ধর্ষণ শক্তিপ্রয়োগের একটি উপায় । ছেলেদের পৌরুষে আঘাত থেকেই ধর্ষণ হয় বেশি । মেয়েরা যেমন দীর্ঘদিন মনের আড়ালে বিষ লুকিয়ে রাখতে পারে এবং সময় সুযোগে উগড়ে দিতে পারে—পুরুষ তেমনটি পারে না । পুরুষ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অভ্যস্ত ।
এটা ঠিক যে, মেয়েরা ধর্ষণ পছন্দ করে না—পছন্দ করে ভালোবাসা । একই মেয়েকে ভালোসার ভান করে যতবার ভোগ করা যায়, তাকেই ধর্ষণের চেষ্টায় একটিবারও ভোগ করার উপায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে । বরং চিরদিনের মতো সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে । যেই মেয়ের হাতে স্বাভাবিক অবস্থায় আপনি চুমু খেতে পারবেন, অস্বাভাবিক অবস্থায় তার কাছ ঘেঁষে দাঁড়াতেও ভয় হবে । তবে পুরুষের পৌরুষকে উস্কে দিয়ে নারী যে কতটা আনন্দ পায়—তার তুলনা নেই ।
আবার উত্তেজনা চরমে উঠলেও ধর্ষণ হতে পারে । এইভাবে উত্তেজিত হয়ে ওঠার পিছনে মাদক ও নগ্নতা অনেকখানি দায়ী । এবং মেয়ের সঙ্গে ছেলের অবাধ চলাফেরার সুযোগও দায়ী । দুজনেই যে একই সময় উত্তেজিত থাকবেন, তমেন না-ও হতে পারে । বিষয়টা হলো, মেয়ে যদি উত্তেজিত থাকে এবং ছেলেকে কাছে টানতে চায়, কিন্তু ছেলে সেটা উপেক্ষা করে যায়, তাহলে শারীরিক ও সামাজিক দুর্বলতার কারণে মেয়ের পক্ষে ছেলেকে বাধ্য করা সম্ভব ততটা নয়—যতটা ঠিক উল্টো হলে সম্ভব হয় ।
কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, বোরকা-পরা মেয়েও কেন ধর্ষিত হচ্ছে? যাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, তার পোশাক কেমন সেটা আসলে ধর্ষকের চিন্তায় স্থান পবার কথা নয়—অন্তত যখন সে ধর্ষণ-মুডে থাকে । বরং পূর্বের কারও পোশাকি নগ্নতা, হোক সেটা ফিল্মি কিংবা রিয়েলি, সে উত্তেজিত হয়ে থাকতে পারে । হয়তো সে নোংরা ছবি দেখে উত্তেজিত হয়ে আছে, সেটাই তার পৌরুষে সাঁপের মতো বিষ জুগিয়েছে এবং যেখানে তা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে কিংবা নির্বাধে ঢেলে দেওয়ার সুযোগ হয়েছে, সেখানেই ফণা তুলেছে সে ।
স্ত্রী বা সেক্স-পার্টনার থাকার পরেও পুরুষ ধর্ষক হয়। চিকিৎসাবিদেরাও বলেন, পর্ন ছবি দেখা, গল্প পরা এবং পরনারীর বা পরপুরুষের অবাধ সংশ্রবের ফলে নিয়মতান্ত্রিক যৌনতাবোধ হারিয়ে যেতে থাকে । ফলে বিকৃত পথের দিকে যাত্রা করে সে । ওই যে আমেরিকার নারী সৈন্য লিন্ডার কথা মনে আছে? কিংবা এরশাদ সিকদার? অথবা ‘মার্ডার-২’?
যারা বলেন, বিকিনি-পরা মেয়েদের তো তাহলে সবচে’ বেশি ধর্ষিত হবার কথা—তারা উত্তেজনার বিষয়টাকে মাথায় রাখেন না । তাই তাদের ‘ইলেভেন মিনিটস’ পড়া উচিত । যেখানে দেখা যাবে, নগ্নতায় থাকতে থাকতে বিশাল একটি শ্রেণির এমন হয়েছে যে, মিলনের জন্য পুরুষ ও নারীরা পরস্পরকে উত্তেজিত করতে ভিন্ন নানান উপায় বেছে নিচ্ছে—কেননা, কেবল নগ্ন দলদলে ফিগার আর তাদের সঙ্গীকে আর উত্তেজিত করার পক্ষে যথেষ্ট হচ্ছে না । আপনি কি জানেন, আমেরিকা ও ইউরোপর বিপুল সংখ্যক যুবক যৌনশক্তি হারাচ্ছে? এবং জাপান ও চায়নিজ ছেলেরা মেয়েদের থেকে টয়জবেবি সাথে রাখতে বেশি ভালোবাসে?
