➔ ৯০ দশকের কোন এক সময় ।
ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজন মিছিল করে স্লোগান দিতে থাকে:
“বাকের ভাইয়ের ফাঁসি কেন, কুত্তাওয়ালী জবাব চাই!”
কিংবা,
“বাকের ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে!”
এসকল খবর, সমসাময়িক পত্র-পত্রিকাতে প্রকাশিত হয় বেশ গুরুত্বের সাথে। স্বভাবতই মনে হতে পারে তখন দেশে সত্যি সত্যি খুব বড় রকমের কিছু একটা হয়েছিলো যার সমাধান করেছিলো 'বাকের ভাই' নামের এক মানুষ কিন্তু সে নিজেই আইনের কাছে দোষী হয়ে যায় ।
আসলে মূল কাহিনী কিন্তু অন্য যেটা আপনারা সবাইই জানেন । হুমায়ূন আহমেদ স্যারের 'কোথাও কেউ নেই' নাটকের পরিপ্রেক্ষিতে উপরে উল্লেখিত ঘটনাগুলো হয় ।
তখন বাংলা নাটকের দিনটাই চেঞ্জ করে ফেলেছিলেন হুমায়ূন স্যার । আক্ষরিক অর্থেই তিনি বাংলা নাটকে সূর্য ঝলমলে দিন শুরু করতে পেরেছিলেন ।
➔ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো একদম গরম হয়ে আছে শুধু একটা টেলিফিল্ম নিয়ে । কোন নাটক/টেলিফিল্ম নিয়ে এতো আলোচনা, সমালোচনা, ট্রল বানানো, পচানো ইত্যাদি ইত্যাদি আমার জানামতে খুব সম্ভবত ৯০ দশকের পর এবারই প্রথম । নাটকটার নাম 'বড় ছেলে!' ডিরেকশনে আছেন Mizanur Rahman Aryan ।
একটা নাটক / টেলিফিল্ম নিয়ে এতো আলোচনা করা মানেই নাটকটা সবার নজরে চলে আসা । একটা সময় আমরা ফ্রেন্ড সার্কেলের আড্ডায় একজন আরেকজনকে জিজ্ঞাস করতাম - 'শাহ্রুখ বা সালমানের নতুন মুভিটা দেখা হইছে কিনা ।' আর কিছুদিন ধরে জিজ্ঞাস করা হচ্ছে - 'বড়ছেলে দেখা হয়েছে কিনা !'
এটা কি একটা বিরাট পরিবর্তন না ???
মিজানুর রহমান আরিয়ান হুমায়ূন আহমেদ স্যারের মতো কেউ না । হুমায়ূন আহমেদ একজনই । তবে স্বীকার করতেই হবে আরিয়ান এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এবং প্রশংসিত ডিরেক্টরের মধ্যে একজন । এবং আমি একদম স্পষ্ট করে বলছি আমি উনার সাথে হুমায়ূন স্যার এবং উনার নাটকের সাথে হুমায়ূন স্যারের নাটকের তুলনাও করছি না ।
হুমায়ূন স্যার একসময় বাংলা নাটককে দিয়েছিলেন একটি আলো ঝলমলে দিন । হুমায়ূন পরবর্তী সময়ে সেই দিনটা যখন রাতে রুপান্তর হলো তখন সেই রাতের আঁধারে কড়াত দিয়ে ইন্ড্রাস্ট্রির বীম / পিলার গুলো কাটা শুরু হলো । মাথার আশপাশ দিয়েও যায় না টাইপ নাটকগুলো দর্শকদের জোর করে গিলতে বাধ্য করা হয়েছিলো । মাঝে মাঝে কিছু ভালো কাজ হয়েছিলো তবে তা কিছুদিনের মাঝেই হারিয়ে যায় । তাই বর্তমানে গ্রুপ গুলো / পার্সোনাল ওয়ালে নাটক নিয়ে এতো আলোচনার পর আমরা কি বলতে পারি না - এই সময়টা বাংলা নাটকের সুদিনের একটা নতুন ভোর ? নতুন একটি দিনের শুরু ? হুমায়ূন স্যারের মতো রেভ্যুলেশন না, তবে রেভ্যুলেশনের শুরু তো বলা যায় ?
➡ এখন চলুন যাওয়া যাক টেলিফিল্ম নিয়ে সামান্য আলোচনায় । কাহিনী নিয়ে কিছু নাই বা বলি কারণ এটা সবার জানা । কেউ কেউ টেলিফিল্মের কিছু খুঁত ধরেছেন সেগুলো নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু উত্তর নিয়ে আলোচনা করা যাক ।
❌ খুঁত ১ঃ মেহজাবিন এতো বড়লোক হওয়া সত্তেও অপূর্বকে একটা চাকরি কেন দিতে পারে না ?
- টেলিফিল্মের ৪৯ মিনিট ৩০ সেকেন্ড এ যান । এরপর ৫৪ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের পর শুরু করুন । যেখানে মেহজাবিন বলে 'আগে দিলে তো নিতে না....' 'আজ এরকম করো না, রিকুয়েস্ট!'
