কাল (২২ মার্চ) যখন বিপুল আয়োজনে উন্নয়নশীল দেশের বর্ণিল শোভাযাত্রা হবো হবো করছে, তখন আপনি কোথায় ছিলেন জানি না—আমি ছিলাম বাসে, যেমন প্রতিদিন থাকি । ভয়ে ভয়ে আছি, মিডিয়া ঘোষিত নিষিদ্ধ এগারো রুটের কোনোটায় ঢুকে পড়ছি কি না ।
পাশের সিটের হতাশ তরুণের ঊরুতে ভর করে আছে সদ্যক্রীত ‘ডেইলি স্টার’ । তার দিকে তাকিয়ে দাঁতের দোকান খুলে দিয়ে ছোঁ মেরে পত্রিকাটা নিয়ে নিলাম । ন্যূনতম ২৫ ফন্টের বিরাট লিড শিরোনাম—মার্ডারস গো আনপানিশড । বাহ, কী দেশভক্ত ছেলে, এতেই হতাশ ।
খুব আহামরি কোনো নিউজ অবশ্য নয় । পুলিশের নতুন ইভেস্টিগেশন টিম পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন) খুঁজে পেয়েছে যে, ৫১ ভাগ মামলায় দেখা যাচ্ছে খুনীদের কোনো শাস্তিই হয় নি । গুটিকতক মামলায় বিচারকদের ভুল হয়ে গেছে । তার চেয়ে বেশি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তারা গড়বড় করে ফেলেছেন । পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও কিছু ভুলচুক আছে । তার চেয়ে খারাপ খবর হলো, এইসব ভুলভালের কারণে দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি ।
পিবিআই সম্ভবত জানে না, গত পনেরো বছরে অন্তত ৬০ হাজার মানুষ খুন হয়েছে । এতগুলি খুনের সঙ্গে অবশ্যই কয়েকলাখ মানুষ জড়িত ছিলেন । তো আদালত কী করবে, লাখ লাখ মানুষকে ফাঁসী দিয়ে দেশটাকে পঙ্গু করে দেবে? যেখানে আমাদের সর্বজনমান্য রাষ্ট্রপতি স্বয়ং এইট মার্ডার আসামীসহ প্রায় অর্ধশত খুনীকে নির্দ্বিধায় মার্সি দিয়ে দিচ্ছেন—সেখানে সুমহান দয়ার নজির দেখানো কি আইন ও বিচার-সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সদস্যের কর্তব্য নয়?
আশার কথা হলো, পিবিআই মাত্র ২৩৯ টি বিচার অবজার্ভ করেছে । এবং তার মধ্যে এমনও পাওয়া গেছে যে, আবদুল কাদের নামী জনৈক গ্রাম্য ভদ্রলোক ২৮ বছর খুনের দায়ে জেল খেটেছেন এবং সম্প্রতি নিরাপরাধ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পাবো পাবো করছেন (আজ ২৩ মার্চ এটা নিয়ে তারা আবার এডিটরিয়াল ছেপেছে—In pursuit of justice : Why do criminals escape and innocents suffer?)
পড়ছি আর নস্টালজিক হচ্ছি—সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে গ্রামের সবচে’ বড় হাইস্কুলটা বিরাট মাঠসহ তলিয়ে যাওয়ার পরে আমার দাদা বারবার অনুরোধ করেছিলেন, একবার দেখতে নিয়ে যাই যেন । আচ্ছা, ডুবেই তো গেছে না, তো দেখবেন কী তিনি? দেখবেন সেখানে ঢল বেঁধে মানুষ পার্কের মতো হাওয়া খেতে এসেছে, ভিটা ভাঙা আলিশায় হেলান দিয়ে উদাস হয়ে আছে কপালপোড়া মালিক, জেলেরা ফুরসত পেয়ে চকচকে জ্যান্ত ইলিশ বেচার পাঁয়তারা করছে—এইসব? আর ভাববেন, এ্কদিন এইখানে নদী ছিল না, একটা ছোট্ট ডোবার উপরে নড়বড়ে সাঁকো ছিল । তারপর সেই ডোবায় কুমির এসেছে, নদী হয়ে গেছে রাক্ষস—এত উন্নয়ন কি তার সইবে?
শুনেছি, হালাকু খান বাগদাদ দখল করার পরে কারবালায় যেতে চেয়েছিলেন । পথে ফোরাতের (টাইগ্রিস) বাধা আছে শুনে হুংকার দিলেন রাতারাতি ব্রিজ গড়তে হবে, নয়তো ২০ লাখের মধ্যে বাঁচোয়া ৪ লাখকেও অাগুনে পুড়িয়ে মারবেন । বাগদাদের হতভম্ব মানুষগুলি নিজ হাতে তখন লাইব্রেরির লক্ষ লক্ষ বই নদীতে ফেলে সেতু তৈরি করে দিয়েছিলেন । এইভাবে উন্নয়নের এক যুগান্তকরী অধ্যায়ের সূচনা হয় । পূর্বসূরিদের রাশি রাশি বিদ্যা ডুবিয়ে সে-যাত্রায় পার পেয়েছিল যারা, আজ হয়তো তারা আর বেঁচে নেই, তাদের মনেও রাখেনি কেউ । কিন্তু হালাকু খানের উন্নয়নের ইতিহাস মরে নি, ডোবানোও যায় নি ।
আজ এই স্ট্যাটাস লেখার পূর্বমুহূর্তে দেখলাম—নতুন ৫ স্বৈরাতান্ত্রিক দেশের কাতারে ঢুকে গেছে বাংলাদেশ । যেটা এতদিন অপ্রকাশ্য ছিল, সেটা এখন কাগজে-কলমে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে দেখে বেশ খুশি খুশি লাগছে । এবার তো বাংলাদেশ উন্নয়নের ধাপে সত্যিকার অর্থেই মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ ও সিঙ্গাপুরের লিকুয়ানের মর্যাদায় পৌঁছে গেছে । দুমূর্খ সমালোচকেরা এবার মুখ লুকাবে কোথায়?
সুতরাং হে তরুণ, আপনার হতাশ হওয়ার কিছু নেই—বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে..
সূত্র :
১. https://bit.ly/2udD9tb
২. https://bit.ly/2pyK6jO
৩. https://bit.ly/2IMpYTl
৪. https://bit.ly/2ufrx8V
৫. https://bit.ly/2DQB8T9
৬. https://bit.ly/2pB6g45
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৫