নারীর আব্রু প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই মূল্যবান বিবেচিত হয়েছে । এবং নারীর আব্রু রক্ষার দায়িত্ব নারীর থেকে পুরুষের উপরেই বর্তায় বেশি । একসময় নারী লুণ্ঠিত হলে সেটা তার প্রিয়জন পুরুষের পরাজয় বলে গণ্য করা হতো । ট্রয় আর হেলেনের মতো কত যুদ্ধ যে ঘটেছে নারীকে নিয়ে তার ইয়ত্তা আছে? কিন্তু এখন নারীও সেইখানে নেই, নেই পুরুষও । সমানাধিকারের শক্তিতে নানান কারণে পুরুষকে হারিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে নারী-আইনের । ফলত পুরুষ আরও ক্ষিপ্ত হচ্ছে । যেহেতু শারীরিক ও সামাজিক শক্তিতে প্রাকৃতিক কারণেই পুরুষ শক্তিমান, সুতরাং সে চায় শক্তির প্রয়োগে বিপরীত পক্ষের সবচে’ বড় ক্ষতিটা সাধান করতে । নারীও ক্ষমতাবান হয়ে পুরুষকে জেলের ঘানি টানাচ্ছে, সমাজচ্যুত হওয়ার মতো অপমানিত করছে—নারী নির্যাতনের ছুঁতোয় ।
পুরুষ কি শুধু নারীকেই নিপীড়ন করে, পুরুষকে করে না? পুরুষ কি পুরুষকে গুলি করে না? পুরুষের উপর নির্যাতন করে না? সারা পৃথিবীতে যুদ্ধগুলো কারা করে? যুদ্ধের বর্বরতা কারা ঘটায়? তার কয়ভাগ নারী? নারীর উপর পুরুষ যত নিপীড়ন করে, পুরুষের উপর পুরুষ তার চাইতে লক্ষগুণ বেশি করে । সে-তুলনায় নারীর উপর নারীর পীড়ন তেমন নেই বললেই চলে । যদিও নারীর একটা অসামান্য শক্তি আছে—মোহনীয়তা । এর গুণেই ‘মাতা হারি’র মতো অযুত ইতিহাস পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে । ওসমানি সম্রাজ্য ধ্বংস হওয়ার মূলে নারীর ‘ভূমিকা’র দিকে তাকান ।
সুতরাং পুরুষের আছে পৌরুষ আর নারীর আছে মোহনীয়তা । মানবজাতির পরস্পরের সম্পূরুক এই দুটি শ্রেণিকে এই দুটি শক্তির ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের মাত্রা জানার বিকল্প নেই । সমাজে এই দুটি শক্তির ভুল প্রয়োগের সকল পরিবেশ বন্ধ থাকা জরুরি এবং শক্তির সঠিক ব্যবহারের শিক্ষা চলমান থাকা আবশ্যক । সে-জন্য যদি মনে হয়, পুরুষকে বোরকা পরানো এবং নারীকে কোর্ট পরালে উদ্দেশ্য সিদ্ধি হবে—তাহলে সেটাই করেন । কিন্তু নারী যদি পুরুষের শক্তি আর পুরুষ নারীর শক্তি নিয়ে টানাটানি করে—তাহলে কিছুতেই কিছু হবে না ।
আরও বুঝতে লক্ষ করুন—যুদ্ধকালে ধর্ষণ বেশি হয় কেনো? রোহিঙ্গা নারীদের শ্রীহীন মুখেও কেনো ধর্ষণের কালিমা লাগে? সানিলিওনির মতো পর্ন-অ্যাকট্রেসও কেনো ধর্ষিত হয়? ক্ষমতাসীনদের ছেলেদের গায়ে সেঞ্চুরির তকমা লাগে কেনো? এমনকি স্বামী কর্তৃকও অজস্র স্ত্রী ধর্ষিত হতে হয় কেনো?
সর্বোপরি ধর্ষণ একটি অপরাধ । এই অপরাধ নির্দিষ্ট লিঙ্গের নয়—অপরাধীর । পুরুষ ও নারী না হয়ে মানুষ যখন মানুষ হবে, তখনই মানুষ কেবল মানুুষের প্রতি পীড়নের আগ্রহ হারাবে—মানবিক শ্রদ্ধায় আনত হবে । মানুষ আবার মানুষ হোক, যেমন মানুষ একদিন মানুষ ছিল—এ-ই প্রত্যাশা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