপর্তী নবীদের জামানায় লক্ষ্য করা যায় যে তারা পূণ্যবান ব্যক্তিদের ভাস্কর্য নির্মাণ করে উপাসনালয়ে রাখতো , তাদের স্মৃতি রক্ষা করার জন্য ।“
পরবর্তীতে ইসলামে শিরকের ছিদ্র বন্ধ করার জন্য মূর্তি নির্মাণ করে ইবাদত গৃহে রাখা বন্ধ হয়।
তাহলে আমরা বুঝতে পারি মূর্তি শুধুই শিরকের জন্যই নিষিদ্ধ । যদি কোন মূর্তি শিরক বা পূজার জন্য নির্মাণ করা না হয় তবে তা ঘোরতর অপরাধ নয় । কেননা, পূর্ববর্তী সময়ে যা সমজিদের মত পবিত্র গৃহে রাখার বিধান ছিল তা কখনই খুব খারাপ যা দেশের রাস্তার মোড়েও রাখা যাবেনা তা হতে পারেনা ।
তাই পূজার নিমিত্বে নয় বরং পূর্ববর্তী ঘটনাকে সাক্ষী, ও পূণ্যবান বা বড় বড় ব্যক্তিদের স্মরণে রাখতে মূর্তি রাখা খুব একটা সমস্যা হবার কথা নয় ।
হেফাজতিদের এই বিষয়ে আরো বিবেচকের মত দাবি তূরতে হবে ।
অপর আয়াতে,
‘তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্ত্ত অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’ -সূরা হজ্জ : ৩০
এখানে মূর্তিকে অপবিত্র বস্তু ও মিথ্যা কথনের সাথে তুলনা করে পরিহারের আদেশ দেয়া হয়েছে । কিন্তু সাধারণ ভাস্কর্যকে শিরকের আওতায় বলা হয়নি ।
অপর আয়াতে বলা হয়েছে “ তোমরা মূর্তি নির্মাণ করোনা আরাধনার উদ্দেশ্যে ।“
সুতুরাং , মূর্তি শিরকের জন্য বা আরাধনার জন্য নির্মাণ ও রাখা হল শিরক বা জঘণ্য অপরাধ কিন্তু শোভা বর্ধনের জন্য নির্মাণ শিরকের আওতায় নয় ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:২৯
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×