বোঝা গেলো মেহজাবিন অপূর্বকে চাকরি দিয়েছিলো নাকি দেয় নি ?!
.
❌ খুঁত ২ঃ মেহজাবিন খালি বাদাম খায় ! অপূর্ব আর কিছু খাওয়াইতে পারে না ?
- মেহজাবিন কি বাসায় কিছু খায় না ? সেকি শুধু খাওয়ার জন্যই প্রেম করে ? মেয়েটা ছেলেটার সমস্যা বুঝে বলেই এই রকম করে এইটা আমাদের বুঝা লাগবে । আমরা অল্পতেই সব মেয়েকে এক কাতারে ফেলে দেই । এখনো কিন্তু কিছু মেয়ে আছে যারা সত্যিই মন থেকে ভালবাসতে পারে ।
এইখানে আরেকটা প্রশ্ন আসতে পারে - সে এতো বড়লোক হওয়ার পরেও মধ্যবিত্ত ছেলেটাকে কেন ভালোবাসে ?
- ভাইরে, ভালোবাসা শব্দটা সহজ, কিন্তু শব্দের শব্দার্থ তো সহজ না সেটা তো আপনারা ভালোভাবেই জানেন ! এবং এখানেও আবারো বলা লাগে - এখনো কিন্তু কিছু মেয়ে আছে যারা সত্যিই মন থেকে ভালবাসতে পারে ।
.
❌ খুঁত ৩ঃ অপূর্ব একেক বার একেক শার্ট পড়ছে !
- ভাই, সিরিয়াসলি এইটা একটা নাটক / টেলিফিল্ম । কিছু নাটকীয় ব্যাপার তো থাকবেই ! এইটা তো মেনে নিতেই হবে ।
.
নাটক/টেলিফিল্মে খুঁত থাকবেই । তবে আমার মনে হয়েছিলো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুব সম্ভবত আমার জানা আছে তাই দিলাম ।
আর যারা উপরের প্রশ্নগুলো করেছেন তাদের কাছে আমার একটা প্রশ্নঃ 'আপনারা খুঁত গুলো নিয়ে পোস্ট করার সময় নাটক বলেছেন নাকি টেলিফিল্ম বলেছেন একটু চেক করে দেখেছেন ?'
আরেকটু বাকি ।
অনেকেই বলেছে গত ঈদের 'বিকাল বেলার পাখি' আর এই ঈদের 'বড় ছেলে' সেম । দুটো নাটকেই মধ্যবিত্ত কষ্টগুলোকে হাইলাইট করা হয়েছে। তবে এইখানে আমার মতে খুব সূক্ষ্ম একটা পার্থক্য রয়েছে ।
'মধ্যবিত্ত' শব্দটা খুব ছোট কিন্তু এই শব্দটার বিশালতা অনেক, এই একটি শব্দের অনেক অর্থ । মধ্যবিত্তরা কেন এতো স্পেশাল প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় - মনে হাজারো কষ্ট রেখে মুখে হাঁসি ফুটিয়ে চলতে পারে একমাত্র মধ্যবিত্তরাই । মধ্যবিত্তরাই পারে তীব্র কষ্টের মাঝেও কষ্টের অনুভূতি গুলো লুকিয়ে ফেলতে ।
এবং আমার মতে, 'বিকাল বেলার পাখি' এই জায়গাতেই ব্যর্থ আর 'বড় ছেলে' সফল । নাটক / টেলিফিল্ম দুটো দেখলেই আপনারা আমার কথার গুঢ় অর্থ বুঝতে পারবেন
তবে এই কথা বলাই বাহুল্য যে সামগ্রিক অর্থে দুটো নাটকই অডিয়েন্সদের মনে খুব ভালোভাবে জায়গা করে নিয়েছে !
আমি জানি টেলিভিশন মিডিয়াকে বলা হয় ড্রয়িং রুম মিডিয়া । যেখানে সবাই একসাথে বসে কোন কিছু উপভোগ করে । 'ড্রয়িং রুম মিডিয়া' শব্দটা এই ঈদে নতুন করে ফিরে এসেছে । আমরা চাই না এই শব্দটা, এই আনন্দ, পরিবারের সবার সাথে একসাথে বসে নাটক/সিনেমা উপভোগ করার সময়টা হারিয়ে যাক ।
নির্মাতারা যদি সাধারণ মানুষের আরও কাছে যেতে পারেন তাহলে হয়তোবা মানুষের চাওয়াটা আপনারা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন । বাংলা নাটক / সিনেমা নিয়ে এখন ফেসবুকে অনেক গ্রুপ আছে । আপনাদের কাছে অনুরোধ - আপনারা আরও সক্রিয় হোন, মানুষের সাথে ইন্টারএক্ট আরও বাড়ান । অনেক কষ্টের পরে আপনাদের মাধ্যমেই যে সময়টা আমরা ফিরে পাওয়ার আশা করছি, আমাদের সেই আশাটা নষ্ট যেন না হয়ে যায়, প্লিজ
.
★★★ বি.দ্রঃ যে কোন ধরণের গঠনমূলক আলোচনা, সমালোচনা স্বাদরে গ্রহণযোগ্য ★★★
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১২